Non-Performing Assets
নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস (Non-Performing Assets)
নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস বা এনপিএ (NPA) একটি আর্থিক শব্দ যা ঋণ বা আদায়যোগ্য অর্থের সেই অংশকে বোঝায়, যা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ করা হয়নি। এটি সাধারণত ব্যাংকিং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এনপিএ তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং লভ্যাবলীর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে, আমরা এনপিএ-র সংজ্ঞা, কারণ, প্রভাব, শ্রেণীবিভাগ এবং মোকাবিলার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এনপিএ-র সংজ্ঞা
একটি সম্পদকে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে গণ্য করা হয় যখন এটি থেকে কোনো আয় আসে না বা এর মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। ঋণ, অগ্রিম, এবং অন্যান্য আর্থিক বিনিয়োগ যেগুলো নির্ধারিত সময়ে সুদ বা আসল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, সেগুলোকে এনপিএ হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত, যদি কোনো ঋণ বা অগ্রিম ৯০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে খেলাপি থাকে, তবে তা এনপিএ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এনপিএ-র কারণসমূহ
এনপিএ সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অর্থনৈতিক মন্দা: অর্থনৈতিক মন্দা বা মন্থর প্রবৃদ্ধির কারণে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
- শিল্পখাতে সমস্যা: কোনো নির্দিষ্ট শিল্পখাতে মন্দা দেখা দিলে সেই খাতের সাথে জড়িত ঋণগুলো খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- দুর্বল ঋণ মূল্যায়ন: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ দেওয়ার আগে গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারে, তাহলে এনপিএ সৃষ্টি হতে পারে।
- পরিচালনা ত্রুটি: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং নজরদারির অভাবে এনপিএ বাড়তে পারে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, বা ভূমিকম্পের কারণে ঋণগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতে পারে।
- নীতিগত দুর্বলতা: সরকারের ভুল আর্থিক নীতি বা শিল্প নীতির কারণেও এনপিএ বাড়তে পারে।
- ইচ্ছাকৃত খেলাপি: কিছু ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ না করার চেষ্টা করে, যা এনপিএ-র অন্যতম কারণ।
এনপিএ-র শ্রেণীবিভাগ
বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনপিএ-কে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে, যা তাদের ঝুঁকি এবং পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। সাধারণত, এনপিএ-কে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:
- সাব-স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসেটস (Sub-Standard Assets): এই ধরনের সম্পদগুলো ১২ মাস বা তার বেশি সময় ধরে খেলাপি থাকে। এগুলোর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম থাকে।
- ডাউটফুল অ্যাসেটস (Doubtful Assets): এই সম্পদগুলো ১২ মাসের বেশি সময় ধরে সাব-স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে চিহ্নিত থাকে এবং পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম।
- লস অ্যাসেটস (Loss Assets): এই সম্পদগুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে অবলোপনযোগ্য (Write-off) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ, এগুলো থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
| শ্রেণী | সময়কাল | পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা | সাব-স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসেটস | ১২ মাস বা তার বেশি | কম | ডাউটফুল অ্যাসেটস | ১২ মাসের বেশি (সাব-স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে) | খুবই কম | লস অ্যাসেটস | ব্যাংক কর্তৃক অবলোপনযোগ্য | প্রায় নেই |
এনপিএ-র প্রভাব
এনপিএ-র আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর কিছু প্রধান প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মুনাফা হ্রাস: এনপিএ-র কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে যায়, কারণ খেলাপি ঋণ থেকে কোনো আয় হয় না।
- মূলধন ঘাটতি: এনপিএ বাড়লে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা হ্রাস পায়, যা তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- তারল্য সংকট: এনপিএ-র কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য কমে যেতে পারে, কারণ খেলাপি ঋণের অর্থ আটকে থাকে।
- বিনিয়োগ হ্রাস: এনপিএ বাড়লে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা হারাতে পারে, যার ফলে বিনিয়োগ হ্রাস পায়।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস: এনপিএ সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে, কারণ এটি ঋণ প্রবাহকে কমিয়ে দেয় এবং বিনিয়োগের সুযোগ হ্রাস করে।
- খেলাপি সংস্কৃতির বিস্তার: এনপিএ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের উৎসাহিত করে এবং ঋণ পরিশোধের সংস্কৃতিকে দুর্বল করে দেয়।
এনপিএ মোকাবিলার উপায়
এনপিএ মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
- কঠোর ঋণ মূল্যায়ন: ঋণ দেওয়ার আগে গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কঠোরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ঋণ দেওয়ার পর নিয়মিতভাবে ঋণের পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে।
- দ্রুত পুনরুদ্ধার: খেলাপি ঋণ দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন জামানত বিক্রি করা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- ঋণ পুনর্গঠন: কিছু ক্ষেত্রে, ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণের শর্তাবলী পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
- ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম: সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করতে পারে, যা ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।
- সম্পদ পুনরুদ্ধার কোম্পানি (Asset Reconstruction Company): এনপিএ পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পদ পুনরুদ্ধার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এই কোম্পানিগুলো খেলাপি ঋণ কিনে সেগুলোকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।
- আইনি সংস্কার: ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং সহজ করার জন্য আইনি সংস্কার করা উচিত।
- প্রযুক্তি ব্যবহার: ঋণ মূল্যায়ন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ডেটা বিশ্লেষণ: ঋণগ্রহীতাদের ক্রেডিট স্কোর এবং লেনদেনের ডেটা বিশ্লেষণ করে খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এনপিএ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সম্পর্ক
সরাসরিভাবে এনপিএ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, অর্থনৈতিক মন্দা বা আর্থিক সংকটের কারণে এনপিএ বাড়লে তা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকে, যার ফলে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ভলিউম কমে যেতে পারে। এছাড়াও, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার কারণে বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর আস্থা কমে যেতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং কৌশল
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা এবং সম্ভাব্য প্রস্থান বিন্দু চিহ্নিত করা যায়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গড় মূল্য নির্ণয় করা যায় এবং প্রবণতা শনাক্ত করা যায়।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (Relative Strength Index): আরএসআই ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা চিহ্নিত করা যায়।
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): বোলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা যায়।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করা যায়।
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Support and Resistance Level): সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি অনুমান করা যায়।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- অপশন চেইন (Option Chain): অপশন চেইন বিশ্লেষণ করে বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- গ্রিকস (Greeks): গ্রিকস যেমন ডেল্টা, গামা, থিটা, ভেগা ব্যবহার করে অপশনের ঝুঁকি পরিমাপ করা যায়।
- মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): মানি ম্যানেজমেন্ট কৌশল ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো এবং লাভজনক ট্রেডিং নিশ্চিত করা যায়।
- রিস্ক রিওয়ার্ড রেশিও (Risk Reward Ratio): রিস্ক রিওয়ার্ড রেশিও ব্যবহার করে ট্রেডের লাভজনকতা মূল্যায়ন করা যায়।
- ডাইভারজেন্স (Divergence): ডাইভারজেন্স ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন চিহ্নিত করা যায়।
- ভলিউম স্প্রেড অ্যানালাইসিস (Volume Spread Analysis): ভলিউম স্প্রেড অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আচরণ বিশ্লেষণ করা যায়।
- এল্ডার রোল (Elder Roll): এল্ডার রোল ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা এবং পরিবর্তনের সময় চিহ্নিত করা যায়।
উপসংহার
নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস একটি জটিল বিষয়, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এনপিএ মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কতার সাথে ঋণ মূল্যায়ন, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের নীতিগত সহায়তা এবং আইনি সংস্কারও এনপিএ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
