অ্যাকশন গেম
অ্যাকশন গেম
অ্যাকশন গেম হলো ভিডিও গেমের একটি ধারা যেখানে খেলোয়াড়কে শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো সাধারণত দ্রুত প্রতিক্রিয়া, নির্ভুলতা এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার সাথে সম্পর্কিত। অ্যাকশন গেমগুলি বিভিন্ন উপশ্রেণীতে বিভক্ত, তবে তাদের মধ্যে প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো উত্তেজনাপূর্ণ গেমপ্লে এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এই ধরনের গেমগুলি সাধারণত একক বা বহু-খেলোয়াড় মোডে খেলা যায় এবং এগুলি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ, যেমন - কম্পিউটার, কনসোল এবং মোবাইল ডিভাইস।
ইতিহাস
অ্যাকশন গেমের ইতিহাস বেশ পুরনো। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে আর্কেড গেমগুলির মাধ্যমে। স্পেস ইনভেডার্স (Space Invaders, ১৯৭৮) এবং প্যাক-ম্যান (Pac-Man, ১৯৮০) এর মতো গেমগুলি প্রথম দিকের অ্যাকশন গেমের উদাহরণ। এই গেমগুলি সহজ গ্রাফিক্স এবং গেমপ্লে বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছিল, কিন্তু এগুলি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯০-এর দশকে, ডুম (Doom, ১৯৯৩) এবং কুইক (Quake, ১৯৯৬) এর মতো ফার্স্ট-পারসন শুটার (First-person shooter) গেমগুলি অ্যাকশন গেমের ধারাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এই গেমগুলি ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স এবং দ্রুতগতির অ্যাকশন প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে, অ্যাকশন গেমগুলি আরও জটিল এবং বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে।
উপশ্রেণী
অ্যাকশন গেমগুলিকে বিভিন্ন উপশ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যেমন:
- ফার্স্ট-পারসন শুটার (FPS):* এই গেমগুলিতে খেলোয়াড় প্রথম ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে খেলে এবং বন্দুক বা অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুদের মোকাবেলা করে। উদাহরণ: কল অফ ডিউটি (Call of Duty), ব্যাটলফিল্ড (Battlefield)। ফার্স্ট-পারসন শুটার গেমগুলি তাদের বাস্তবসম্মত গ্রাফিক্স এবং তীব্র অ্যাকশনের জন্য পরিচিত।
- থার্ড-পারসন শুটার (TPS):* এই গেমগুলিতে খেলোয়াড় তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে খেলে। উদাহরণ: গের্স অফ ওয়ার (Gears of War), ম্যাক্স পেইন (Max Payne)। থার্ড-পারসন শুটার গেমগুলি খেলোয়াড়কে তাদের চরিত্র এবং পরিবেশের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।
- অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার:* এই গেমগুলিতে অ্যাকশন এবং অ্যাডভেঞ্চারের উপাদান মিশ্রিত থাকে। খেলোয়াড়কে ধাঁধা সমাধান করতে, গল্প অনুসরণ করতে এবং শত্রুদের সাথে লড়াই করতে হয়। উদাহরণ: টম্ব রেইডার (Tomb Raider), আনচার্টেড (Uncharted)। অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেমগুলি সাধারণত একটি আকর্ষণীয় কাহিনী এবং জটিল গেমপ্লে প্রদান করে।
- বিটিং (Beat 'em up):* এই গেমগুলিতে খেলোয়াড়কে অনেক শত্রুর সাথে হাতাহাতি লড়াই করতে হয়। উদাহরণ: স্ট্রিট ফাইটার (Street Fighter), মর্টাল কম্ব্যাট (Mortal Kombat)। বিটিং গেমগুলি তাদের সহজবোধ্য গেমপ্লে এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতির জন্য জনপ্রিয়।
- প্ল্যাটফর্মার:* এই গেমগুলিতে খেলোয়াড়কে লাফানো এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে দৌড়ানোর মাধ্যমে বাধা অতিক্রম করতে হয়। উদাহরণ: সুপার মারিও (Super Mario), সনিক দ্য হেজহগ (Sonic the Hedgehog)। প্ল্যাটফর্মার গেমগুলি তাদের চ্যালেঞ্জিং গেমপ্লে এবং রঙিন গ্রাফিক্সের জন্য পরিচিত।
- স্ক্রোলিং শুটার:* এই গেমগুলিতে খেলোয়াড়কে একটি স্ক্রিনের উপর দিয়ে স্ক্রোল করার সময় শত্রুদের গুলি করে মারতে হয়। উদাহরণ: গ্রাডিয়া (Gradius), রাইডিন (R-Type)। স্ক্রোলিং শুটার গেমগুলি তাদের দ্রুতগতির অ্যাকশন এবং কৌশলগত গভীরতার জন্য পরিচিত।
গেমপ্লে উপাদান
অ্যাকশন গেমের গেমপ্লে বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিচে উল্লেখ করা হলো:
- কমব্যাট (Combat):* অ্যাকশন গেমের মূল ভিত্তি হলো কমব্যাট। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন - হাতাহাতি লড়াই, বন্দুকযুদ্ধ, বা উভয়ই। কমব্যাট সিস্টেম গেমের অভিজ্ঞতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
- মুভমেন্ট (Movement):* খেলোয়াড়ের চরিত্র কিভাবে নড়াচড়া করে, তা অ্যাকশন গেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দৌড়ানো, লাফানো, সাঁতার কাটা এবং অন্যান্য মুভমেন্ট অপশনগুলি গেমপ্লেতে ভিন্নতা যোগ করে। মুভমেন্ট টেকনিক ব্যবহার করে খেলোয়াড়রা দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে গেমের পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে।
- অস্ত্র (Weapons):* অ্যাকশন গেমে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা খেলোয়াড়কে শত্রুদের মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। প্রতিটি অস্ত্রের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার গেমের কৌশলগত দিককে প্রভাবিত করে।
- ধাঁধা (Puzzles):* কিছু অ্যাকশন গেমে ধাঁধা সমাধান করার প্রয়োজন হয়, যা গেমপ্লেতে একটি অতিরিক্ত স্তর যুক্ত করে। ধাঁধা সমাধান খেলোয়াড়ের বুদ্ধিমত্তা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা পরীক্ষা করে।
- গল্প (Story):* অনেক অ্যাকশন গেমে একটি আকর্ষণীয় গল্প থাকে, যা খেলোয়াড়কে গেমের সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে। গল্পের অগ্রগতি খেলোয়াড়কে গেমটি শেষ করতে উৎসাহিত করে।
জনপ্রিয় অ্যাকশন গেম
কিছু জনপ্রিয় অ্যাকশন গেমের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- গ্র্যান্ড থেফট অটো ভি (Grand Theft Auto V):* একটি ওপেন-ওয়ার্ল্ড অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে।
- রেড ডেড রিডেম্পশন ২ (Red Dead Redemption 2):* একটি পশ্চিমা-থিমযুক্ত অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা একটি বিশাল এবং বিস্তারিত বিশ্বে ঘুরে বেড়াতে পারে।
- ডুম ইটারনাল (Doom Eternal):* একটি ফার্স্ট-পারসন শুটার গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা নরকের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- সেকিরো: শ্যাডোস ডাই টুইস (Sekiro: Shadows Die Twice):* একটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা একটি সামুরাই যোদ্ধার ভূমিকা পালন করে।
- গড অফ ওয়ার (God of War):* একটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা গ্রিক দেবতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
কৌশল এবং টেকনিক
অ্যাকশন গেমে ভালো করার জন্য কিছু কৌশল এবং টেকনিক অনুসরণ করা যেতে পারে:
- লক্ষ্য স্থির রাখা:* শত্রুদের উপর সঠিকভাবে লক্ষ্য স্থির করে গুলি করা বা আক্রমণ করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য নির্ধারণ গেমের নির্ভুলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- কভার ব্যবহার করা:* শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কভার ব্যবহার করা উচিত। কভার টেকনিক খেলোয়াড়কে সুরক্ষা প্রদান করে।
- অস্ত্র পরিবর্তন করা:* বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত। অস্ত্র নির্বাচন গেমের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
- মানচিত্র ব্যবহার করা:* গেমের মানচিত্র ব্যবহার করে পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা রাখা এবং সঠিক পথে চলা উচিত। মানচিত্র বিশ্লেষণ গেমের কৌশলগত দিক উন্নত করে।
- টিমওয়ার্ক (Teamwork):* বহু-খেলোয়াড় মোডে খেলার সময় দলের সাথে সহযোগিতা করা উচিত। টিমওয়ার্ক কৌশল গেম জেতার সম্ভাবনা বাড়ায়।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা
অ্যাকশন গেমের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অ্যাকশন গেমগুলি আরও বেশি বাস্তবসম্মত এবং নিমজ্জনশীল হয়ে উঠবে। এছাড়াও, ক্লাউড গেমিংয়ের (Cloud gaming) জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে খেলোয়াড়রা যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকশন গেম খেলতে পারবে।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR):* ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে খেলোয়াড়রা গেমের জগতে প্রবেশ করতে পারবে এবং আরও বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে। ভিআর গেমিং অ্যাকশন গেমের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে।
- অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR):* এআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে গেমের উপাদানগুলি বাস্তব বিশ্বের সাথে মিশ্রিত করা যেতে পারে। এআর গেমিং নতুন ধরনের গেমপ্লে অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
- ক্লাউড গেমিং:* ক্লাউড গেমিংয়ের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন ছাড়াই যেকোনো ডিভাইস থেকে গেম খেলতে পারবে। ক্লাউড গেমিং প্রযুক্তি অ্যাকশন গেমের অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়াবে।
উপসংহার
অ্যাকশন গেম ভিডিও গেমের একটি জনপ্রিয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ ধারা। সময়ের সাথে সাথে এই ধারার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রযুক্তি এবং ধারণা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাকশন গেমগুলি খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে উৎসাহিত করে এবং একটি বিনোদনমূলক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
ভিডিও গেম কম্পিউটার গেম কনসোল গেম মোবাইল গেম গেম ডেভেলপমেন্ট গেম ডিজাইন ইস্পোর্টস গেমিং সম্প্রদায় গেম রিভিউ গেম কৌশল মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং সিঙ্গেল প্লেয়ার গেমিং ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম রোল-প্লেয়িং গেম স্ট্র্যাটেজি গেম সিমুলেশন গেম পাজল গেম অ্যাডভেঞ্চার গেম স্পোর্টস গেম রেসিং গেম
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মার্কেট সেন্টিমেন্ট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ