অপরাধের বংশগতি
অপরাধের বংশগতি
অপরাধের বংশগতি (Heritability of Criminality) একটি জটিল বিষয় যা অপরাধ আচরণের কারণ অনুসন্ধানে বংশগতির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে। অপরাধ সংঘটনের পেছনে পরিবেশ, সামাজিক প্রেক্ষাপট, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং জিনগত predispositions – এই সব কিছুর সম্মিলিত প্রভাব থাকে। এই নিবন্ধে অপরাধের বংশগতি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা, গবেষণা এবং বিতর্কিত বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
দীর্ঘকাল ধরে অপরাধের কারণ হিসেবে পরিবেশগত এবং সামাজিক কারণগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো অপরাধের ক্ষেত্রে জিনগত প্রভাবের সম্ভাবনাকে জোরালোভাবে সমর্থন করছে। এর অর্থ এই নয় যে অপরাধ শুধুমাত্র জিন দ্বারা নির্ধারিত হয়, বরং জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো একজন ব্যক্তিকে অপরাধমূলক আচরণে লিপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
অপরাধের বংশগতির মূল ধারণা
অপরাধের বংশগতি বলতে বোঝায়, অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হতে পারে। এর ভিত্তি হলো, মানুষের কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের ব্যক্তিত্ব, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা এবং সামাজিক আচরণকে প্রভাবিত করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো অপরাধমূলক আচরণে অবদান রাখতে পারে।
বংশগতি এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া
অপরাধের বংশগতি আলোচনার সময় একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, তা হলো জিন এবং পরিবেশের মধ্যে জটিল মিথস্ক্রিয়া। কোনো ব্যক্তি অপরাধে লিপ্ত হবে কিনা, তা শুধুমাত্র তার জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে না, বরং তার পরিবেশ, upbringing, শিক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য অভিজ্ঞতার ওপরও নির্ভরশীল।
গবেষণার পদ্ধতি
অপরাধের বংশগতি নিয়ে গবেষণার জন্য মূলত তিন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:
১. টুইন স্টাডি (Twin Studies): এই পদ্ধতিতে অভিন্ন (monozygotic) এবং ভিন্ন (dizygotic) যমজদের মধ্যে অপরাধের হার তুলনা করা হয়। অভিন্ন যমজদের জিনগত গঠন একই হওয়ায়, তাদের মধ্যে অপরাধের হারের পার্থক্য জিনগত প্রভাবের একটি ধারণা দেয়।
২. adoption স্টাডি (Adoption Studies): এই পদ্ধতিতে, যাদের শৈশবে পরিত্যাগ করা হয়েছে এবং অন্য পরিবারে দত্তক নেওয়া হয়েছে, তাদের অপরাধের হার তাদের জৈবিক (biological) এবং দত্তক নেওয়া (adoptive) বাবা-মায়ের অপরাধের হারের সাথে তুলনা করা হয়।
৩. ফ্যামিলি স্টাডি (Family Studies): এই পদ্ধতিতে, অপরাধী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল
বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো অপরাধের বংশগতির সম্ভাবনাকে সমর্থন করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করা হলো:
- টুইন স্টাডি: সুইডেনে করা একটি বিখ্যাত টুইন স্টাডিতে দেখা গেছে যে অভিন্ন যমজদের মধ্যে অপরাধের হার ভিন্ন যমজদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
- Adoption স্টাডি: ডেনমার্কে করা একটি adoption স্টাডিতে দেখা গেছে যে দত্তক নেওয়া সন্তানদের মধ্যে অপরাধের হার তাদের জৈবিক বাবা-মায়ের অপরাধের হারের সাথে সম্পর্কিত ছিল, দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের সাথে নয়।
- ফ্যামিলি স্টাডি: অপরাধী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অপরাধে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি দেখা যায়।
নির্দিষ্ট জিন এবং অপরাধ
বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট কিছু জিন চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন যা অপরাধের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় MAOA (Monoamine Oxidase A) নামক জিনের সাথে আগ্রাসী আচরণ এবং Antisocial Personality Disorder-এর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এছাড়াও, DRD4 (Dopamine Receptor D4) এবং 5-HTTLPR (Serotonin Transporter-Linked Polymorphic Region) নামক জিনগুলোও অপরাধের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে বলে মনে করা হয়।
অপরাধের বংশগতি বিষয়ক বিতর্ক
অপরাধের বংশগতি একটি বিতর্কিত বিষয়। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, বংশগতির ওপর অতিরিক্ত জোর দিলে সামাজিক এবং পরিবেশগত কারণগুলো উপেক্ষিত হতে পারে। তারা মনে করেন যে, অপরাধের মূল কারণ দারিদ্র্য, বৈষম্য, শিক্ষার অভাব এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা।
নৈতিক বিবেচনা
অপরাধের বংশগতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু নৈতিক বিবেচনা রয়েছে। যদি কোনো জিন অপরাধের সাথে সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে এর ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতে পারে। এছাড়া, জিনগত predispositions জানা গেলে, ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ অপরাধের জন্য দায়ী করা হতে পারে, যা ন্যায়বিচারের ধারণার পরিপন্থী।
অপরাধের বংশগতির প্রয়োগ
অপরাধের বংশগতি সম্পর্কিত জ্ঞান অপরাধ প্রতিরোধ এবং পুনর্বাসন কর্মসূচিতে কাজে লাগানো যেতে পারে। যাদের মধ্যে অপরাধের ঝুঁকি বেশি, তাদের জন্য early intervention program গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া, জিনগত predispositions অনুযায়ী ব্যক্তিগত পুনর্বাসন পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।
অপরাধের পূর্বাভাস এবং বংশগতি
অপরাধের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বংশগতির ব্যবহার একটি জটিল বিষয়। শুধুমাত্র জিনগত তথ্যের ভিত্তিতে কারো অপরাধী হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে, বংশগতি এবং পরিবেশগত কারণগুলো combined করে একটি ঝুঁকি মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
ভবিষ্যৎ গবেষণা
অপরাধের বংশগতি নিয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে genome-wide association studies (GWAS) এবং অন্যান্য advanced genetic techniques ব্যবহার করে অপরাধের সাথে সম্পর্কিত আরও জিন খুঁজে বের করা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া, জিন এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য longitudinal studies পরিচালনা করা যেতে পারে।
অপরাধের বংশগতি এবং বিচার ব্যবস্থা
অপরাধের বংশগতি বিচার ব্যবস্থার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বর্তমানে, অপরাধীকে দণ্ড দেওয়ার সময় তার জিনগত predispositions বিবেচনা করা হয় না। তবে, ভবিষ্যতে জিনগত তথ্য অপরাধীর পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে role play করতে পারে।
অপরাধের বংশগতি: একটি সারসংক্ষেপ
অপরাধের বংশগতি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। অপরাধ সংঘটনের পেছনে জিনগত প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি অংশ। পরিবেশ, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সম্মিলিত প্রভাব অপরাধমূলক আচরণকে প্রভাবিত করে। এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে অপরাধ প্রতিরোধের কার্যকর কৌশল তৈরি করা যায়।
টেবিল: অপরাধের বংশগতি বিষয়ক গবেষণার প্রকারভেদ
| গবেষণা পদ্ধতি | সুবিধা | অসুবিধা | টুইন স্টাডি | জিনগত প্রভাব মূল্যায়ন করা সহজ | পরিবেশগত কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন | Adoption স্টাডি | জিন এবং পরিবেশের প্রভাব আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা যায় | দত্তক নেওয়া সন্তানদের selection bias থাকতে পারে | ফ্যামিলি স্টাডি | অপরাধী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রবণতা বিশ্লেষণ করা যায় | জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলো আলাদা করা কঠিন |
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক
- অপরাধতত্ত্ব
- জিন
- ডিএনএ
- মনোবিজ্ঞান
- সামাজিক বিজ্ঞান
- পুনর্বাসন
- অপরাধ প্রতিরোধ
- Antisocial Personality Disorder
- MAOA জিন
- DRD4 জিন
- 5-HTTLPR জিন
- টুইন স্টাডি
- Adoption স্টাডি
- ফ্যামিলি স্টাডি
- Genome-wide association studies (GWAS)
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
- আচরণগত বংশগতি
- অপরাধের মনস্তত্ত্ব
- সামাজিক অপরাধতত্ত্ব
- অপরাধ বিচার ব্যবস্থা
- অপরাধের কারণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য লিঙ্ক:
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (Relative Strength Index)
- MACD (Moving Average Convergence Divergence)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- বলিঙ্গার ব্যান্ড
- ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
- ট্রেডিং ভলিউম
- অর্ডার ফ্লো
- টাইম এবং সেলস
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
- অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
