প্রাগৈতিহাসিক যুগ

প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে মানব ইতিহাসের সেই সময়কালকে বোঝায়, যখন লিখিত ইতিহাস এর অস্তিত্ব ছিল না। এই সময়কালে মানুষের জীবনযাত্রা প্রযুক্তি ও সভ্যতা বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়: পাષાণ যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ এবং লৌহ যুগ। এই বিভাজনগুলি মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত প্রধান উপকরণের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

পাષાণ যুগ

পাષાণ যুগ হলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়কাল, যা প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং প্রায় ১০,০০০ বছর আগে শেষ হয়েছিল। এই যুগকে আবার তিনটি উপযুগে ভাগ করা হয়:

পুরাতন পাষাণ যুগ (Paleolithic Period): প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে - ১০,০০০ বছর আগে। এই সময়ে হোমিনিনরা (মানুষের পূর্বপুরুষ) পাথর ও হাড়ের তৈরি সাধারণ হাতিয়ার ব্যবহার করত। তারা শিকার ও সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করত এবং যাযাবর জীবন যাপন করত। লাস্কক্স গুহাচিত্র এবং অল্টামিরা গুহাচিত্র এই সময়ের শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

মধ্য পাষাণ যুগ (Mesolithic Period): প্রায় ১০,০০০ বছর আগে - ৮,০০০ বছর আগে। এই সময়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় মানুষ ধীরে ধীরে কৃষির দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। তারা ছোট ও উন্নতমানের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত এবং পললভূমির কাছাকাছি বসতি স্থাপন করত।

নব পাষাণ যুগ (Neolithic Period): প্রায় ৮,০০০ বছর আগে - ৩,০০০ বছর আগে। এই সময়ে মানুষ কৃষি ও পশুপালন শুরু করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। মাটির পাত্র তৈরি ও বুনন শিল্পের বিকাশ ঘটে। চায়ানহু (Çatalhöyük) তুরস্কের একটি বিখ্যাত নব পাষাণ যুগের বসতি।

ব্রোঞ্জ যুগ

ব্রোঞ্জ যুগ প্রায় ৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়, যখন মানুষ তামা ও টিন মিশিয়ে ব্রোঞ্জ নামক নতুন ধাতু তৈরি করতে শেখে। ব্রোঞ্জ পাথরের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি হাতিয়ার ও অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এই সময়ে নগর ও রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় এবং সামাজিক শ্রেণীবিভাগ দেখা যায়। মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধু সভ্যতা ব্রোঞ্জ যুগের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

ব্রোঞ্জ যুগের বৈশিষ্ট্য:

ধাতুর ব্যবহার: ব্রোঞ্জ উৎপাদন ও ব্যবহার।
নগরীর বিকাশ: উর, লাগাশ, হারাপ্পা-র মতো নগরীর উদ্ভব।
লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন: কিউনিফর্ম ও হরপ্পা লিপির মতো লিখন পদ্ধতির ব্যবহার।
বাণিজ্য: দূরবর্তী অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন।
ধর্ম: বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা ও মন্দির নির্মাণ।

লৌহ যুগ

লৌহ যুগ প্রায় ১,২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়, যখন মানুষ লোহা ব্যবহার করতে শেখে। লোহা ব্রোঞ্জের চেয়েও শক্তিশালী ও সহজে পাওয়া যায়। লোহার ব্যবহার হাতিয়ার ও অস্ত্র তৈরিতে বিপ্লব ঘটায় এবং যুদ্ধ ও সাম্রাজ্য বিস্তারে সাহায্য করে। এই সময়ে গ্রিক সভ্যতা, রোমান সাম্রাজ্য ও মৌর্য সাম্রাজ্য-এর মতো শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উদ্ভব হয়।

লৌহ যুগের বৈশিষ্ট্য:

লোহার ব্যবহার: লোহার উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি।
সাম্রাজ্যের বিস্তার: আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ও জু্লিয়াস সিজার-এর মতো দিগ্বিজয়ীর উত্থান।
রাজনৈতিক পরিবর্তন: গণতন্ত্র ও রাজতন্ত্র-এর মতো রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ।
দর্শন ও বিজ্ঞানর উন্নতি: গ্রিক দার্শনিকদের অবদান এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশ।
শিল্পকলা: ভাস্কর্য, স্থাপত্য ও সাহিত্যকলার বিকাশ।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনযাত্রা

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তারা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং খাদ্য সংগ্রহ ও বাসস্থান তৈরির জন্য সংগ্রাম করত।

খাদ্য সংগ্রহ: পুরাতন পাষাণ যুগের মানুষ শিকার ও ফলমূল, কন্দমূল সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করত। নব পাষাণ যুগে তারা কৃষি শুরু করে খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।
বাসস্থান: প্রথমে মানুষ গুহায় বাস করত, পরে তারা গাছের ডাল ও পশুর চামড়া দিয়ে কুঁড়েঘর তৈরি করত।
পোশাক: তারা পশুর চামড়া ও পাতা দিয়ে পোশাক তৈরি করত।
সমাজ: প্রাগৈতিহাসিক যুগের সমাজ ছিল ছোট ও সরল। তারা দলবদ্ধভাবে বাস করত এবং শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করত।
ধর্ম ও বিশ্বাস: তারা প্রকৃতি পূজা করত এবং আত্মার উপর বিশ্বাস রাখত।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের সংস্কৃতি

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের সংস্কৃতি তাদের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ছিল।

শিল্পকলা: গুহাচিত্র, ভাস্কর্য ও মাটির পাত্রের মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশ করত।
সঙ্গীত ও নৃত্য: তারা সম্ভবত গান গাইত ও নাচত।
ধর্মীয় আচার: তারা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত।
ভাষা: প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের ভাষা কেমন ছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে মনে করা হয় যে তারা প্রথমে অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ ব্যবহার করত এবং পরে ধীরে ধীরে ভাষার বিকাশ ঘটায়।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রত্নতত্ত্ব

প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে জানার প্রধান উৎস হলো প্রত্নতত্ত্ব। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন স্থানে খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন হাতিয়ার, অস্ত্র, অলঙ্কার, গুহাচিত্র ও অন্যান্য নিদর্শন আবিষ্কার করেন। এই নিদর্শনগুলি প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়।

গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান:

   * ওল্ডুভাই গিরিখাত (Olduvai Gorge), তানজানিয়া
   * লাস্কক্স গুহা (Lascaux Cave), ফ্রান্স
   * অল্টামিরা গুহা (Altamira Cave), স্পেন
   * চায়ানহু (Çatalhöyük), তুরস্ক
   * হারাপ্পা (Harappa), পাকিস্তান
   * মহেনজো-দারো (Mohenjo-daro), পাকিস্তান

প্রাগৈতিহাসিক যুগের উপর আধুনিক গবেষণা

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাগৈতিহাসিক যুগ নিয়ে গবেষণা আরও উন্নত হয়েছে।

কার্বন ডেটিং: এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাচীন বস্তুর বয়স নির্ধারণ করা যায়।
ডিএনএ বিশ্লেষণ: এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাচীন মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে তাদের উৎস ও সম্পর্ক জানা যায়।
কম্পিউটার মডেলিং: এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সাদৃশ্য

যদিও আপাতদৃষ্টিতে এই দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, তবে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু মৌলিক ধারণা প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে তুলনীয়।

ঝুঁকি এবং পুরস্কার (Risk and Reward): প্রাগৈতিহাসিক মানুষ শিকারের সময় যেমন ঝুঁকির মধ্যে থাকত, তেমনই বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। উভয় ক্ষেত্রেই, ঝুঁকির বিপরীতে লাভের সম্ভাবনা থাকে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making): শিকারের জন্য সঠিক স্থান এবং সময় নির্বাচন করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনই বাইনারি অপশনে ট্রেড করার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সুযোগ সন্ধান (Opportunity Seeking): প্রাগৈতিহাসিক মানুষ খাদ্যের সন্ধানে যেমন সুযোগের অপেক্ষায় থাকত, তেমনই বাইনারি অপশন ট্রেডাররা বাজারের সুযোগগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
দ্রুত পরিবর্তন (Rapid Change): প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হত, যার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হত। বাইনারি অপশন মার্কেটও খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল, যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

এই সাদৃশ্যগুলি শুধুমাত্র একটি রূপক উদাহরণ, তবে এটি বোঝায় যে মানুষের মৌলিক আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সময়ের সাথে সাথে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের সময়কাল
যুগ	সময়কাল	বৈশিষ্ট্য
পুরাতন পাষাণ যুগ	প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে - ১০,০০০ বছর আগে	পাথরের হাতিয়ার, শিকার ও সংগ্রহ, যাযাবর জীবন
মধ্য পাষাণ যুগ	প্রায় ১০,০০০ বছর আগে - ৮,০০০ বছর আগে	ছোট পাথরের হাতিয়ার, কৃষির সূচনা, পললভূমির বসতি
নব পাষাণ যুগ	প্রায় ৮,০০০ বছর আগে - ৩,০০০ বছর আগে	কৃষি ও পশুপালন, স্থায়ী বসতি, মাটির পাত্র ও বুনন শিল্প
ব্রোঞ্জ যুগ	প্রায় ৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ১,২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ	ব্রোঞ্জের ব্যবহার, নগরীর বিকাশ, লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন
লৌহ যুগ	প্রায় ১,২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - বর্তমান	লোহার ব্যবহার, সাম্রাজ্যের বিস্তার, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি

আরও জানতে: হোমো সেপিয়েন্স, মানুষের বিবর্তন, প্রাচীন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, পাথর যুগের সরঞ্জাম, কৃষির ইতিহাস , ধাতুবিদ্যা, সামাজিক বিবর্তন , ভাষা , শিল্পের ইতিহাস , বিশ্বের সংস্কৃতি , ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা , ফিনান্সিয়াল মার্কেট , টেকনিক্যাল এনালাইসিস , ভলিউম এনালাইসিস , ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি , অপশন ট্রেডিং , মার্কেট সেন্টিমেন্ট , ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস , পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট , ঝুঁকি মূল্যায়ন , অর্থনৈতিক সূচক ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ