ভাইবার
ভাইবার : একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
ভাইবার (Viber) একটি জনপ্রিয় যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন যা তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান এবং ভয়েস ও ভিডিও কলের সুবিধা প্রদান করে। এটি মূলত স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। রাকুটেন (Rakuten) কর্পোরেশন এই অ্যাপটির মালিক। ভাইবার শুধু একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে, যা এটিকে অন্যান্য অ্যাপ থেকে আলাদা করেছে। এই নিবন্ধে ভাইবারের ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভাইবারের ইতিহাস
ভাইবারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে, যখন তালমোন মারকো এবং ইগোর ম্যাগাজিনিক নামক দুই উদ্যোক্তা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIP) প্রযুক্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে ফোন কল করার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে এটি শুধুমাত্র পিসি-টু-পিসি কলিং-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ২০১০ সালে, ভাইবার আইওএস (iOS) এবং অ্যান্ড্রয়েড (Android) প্ল্যাটফর্মের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করে, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১১ সালে, জাপানি ই-কমার্স কোম্পানি রাকুটেন ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ভাইবার কিনে নেয়। এরপর থেকে রাকুটেনের অধীনে ভাইবার আরও উন্নত এবং সম্প্রসারিত হয়েছে।
ভাইবারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
ভাইবার ব্যবহারকারীদের জন্য অসংখ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে। এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মেসেজিং: ভাইবার ব্যবহারকারীরা টেক্সট মেসেজ, ছবি, ভিডিও এবং স্টিকার আদান-প্রদান করতে পারেন।
- ভয়েস এবং ভিডিও কল: এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনামূল্যে ভয়েস এবং ভিডিও কল করা যায়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।
- ভাইবার আউট: ভাইবার আউট-এর মাধ্যমে ভাইবার ব্যবহারকারীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কম খরচে ফোন কল করতে পারেন।
- ভাইবার কমিউনিটি: এটি ব্যবহারকারীদের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গ্রুপ তৈরি এবং যোগদানের সুযোগ দেয়।
- ভাইবার পেমেন্টস: কিছু নির্দিষ্ট দেশে ভাইবার পেমেন্টস-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়।
- স্টিকার ও গিবফ: ভাইবার স্টিকার এবং গিবফ-এর একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে, যা মেসেজিংকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।
- সিক্রেট চ্যাট: ভাইবার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সিক্রেট চ্যাট, যেখানে মেসেজ নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায় এবং যা প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারে না।
- ভাইবার লেন্স: এই ফিচারের মাধ্যমে ছবি তোলার সময় বিভিন্ন ফিল্টার এবং এফেক্ট ব্যবহার করা যায়।
- পাবলিক অ্যাকাউন্ট: বিভিন্ন ব্যবসা ও ব্র্যান্ড তাদের পাবলিক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
ভাইবারের ব্যবহার
ভাইবার ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহারবিধি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ব্যক্তিগত ব্যবহার: বন্ধু এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ভাইবার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বিনামূল্যে ভয়েস ও ভিডিও কলিং এবং মেসেজিং-এর সুবিধা থাকায় এটি ব্যবহারকারীদের কাছে খুব পছন্দের।
- ব্যবসায়িক ব্যবহার: অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ এবং প্রচারের জন্য ভাইবার ব্যবহার করে। ভাইবার পাবলিক অ্যাকাউন্ট এবং চ্যাটবট ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করা যায়।
- আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: ভাইবার আউট-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল করা সহজ এবং সাশ্রয়ী হওয়ায়, এটি প্রবাসী বাঙালিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম।
- শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার: শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ, আলোচনা এবং শিক্ষামূলক উপকরণ আদান-প্রদানের জন্য ভাইবার ব্যবহার করতে পারেন।
ভাইবারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা
ভাইবার ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন: ভাইবার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যার ফলে প্রেরক এবং প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ মেসেজ পড়তে পারে না।
- সিক্রেট চ্যাট: এই ফিচারের মাধ্যমে পাঠানো মেসেজ নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়, যা গোপনীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক।
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন: অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য ভাইবার টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন-এর সুবিধা প্রদান করে।
- ব্লক এবং রিপোর্ট: ব্যবহারকারীরা অবাঞ্ছিত ব্যবহারকারীদের ব্লক এবং রিপোর্ট করতে পারেন।
- গোপনীয়তা সেটিংস: ভাইবার ব্যবহারকারীদের তাদের প্রোফাইল এবং তথ্যের গোপনীয়তা সেটিংস নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়।
ভাইবারের বিকল্পসমূহ
বাজারে ভাইবারের মতো আরও অনেক মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু বিকল্প হলো:
- হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp): সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা টেক্সট, ভয়েস ও ভিডিও কলিং-এর সুবিধা প্রদান করে। হোয়াটসঅ্যাপ
- টেলিগ্রাম (Telegram): এটি নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার জন্য পরিচিত, এবং বড় আকারের ফাইল শেয়ার করার সুবিধা রয়েছে। টেলিগ্রাম
- মেসেঞ্জার (Messenger): ফেসবুকের এই মেসেজিং অ্যাপটি বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত। মেসেঞ্জার
- লাইন (Line): এটি মূলত এশিয়ার দেশগুলোতে জনপ্রিয়, এবং স্টিকার ও গেমের জন্য পরিচিত। লাইন
- সিগন্যাল (Signal): এটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে এবং এনক্রিপশন প্রযুক্তির জন্য পরিচিত। সিগন্যাল
| ! মেসেজিং |! ভয়েস/ভিডিও কল |! নিরাপত্তা |! অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য | | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন | ভাইবার আউট, কমিউনিটি, পেমেন্টস | | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন | স্ট্যাটাস, ওয়েব সংস্করণ | | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (সিক্রেট চ্যাট) | চ্যানেল, বট, বড় ফাইল শেয়ার | | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (ঐচ্ছিক) | গেম, ফেসবুকের সাথে ইন্টিগ্রেশন | | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন | স্টিকার, গেম, লাইন পেমেন্টস | |
ভাইবারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভাইবারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। রাকুটেনের বিনিয়োগ এবং নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ের মাধ্যমে ভাইবার আরও উন্নত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ভাইবার আরও নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে পারে, যেমন:
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): চ্যাটবট এবং গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করার জন্য ভাইবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারে।
- ব্লকচেইন প্রযুক্তি: ভাইবার পেমেন্টস এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (Augmented Reality): এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে ভাইবার আরও আকর্ষণীয় এবং বাস্তবসম্মত যোগাযোগ অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে।
- ই-কমার্স ইন্টিগ্রেশন: ভাইবারের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য কেনাকাটা করার সুবিধা যুক্ত হতে পারে।
- ভাষা অনুবাদ: রিয়েল-টাইম ভাষা অনুবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহারকারীদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হতে পারে।
ভাইবার ব্যবহারের টিপস ও ট্রিকস
ভাইবার ব্যবহারের সময় কিছু টিপস ও ট্রিকস অনুসরণ করে আপনি আপনার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে পারেন:
- ডাটা সাশ্রয়: ভাইবার সেটিংস-এ গিয়ে ডেটা ব্যবহারের অপশনটি নিয়ন্ত্রণ করুন, যাতে কম ডেটাতেও ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়।
- নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ: ব্যক্তিগত এবং গ্রুপ চ্যাটের জন্য আলাদা নোটিফিকেশন সেট করুন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজগুলো সহজেই নজরে আসে।
- স্টিকার ডাউনলোড: ভাইবারের স্টিকার স্টোর থেকে পছন্দের স্টিকার ডাউনলোড করে ব্যবহার করুন।
- সিক্রেট চ্যাট ব্যবহার: সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সিক্রেট চ্যাট ব্যবহার করুন।
- ভাইবার আউট ব্যবহার: কম খরচে আন্তর্জাতিক কল করার জন্য ভাইবার আউট ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত আপডেট করুন: ভাইবার অ্যাপ্লিকেশনটি নিয়মিত আপডেট করুন, যাতে নতুন বৈশিষ্ট্য এবং নিরাপত্তা প্যাচগুলো পাওয়া যায়।
উপসংহার
ভাইবার একটি বহুমুখী যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে এসেছে। এর সহজ ব্যবহারযোগ্যতা, নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য এবং ক্রমাগত উন্নতির মাধ্যমে এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ভবিষ্যতে ভাইবার আরও নতুন প্রযুক্তি এবং বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে যোগাযোগ জগতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল রাকুটেন এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সাইবার নিরাপত্তা স্মার্টফোন অ্যান্ড্রয়েড আইওএস সোশ্যাল মিডিয়া ডিজিটাল মার্কেটিং ই-কমার্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্লকচেইন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডাটা নিরাপত্তা গোপনীয়তা নীতি টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ভাইবার আউট ভাইবার কমিউনিটি
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মার্কেট সেন্টিমেন্ট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভার্সিফিকেশন ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই (Relative Strength Index) এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট বুলিশ ট্রেন্ড বেয়ারিশ ট্রেন্ড সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেডিং সাইকোলজি অথবা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
