মাইকেল পোর্টার

মাইকেল ই. পোর্টার একজন আমেরিকান একাডেমিক এবং লেখক। তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল-এর বিশদ গবেষণা এবং কৌশলগত ব্যবস্থাপনার উপর কাজের জন্য বিখ্যাত। পোর্টার ব্যবসায়িক কৌশল, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর প্রভাবশালী ধারণা দিয়েছেন। এই নিবন্ধে, তার জীবন, কর্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

জীবন এবং কর্মজীবন

মাইকেল পোর্টার ১৯৪7 সালের 23শে সেপ্টেম্বর মিশিগানের ফ্লিণ্টে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হার্ভার্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে Bishop Wilbur D. Kates Professor of Business Administration হিসেবে কর্মরত আছেন।

পোর্টার শুধু একজন শিক্ষাবিদ নন, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

পোর্টারের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বসমূহ

মাইকেল পোর্টার ব্যবসায়িক কৌশল এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

ফাইভ ফোর্সেস মডেল (Five Forces Model): পোর্টারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই মডেলটি কোনো শিল্পের আকর্ষণীয়তা এবং প্রতিযোগিতার তীব্রতা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই মডেলে পাঁচটি প্রধান শক্তিকে বিবেচনা করা হয়:

  ১. নতুন প্রতিযোগীর হুমকি (Threat of New Entrants)
  ২. সরবরাহকারীদের দর কষাকষির ক্ষমতা (Bargaining Power of Suppliers)
  ৩. ক্রেতাদের দর কষাকষির ক্ষমতা (Bargaining Power of Buyers)
  ৪. বিকল্প পণ্যের হুমকি (Threat of Substitute Products or Services)
  ৫. শিল্পের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিযোগীদের মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Rivalry Among Existing Competitors)

  এই পাঁচটি শক্তি বিশ্লেষণ করে একটি কোম্পানি বুঝতে পারে যে বাজারে তার অবস্থান কোথায় এবং কীভাবে সে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করতে পারে।

ভ্যালু চেইন অ্যানালাইসিস (Value Chain Analysis): এই মডেলটি একটি কোম্পানির কার্যক্রমগুলোকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে, যা পণ্য বা পরিষেবা তৈরি এবং বিতরণে যুক্ত। প্রতিটি অংশের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে কোম্পানি কোথায় মূল্য যোগ করতে পারে এবং খরচ কমাতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারে। ভ্যালু চেইন অ্যানালাইসিস দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

  ১. প্রাইমারি অ্যাক্টিভিটিস (Primary Activities): সরাসরি পণ্য তৈরি এবং বিতরণে জড়িত কার্যক্রম, যেমন - ইনবাউন্ড লজিস্টিকস, অপারেশনস, আউটবাউন্ড লজিস্টিকস, মার্কেটিং ও সেলস, এবং সার্ভিস।
  ২. সাপোর্ট অ্যাক্টিভিটিস (Support Activities): প্রাইমারি অ্যাক্টিভিটিসগুলোকে সমর্থন করে এমন কার্যক্রম, যেমন - ফার্ম ইনফ্রাস্ট্রাকচার, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, এবং প্রকিউরমেন্ট।

জেনেরিক স্ট্র্যাটেজিস (Generic Strategies): পোর্টার অনুযায়ী, একটি কোম্পানি তিনটি প্রধান কৌশল অনুসরণ করে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারে:

  ১. কস্ট লিডারশিপ (Cost Leadership): সবচেয়ে কম খরচে পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদন করা এবং বাজারে কম দামে বিক্রি করা।
  ২. ডিফারেন্সিয়েশন (Differentiation): এমন একটি বৈশিষ্ট্য তৈরি করা যা কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবাগুলোকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে এবং গ্রাহকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
  ৩. ফোকাস (Focus): একটি নির্দিষ্ট বাজার বা গ্রাহক গোষ্ঠীর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা এবং তাদের চাহিদা পূরণ করা।

ক্লাস্টার থিওরি (Cluster Theory): পোর্টার ক্লাস্টার তত্ত্বের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি অবস্থিত কোম্পানি, সরবরাহকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি নেটওয়ার্ক উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতামূলকতাকে উৎসাহিত করে। এই ক্লাস্টারগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিলিকন ভ্যালি এর উদাহরণ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে পোর্টারের তত্ত্বের সম্পর্ক

যদিও মাইকেল পোর্টারের তত্ত্বগুলো মূলত ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে আলোচনা করে, তবে এগুলোর কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।

১. ফাইভ ফোর্সেস মডেল: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, একজন ট্রেডারকে বাজারের বিভিন্ন শক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। যেমন - বাজারের পরিবর্তনশীলতা, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক, এবং রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ট্রেডিংয়ের উপর প্রভাব ফেলে।

২. ভ্যালু চেইন অ্যানালাইসিস: একজন ট্রেডার তার ট্রেডিং কার্যক্রমকে একটি ভ্যালু চেইন হিসেবে দেখতে পারেন। এখানে, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ট্রেড নেওয়া এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

৩. জেনেরিক স্ট্র্যাটেজিস: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। একজন ট্রেডার কস্ট লিডারশিপের মতো কম ঝুঁকিতে ট্রেড করতে পারেন, অথবা ডিফারেন্সিয়েশনের মতো বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।

পোর্টারের কাজের প্রভাব

মাইকেল পোর্টারের কাজ ব্যবসায়িক কৌশল এবং ব্যবস্থাপনার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার তত্ত্বগুলো সারা বিশ্বের ব্যবসায়িক স্কুলগুলোতে পড়ানো হয় এবং বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কৌশল নির্ধারণে ব্যবহার করে। পোর্টারের কাজের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:

ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণে নতুন দিকনির্দেশনা।
শিল্পের গঠন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি।
মূল্য সংযোজন এবং খরচ কমানোর উপায় খুঁজে বের করা।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্লাস্টার তৈরির ধারণা।
প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের উপায় নির্ধারণ।

সমালোচনা

মাইকেল পোর্টারের তত্ত্বগুলো ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হলেও কিছু সমালোচিত হয়েছে। কিছু সমালোচকের মতে, তার মডেলগুলো খুব বেশি স্থিতিশীল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারের জন্য উপযুক্ত নয়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তার তত্ত্বগুলো বড় কোম্পানির জন্য বেশি উপযোগী, ছোট কোম্পানির জন্য নয়।

পোর্টারের লেখালেখি

মাইকেল পোর্টার বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী বই লিখেছেন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো:

Competitive Strategy (1980)
Competitive Advantage (1985)
The Competitive Advantage of Nations (1990)
On Competition (1998)
Redefining Strategy (2008)

এই বইগুলো ব্যবসায়িক কৌশল এবং ব্যবস্থাপনার উপর লেখা ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

উপসংহার

মাইকেল পোর্টার ব্যবসায়িক কৌশল এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণের একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ। তার তত্ত্বগুলো ব্যবসায়িক জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনে সাহায্য করেছে। অর্থনীতি এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।

মাইকেল পোর্টারের কাজের ক্ষেত্র
ক্ষেত্র	বিবরণ
কৌশলগত ব্যবস্থাপনা	ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ	শিল্পের গঠন এবং প্রতিযোগিতার তীব্রতা বিশ্লেষণ
অর্থনৈতিক উন্নয়ন	ক্লাস্টার তৈরি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
ভ্যালু চেইন বিশ্লেষণ	মূল্য সংযোজন এবং খরচ কমানো
উদ্ভাবন	নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরি

এই নিবন্ধটি মাইকেল পোর্টারের জীবন, কর্ম এবং তত্ত্বগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। তার কাজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, তার লেখা বই এবং অন্যান্য গবেষণা প্রবন্ধ পড়া যেতে পারে।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ