এজাইল

এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা

এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা হল একটি পুনরাবৃত্তিমূলক এবং ক্রমবর্ধমান পদ্ধতি যা প্রকল্প পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তা এবং দ্রুত ডেলিভারির উপর জোর দেয়। এজাইল পদ্ধতিগুলি প্রায়শই সফটওয়্যার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এজাইলের মূলনীতি

এজাইল ম্যানিফেস্টো (Agile Manifesto) চারটি মূল মান এবং ১২টি নীতি দ্বারা চালিত হয়। এইগুলি হল:

ব্যক্তি এবং মিথস্ক্রিয়া প্রক্রিয়া এবং সরঞ্জামগুলির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কার্যকরী সফটওয়্যার ব্যাপক ডকুমেন্টেশনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রাহক সহযোগিতা চুক্তির আলোচনা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবর্তনের প্রতি সাড়া দেওয়া প্ল্যান অনুসরণ করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এই মূল মানগুলির বাইরেও এজাইল পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে:

গ্রাহকের সন্তুষ্টি: গ্রাহকের সন্তুষ্টির দিকে মনোযোগ রাখা এবং ক্রমাগত মূল্যবান সফটওয়্যার সরবরাহ করা।
পরিবর্তনের জন্য গ্রহণ যোগ্যতা: প্রকল্পের শেষের দিকে পরিবর্তন গ্রহণ করা।
ঘন ঘন বিতরণ: অল্প সময়ের মধ্যে কার্যকরী সফটওয়্যার সরবরাহ করা।
সহযোগিতা: ব্যবসায়ী এবং ডেভেলপারদের প্রতিদিন একসাথে কাজ করা।
অনুপ্রাণিত ব্যক্তি: প্রকল্প তৈরি করার জন্য অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের সমর্থন করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও সহায়তা প্রদান করা।
সরাসরি যোগাযোগ: দলের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানে সরাসরি যোগাযোগের ওপর জোর দেওয়া।
কার্যকরী সফটওয়্যার: অগ্রগতির প্রাথমিক এবং নিয়মিত মূল্যায়ন।
টেকসই উন্নয়ন: একটি স্থিতিশীল গতি বজায় রাখা।
কারিগরী উৎকর্ষতা: ক্রমাগত মনোযোগের মাধ্যমে নকশা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা।
সরলতা: অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিহার করা।
স্ব-সংগঠিত দল: সেরা আর্কিটেকচার, প্রয়োজনীয়তা এবং নকশা স্ব-সংগঠিত দলের মাধ্যমে বিকশিত হয়।
নিয়মিত প্রতিফলন: দল কিভাবে আরও কার্যকর হওয়া যায়, তা নিয়ে নিয়মিতভাবে চিন্তা করে।

এজাইল পদ্ধতির প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের এজাইল পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

স্ক্রাম: স্ক্রাম একটি বহুল ব্যবহৃত এজাইল কাঠামো। এটি ছোট, স্ব-সংগঠিত দলগুলির মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করার উপর জোর দেয়। স্ক্রামে স্প্রিন্ট নামক ছোট ছোট পুনরাবৃত্তিতে কাজ করা হয়, সাধারণত এক থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে। প্রতিটি স্প্রিন্টের শুরুতে, দল স্প্রিন্ট ব্যাকলগ থেকে কিছু কাজ নির্বাচন করে এবং স্প্রিন্টের শেষে সেই কাজগুলি সম্পন্ন করার চেষ্টা করে।
কানবান: কানবান একটি ভিজ্যুয়াল ওয়ার্কফ্লো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এটি কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে এবং বাধাগুলি সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। কানবান বোর্ড ব্যবহার করে কাজের আইটেমগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে (যেমন, "টু ডু", "ইন প্রগ্রেস", "ডান") উপস্থাপন করা হয়।
এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং: এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং (এক্সপি) একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি যা কোয়ালিটি এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টির উপর জোর দেয়। এক্সপিতে পেয়ার প্রোগ্রামিং, টেস্ট-ড্রাইভেন ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রমাগত ইন্টিগ্রেশনের মতো অনুশীলনগুলি ব্যবহার করা হয়।
ডায়নামিক সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট মেথড: ডায়নামিক সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট মেথড (ডিএসডিএম) একটি দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট (আরএডি) পদ্ধতি। এটি সময়সীমা এবং গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
লিন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট: লিন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট (এলএসডি) টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেমের নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি অপচয় হ্রাস এবং মান সরবরাহ করার উপর জোর দেয়।

এজাইল পদ্ধতির তুলনা
পদ্ধতি	মূল বৈশিষ্ট্য	উপযুক্ত ক্ষেত্র
স্ক্রাম	পুনরাবৃত্তিমূলক, স্ব-সংগঠিত দল, স্প্রিন্ট	জটিল প্রকল্প, পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তা
কানবান	ভিজ্যুয়াল ওয়ার্কফ্লো, ক্রমাগত ডেলিভারি	রক্ষণাবেক্ষণ, অপারেশনাল কাজ
এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং	কোয়ালিটি, পেয়ার প্রোগ্রামিং, টেস্ট-ড্রাইভেন ডেভেলপমেন্ট	ছোট দল, উচ্চ ঝুঁকি প্রকল্প
ডিএসডিএম	দ্রুত ডেলিভারি, গ্রাহকের সম্পৃক্ততা	সময়-সংবেদনশীল প্রকল্প
লিন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট	অপচয় হ্রাস, মান সরবরাহ	ক্রমাগত উন্নতি, বড় আকারের প্রকল্প

এজাইল বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

এজাইল বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষ করে যদি সংস্থাটি ঐতিহ্যবাহী ওয়াটারফল পদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। কিছু সাধারণ চ্যালেঞ্জ হল:

সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: এজাইল একটি ভিন্ন সংস্কৃতি প্রয়োজন, যেখানে সহযোগিতা, স্ব-সংগঠন এবং ক্রমাগত উন্নতির উপর জোর দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ: দলের সদস্যদের এজাইল পদ্ধতি এবং সরঞ্জামগুলিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
গ্রাহকের সম্পৃক্ততা: গ্রাহকদের পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধ: কিছু স্টেকহোল্ডার এজাইল পদ্ধতির পরিবর্তনে বাধা দিতে পারে।
মাপযোগ্যতা: বড় আকারের প্রকল্পে এজাইলকে স্কেল করা কঠিন হতে পারে।

এজাইলের সুবিধা

এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনার অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

উন্নত গ্রাহক সন্তুষ্টি: গ্রাহকদের ক্রমাগত প্রতিক্রিয়া এবং ডেলিভারির মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
দ্রুত ডেলিভারি: এজাইল পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত এবং ঘন ঘন সফটওয়্যার ডেলিভারি করা সম্ভব।
উন্নত গুণমান: ক্রমাগত টেস্টিং এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে সফটওয়্যারের গুণমান উন্নত করা যায়।
ঝুঁকি হ্রাস: ছোট ছোট পুনরাবৃত্তিতে কাজ করার কারণে ঝুঁকি হ্রাস পায়।
পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন: পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তার সাথে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায়।
দলের মনোবল বৃদ্ধি: স্ব-সংগঠিত দলগুলি তাদের কাজের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে, যা দলের মনোবল বাড়াতে সহায়ক।

এজাইল সরঞ্জাম

এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম উপলব্ধ রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় সরঞ্জাম হল:

জিরা: জিরা একটি প্রকল্প ট্র্যাকিং এবং ইস্যু ট্র্যাকিং সরঞ্জাম।
ট্রেলো: ট্রেলো একটি কানবান-ভিত্তিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম।
মাইক্রোসফট অ্যাজুর ডেভOps: মাইক্রোসফট অ্যাজুর ডেভOps একটি সম্পূর্ণ ডেভOps প্ল্যাটফর্ম।
অ্যাসানা: অ্যাসানা একটি প্রকল্প এবং টাস্ক ম্যানেজমেন্ট সরঞ্জাম।
ভার্সন ওয়ান: ভার্সন ওয়ান একটি এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে এজাইলের সম্পর্ক

যদিও এজাইল মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য তৈরি, এর কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ প্রয়োগ করা যেতে পারে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারের পরিস্থিতিতে, ট্রেডারদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের কৌশলগুলি মানিয়ে নিতে সক্ষম হতে হয়। এজাইলের পুনরাবৃত্তিমূলক এবং অভিযোজনযোগ্য প্রকৃতি ট্রেডারদের জন্য সহায়ক হতে পারে।

ছোট পরিসরে পরীক্ষা: ট্রেডাররা ছোট পরিমাণে মূলধন ব্যবহার করে বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল পরীক্ষা করতে পারেন, অনেকটা স্প্রিন্টের মতো।
নিয়মিত পর্যালোচনা: ট্রেডিংয়ের ফলাফল নিয়মিত পর্যালোচনা করা এবং সেই অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করা এজাইলের "রিফ্লেকশন" নীতির অনুরূপ।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ছোট ছোট ট্রেড করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যায়, যা এজাইলের ঝুঁকি হ্রাস করার নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
বাজারের বিশ্লেষণের জন্য কানবান: কানবান বোর্ডের মতো, ট্রেডাররা বাজারের বিভিন্ন দিক (যেমন, ভলিউম, ট্রেন্ড, নিউজ) ট্র্যাক করতে ভিজ্যুয়াল বোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং এজাইল

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা বাইনারি অপশন ট্রেডাররা ব্যবহার করে। এজাইল পদ্ধতির সাথে মিলিত হয়ে এটি আরও কার্যকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ট্রেডার বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন এবং ইনডিকেটর (যেমন, মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি) পরীক্ষা করার জন্য ছোট স্প্রিন্ট ব্যবহার করতে পারে। প্রতিটি স্প্রিন্টের শেষে, ট্রেডার ফলাফলের মূল্যায়ন করে এবং পরবর্তী স্প্রিন্টের জন্য কৌশলটি সংশোধন করে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং এজাইল

ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। এজাইল পদ্ধতির মাধ্যমে, ট্রেডাররা বিভিন্ন ভলিউম-ভিত্তিক কৌশল পরীক্ষা করতে পারে এবং বাজারের পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (VPT) এর মতো সূচকগুলি ব্যবহার করে ট্রেডাররা বাজারের চাপ এবং সম্ভাব্য প্রবণতা পরিবর্তনগুলি সনাক্ত করতে পারে।

উপসংহার

এজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা একটি শক্তিশালী পদ্ধতি যা পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এটি কেবল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্যই নয়, বরং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতেও সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন বাইনারি অপশন ট্রেডিং। এজাইলের মূলনীতিগুলি অনুসরণ করে, ব্যক্তি এবং দলগুলি তাদের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট স্ক্রাম কানবান এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং ডায়নামিক সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট মেথড লিন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এজাইল ম্যানিফেস্টো জিরা ট্রেলো মাইক্রোসফট অ্যাজুর ডেভOps অ্যাসানা ভার্সন ওয়ান টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ চার্ট প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি ভলিউম বিশ্লেষণ অন ব্যালেন্স ভলিউম ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড বাইনারি অপশন ট্রেডিং ওয়াটারফল মডেল গ্রাহক সন্তুষ্টি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ