ফ্রেডরিখ নিৎশে

ফ্রেডরিখ নিৎশে (Friedrich Nietzsche) উনিশ শতকের একজন প্রভাবশালী জার্মান দার্শনিক, সাংস্কৃতিক সমালোচক, কম্পোজার, কবি এবং ভাষাবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৫ অক্টোবর ১৮৪৪ সালে রোক্সেন, জার্মানির প্রুশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৫ আগস্ট ১৯০০ সালে ভাইমার, জার্মানির তৎকালীন জার্মান সাম্রাজ্যে মারা যান। নিৎশের কাজ আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার দর্শন অস্তিত্ববাদ, উত্তর-আধুনিকতাবাদ, উত্তর-গঠনবাদ, মানবিকতাবাদ এবং ফেমিনিজম সহ বিভিন্ন চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছে।

জীবনী

ফ্রেডরিখ নিৎশের জন্ম একটি লুথারান পরিবারে। তার বাবা কার্ল লুডভিগ নিৎশে ছিলেন একজন ধর্মযাজক এবং মা ফ্রানিসকা ওয়ের্ডেল ছিলেন একজন শিক্ষিকা। ফ্রেডরিখ অল্প বয়সেই তার বাবাকে হারিয়েছিলেন এবং মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হন। তিনি বোনেলের একটি гимназии (gymnasium) এবং পরে পাউলের একটি гимназии-তে পড়াশোনা করেন। নিৎশে ফিলোলজি (ভাষাতত্ত্ব) নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৮৬৯ সালে বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি বাসেলের একটি гимназии-তে ক্লাসিক্যাল ফিলোলজির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৮৭৯ সালে গুরুতর অসুস্থতার কারণে নিৎশে অধ্যাপনা থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন এবং এরপর থেকে তিনি লেখালেখি ও দর্শনে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেন। নিৎশের জীবন ছিল শারীরিক ও মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়া। তিনি সিফিলিস, মাইগ্রেন, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৮৮৯ সালে তুরিনে মানসিক breakdowns-এর শিকার হন এবং এর পরে প্রায় এক দশক ধরে তিনি মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ছিলেন।

দর্শনের মূল ধারণা

নিৎশের দর্শন অত্যন্ত জটিল এবং বহুস্তরীয়। এখানে তার কিছু মূল ধারণা আলোচনা করা হলো:

ঈশ্বর মৃত:* নিৎশের সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর অর্থ হলো আধুনিক বিশ্বে খ্রিস্টীয় নৈতিকতা ও ধর্ম তার প্রভাব হারিয়েছে এবং মানুষের জীবনে এর কোনো তাৎপর্য নেই। তিনি মনে করতেন, "ঈশ্বর মৃত" ঘোষণার মাধ্যমে মানবতাকে একটি নতুন মূল্যবোধের সন্ধানে বাধ্য করা হবে।

উইল টু পাওয়ার (ক্ষমতার ইচ্ছা):* নিৎশের মতে, এটি জীবনের মৌলিক চালিকা শক্তি। এটি কেবল ক্ষমতা লাভের আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং নিজের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার একটি চেষ্টা।

ইটারনাল রিকারেন্স (অনন্ত পুনরাবৃত্তি):* এই ধারণা অনুসারে, মহাবিশ্বের সবকিছু একই ধারায় অনন্তকাল ধরে পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। নিৎশে মনে করতেন, এই ধারণাটি মানুষকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বের সাথে বাঁচতে উৎসাহিত করবে।

Übermensch (অতিমানব):* নিৎশের দর্শনে অতিমানব হলো এমন এক ব্যক্তি যিনি প্রচলিত মূল্যবোধকে অতিক্রম করে নিজের মূল্যবোধ তৈরি করেন এবং নিজের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করেন।

নৈতিকতার বংশগতি:* এই গ্রন্থে নিৎশে প্রচলিত নৈতিকতার উৎস ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে কীভাবে এটি দুর্বল ও ক্ষমতাহীনদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ

নিৎশে অসংখ্য প্রভাবশালী গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার কয়েকটি প্রধান কাজ হলো:

ফ্রেডরিখ নিৎশের প্রধান কাজসমূহ
বছর
১৮৭২
১৮৭৩-১৮৭৬
১৮৭৮
১৮৮২
১৮৮৩-১৮৮৫
১৮৮৬
১৮৮৭
১৮৮৮
১৮৮৯
১৮৮৯
১৮৮৯

নিৎশের প্রভাব

ফ্রেডরিখ নিৎশের দর্শন বিংশ শতাব্দীর চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তার কাজের প্রভাব সাহিত্য, শিল্পকলা, মনোবিজ্ঞান, এবং রাজনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়।

অস্তিত্ববাদ:* নিৎশের "ঈশ্বর মৃত" এবং "উইল টু পাওয়ার" এর ধারণাগুলো অস্তিত্ববাদী দার্শনিক যেমন জ্যাঁ-পল সার্ত্র এবং আলবেয়ার কামু-কে প্রভাবিত করেছে।

উত্তর-আধুনিকতাবাদ:* নিৎশের সত্য ও জ্ঞান সম্পর্কে সংশয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি উত্তর-আধুনিক চিন্তাধারার ভিত্তি স্থাপন করেছে।

মনোবিজ্ঞান:* সিগমুন্ড ফ্রয়েড নিৎশের অচেতন মনের ধারণা থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

রাজনৈতিক দর্শন:* নিৎশের দর্শন বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ফ্যাসিবাদ অন্যতম। তবে, নিৎশের দর্শনকে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে যুক্ত করা বিতর্কিত।

সমালোচনা

নিৎশের দর্শন বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। কেউ কেউ তার দর্শনকে অনৈতিক এবং বিপ্লবী বলে মনে করেন। আবার অনেকে তার "উইল টু পাওয়ার" এবং "অতিমানব" ধারণাকে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং ক্ষমতালোলুপতার justification হিসেবে দেখেন। এছাড়া, তার লেখার অস্পষ্টতা এবং পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সুযোগ থাকার কারণেও সমালোচিত হয়েছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে নিৎশের দর্শনের সম্পর্ক

যদিও ফ্রেডরিখ নিৎশে একজন দার্শনিক এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল, তবুও নিৎশের কিছু ধারণা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তি এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।

১. ঝুঁকি গ্রহণ (Risk Taking): নিৎশের "উইল টু পাওয়ার" ধারণাটি ট্রেডারদের ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সফল হতে হলে ঝুঁকি নিতে হয়, তবে তা অবশ্যই সচেতনভাবে এবং হিসাব করে নিতে হবে।

২. নিজের মূল্যবোধ তৈরি (Creating Your Own Values): নিৎশে প্রচলিত মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং নিজের মূল্যবোধ তৈরি করতে বলেছেন। একইভাবে, একজন ট্রেডারকে বাজারের নিজস্ব বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের নিয়ম তৈরি করতে হয়, অন্যের অন্ধ অনুসরণ করা উচিত নয়।

৩. অনিবার্যতাকে মেনে নেওয়া (Accepting the Inevitable): নিৎশের "ইটারনাল রিকারেন্স" ধারণাটি শেখায় যে জীবনের সবকিছু পুনরাবৃত্তি হবে। ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও লাভ-লোকসান একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তাই ব্যর্থতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

৪. আত্ম-নিয়ন্ত্রণ (Self-Control): নিৎশের অতিমানব ধারণাটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের ভাগ্যকে নিজের হাতে নেওয়ার কথা বলে। একজন ট্রেডারকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

৫. সুযোগের সদ্ব্যবহার (Seizing Opportunities): নিৎশের দর্শন অনুযায়ী, জীবনে সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও সঠিক সময়ে সুযোগ চিহ্নিত করে ট্রেড করতে হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (Technical Analysis): বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য চার্ট এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental Analysis): অর্থনৈতিক সূচক এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয় বিশ্লেষণ করা।
ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume Analysis): ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা বোঝা।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): ট্রেডিংয়ে ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।
মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): পুঁজি ব্যবস্থাপনার সঠিক কৌশল অবলম্বন করা।
ট্রেডিং সাইকোলজি (Trading Psychology): ট্রেডিংয়ের সময় মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns): বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন চিহ্নিত করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া।
সমর্থন এবং প্রতিরোধ (Support and Resistance): সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা।
ট্রেন্ড লাইন (Trend Lines): বাজারের ট্রেন্ড নির্ধারণ করার জন্য ট্রেন্ড লাইন ব্যবহার করা।
মুভিং এভারেজ (Moving Averages): বাজারের গড় গতিবিধি বোঝার জন্য মুভিং এভারেজ ব্যবহার করা।
আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির চাপ পরিমাপ করা।
এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করা।
বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করা।

এই বিষয়গুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একজন ট্রেডারকে সফল হতে হলে এগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

উপসংহার

ফ্রেডরিখ নিৎশে ছিলেন একাধারে প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত দার্শনিক। তার কাজ আজও মানুষকে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। নিৎশের দর্শন শুধু দর্শনালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন - বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মানসিক প্রস্তুতি এবং কৌশল নির্ধারণেও সহায়ক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ