অনুসরণ
অনুসরণ : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল
ভূমিকা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি দ্রুত বর্ধনশীল আর্থিক বাজার। এখানে, বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে, সেই সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে ট্রেড করেন। এই ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে "অনুসরণ" একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। অনুসরণ বলতে বোঝায়, বাজারের প্রবণতা বা ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করা। এই নিবন্ধে, আমরা অনুসরণ কৌশলটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
অনুসরণ কৌশল কী?
অনুসরণ কৌশল হলো একটি ট্রেডিং পদ্ধতি, যেখানে বিনিয়োগকারীরা বাজারের বর্তমান প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করে। এর মূল ধারণা হলো, কোনো সম্পদ যদি একটি নির্দিষ্ট দিকে (যেমন: ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী) চলতে থাকে, তবে সেটি সেই দিকেই চলতে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এই কৌশলটি ট্রেন্ড ট্রেডিং নামেও পরিচিত।
অনুসরণের প্রকারভেদ
অনুসরণ কৌশল মূলত দুই ধরনের:
১. আপট্রেন্ড অনুসরণ (Following an Uptrend): যখন কোনো সম্পদের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তখন তাকে আপট্রেন্ড বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীরা কল অপশন (Call Option) কিনে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। আপট্রেন্ডে, সাধারণত নতুন উচ্চતમ (Higher Highs) এবং নতুন নিম্নતમ (Higher Lows) দেখা যায়।
২. ডাউনট্রেন্ড অনুসরণ (Following a Downtrend): যখন কোনো সম্পদের দাম ক্রমাগত কমতে থাকে, তখন তাকে ডাউনট্রেন্ড বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীরা পুট অপশন (Put Option) কিনে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। ডাউনট্রেন্ডে, সাধারণত নতুন নিম্নતમ (Lower Lows) এবং নতুন উচ্চતમ (Lower Highs) দেখা যায়।
অনুসরণ কৌশল ব্যবহারের সুবিধা
- সরলতা: এই কৌশলটি বোঝা এবং প্রয়োগ করা সহজ। নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি ভাল সূচনা বিন্দু হতে পারে।
- উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: শক্তিশালী প্রবণতা সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারলে, এই কৌশলে উচ্চ লাভের সম্ভাবনা থাকে।
- কম ঝুঁকি: বাজারের গতিবিধির সাথে তাল মিলিয়ে ট্রেড করার কারণে, ঝুঁকির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
অনুসরণ কৌশল ব্যবহারের অসুবিধা
- ভুল সংকেত: অনেক সময় বাজারে ভুল সংকেত আসতে পারে, যার ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- প্রবণতা পরিবর্তনের ঝুঁকি: কোনো প্রবণতা হঠাৎ করে বিপরীত দিকে ঘুরে গেলে, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
- সময়সাপেক্ষ: সঠিক প্রবণতা সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
অনুসরণ কৌশল প্রয়োগের নিয়মাবলী
১. প্রবণতা সনাক্তকরণ:
প্রথমত, আপনাকে বাজারের প্রবণতা সনাক্ত করতে হবে। এর জন্য আপনি বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করতে পারেন, যেমন:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় মূল্য দেখায়। আপট্রেন্ডে, দাম মুভিং এভারেজের উপরে থাকে এবং ডাউনট্রেন্ডে, দাম মুভিং এভারেজের নিচে থাকে। মুভিং এভারেজ কিভাবে কাজ করে তা ভালোভাবে জানতে হবে।
- ট্রেন্ড লাইন (Trend Line): এটি চার্টে আঁকা একটি সরলরেখা, যা দামের গতিবিধি নির্দেশ করে। আপট্রেন্ডে, ট্রেন্ড লাইনটি বাম থেকে ডানে উপরে দিকে এবং ডাউনট্রেন্ডে, এটি বাম থেকে ডানে নিচে দিকে থাকে।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): এটি একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর, যা দামের গতি এবং পরিবর্তনের হার পরিমাপ করে। RSI-এর মান ৭০-এর উপরে গেলে ওভারবট (Overbought) এবং ৩০-এর নিচে গেলে ওভারসোল্ড (Oversold) হিসেবে ধরা হয়। RSI সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
- MACD (Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়। MACD-এর সিগন্যাল লাইন ক্রসওভার (Crossover) ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে। MACD কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা জানতে হবে।
২. সঠিক অপশন নির্বাচন:
প্রবণতা সনাক্ত করার পর, আপনাকে সঠিক অপশন নির্বাচন করতে হবে। যদি আপনি আপট্রেন্ড অনুসরণ করেন, তবে কল অপশন কিনুন এবং ডাউনট্রেন্ড অনুসরণ করলে, পুট অপশন কিনুন।
| প্রবণতা | অপশন | আপট্রেন্ড | কল অপশন | ডাউনট্রেন্ড | পুট অপশন |
৩. সময়সীমা নির্ধারণ:
অপশনের মেয়াদকাল (Expiry Time) নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পমেয়াদী প্রবণতার জন্য, কম মেয়াদকালের অপশন এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার জন্য, বেশি মেয়াদকালের অপশন নির্বাচন করা উচিত। মেয়াদকাল কিভাবে নির্ধারণ করতে হয়, তা জানতে হবে।
৪. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা:
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য, আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখুন এবং স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order) ব্যবহার করুন। স্টপ-লস অর্ডার হলো এমন একটি নির্দেশ, যা আপনার প্রত্যাশিত দামের নিচে নেমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করে দেয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
৫. পোর্টফোলিও তৈরি:
আপনার পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করুন। বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করুন, যাতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে। পোর্টফোলিও তৈরি করার নিয়মাবলী জানতে হবে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের গুরুত্ব
অনুসরণ কৌশলের সাফল্যের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হলো চার্ট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা এবং ভবিষ্যৎ মূল্যবিধিPredict করার একটি পদ্ধতি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Support and Resistance Level): সাপোর্ট লেভেল হলো সেই দাম, যেখানে চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম কমার প্রবণতা কমে যায়। রেজিস্ট্যান্স লেভেল হলো সেই দাম, যেখানে সরবরাহ বেশি থাকার কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা কমে যায়।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): ক্যান্ডেলস্টিক চার্টগুলো দামের গতিবিধি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যেমন: ডজি (Doji), বুলিশ এনগালফিং (Bullish Engulfing), বিয়ারিশ এনগালফিং (Bearish Engulfing) ইত্যাদি, ভবিষ্যৎ মূল্যবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি একটি জনপ্রিয় টুল, যা সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে।
ভলিউম বিশ্লেষণের গুরুত্ব
ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেনা-বেচার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- আপট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: যদি আপট্রেন্ডের সময় ভলিউম বাড়ে, তবে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।
- ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: যদি ডাউনট্রেন্ডের সময় ভলিউম বাড়ে, তবে এটি একটি শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ড নির্দেশ করে।
- কম ভলিউম: কম ভলিউম দুর্বল প্রবণতা নির্দেশ করে এবং প্রবণতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- ধৈর্যশীল হোন: অনুসরণ কৌশল প্রয়োগের জন্য ধৈর্যশীল হওয়া খুবই জরুরি। তাড়াহুড়ো করে ট্রেড করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- মার্কেট নিউজ অনুসরণ করুন: বাজারের খবর এবং অর্থনৈতিক ডেটা অনুসরণ করুন। এই তথ্যগুলো বাজারের গতিবিধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কেট নিউজ কিভাবে অনুসরণ করতে হয়, তা জানতে হবে।
- ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। তারপর আসল টাকা দিয়ে ট্রেড শুরু করুন। ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জানতে হবে।
- মানসিক শৃঙ্খলা বজায় রাখুন: ট্রেডিংয়ের সময় মানসিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেগতাড়িত হয়ে ট্রেড করলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার
অনুসরণ কৌশল বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে, যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। বাজারের প্রবণতা সনাক্তকরণ, সঠিক অপশন নির্বাচন, সময়সীমা নির্ধারণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কৌশলের মাধ্যমে লাভবান হওয়া সম্ভব। টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণ আপনার ট্রেডিং সিদ্ধান্তগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। মনে রাখবেন, ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি রয়েছে, তাই সর্বদা সতর্কতার সাথে ট্রেড করুন এবং নিজের আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে বিনিয়োগ করুন।
আরও জানতে:
- বাইনারি অপশন ট্রেডিং
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- পোর্টফোলিও
- মার্কেট নিউজ
- ডেমো অ্যাকাউন্ট
- ট্রেন্ড ট্রেডিং
- মুভিং এভারেজ
- RSI
- MACD
- মেয়াদকাল
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- অপশন ট্রেডিং
- ট্রেডিং কৌশল
- আর্থিক বাজার
- বিনিয়োগ
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
