Variance Ratio Test

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট (Variance Ratio Test) একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি যা কোনো টাইম সিরিজের (Time series) ডেটা স্বাভাবিক বণ্টন (Normal distribution) থেকে বিচ্যুত কিনা, তা পরীক্ষা করে। এটি মূলত ফিনান্সিয়াল ইকোনমিক্স (Financial economics)-এ ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে শেয়ার বাজার বা অন্যান্য আর্থিক বাজারের ডেটা বিশ্লেষণের জন্য। এই টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় বাজারের কার্যকারিতা কার্যকর বাজার তত্ত্ব (Efficient market hypothesis)-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের মূল ধারণা

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের মূল ধারণাটি হলো, যদি কোনো বাজার সম্পূর্ণরূপে কার্যকর (Efficient) হয়, তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়কালের রিটার্নের ভ্যারিয়েন্স (Variance), ঐ সময়কালের ছোট সময়কালের রিটার্নের ভ্যারিয়েন্সের সমষ্টির সমান হবে। অন্যভাবে বলা যায়, যদি বাজার র‍্যান্ডম ওয়াক (Random walk) অনুসরণ করে, তবে দীর্ঘমেয়াদী রিটার্নের ভ্যারিয়েন্স স্বল্পমেয়াদী রিটার্নের ভ্যারিয়েন্সের একটি সরল গুণিতক হবে।

যদি এই সম্পর্কটি সত্য না হয়, তবে ধরে নেওয়া হয় যে বাজারে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা (Anomaly) রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।

পরীক্ষার পদ্ধতি

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা হয়:

১. ডেটা সংগ্রহ: প্রথমে, যে টাইম সিরিজের ডেটা নিয়ে কাজ করতে হবে, তা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত, এটি কোনো শেয়ারের দৈনিক বা সাপ্তাহিক রিটার্ন (Return)-এর ডেটা হতে পারে।

২. সময়কাল নির্বাচন: এরপর, বিভিন্ন সময়কাল নির্বাচন করতে হয়। যেমন - দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ইত্যাদি।

৩. রিটার্ন গণনা: প্রতিটি সময়কালের জন্য রিটার্ন গণনা করতে হয়। রিটার্ন সাধারণত শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।

৪. ভ্যারিয়েন্স গণনা: প্রতিটি সময়কালের রিটার্নের ভ্যারিয়েন্স গণনা করতে হয়। ভ্যারিয়েন্স হলো ডেটা পয়েন্টগুলোর গড় থেকে দূরত্বের বর্গসমূহের গড়।

৫. ভ্যারিয়েন্স রেশিও গণনা: এরপর, বিভিন্ন সময়কালের ভ্যারিয়েন্সের অনুপাত (Ratio) নির্ণয় করতে হয়। যদি k সংখ্যক সময়কাল নেওয়া হয়, তবে ভ্যারিয়েন্স রেশিও হবে:

VR(k) = Var(R(k)) / k * Var(R(1))

এখানে,

VR(k) হলো k সময়কালের ভ্যারিয়েন্স রেশিও।
R(k) হলো k সময়কালের রিটার্ন।
Var হলো ভ্যারিয়েন্স।

৬. পরিসংখ্যানিক তাৎপর্য (Statistical significance) পরীক্ষা: সবশেষে, এই ভ্যারিয়েন্স রেশিও একটি নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানিক মানের (যেমন, ২) সাথে তুলনা করা হয়। যদি ভ্যারিয়েন্স রেশিও এই মানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হয়, তবে ধরে নেওয়া হয় যে বাজারটি কার্যকর নয়। এই পরীক্ষার জন্য সাধারণত টি-টেস্ট (T-test) বা এফ-টেস্ট (F-test) ব্যবহার করা হয়।

টেবিল-ভিত্তিক উদাহরণ

ধরা যাক, আমরা একটি শেয়ারের দৈনিক রিটার্নের ডেটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা নিম্নলিখিত সময়কালগুলো বিবেচনা করছি:

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের উদাহরণ
! রিটার্নের ভ্যারিয়েন্স \|! ভ্যারিয়েন্স রেশিও (k=5) \|	0.0004 \| - \|	0.0020 \| 0.0020 / (5 * 0.0004) = 1.0 \|	0.0080 \| 0.0080 / (20 * 0.0004) = 1.0 \|

এই উদাহরণে, সাপ্তাহিক এবং মাসিক রিটার্নের ভ্যারিয়েন্স রেশিও ১.০, যা নির্দেশ করে যে বাজারটি কার্যকর হতে পারে। যদি ভ্যারিয়েন্স রেশিও ১.০ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হতো, তবে আমরা বাজারের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ করতে পারতাম।

টেস্টের সীমাবদ্ধতা

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

নন-নরমালিটি (Non-normality): এই টেস্টটি ধরে নেয় যে রিটার্ন ডেটা স্বাভাবিকভাবে বণ্টিত। যদি ডেটা স্বাভাবিকভাবে বণ্টিত না হয়, তবে পরীক্ষার ফলাফল ভুল হতে পারে।
অটো correlation (Autocorrelation): যদি ডেটাতে অটো correlation থাকে, তবে ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে।
নমুনা আকার (Sample size): ছোট আকারের নমুনার ক্ষেত্রে এই টেস্টের ক্ষমতা কম থাকে।

বাস্তব জীবনে প্রয়োগ

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

বাজারের কার্যকারিতা মূল্যায়ন: এই টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় যে কোনো বাজার দুর্বলভাবে কার্যকর (Weakly efficient), আধা-শক্তিশালীভাবে কার্যকর (Semi-strongly efficient) নাকি শক্তিশালীভাবে কার্যকর (Strongly efficient)।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk management): এই টেস্টের ফলাফল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
পোর্টফোলিও (Portfolio) গঠন: বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও তৈরি করার সময় এই টেস্টের ফলাফল বিবেচনা করতে পারেন।
আর্বিট্রেজ (Arbitrage) সুযোগ সনাক্তকরণ: বাজারের অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করে আর্বিট্রেজ সুযোগ খুঁজে বের করা যেতে পারে।

অন্যান্য সম্পর্কিত পরীক্ষা

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের পাশাপাশি আরও কিছু পরিসংখ্যানিক পরীক্ষা রয়েছে, যা বাজারের কার্যকারিতা মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়:

Ljung-Box test: এই পরীক্ষাটি অটো correlation সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
Jarque-Bera test: এই পরীক্ষাটি ডেটার স্বাভাবিকতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়।
Runs test: এই পরীক্ষাটি ডেটার র‍্যান্ডমনেস (Randomness) পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
Lo and MacKinlay test: এটি ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের একটি বিকল্প, যা আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্ক

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্টের ফলাফল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical analysis)-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট বাজারের অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করে, তবে টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টরা চার্ট প্যাটার্ন (Chart pattern) এবং ইন্ডিকেটর (Indicator) ব্যবহার করে সেই অস্বাভাবিকতার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারেন।

ভলিউম বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্ক

ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume analysis)-এর মাধ্যমেও বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। যদি ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট বাজারের অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করে এবং একই সময়ে ভলিউম ডেটাতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ প্রয়োগ

বাইনারি অপশন (Binary option) ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য মুভমেন্ট (Movement) সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যদি টেস্টটি বাজারের কার্যকারিতার অভাব নির্দেশ করে, তাহলে ট্রেডাররা সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল (Trading strategy) অবলম্বন করতে পারেন। তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তাই সতর্কতার সাথে ট্রেড করা উচিত।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সম্ভাব্যতা (Probability) এবং পরিসংখ্যান (Statistics)-এর ধারণা ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট বোঝার জন্য অপরিহার্য।
অর্থMetrics (Econometrics) এবং টাইম সিরিজ বিশ্লেষণের জ্ঞান এই টেস্টের প্রয়োগে সাহায্য করে।
বিভিন্ন সফটওয়্যার (Software) যেমন R, Python, এবং MATLAB ব্যবহার করে ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট করা যায়।

উপসংহার

ভ্যারিয়েন্স রেশিও টেস্ট একটি শক্তিশালী পরিসংখ্যানিক সরঞ্জাম, যা বাজারের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে এবং বিনিয়োগের সুযোগ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। তবে, এই টেস্টের সীমাবদ্ধতাগুলি বিবেচনায় রাখা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে মিলিয়ে ফলাফল বিশ্লেষণ করা উচিত।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ