অহিতিকরতা
অহিতিকরতা : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল বিষয়, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, কমোডিটি, মুদ্রা ইত্যাদি) দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা নিয়ে বাজি ধরেন। এই ট্রেডিং পদ্ধতিতে ‘অহিতিকরতা’ (Volatility) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। অহিতিকরতা বাজারের দামের পরিবর্তনশীলতা নির্দেশ করে। এটি বুঝতে পারা একজন ট্রেডারের জন্য অত্যন্ত জরুরি, কারণ এর উপর নির্ভর করে ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনা। এই নিবন্ধে, আমরা অহিতিকরতার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, এটি পরিমাপের পদ্ধতি, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর প্রভাব এবং অহিতিকরতা-ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অহিতিকরতা কী?
অহিতিকরতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কোনো সম্পদের দামের ওঠানামার হার। উচ্চ অহিতিকরতা মানে দাম দ্রুত এবং বড় পরিসরে পরিবর্তিত হচ্ছে, যেখানে নিম্ন অহিতিকরতা মানে দাম স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, অহিতিকরতা সরাসরি লাভের সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কিত।
অহিতিকরতার প্রকারভেদ
অহিতিকরতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. ঐতিহাসিক অহিতিকরতা (Historical Volatility): এটি অতীতের দামের ডেটার উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট সময়কালের (যেমন: ৩০ দিন, ৬০ দিন, ৯০ দিন) দামের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিক অহিতিকরতা নির্ণয় করা হয়। এটি বাজারের অতীতের আচরণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। ঐতিহাসিক ডেটা বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২. অন্তর্নিহিত অহিতিকরতা (Implied Volatility): এটি অপশন চুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। অন্তর্নিহিত অহিতিকরতা বাজারের প্রত্যাশা প্রতিফলিত করে যে ভবিষ্যতে দাম কতটা পরিবর্তিত হতে পারে। এটি বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের একটি নির্দেশক। অপশন প্রাইসিং মডেল সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
অহিতিকরতা পরিমাপের পদ্ধতি
অহিতিকরতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
১. স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন (Standard Deviation): এটি সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন হলো দামের গড় থেকে বিচ্যুতি পরিমাপক। উচ্চ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন মানে উচ্চ অহিতিকরতা।
২. গড় প্রকৃত পরিসর (Average True Range - ATR): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে দামের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মানের মধ্যেকার গড় পার্থক্য নির্ণয় করে। ATR যত বেশি, অহিতিকরতা তত বেশি। টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে ATR খুবই জনপ্রিয়।
৩. বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ টুল, যা দামের অহিতিকরতা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। বোলিঙ্গার ব্যান্ড তিনটি লাইনের সমন্বয়ে গঠিত: একটি সরল চলন্ত গড় (Simple Moving Average) এবং এর উপরে ও নিচে দুটি স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন ব্যান্ড। ব্যান্ডের প্রসারণ অহিতিকরতা বৃদ্ধি এবং সংকোচন অহিতিকরতা হ্রাস নির্দেশ করে। বোলিঙ্গার ব্যান্ড কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করা যায়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অহিতিকরতার প্রভাব
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অহিতিকরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- উচ্চ অহিতিকরতা: উচ্চ অহিতিকরতার বাজারে দ্রুত লাভ করার সুযোগ থাকে, তবে ঝুঁকিও বেশি। দামের আকস্মিক পরিবর্তনে ট্রেডারদের অপ্রত্যাশিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে জরুরি।
- নিম্ন অহিতিকরতা: নিম্ন অহিতিকরতার বাজারে লাভের সুযোগ কম থাকে, কিন্তু ঝুঁকিও কম। এই পরিস্থিতিতে ট্রেডাররা সাধারণত স্থিতিশীল ট্রেডিং কৌশল অবলম্বন করেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করা উচিত।
- অপশন প্রিমিয়াম: অহিতিকরতা অপশন প্রিমিয়ামের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। উচ্চ অহিতিকরতা মানে অপশন প্রিমিয়াম বেশি, কারণ দামের বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে।
অহিতিকরতা-ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশল
অহিতিকরতা-ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশলগুলো বাজারের অহিতিকরতার মাত্রা অনুযায়ী তৈরি করা হয়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): যখন অহিতিকরতা কম থাকে এবং দাম একটি নির্দিষ্ট পরিসরে স্থিতিশীল থাকে, তখন ব্রেকআউট ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে, দাম যখন পরিসীমা ভেদ করে উপরে বা নিচে যায়, তখন ট্রেড করা হয়। ব্রেকআউট চিহ্নিতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
২. রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): যখন অহিতিকরতা কম থাকে এবং দাম একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তখন রেঞ্জ ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে, দাম পরিসীমার উপরে গেলে বিক্রি করা হয় এবং নিচে গেলে কেনা হয়। রেঞ্জ নির্ধারণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাঙ্গল (Straddle and Strangle): এই কৌশলগুলো উচ্চ অহিতিকরতার বাজারে ব্যবহার করা হয়। স্ট্র্যাডল হলো একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদের কল এবং পুট অপশন একসাথে কেনা। স্ট্র্যাঙ্গল হলো ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস এবং একই মেয়াদের কল এবং পুট অপশন একসাথে কেনা। এই কৌশলগুলো দামের বড় পরিবর্তনে লাভজনক হতে পারে। স্ট্র্যাডল এবং স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
৪. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): অহিতিকরতার সাথে ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। উচ্চ ভলিউম এবং উচ্চ অহিতিকরতা সাধারণত একটি শক্তিশালী ট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়। ভলিউম ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেড করা যায়।
অহিতিকরতা এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
অহিতিকরতা অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে মিলিতভাবে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের কার্যকারিতা বাড়ে।
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজের সাথে অহিতিকরতা বিশ্লেষণ করে বাজারের ট্রেন্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। মুভিং এভারেজ কৌশল একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি।
- আরএসআই (Relative Strength Index - RSI): আরএসআই-এর সাথে অহিতিকরতা বিশ্লেষণ করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) পরিস্থিতি চিহ্নিত করা যায়। আরএসআই ব্যবহার করে ট্রেডিং সম্পর্কে জানতে হবে।
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence - MACD): এমএসিডি-এর সাথে অহিতিকরতা বিশ্লেষণ করে বাজারের মোমেন্টাম বোঝা যায়। এমএসিডি কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করা যায়।
- ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলের সাথে অহিতিকরতা বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা যায়। ফিওনাচ্চি বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।
অহিতিকরতা ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
অহিতিকরতা ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি অপরিহার্য অংশ।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): ট্রেডিংয়ের সময় পজিশন সাইজ নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ অহিতিকরতার বাজারে ছোট পজিশন সাইজ ব্যবহার করা উচিত, যাতে ঝুঁকির পরিমাণ কমানো যায়। পজিশন সাইজিং কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে।
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়। উচ্চ অহিতিকরতার বাজারে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা বিশেষভাবে জরুরি। স্টপ-লস ব্যবহারের নিয়ম জানা আবশ্যক।
- ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): ডাইভারসিফিকেশন হলো বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকির বিস্তার ঘটানো। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল। ডাইভারসিফিকেশন কৌশল ব্যবহার করে পোর্টফোলিওকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
উপসংহার
অহিতিকরতা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি বাজারের ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনা উভয়কেই প্রভাবিত করে। ট্রেডারদের উচিত অহিতিকরতা পরিমাপের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং তা অনুযায়ী ট্রেডিং কৌশল তৈরি করা। সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে অহিতিকরতা বিশ্লেষণ করে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ভবিষ্যৎ
বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
