অভিনেতা

অভিনেতা (Actor) হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি মঞ্চ, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, বা অন্যান্য মাধ্যমে কোনো চরিত্রে অভিনয় করে থাকেন। একজন অভিনেতার প্রধান কাজ হলো কোনো নাটকের চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলা এবং দর্শকদের কাছে সেই চরিত্রটি সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা। অভিনয় একটি জটিল শিল্প যা শারীরিক ও মানসিক দক্ষতার সমন্বয়ে গঠিত।

অভিনয়ের ইতিহাস

অভিনয়ের ইতিহাস প্রাচীন গ্রিসের নাট্যচর্চার সাথে সম্পর্কিত। প্রাচীন গ্রিসে ডায়োনিসাস-এর সম্মানে যে উৎসব হতো, সেখানে অভিনেতাগণ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতেন। সময়ের সাথে সাথে অভিনয়ের ধরণ এবং মাধ্যম পরিবর্তিত হয়েছে। মধ্যযুগে ধর্মীয় নাটক এবং народный театр-এর মাধ্যমে অভিনয় প্রসারিত হয়। পরবর্তীতে উইলিয়াম শেক্সপিয়র-এর নাটকগুলি অভিনয়শিল্পীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীতে চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অভিনয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

অভিনয়ের প্রকারভেদ

অভিনয় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

মঞ্চ অভিনয়: এটি হলো সরাসরি দর্শকদের সামনে করা অভিনয়। এখানে অভিনেতাকে তাৎক্ষণিকভাবে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পেতে হয় এবং সেই অনুযায়ী নিজের অভিনয় পরিবর্তন করতে হয়। নাট্যশালা মঞ্চ অভিনয়ের প্রধান কেন্দ্র।
চলচ্চিত্র অভিনয়: এই ধরনের অভিনয়ে অভিনেতা ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেন। এখানে অভিনেতাকে একাধিকবার রিটেক করার সুযোগ থাকে এবং সম্পাদনার মাধ্যমে অভিনয়কে আরও নিখুঁত করা হয়। চলচ্চিত্র প্রযোজনা চলচ্চিত্র অভিনয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
টেলিভিশন অভিনয়: টেলিভিশন অভিনয়ে অভিনেতা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য অভিনয় করেন। এটি চলচ্চিত্র অভিনয়ের মতোই, তবে এখানে সময় এবং দৃশ্যের সীমাবদ্ধতা থাকে। টেলিভিশন অনুষ্ঠান টেলিভিশন অভিনয়ের প্রধান মাধ্যম।
রেডিও অভিনয়: রেডিও অভিনয়ে অভিনেতাকে শুধুমাত্র কণ্ঠের মাধ্যমে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হয়। এখানে কণ্ঠের স্বর, উচ্চারণ এবং অভিব্যক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেডিও নাটক রেডিও অভিনয়ের উদাহরণ।
ভয়েস অ্যাক্টিং: এটি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম এবং বিজ্ঞাপনের জন্য কণ্ঠ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। ডাবিং ভয়েস অ্যাক্টিং-এর একটি অংশ।

একজন অভিনেতার দক্ষতা

একজন সফল অভিনেতার মধ্যে কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকা অপরিহার্য। এই দক্ষতাগুলো হলো:

শারীরিক দক্ষতা: অভিনেতার শারীরিক ভাষা, অঙ্গভঙ্গি, হাঁটাচলা এবং অভিব্যক্তি সঠিক হতে হবে। শারীরিক থিয়েটার এই দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে।
কণ্ঠ দক্ষতা: স্পষ্ট উচ্চারণ, সঠিক স্বর এবং কণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ অভিনেতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কণ্ঠ প্রশিক্ষণ কণ্ঠ দক্ষতা উন্নত করতে সহায়ক।
মানসিক দক্ষতা: চরিত্রের আবেগ, অনুভূতি এবং মানসিক অবস্থা বুঝতে পারার ক্ষমতা অভিনেতার থাকতে হবে। অ্যাক্টিং টেকনিক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্মৃতিশক্তি: অভিনেতাকে সংলাপ মনে রাখতে হয় এবং তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হয়। স্মৃতি কৌশল এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
কল্পনাশক্তির ক্ষমতা: কোনো চরিত্রে প্রবেশ করার জন্য অভিনেতার কল্পনাশক্তি প্রবল হওয়া প্রয়োজন। অভিনয় প্রশিক্ষণ এই ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা: চারপাশের মানুষ এবং পরিবেশ থেকে ধারণা নিয়ে তা অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলার জন্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা জরুরি। চরিত্র বিশ্লেষণ এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

অভিনয় কৌশল

বিভিন্ন ধরনের অভিনয় কৌশল রয়েছে যা অভিনেতারা তাদের অভিনয়কে উন্নত করার জন্য ব্যবহার করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

স্ট্যানিস্লাভস্কির পদ্ধতি: এটি একটি জনপ্রিয় অভিনয় কৌশল যেখানে অভিনেতা তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং আবেগকে ব্যবহার করে চরিত্রের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। কনস্ট্যান্টিন স্ট্যানিস্লাভস্কি এই পদ্ধতির প্রবক্তা।
মেথড অ্যাক্টিং: এটি স্ট্যানিস্লাভস্কির পদ্ধতির একটি অংশ, যেখানে অভিনেতা সম্পূর্ণরূপে চরিত্রের মধ্যে ডুবে যান এবং তার মতো করে চিন্তা ও আচরণ করেন। মার্লন ব্রান্ডো এই পদ্ধতির একজন বিখ্যাত practitioner।
ব্রখ্টীয় অভিনয়: এই কৌশলটিতে অভিনেতা দর্শকদের আবেগ থেকে দূরে রেখে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখেন এবং চরিত্রটিকে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করেন। বের্টোল্ট ব্রেশ্ট এই পদ্ধতির প্রবক্তা।
ভিখটম্যানের টেকনিক: এই পদ্ধতিতে, অভিনেতারা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বাধাগুলি অতিক্রম করতে শেখে এবং চরিত্রটিকে আরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটিয়ে তোলে। মাইকেল চেখভ এই পদ্ধতির উদ্ভাবক।