অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেম

অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেম হল অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড কর্তৃক ডেভেলপ করা অপারেটিং সিস্টেমগুলির একটি পরিবার। এই অপারেটিং সিস্টেমগুলি অ্যাপলের নিজস্ব হার্ডওয়্যারের সাথে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেমন ম্যাক কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড এবং অ্যাপল ওয়াচ। অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেমগুলি তাদের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসের জন্য সুপরিচিত।

ইতিহাস

অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমের ইতিহাস বহু বছরের বিবর্তনের ফসল। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে স্টিভ ওজনিয়াক এবং স্টিভ জবস কর্তৃক তৈরি করা অ্যাপল I কম্পিউটারের সাথে।

অ্যাপল ডিওএস (Apple DOS) : অ্যাপল I এর জন্য তৈরি করা প্রথম অপারেটিং সিস্টেম। এটি খুবই সরল ছিল এবং সীমিত কার্যকারিতা প্রদান করত।
অ্যাপল II ডিওএস (Apple II DOS) : অ্যাপল II কম্পিউটারের জন্য উন্নত সংস্করণ, যা ডিস্ক ড্রাইভ সমর্থন করত।
প্রোডিওএস (ProDOS) : অ্যাপল II পরিবারের জন্য আরও একটি উন্নত অপারেটিং সিস্টেম, যা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
ম্যাকিনটোশ অপারেটিং সিস্টেম (Macintosh Operating System) : ১৯৮৪ সালে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের সাথে আত্মপ্রকাশ করা এই অপারেটিং সিস্টেমটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) এর প্রবর্তন করে কম্পিউটার জগতে বিপ্লব ঘটায়। এটি পরবর্তীতে ম্যাক ওএস (Mac OS) নামে পরিচিত হয়।
ম্যাক ওএস এক্স (Mac OS X) : ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই অপারেটিং সিস্টেমটি ছিল অ্যাপলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি ইউনিক্স ভিত্তিক কার্নেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, যা এটিকে আরও স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী করে তোলে।
ওএস এক্স (OS X) : ম্যাক ওএস এক্স এর পরবর্তী সংস্করণগুলি, যেমন পান্থার, টাইগার, লিওপার্ড, স্নো লিওপার্ড ইত্যাদি, সময়ের সাথে সাথে আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে।
ওএস এক্স এল ক্যাপিতান (OS X El Capitan) : ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সংস্করণটি কর্মক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতার উপর জোর দেয়।
ম্যাকওএস (macOS) : ২০১৬ সাল থেকে অ্যাপল তাদের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমের নামকরণ করে ম্যাকওএস করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংস্করণগুলি হল সিয়েরা, হাই সিয়েরা, মোজাভে, ক্যাটালিনা, বিগ সুর, ম Monterey এবং Ventura।
আইওএস (iOS) : আইফোন এবং আইপ্যাডের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এটিও ইউনিক্স ভিত্তিক এবং ম্যাকওএস এর সাথে অনেক মিল রয়েছে।
ওয়াচওএস (watchOS) : অ্যাপল ওয়াচের জন্য তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম, যা স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস ট্র্যাকিংয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়।
টিভিওএস (tvOS) : অ্যাপল টিভির জন্য তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম, যা বিনোদন এবং অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে।

ম্যাকওএস (macOS)

ম্যাকওএস হল অ্যাপলের ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ কম্পিউটারের জন্য প্রধান অপারেটিং সিস্টেম। এটি একটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের সহজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ম্যাকওএস তার স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং ডিজাইন এর জন্য পরিচিত।

ম্যাকওএস এর সংস্করণসমূহ
সংস্করণ	প্রকাশের তারিখ	উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
সিয়েরা (Sierra)	২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬	সিরি ইন্টিগ্রেশন, অ্যাপল ফাইল সিস্টেম (APFS)
হাই সিয়েরা (High Sierra)	২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭	উন্নত ফাইল সিস্টেম, এইচ.২৬৫ (HEVC) ভিডিও কোডেক সমর্থন
মোজাভে (Mojave)	২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮	ডার্ক মোড, স্ক্রিনশট টুল
ক্যাটালিনা (Catalina)	৭ অক্টোবর ২০১৯	স্ক্রিন টাইম, সাইডকার
বিগ সুর (Big Sur)	১৩ নভেম্বর ২০২০	নতুন ডিজাইন, কন্ট্রোল সেন্টার
Monterey	২১ অক্টোবর ২০২১	ইউনিভার্সাল কন্ট্রোল, ফোকাস মোড
Ventura	২৪ অক্টোবর ২০২২	স্টেজ ম্যানেজার, কন্টিনিউটি ক্যামেরা

ম্যাকওএস এ ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি:

কার্নেল (Kernel): এটি অপারেটিং সিস্টেমের মূল অংশ, যা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। ম্যাকওএস এক্স কার্নেল ইউনিক্স ভিত্তিক।
কোয়ার্টজ (Quartz): এটি একটি গ্রাফিক্স লেয়ার, যা উইন্ডো এবং গ্রাফিক্স উপাদানগুলি পরিচালনা করে।
অ্যাপল ফাইল সিস্টেম (APFS): এটি একটি আধুনিক ফাইল সিস্টেম, যা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা স্টোরেজ প্রদান করে।
সিরি (Siri): অ্যাপলের ভার্চুয়াল সহকারী, যা ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে কাজ করতে পারে।
আইক্লাউড (iCloud): অ্যাপলের ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা, যা ডেটা সিঙ্ক্রোনাইজেশন এবং ব্যাকআপের সুবিধা দেয়।

আইওএস (iOS)

আইওএস হল অ্যাপলের আইফোন, আইপ্যাড এবং আইপড টাচের জন্য মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলির মধ্যে একটি। আইওএস তার ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস, নিরাপত্তা এবং অ্যাপলের ইকোসিস্টেমের সাথে সমন্বয়ের জন্য পরিচিত।

আইওএস এর সংস্করণসমূহ
সংস্করণ	প্রকাশের তারিখ	উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
আইওএস ৭	১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩	নতুন ডিজাইন, কন্ট্রোল সেন্টার
আইওএস ৮	১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪	অ্যাপল পে, স্বাস্থ্য অ্যাপ
আইওএস ৯	১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫	সিরি উন্নতকরণ, মাল্টিটাস্কিং
আইওএস ১০	১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬	নতুন মেসেজ অ্যাপ, সিরি ডেভেলপারদের জন্য উন্মুক্ত
আইওএস ১১	১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭	নতুন অ্যাপ স্টোর, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) সমর্থন
আইওএস ১২	১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮	কর্মক্ষমতা উন্নতি, স্ক্রিন টাইম
আইওএস ১৩	১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯	ডার্ক মোড, সাইন ইন উইথ অ্যাপল
আইওএস ১৪	১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০	উইজেট, অ্যাপ লাইব্রেরি
আইওএস ১৫	২০ সেপ্টেম্বর ২০২১	ফোকাস মোড, লাইভ টেক্সট
আইওএস ১৬	১২ সেপ্টেম্বর ২০২২	কাস্টমাইজেবল লক স্ক্রিন, মেসেজ এডিট

আইওএস এ ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি:

সুইফট (Swift): অ্যাপলের প্রোগ্রামিং ভাষা, যা আইওএস অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কোCore Animation: এটি একটি গ্রাফিক্স এবং অ্যানিমেশন ফ্রেমওয়ার্ক, যা ইউজার ইন্টারফেসকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
অ্যাপল পে (Apple Pay): মোবাইল পেমেন্ট পরিষেবা, যা ব্যবহারকারীদের সহজে এবং নিরাপদে অর্থ প্রদান করতে দেয়।
ফেস আইডি (Face ID): ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি, যা ডিভাইস আনলক এবং প্রমাণীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিরি (Siri): আইওএস-এও সিরি ভার্চুয়াল সহকারী হিসেবে কাজ করে।

নিরাপত্তা

অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেমগুলি তাদের শক্তিশালী নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। অ্যাপল তাদের অপারেটিং সিস্টেমের সুরক্ষার জন্য একাধিক স্তর ব্যবহার করে, যার মধ্যে রয়েছে:

স্যান্ডবক্সিং (Sandboxing): প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনকে একটি পৃথক স্থানে চালানো হয়, যাতে একটি অ্যাপ্লিকেশনের ত্রুটি অন্য অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষতি করতে না পারে।
গেটকিপার (Gatekeeper): শুধুমাত্র অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা বা ডেভেলপার দ্বারা সাইন করা অ্যাপ্লিকেশনগুলি চালানোর অনুমতি দেয়।
এক্সকোড (Xcode): অ্যাপলের ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট (IDE), যা ডেভেলপারদের নিরাপদ কোড লিখতে সহায়তা করে।
ফাইল ভল্ট (FileVault): ডিস্ক এনক্রিপশন প্রযুক্তি, যা ডেটা সুরক্ষিত রাখে।
নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট (Regular Security Updates): অ্যাপল নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা আপডেট প্রকাশ করে, যা অপারেটিং সিস্টেমকে নতুন হুমকির হাত থেকে রক্ষা করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অ্যাপল ক্রমাগত তাদের অপারেটিং সিস্টেমগুলির উন্নতি করে চলেছে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলির মধ্যে রয়েছে:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): সিরি এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনে আরও উন্নত এআই বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি (Augmented Reality): এআর প্রযুক্তির আরও বেশি ব্যবহার এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality): ভিআর হেডসেটের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করা।
আরও উন্নত নিরাপত্তা (Enhanced Security): নতুন নিরাপত্তা প্রযুক্তি যুক্ত করে অপারেটিং সিস্টেমকে আরও সুরক্ষিত করা।
ইকোসিস্টেম ইন্টিগ্রেশন (Ecosystem Integration): অ্যাপলের ডিভাইস এবং পরিষেবাগুলির মধ্যে আরও seamless ইন্টিগ্রেশন তৈরি করা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক

যদিও অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেম সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং সরঞ্জামগুলি এই অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হতে পারে। অনেক বাইনারি অপশন ব্রোকার তাদের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলি ম্যাকওএস এবং আইওএস এর জন্য উপলব্ধ করে। ট্রেডাররা তাদের ম্যাক কম্পিউটার বা আইফোন/আইপ্যাডের মাধ্যমে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও, ট্রেডিংয়ের সময় রিয়েল-টাইম ডেটা এবং চার্টগুলি দেখার জন্য এই ডিভাইসগুলি ব্যবহার করা যায়।

গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডিং কৌশল:

ভলিউম বিশ্লেষণ কৌশল:

এই অপারেটিং সিস্টেমগুলির স্থিতিশীলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের ক্র্যাশ বা ত্রুটি ট্রেডিংয়ের সুযোগ নষ্ট করতে পারে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ডেটা নিরাপত্তা প্রোগ্রামিং ভাষা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার সিস্টেম সফটওয়্যার ক্লাউড কম্পিউটিং মোবাইল প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ট্রেডিং সাইকোলজি অর্থনৈতিক সূচক

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ