রবার্ট মার্টন
রবার্ট মার্টন
রবার্ট সি. মার্টন একজন আমেরিকান অর্থনীতিবিদ যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি মূলত ডেরিভেটিভ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের জন্য পরিচিত। তার গবেষণা অর্থায়ন তত্ত্বের আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই নিবন্ধে রবার্ট মার্টনের জীবন, কর্ম এবং অবদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জীবন এবং শিক্ষা
রবার্ট মার্টন ১৯৪৩ সালের ২৫শে জুলাই নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে ১৯৫৯ সালে গণিত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬০ সালে এমআইটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
মার্টন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে এবং বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়-এ শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৫ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং সেখানেই তিনি বর্তমানে অধ্যাপনা করছেন। তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।
অবদান
রবার্ট মার্টনের প্রধান অবদানগুলো হলো:
১. ব্ল্যাক-স্কোলস মডেলের উন্নয়ন:
মার্টন মাইরন স্কোলস এবং ফিশার ব্ল্যাক-এর সাথে যৌথভাবে ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল (Black-Scholes Model) তৈরি করেন। এই মডেলটি অপশনের মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই মডেলের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা অপশনের ন্যায্য মূল্য বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডেরিভেটিভ মার্কেট-এর বিকাশে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
২. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা:
মার্টন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি পরিমাপ এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তার মডেলগুলো পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
৩. কন্টিনজেন্ট ক্লেইম ভ্যালুয়েশন (Contingent Claim Valuation):
মার্টন কন্টিনজেন্ট ক্লেইম ভ্যালুয়েশন তত্ত্বের বিকাশ ঘটান, যা বিভিন্ন ধরনের আর্থিক উপকরণের মূল্য নির্ধারণে সহায়ক। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনো সম্পদের মূল্য তার ভবিষ্যৎ আয়ের উপর নির্ভরশীল।
৪. অভ্যন্তরীণ অপশন (Insider Option):
মার্টন কর্পোরেট ফিনান্সের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ অপশন ধারণাটি প্রবর্তন করেন। এই ধারণা অনুযায়ী, কোম্পানির ব্যবস্থাপকদের কাছে কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষ তথ্য থাকে, যা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
মার্টনের কাজের প্রভাব
রবার্ট মার্টনের কাজ ফিনান্সিয়াল মার্কেট এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার মডেলগুলো বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে। ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল অপশন ট্রেডিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এটি আধুনিক অর্থায়নের একটি অপরিহার্য অংশ।
বাইনারি অপশন এবং মার্টনের মডেল
বাইনারি অপশন হলো একটি সরলীকৃত আর্থিক উপকরণ, যেখানে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। যদিও মার্টনের ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল সরাসরি বাইনারি অপশনের মূল্য নির্ধারণের জন্য তৈরি করা হয়নি, তবে এর মূল ধারণাগুলো বাইনারি অপশনের মূল্য নির্ধারণে ব্যবহৃত হতে পারে। বাইনারি অপশনের ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় যদি তার অনুমান সঠিক হয়, অন্যথায় তিনি বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ হারান।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল:
- ট্রেন্ড ফলোয়িং (Trend Following): বাজারের প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করা।
- ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স লেভেল ভেদ করে ট্রেড করা।
- পিনি বার কৌশল (Pin Bar Strategy): প্রাইস অ্যাকশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেড করা।
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য নির্ধারণ করে ট্রেড করা।
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): ওভারবট এবং ওভারসোল্ড অবস্থা সনাক্ত করে ট্রেড করা।
- এফআইবিওনাক্কি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স লেভেল খুঁজে বের করা।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে ট্রেড করা।
- ম্যাকডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ট্রেড করা।
- স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের পরিসর বিশ্লেষণ করে ট্রেড করা।
- ইমুভিং এভারেজ (EMA - Exponential Moving Average): সাম্প্রতিক দামের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে মুভিং এভারেজ গণনা করা।
- ডাবল টপ এবং ডাবল বটম (Double Top and Double Bottom): চার্টে এই ধরনের প্যাটার্ন দেখে ট্রেড করা।
- হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders): চার্টে এই ধরনের প্যাটার্ন দেখে ট্রেড করা।
- ট্রায়াঙ্গেল প্যাটার্ন (Triangle Pattern): চার্টে বিভিন্ন ধরনের ট্রায়াঙ্গেল প্যাটার্ন দেখে ট্রেড করা।
- ফ্ল্যাগ এবং পেন্যান্ট (Flag and Pennant): স্বল্পমেয়াদী কন্টিনিউয়েশন প্যাটার্ন।
- চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern): বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে ট্রেড করা।
ভলিউম বিশ্লেষণ:
ভলিউম (Volume) হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো সম্পদের কতগুলো ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার সংখ্যা। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV - On Balance Volume): ভলিউমের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা নির্ণয় করা।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP - Volume Weighted Average Price): ভলিউম এবং দামের সমন্বয়ে গড় মূল্য নির্ধারণ করা।
- অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন (Accumulation/Distribution Line): বাজারের গতিবিধি এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
রবার্ট মার্টন ১৯৯৭ সালে আলফ্রেড নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কার অর্থনীতিতে যৌথভাবে লাভ করেন। এই পুরস্কারের কারণ ছিল অপশন প্রাইসিং তত্ত্বের উন্নয়ন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
সমালোচনা
মার্টনের মডেলগুলো কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। ব্ল্যাক-স্কোলস মডেলের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন এটি বাজারের অস্থিরতা এবং লেনদেন খরচ সঠিকভাবে বিবেচনা করে না। এছাড়াও, মডেলটি স্বাভাবিক বিতরণ (Normal Distribution) ধরে নেয়, যা বাস্তব বাজারে সবসময় সঠিক হয় না।
উপসংহার
রবার্ট মার্টন আধুনিক অর্থায়ন তত্ত্বের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার গবেষণা আর্থিক বাজার এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল এবং কন্টিনজেন্ট ক্লেইম ভ্যালুয়েশন তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। যদিও তার মডেলগুলোর কিছু সমালোচনা রয়েছে, তবুও এগুলোর ব্যবহারিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনীতিবিদদের জন্য অনুপ্রেরণা।
আরও জানতে:
- অর্থায়ন
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ডেরিভেটিভ
- অপশন
- ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল
- অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার
- ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং
- পোর্টফোলিও
- মাইরন স্কোলস
- ফিশার ব্ল্যাক
- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
- নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়
- গণিত
- অর্থনীতি
- কন্টিনজেন্ট ক্লেইম ভ্যালুয়েশন
- অভ্যন্তরীণ অপশন
- বাইনারি অপশন
- ট্রেন্ড ফলোয়িং
- ভলিউম
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
