দশমিক সংখ্যা

দশমিক সংখ্যা হল সংখ্যা প্রকাশের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, একটি দশমিক বিন্দু (.) ব্যবহার করে সংখ্যার পূর্ণসংখ্যা এবং ভগ্নাংশ অংশকে আলাদা করা হয়। এটি সংখ্যা পদ্ধতি-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

দশমিক সংখ্যার ভিত্তি

দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হল ১০। এর মানে হল, এই পদ্ধতিতে সংখ্যাগুলি ০ থেকে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক ব্যবহার করে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি অঙ্কের স্থানীয় মান তার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। ডানদিক থেকে বামদিকে, স্থানীয় মানগুলি হল ১, ১০, ১০০, ১০০০, ইত্যাদি। দশমিক বিন্দুর ডানদিকের স্থানীয় মানগুলি হল ১/১০, ১/১০০, ১/১০০০, ইত্যাদি।

দশমিক সংখ্যার স্থানীয় মান
স্থানীয় মান	অঙ্ক	উদাহরণ
১০০০	১	১২৩৪
১০০	২	১২৩৪
১০	৩	১২৩৪
১	৪	১২৩৪
১/১০	৫	১২.৩৪৫
১/১০০	৪	১২.৩৪৫
১/১০০০	৫	১২.৩৪৫

দশমিক সংখ্যার প্রকারভেদ

দশমিক সংখ্যাগুলিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

মেয়াদী দশমিক সংখ্যা (Terminating Decimals): যে দশমিক সংখ্যাগুলির দশমিক বিন্দুর পরে অঙ্কগুলির একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক অঙ্ক থাকে, সেগুলিকে মেয়াদী দশমিক সংখ্যা বলা হয়। উদাহরণ: ০.২৫, ৩.১৪১৬।
অমেয়াদী দশমিক সংখ্যা (Non-terminating Decimals): যে দশমিক সংখ্যাগুলির দশমিক বিন্দুর পরে অঙ্কগুলির সংখ্যা অসীম পর্যন্ত চলতে থাকে, সেগুলিকে অমেয়াদী দশমিক সংখ্যা বলা হয়। এই সংখ্যাগুলিকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

   *   পুনরাবৃত্তিমূলক দশমিক সংখ্যা (Repeating Decimals): যে অমেয়াদী দশমিক সংখ্যাগুলির একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক অঙ্ক একটি নির্দিষ্ট ক্রমে পুনরাবৃত্তি হয়, সেগুলিকে পুনরাবৃত্তিমূলক দশমিক সংখ্যা বলা হয়। উদাহরণ: ০.৩৩৩৩..., ২.১৪২৮৫৭১৪২৮৫...।
   *   অপুনরাবৃত্তিমূলক দশমিক সংখ্যা (Non-repeating Decimals): যে অমেয়াদী দশমিক সংখ্যাগুলির অঙ্কগুলি কোনো নির্দিষ্ট ক্রমে পুনরাবৃত্তি হয় না, সেগুলিকে অপ্র পুনরাবৃত্তিমূলক দশমিক সংখ্যা বলা হয়। উদাহরণ: পাই (π = ৩.১৪১৫৯২৬৫...) এবং ই (e = ২.৭১৮২৮১৮...)।

দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করে ভগ্নাংশ প্রকাশ

যেকোনো ভগ্নাংশ-কে দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা যায়। ভগ্নাংশের হর (denominator)-কে যদি ২ এবং ৫ এর গুণফল আকারে লেখা যায়, তবে সেটি একটি মেয়াদী দশমিক সংখ্যা হবে। অন্যথায়, সেটি একটি অমেয়াদী দশমিক সংখ্যা হবে।

উদাহরণস্বরূপ:

১/৪ = ০.২৫ (মেয়াদী)
১/৩ = ০.৩৩৩৩... (পুনরাবৃত্তিমূলক)
১/৭ = ০.১৪২৮৫৭১৪২৮৫... (পুনরাবৃত্তিমূলক)

দশমিক সংখ্যার গাণিতিক অপারেশন

দশমিক সংখ্যাগুলির উপর বিভিন্ন গাণিতিক অপারেশন করা যায়, যেমন:

যোগ (Addition): দশমিক বিন্দুগুলিকে সারিবদ্ধ করে সংখ্যাগুলিকে যোগ করতে হয়।
বিয়োগ (Subtraction): দশমিক বিন্দুগুলিকে সারিবদ্ধ করে সংখ্যাগুলিকে বিয়োগ করতে হয়।
গুণ (Multiplication): সাধারণ গুণের নিয়ম অনুসরণ করে দশমিক সংখ্যাগুলিকে গুণ করা হয়। গুণফলের মধ্যে দশমিক বিন্দুর অবস্থান নির্ধারণ করতে হয়।
ভাগ (Division): সাধারণ ভাগের নিয়ম অনুসরণ করে দশমিক সংখ্যাগুলিকে ভাগ করা হয়।

দশমিক সংখ্যা ও অন্যান্য সংখ্যা পদ্ধতি

দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ছাড়াও, আরও অনেক সংখ্যা পদ্ধতি রয়েছে, যেমন:

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System): এই পদ্ধতিতে ০ এবং ১ দুটি অঙ্ক ব্যবহার করা হয়। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞান-এ ব্যবহৃত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা পদ্ধতির জ্ঞান অত্যাবশ্যক।
অষ্টক সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System): এই পদ্ধতিতে ০ থেকে ৭ পর্যন্ত আটটি অঙ্ক ব্যবহার করা হয়।
ষোড়শ সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System): এই পদ্ধতিতে ০ থেকে ৯ এবং A থেকে F পর্যন্ত ১৬টি অঙ্ক ব্যবহার করা হয়।

দশমিক সংখ্যার ব্যবহার

দশমিক সংখ্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

মাপ (Measurement): দৈর্ঘ্য, ওজন, আয়তন ইত্যাদি পরিমাপের জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
মুদ্রা (Currency): টাকা-পয়সার হিসাব রাখার জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞান (Science): বৈজ্ঞানিক গণনা এবং পরিমাপের জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
প্রকৌশল (Engineering): প্রকৌশল বিদ্যায় বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
অর্থনীতি (Economics): অর্থনৈতিক মডেল এবং বিশ্লেষণের জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
পরিসংখ্যান (Statistics): পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ এবং ডেটা উপস্থাপনের জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ দশমিক সংখ্যার প্রাসঙ্গিকতা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ দশমিক সংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

স্ট্রাইক মূল্য (Strike Price): বাইনারি অপশনের স্ট্রাইক মূল্য প্রায়শই দশমিক সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়।
সময়কাল (Expiration Time): ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সময়কাল দশমিক সংখ্যায় প্রদর্শিত হতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বিনিয়োগের পরিমাণ এবং লাভের হিসাব দশমিক সংখ্যায় করা হয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average) এবং রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (Relative Strength Index) প্রায়শই দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।
ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম এবং মূল্যের পরিবর্তনগুলি দশমিক সংখ্যায় বিশ্লেষণ করা হয়।
পিপিং (Piping): ফরেক্স ট্রেডিং এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পিপিংয়ের হিসাব দশমিক সংখ্যায় করা হয়।
সুদের হার (Interest Rate): সুদের হার প্রায়শই দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়, যা বাইনারি অপশনের মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে।
লিভারেজ (Leverage): লিভারেজের পরিমাণ দশমিক সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় এবং এটি ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত।
লাভ-ক্ষতির হিসাব (Profit and Loss Calculation): ট্রেড থেকে লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে হিসাব করার জন্য দশমিক সংখ্যার ব্যবহার অপরিহার্য।
সম্ভাব্যতা (Probability): কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা বের করতে দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়, যা ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন (Standard Deviation): স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন হিসাব করার জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়, যা বাজারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সহায়ক।
বেটা (Beta): বেটা নির্ণয় করতে দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়, যা কোনো শেয়ারের ঝুঁকি পরিমাপ করে।
শার্প রেশিও (Sharpe Ratio): শার্প রেশিও হিসাব করার সময় দশমিক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, যা ঝুঁকি-সমন্বিত রিটার্ন পরিমাপ করে।
ম্যাক্সিমাম ড্রডাউন (Maximum Drawdown): ম্যাক্সিমাম ড্রডাউন নির্ণয় করতে দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়, যা বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় ক্ষতি নির্দেশ করে।
আর-স্কোয়ার্ড (R-squared): আর-স্কোয়ার্ড এর মান দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়, যা মডেলের ফিটনেস মূল্যায়ন করে।

দশমিক সংখ্যা শেখার গুরুত্ব

দশমিক সংখ্যা বোঝা এবং ব্যবহার করতে পারা গণিত এবং বিজ্ঞান-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলি সমাধান করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, ফিনান্স এবং বিনিয়োগ-এর ক্ষেত্রে দশমিক সংখ্যার জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র পরিমাপ ভগ্নাংশ দশমিক বিন্দু সংখ্যা পদ্ধতি বাইনারি সংখ্যা অষ্টক সংখ্যা ষোড়শ সংখ্যা যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ কম্পিউটার বিজ্ঞান অর্থনীতি পরিসংখ্যান টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফরেক্স ট্রেডিং

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ