অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (Antisocial Personality Disorder - ASPD) একটি ব্যক্তিত্বের ব্যাধি যা ব্যক্তি অন্যের অধিকার ও অনুভূতির প্রতি উদাসীনতা, প্রতারণা, আগ্রাসন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত শৈশবে বা কৈশোরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই নিবন্ধে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের কারণ, লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কারণসমূহ

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি, তবে গবেষণা থেকে জানা যায় যে জিনগত, পরিবেশগত এবং নিউরোলজিক্যাল কারণগুলোর একটি জটিল সমন্বয় এই রোগের জন্য দায়ী।

জিনগত প্রভাব: ASPD-এর পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। জিনগত প্রবণতা ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অ্যান্টিসোশ্যাল আচরণে অবদান রাখে।

পরিবেশগত প্রভাব: শৈশবের trauma (যেমন: শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, অবহেলা), প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ, এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের সংস্পর্শ ASPD-এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নিউরোলজিক্যাল কারণ: মস্তিষ্কের কিছু অংশের গঠন ও কার্যকারিতার পার্থক্য, বিশেষ করে ফ্রন্টাল লোব এবং অ্যামিগডালা-এর অস্বাভাবিকতা ASPD-এর সাথে সম্পর্কিত। ফ্রন্টাল লোব আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে জড়িত, যেখানে অ্যামিগডালা ভয় এবং আগ্রাসন প্রক্রিয়াকরণে সাহায্য করে।

মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব: কিছু মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব অনুযায়ী, শৈশবের দুর্বলparenting, inconsistent discipline এবং role model-এর অভাব ASPD-এর বিকাশে অবদান রাখতে পারে।

লক্ষণসমূহ

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো সাধারণত তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়:

১. অনুভূতির প্রতি উদাসীনতা ও অন্যের অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা:

অন্যের অনুভূতি ও অধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ অভাব।
প্রতারণা ও ছলনার মাধ্যমে অন্যদের ব্যবহার করা।
নিজস্ব লাভের জন্য মিথ্যা বলা এবং ঘন ঘন মিথ্যা বলা।
আবেগহীনতা এবং অনুশোচনার অভাব।

২. আগ্রাসন ও impulsivity:

শারীরিক মারামারি বা আগ্রাসনে জড়িত হওয়া।
বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক আচরণ করা।
impulsively কাজ করা, ভবিষ্যতের পরিণতি বিবেচনা না করে।
আইন ও সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘন করা।

৩. দায়িত্বজ্ঞানহীনতা:

কর্মের জন্য দায়িত্ব নিতে না পারা।
চাকরি বা আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থতা।
বেপরোয়া ড্রাইভিং বা মাদক দ্রব্য সেবন এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা।
সম্পর্ক বজায় রাখতে সমস্যা হওয়া।

অন্যান্য লক্ষণ:

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং নিজেকে বড় করে দেখানো।
অন্যদের প্রতি উন্নাসিক মনোভাব।
চার্মিং এবং বাকপটু হওয়া, যা অন্যদের প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হয়।
মানসিক চাপ সহ্য করতে না পারা।
দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতার অভাব।

নির্ণয়

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার নির্ণয় করার জন্য একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (যেমন: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী) DSM-5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition)-এর মানদণ্ড ব্যবহার করেন। DSM-5 অনুযায়ী, ASPD নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবে:

রোগীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
শৈশবে বা কৈশোরে পরিবর্তনমূলক আচরণ ব্যাধি (Conduct Disorder)-এর ইতিহাস থাকতে হবে।
অ্যান্টিসোশ্যাল আচরণের একটি pervasive pattern থাকতে হবে, যা কমপক্ষে তিনটি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

   *   আইন লঙ্ঘন করা।
   *   প্রতারণা করা।
   *   impulsivity বা ব্যর্থতা পরিকল্পনা করতে।
   *   আগ্রাসন বা শারীরিক মারামারি।
   *   বেপরোয়া disregard for safety of self or others।
   *   দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
   *   অনুশোচনার অভাব।

এই আচরণগুলো সামাজিক, কর্মসংস্থান বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে হবে।

শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বাদ দিতে হবে। স্নায়ুবিজ্ঞানিক মূল্যায়নের মাধ্যমে মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যেতে পারে।

চিকিৎসা

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন, কারণ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের আচরণে কোনো সমস্যা দেখতে পান না এবং চিকিৎসায় আগ্রহী হন না। তবে, কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যা উপসর্গের তীব্রতা কমাতে এবং অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে:

সাইকোথেরাপি:

   *   জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy - CBT): এই থেরাপি রোগীর চিন্তা ও আচরণের ধরণ পরিবর্তনে সাহায্য করে। CBT-এর মাধ্যমে রোগীকে প্রতারণা, আগ্রাসন এবং impulsivity নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানো হয়। কগনিটিভ থেরাপি কৌশলগুলি ব্যবহার করে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মোকাবিলা করা যায়।
   *   ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি (Dialectical Behavior Therapy - DBT): DBT আবেগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ মোকাবেলা এবং সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।
   *   স্কিমা থেরাপি (Schema Therapy): এই থেরাপি শৈশবের অভিজ্ঞতার কারণে সৃষ্ট গভীর মানসিক প্যাটার্নগুলো পরিবর্তনে সাহায্য করে।

ফার্মাকোথেরাপি: ASPD-এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে কিছু ওষুধ উপসর্গের তীব্রতা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

   *   অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট: বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের উপসর্গ থাকলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
   *   মুড স্টেবিলাইজার: আবেগ নিয়ন্ত্রণহীনতা কমাতে মুড স্টেবিলাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
   *   অ্যান্টিসাইকোটিক: আগ্রাসন কমাতে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি:

   *   পারিবারিক থেরাপি: পরিবারের সদস্যদের সাথে রোগীকে যুক্ত করে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া বাড়ানো।
   *   গ্রুপ থেরাপি: একই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে রোগীকে যুক্ত করে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সহায়তা প্রদান করা।
   *   সামাজিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ: রোগীকে সামাজিক নিয়মকানুন ও শিষ্টাচার শেখানো।

প্রতিরোধ

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:

শৈশবের trauma প্রতিরোধ: শিশুদের শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করা এবং তাদের একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রদান করা।
পারিবারিক সহায়তার উন্নতি: দুর্বল parenting এবং inconsistent discipline এড়ানো এবং শিশুদের জন্য একটি সহায়ক পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করা।
স্কুলে হস্তক্ষেপ: পরিবর্তনমূলক আচরণ ব্যাধি (Conduct Disorder) চিহ্নিত করে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা এবং শিশুদের জন্য কাউন্সেলিং ও সহায়তা প্রদান করা।
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: ASPD সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ASPD এর মধ্যে সম্পর্ক

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যা তাদের বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক কর্মকাণ্ডের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা: ASPD-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন এবং তাদের মধ্যে impulsivity দেখা যায়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি উচ্চ-ঝুঁকির বিনিয়োগ, যেখানে দ্রুত অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে।
অনুশোচনার অভাব: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের কাজের জন্য অনুশোচনা বোধ করেন না, তাই তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও হতাশ হন না।
প্রতারণার প্রবণতা: ASPD-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের প্রতারণা করতে দ্বিধা বোধ করেন না, যা তাদের বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে manipulation এবং scams-এর সাথে জড়িত হতে উৎসাহিত করতে পারে।

তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ASPD-তে আক্রান্ত সকল ব্যক্তি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত হবেন এমন নয়।

উপসংহার

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই রোগের কারণ, লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে এই রোগের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের লক্ষণ
লক্ষণ	বিবরণ	তীব্রতা
অন্যের অধিকারের প্রতি উদাসীনতা	অন্যের অনুভূতি ও অধিকারকে উপেক্ষা করা	উচ্চ
প্রতারণা ও ছলনা	মিথ্যা বলা ও অন্যদের ব্যবহার করা	উচ্চ
আবেগহীনতা	অনুশোচনা ও অনুভূতির অভাব	মাঝারি
আগ্রাসন	শারীরিক মারামারি ও আক্রমণাত্মক আচরণ	উচ্চ
impulsivity	বেপরোয়া ও তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ	মাঝারি
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা	কর্মের জন্য দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করা	উচ্চ

মানসিক স্বাস্থ্য ব্যক্তিত্বের ব্যাধি সাইকোথেরাপি ফার্মাকোথেরাপি কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি স্কিমা থেরাপি পরিবর্তনমূলক আচরণ ব্যাধি DSM-5 ফ্রন্টাল লোব অ্যামিগডালা বাইনারি অপশন ট্রেডিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আর্থিক প্রতারণা আবেগ নিয়ন্ত্রণ সামাজিক দক্ষতা মানসিক চাপ বিষণ্ণতা দুশ্চিন্তা স্নায়ুবিজ্ঞান জিন পারিবারিক থেরাপি গ্রুপ থেরাপি

Media

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ