অবতল পলিগন

অবতল পলিগন হলো জ্যামিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি বহুভুজ আকৃতির একটি রূপ, যেখানে অন্তত একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড় হয়। এই কারণে পলিগনটির একটি অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। সাধারণ ভাষায়, অবতল পলিগনকে ‘ইনডেন্টেড পলিগন’ও বলা হয়। এই নিবন্ধে অবতল পলিগনের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, গঠন, এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকারের সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

অবতল পলিগনের সংজ্ঞা

পলিগন হলো সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ একটি দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্র। পলিগনের প্রতিটি বাহু একটি সরলরেখা এবং এই সরলরেখাগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি আবদ্ধ আকৃতি তৈরি করে। যখন পলিগনের কোনো একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড় হয়, তখন সেই পলিগনকে অবতল পলিগন বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, যদি পলিগনের কোনো একটি বাহুকে বর্ধিত করলে অন্য কোনো বাহু সেই বর্ধিত রেখার উপর পতিত হয়, তবে সেটি অবতল পলিগন।

অবতল পলিগনের বৈশিষ্ট্য

অভ্যন্তরীণ কোণ: অবতল পলিগনের অন্তত একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড় হয়।
বাহু: অবতল পলিগনের বাহুগুলো সরলরেখা দ্বারা গঠিত।
শীর্ষবিন্দু: পলিগনের শীর্ষবিন্দু হলো সেই বিন্দু যেখানে দুটি বাহু মিলিত হয়।
অংশ: অবতল পলিগনের একটি অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যায়।
কর্ণ: অবতল পলিগনের কিছু কর্ণ পলিগনের বাইরে অবস্থিত হতে পারে।

অবতল পলিগনের প্রকারভেদ

অবতল পলিগন বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যা তাদের বাহু এবং কোণের উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

অবতল চতুর্ভুজ: যে চতুর্ভুজের একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড়, তাকে অবতল চতুর্ভুজ বলে।
অবতল পঞ্চভুজ: যে পঞ্চভুজের একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড়, তাকে অবতল পঞ্চভুজ বলে।
অবতল ষড়ভুজ: যে ষড়ভুজের একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড়, তাকে অবতল ষড়ভুজ বলে।

এভাবে, বাহুর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অবতল পলিগনের প্রকারভেদও বৃদ্ধি পায়।

অবতল পলিগনের গঠন

অবতল পলিগন গঠন করার জন্য কয়েকটি শর্ত অনুসরণ করতে হয়:

পলিগনের বাহুগুলো সরলরেখা হতে হবে।
বাহুগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি আবদ্ধ আকৃতি তৈরি করতে হবে।
অন্তত একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড় হতে হবে।

একটি অবতল পলিগন তৈরি করার জন্য প্রথমে কয়েকটি বিন্দু নির্বাচন করতে হয়। তারপর এই বিন্দুগুলোকে সরলরেখা দিয়ে যুক্ত করে পলিগনের বাহু তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে, একটি বাহুকে ভেতরের দিকে বাঁকিয়ে দিয়ে একটি অবতল কোণ তৈরি করতে হয়।

উত্তল পলিগনের সাথে পার্থক্য

উত্তল পলিগন এবং অবতল পলিগনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের অভ্যন্তরীণ কোণের মান এবং আকৃতির বৈশিষ্ট্য। উত্তল পলিগনের প্রতিটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে ছোট হয় এবং পলিগনটির কোনো অংশ ভেতরের দিকে ঢোকা থাকে না। অন্যদিকে, অবতল পলিগনের অন্তত একটি অভ্যন্তরীণ কোণ ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে বড় হয় এবং এর একটি অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যায়।


উত্তল পলিগন \| অবতল পলিগন \|	প্রতিটি কোণ ১৮০° এর চেয়ে ছোট \| অন্তত একটি কোণ ১৮০° এর চেয়ে বড় \|	কোনো অংশ ভেতরের দিকে ঢোকা থাকে না \| একটি অংশ ভেতরের দিকে ঢোকা থাকে \|	প্রতিটি কর্ণ পলিগনের ভেতরে থাকে \| কিছু কর্ণ পলিগনের বাইরে থাকতে পারে \|

অবতল পলিগনের ক্ষেত্রফল নির্ণয়

অবতল পলিগনের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার জন্য এটিকে কয়েকটি ত্রিভুজে ভাগ করে নিতে হয়। তারপর প্রতিটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করে সেগুলোকে যোগ করে পলিগনের মোট ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে:

ক্ষেত্রফল = Σ (1/2 * base_i * height_i)

এখানে, base_i হলো ত্রিভুজের ভূমি এবং height_i হলো ত্রিভুজের উচ্চতা।

বাস্তব জীবনে অবতল পলিগনের উদাহরণ

বাস্তব জীবনে অবতল পলিগনের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

নদীর গতিপথ: নদীর গতিপথ অনেক সময় অবতল পলিগনের মতো বাঁকানো থাকে।
ভূখণ্ড: কোনো অঞ্চলের ভূখণ্ড অবতল পলিগনের আকৃতির হতে পারে।
স্থাপত্য: অনেক স্থাপত্য নকশায় অবতল পলিগন ব্যবহার করা হয়।
পতাকা: কিছু দেশের পতাকায় অবতল পলিগন ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স: কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং ত্রিমাত্রিক মডেলিং-এ অবতল পলিগন বহুল ব্যবহৃত।

জ্যামিতিতে অবতল পলিগনের গুরুত্ব

জ্যামিতিতে অবতল পলিগনের গুরুত্ব অনেক। এটি কেবল একটি আকৃতি নয়, বরং এটি বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। অবতল পলিগন ব্যবহার করে বিভিন্ন জটিল আকৃতি তৈরি করা যায় এবং তাদের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা যায়। এছাড়াও, এটি ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাস এবং অন্যান্য গণিত বিষয়ক শাখায় ব্যবহৃত হয়।

অবতল পলিগন এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

যদিও অবতল পলিগন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে এর ধারণাগুলো টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এ ব্যবহৃত হতে পারে। চার্ট প্যাটার্ন এবং ট্রেন্ড লাইনগুলো বিশ্লেষণ করার সময়, এই জ্যামিতিক ধারণাগুলি সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের গতিবিধি একটি অবতল পলিগনের মতো আকার ধারণ করলে, তা বাজারের একটি বিশেষ প্রবণতা নির্দেশ করতে পারে। এই প্রবণতাগুলো চিহ্নিত করে একজন ট্রেডার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রতিরোধ এবং সমর্থন স্তর: অবতল পলিগনের শীর্ষ এবং নিম্নবিন্দুগুলো প্রতিরোধ স্তর এবং সমর্থন স্তর হিসেবে কাজ করতে পারে।
ট্রেন্ড লাইন: পলিগনের বাহুগুলো ব্যবহার করে ট্রেন্ড লাইন আঁকা যেতে পারে, যা বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।
চার্ট প্যাটার্ন: অবতল পলিগনের আকৃতি কিছু পরিচিত চার্ট প্যাটার্ন তৈরি করতে পারে, যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস বা ডাবল টপ।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং অবতল পলিগন

ভলিউম বিশ্লেষণ-এর ক্ষেত্রে, অবতল পলিগনের ধারণা ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি আরও ভালোভাবে বোঝা যেতে পারে। যদি কোনো অবতল পলিগনের আকৃতিতে দামের পরিবর্তন হয় এবং একই সময়ে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।

ভলিউম স্পাইক: পলিগনের গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুগুলোতে ভলিউম স্পাইক দেখা গেলে, তা বাজারের একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
ভলিউম কনফার্মেশন: পলিগনের ট্রেন্ড লাইনগুলো ভলিউম দ্বারা নিশ্চিত হলে, সেই ট্রেন্ডের উপর আস্থা রাখা যায়।
ডাইভারজেন্স: দামের গতিবিধি এবং ভলিউমের মধ্যে ডাইভারজেন্স দেখা গেলে, তা বাজারের দুর্বলতা নির্দেশ করে।

অন্যান্য জ্যামিতিক আকারের সাথে সম্পর্ক

অবতল পলিগন অন্যান্য জ্যামিতিক আকারের সাথে সম্পর্কিত। নিচে কয়েকটি সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:

ত্রিভুজ: ত্রিভুজ হলো তিনটি বাহু দ্বারা গঠিত একটি পলিগন। এটি উত্তল এবং অবতল উভয় প্রকারের হতে পারে।
চতুর্ভুজ: চতুর্ভুজ হলো চারটি বাহু দ্বারা গঠিত একটি পলিগন। এটিও উত্তল এবং অবতল উভয় প্রকারের হতে পারে।
বৃত্ত: বৃত্ত হলো একটি আবদ্ধ বক্ররেখা, যা কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত। অবতল পলিগন এবং বৃত্তের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
বহুভুজ: বহুভুজ হলো অসংখ্য বাহু দ্বারা গঠিত একটি পলিগন। অবতল পলিগন হলো বহুভুজের একটি বিশেষ রূপ।

উপসংহার

অবতল পলিগন জ্যামিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, গঠন এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকারের সাথে সম্পর্ক বোঝা গণিত এবং বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো আর্থিক বাজারে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও এই ধারণাগুলো সহায়ক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ