অলিভিং রিট্রেসমেন্ট

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিটি মূলত ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করে, তবে এর কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে ট্রেডারদের মধ্যে আলাদাভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই নিবন্ধে, অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর মূল ধারণা, ব্যবহার, সুবিধা, অসুবিধা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট কী?

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট হলো একটি চার্ট প্যাটার্ন যা পূর্বের মূল্যের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এটি ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর মতোই কাজ করে, তবে এখানে ফিবোনাচ্চি অনুপাতের পরিবর্তে নির্দিষ্ট শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এই শতাংশগুলো হলো: 23.6%, 38.2%, 50%, 61.8%, এবং 78.6%। এই লেভেলগুলো সম্ভাব্য রিট্রেসমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে মূল্য বিপরীতমুখী হতে পারে।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর উৎস

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর ধারণাটি মূলত ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট থেকে উদ্ভূত। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লিওনার্দো ফিবোনাচ্চি-র সংখ্যা ক্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে, অলিভিং রিট্রেসমেন্ট এই অনুপাতগুলোকে সরল করে কয়েকটি নির্দিষ্ট শতাংশে নিয়ে আসে, যা ব্যবহার করা সহজ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট কিভাবে কাজ করে?

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করার জন্য, প্রথমে চার্টে একটি উল্লেখযোগ্য আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ড চিহ্নিত করতে হয়। এরপর, এই ট্রেন্ডের শুরু এবং শেষ বিন্দু চিহ্নিত করে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট টুল ব্যবহার করে লেভেলগুলো আঁকতে হয়। এই লেভেলগুলো হলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া, যেখানে মূল্য রিট্রেস হতে পারে বা বিপরীতমুখী হতে পারে।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট লেভেল

রিট্রেসমেন্ট লেভেল	ব্যাখ্যা
23.6%	স্বল্পমেয়াদী রিট্রেসমেন্ট, প্রায়শই প্রথম রিট্রেসমেন্ট লেভেল হিসেবে কাজ করে।
38.2%	মাঝারিমেয়াদী রিট্রেসমেন্ট, এটিও গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে।
50%	এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজিক্যাল লেভেল, যেখানে অনেক ট্রেডার মনোযোগ দেয়।
61.8%	ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লেভেল, যা এখানেও ব্যবহৃত হয়।
78.6%	দীর্ঘমেয়াদী রিট্রেসমেন্ট, এটি সাধারণত শেষ রিট্রেসমেন্ট লেভেল হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অলিভিং রিট্রেসমেন্ট একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নিচে এর কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

• কল অপশন ট্রেড: যখন মূল্য একটি আপট্রেন্ড-এ থাকে এবং রিট্রেসমেন্ট লেভেলে নেমে আসে, তখন কল অপশন কেনা যেতে পারে। প্রত্যাশা থাকে যে মূল্য আবার উপরে উঠবে।
• পুট অপশন ট্রেড: যখন মূল্য একটি ডাউনট্রেন্ড-এ থাকে এবং রিট্রেসমেন্ট লেভেলে উঠে আসে, তখন পুট অপশন কেনা যেতে পারে। প্রত্যাশা থাকে যে মূল্য আবার নিচে নেমে যাবে।
• নিশ্চিতকরণ: অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে ট্রেড নিশ্চিত করা যেতে পারে। যেমন, মুভিং এভারেজ বা আরএসআই (RSI)।
• স্টপ লস এবং টেক প্রফিট: রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো স্টপ লস এবং টেক প্রফিট সেট করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর সুবিধা

• সহজ ব্যবহার: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর তুলনায় এটি ব্যবহার করা সহজ।
• দ্রুত সিদ্ধান্ত: নির্দিষ্ট শতাংশ ব্যবহার করার কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
• বহুমুখী: আপট্রেন্ড এবং ডাউনট্রেন্ড উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়।
• অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সাথে সমন্বয়: অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে সহজেই ব্যবহার করা যায়।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর অসুবিধা

• ভুল সংকেত: মাঝে মাঝে ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজার অস্থির থাকে।
• বিষয়ভিত্তিক: রিট্রেসমেন্ট লেভেল চিহ্নিত করা কিছুটা বিষয়ভিত্তিক হতে পারে, যা ট্রেডারদের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
• নিশ্চিতকরণের অভাব: শুধুমাত্র অলিভিং রিট্রেসমেন্ট-এর উপর নির্ভর করে ট্রেড করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মধ্যে সম্পর্ক

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা উচিত। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উদাহরণ দেওয়া হলো:

• মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ-এর সাথে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে শক্তিশালী সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা যায়।
• ট্রেন্ড লাইন: ট্রেন্ড লাইন এবং অলিভিং রিট্রেসমেন্ট একসাথে ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন-গুলো রিট্রেসমেন্ট লেভেলের কাছাকাছি দেখা গেলে ট্রেড করার সংকেত পাওয়া যায়।
• ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে রিট্রেসমেন্ট লেভেলে দামের গতিবিধি যাচাই করা যায়। উচ্চ ভলিউম সহ রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি আরও নির্ভরযোগ্য হতে পারে।
• সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলোর সাথে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট মিলিয়ে দেখলে ট্রেডিংয়ের আরও ভালো সুযোগ পাওয়া যায়।
• বুলিশ এবং বিয়ারিশ প্যাটার্ন: বুলিশ এবং বিয়ারিশ প্যাটার্নগুলো রিট্রেসমেন্ট লেভেলের কাছাকাছি গঠিত হলে, তা ট্রেডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।
• ইন্ডিকেটর ডাইভারজেন্স: ইন্ডिकेटর ডাইভারজেন্স-এর সাথে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করা যায়।
• এলাইওট ওয়েভ থিওরি: এলাইওট ওয়েভ থিওরি-র সাথে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে ওয়েভ স্ট্রাকচার বিশ্লেষণ করা যায়।
• পিরিয়ডিক সার্ক : পিরিয়ডিক সার্ক এর ধারণা ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়।
• গ্যান থিওরি: গ্যান থিওরি অনুসারে, নির্দিষ্ট কোণ এবং সময়ের মধ্যে বাজারের পরিবর্তনগুলো বিশ্লেষণ করা যায়।
• ওয়েভলেট ট্রান্সফর্ম: ওয়েভলেট ট্রান্সফর্ম ব্যবহার করে টাইম-ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনে ডেটা বিশ্লেষণ করা যায়।
• হার্টলি প্যাটার্ন: হার্টলি প্যাটার্ন একটি চার্ট প্যাটার্ন যা নির্দিষ্ট রিট্রেসমেন্ট লেভেল ব্যবহার করে গঠিত হয়।
• বাটারফ্লাই প্যাটার্ন: বাটারফ্লাই প্যাটার্ন আরেকটি চার্ট প্যাটার্ন যা রিট্রেসমেন্ট লেভেল এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
• ক্র্যাব প্যাটার্ন: ক্র্যাব প্যাটার্ন একটি জটিল চার্ট প্যাটার্ন, যা রিট্রেসমেন্ট লেভেল ব্যবহার করে গঠিত হয়।
• সাইকোলজিক্যাল প্রাইস অ্যাকশন: সাইকোলজিক্যাল প্রাইস অ্যাকশন বোঝার মাধ্যমে মার্কেটের সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ করা যায়।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে মিলিয়ে দেখলে আরও ভালো ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
• নিউজ ট্রেডিং: নিউজ ট্রেডিং-এর সময় অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা যায়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে ট্রেড করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে ध्यान রাখা জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

• স্টপ লস ব্যবহার: প্রতিটি ট্রেডে স্টপ লস ব্যবহার করা উচিত, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
• পজিশন সাইজিং: আপনার অ্যাকাউন্টের আকারের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।
• ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই করুন, যাতে কোনো একটি ট্রেডের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা না থাকে।
• আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
• মার্কেট বিশ্লেষণ: ট্রেড করার আগে মার্কেট ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।

উপসংহার

অলিভিং রিট্রেসমেন্ট একটি কার্যকরী টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ট্রেডারদের সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা উচিত যে কোনো একক পদ্ধতিই সবসময় সফল হবে না। তাই, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলির সাথে মিলিয়ে অলিভিং রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করা উচিত। সঠিক জ্ঞান, অনুশীলন এবং সতর্কতার সাথে ট্রেড করলে এই পদ্ধতিটি লাভজনক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ