Butterfly

বাটারফ্লাই (Butterfly) কৌশল : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিস্তারিত আলোচনা

বাটারফ্লাই একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল। এটি মূলত কম ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেড করার জন্য পরিচিত, যেখানে লাভের সম্ভাবনা সীমিত হলেও ক্ষতির ঝুঁকি কম থাকে। এই কৌশলটি নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় ট্রেডারদের জন্যই উপযুক্ত। এই নিবন্ধে, বাটারফ্লাই কৌশলটির মূল ধারণা, গঠন, ব্যবহারের নিয়মাবলী, সুবিধা, অসুবিধা এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বাটারফ্লাই কৌশলটির মূল ধারণা

বাটারফ্লাই কৌশলটি তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস-এর অপশন ব্যবহার করে গঠিত হয়। এই তিনটি স্ট্রাইক প্রাইস একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থাকে এবং এদের মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় স্ট্রাইক প্রাইস থাকে। কৌশলটি সাধারণত বুলিশ (Bullish) অথবা বিয়ারিশ (Bearish) উভয় মার্কেট পরিস্থিতিতেই ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি মার্কেটের স্থিতিশীলতার উপর বেশি নির্ভরশীল।

বাটারফ্লাই কৌশলের গঠন

বাটারফ্লাই কৌশলটি মূলত দুই ধরনের হয়:

• লং বাটারফ্লাই (Long Butterfly): এই ক্ষেত্রে, ট্রেডার তিনটি অপশন কেনেন এবং দুটি অপশন বিক্রি করেন।
• শর্ট বাটারফ্লাই (Short Butterfly): এই ক্ষেত্রে, ট্রেডার তিনটি অপশন বিক্রি করেন এবং দুটি অপশন কেনেন।

সাধারণত, লং বাটারফ্লাই কৌশলটি বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ। নিচে লং বাটারফ্লাই কৌশলের গঠন বর্ণনা করা হলো:

ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ১০০ টাকা। এক্ষেত্রে, আপনি নিম্নলিখিত অপশনগুলি কিনতে পারেন:

1. ৯৫ টাকার স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন (Call Option)। 2. ১০০ টাকার স্ট্রাইক প্রাইসের দুটি কল অপশন (Call Option)। 3. ১০৫ টাকার স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন (Call Option)।

এখানে, আপনি ৯৫ এবং ১০৫ টাকার স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন দুটি কিনছেন এবং ১০০ টাকার স্ট্রাইক প্রাইসের দুটি অপশন বিক্রি করছেন।

লং বাটারফ্লাই কৌশলের গঠন

স্ট্রাইক প্রাইস	অপশন টাইপ	অবস্থান
কল (Call)|কেনা|
কল (Call)|বিক্রি (২টি)|
কল (Call)|কেনা|

বাটারফ্লাই কৌশল ব্যবহারের নিয়মাবলী

বাটারফ্লাই কৌশল ব্যবহারের সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত:

• মার্কেট বিশ্লেষণ: কৌশলটি প্রয়োগ করার আগে মার্কেট ভালোভাবে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফা fundamental বিশ্লেষণ করে বোঝা উচিত।
• স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: সঠিক স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, কেন্দ্রীয় স্ট্রাইক প্রাইসটি বর্তমান বাজার মূল্যের কাছাকাছি হওয়া উচিত।
• সময়সীমা নির্ধারণ: অপশনগুলির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ (Expiry Date) নির্ধারণ করা প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদী বাটারফ্লাই কৌশল সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বাটারফ্লাই কৌশল কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা উচিত।
• স্টপ-লস (Stop-Loss): প্রয়োজনে স্টপ-লস ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যেতে পারে।

লং বাটারফ্লাই কৌশলের লাভের হিসাব

লং বাটারফ্লাই কৌশলের সর্বোচ্চ লাভ নির্দিষ্ট করা যায়। যদি মেয়াদপূর্তির তারিখে স্টকের মূল্য ১০০ টাকার কাছাকাছি থাকে, তবে সর্বোচ্চ লাভ হবে। লাভের হিসাবটি নিচে দেওয়া হলো:

সর্বোচ্চ লাভ = (স্ট্রাইক প্রাইস ২ - স্ট্রাইক প্রাইস ১) - নেট প্রিমিয়াম খরচ

এখানে, স্ট্রাইক প্রাইস ২ হলো সর্বোচ্চ স্ট্রাইক প্রাইস (যেমন, ১০৫ টাকা) এবং স্ট্রাইক প্রাইস ১ হলো সর্বনিম্ন স্ট্রাইক প্রাইস (যেমন, ৯৫ টাকা)। নেট প্রিমিয়াম খরচ হলো অপশন কেনার খরচ এবং অপশন বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের মধ্যে পার্থক্য।

শর্ট বাটারফ্লাই কৌশলের লাভের হিসাব

শর্ট বাটারফ্লাই কৌশলের সর্বোচ্চ লাভও নির্দিষ্ট করা যায়। এই ক্ষেত্রে, মেয়াদপূর্তির তারিখে স্টকের মূল্য কেন্দ্রীয় স্ট্রাইক প্রাইসের কাছাকাছি থাকলে সর্বোচ্চ লাভ হয়।

সর্বোচ্চ লাভ = নেট প্রিমিয়াম আয় - (স্ট্রাইক প্রাইস ২ - স্ট্রাইক প্রাইস ১)

এখানে, নেট প্রিমিয়াম আয় হলো অপশন বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের এবং অপশন কেনার খরচ এর মধ্যে পার্থক্য।

বাটারফ্লাই কৌশলের সুবিধা

• কম ঝুঁকি: এই কৌশলের প্রধান সুবিধা হলো ক্ষতির ঝুঁকি কম থাকে।
• সীমিত লাভ: লাভের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে, যা ট্রেডারকে আগে থেকেই জানতে সাহায্য করে।
• নমনীয়তা: বুলিশ এবং বিয়ারিশ উভয় মার্কেট পরিস্থিতিতেই ব্যবহার করা যায়।
• সহজ গঠন: কৌশলটি বুঝতে এবং প্রয়োগ করতে তুলনামূলকভাবে সহজ।

বাটারফ্লাই কৌশলের অসুবিধা

• সীমিত লাভ: লাভের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকার কারণে বড় ধরনের লাভ করার সুযোগ কম থাকে।
• কমিশন খরচ: একাধিক অপশন ট্রেড করার কারণে কমিশন খরচ বেশি হতে পারে।
• সময় সংবেদনশীলতা: অপশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের কাছাকাছি মার্কেট মুভমেন্টের উপর কৌশলের কার্যকারিতা নির্ভর করে।
• মার্কেটের পূর্বাভাস: মার্কেটের সঠিক পূর্বাভাস দিতে না পারলে এই কৌশল লাভজনক নাও হতে পারে।

বাটারফ্লাই কৌশলের ঝুঁকি

• সময় ক্ষয় (Time Decay): অপশনের সময় ক্ষয় হওয়ার সাথে সাথে এর মূল্য কমে যায়, যা বাটারফ্লাই কৌশলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
• অপরিবর্তিত মার্কেট: যদি মার্কেট খুব বেশি ওঠানামা না করে, তবে কৌশলটি লাভজনক নাও হতে পারে।
• ভুল স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: ভুল স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
• অপ্রত্যাশিত মার্কেট মুভমেন্ট: অপ্রত্যাশিত মার্কেট মুভমেন্টের কারণে কৌশলটি ব্যর্থ হতে পারে।

বাটারফ্লাই কৌশল এবং অন্যান্য কৌশলগুলির মধ্যে তুলনা

| কৌশল | ঝুঁকি | লাভ | জটিলতা | |---|---|---|---| | বাটারফ্লাই | কম | সীমিত | মাঝারি | | স্ট্র্যাডেল (Straddle) | উচ্চ | সীমাহীন | মাঝারি | | স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle) | উচ্চ | সীমাহীন | মাঝারি | | কভারড কল (Covered Call) | কম | সীমিত | সহজ | | প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put) | কম | সীমিত | সহজ |

এই টেবিলটি বাটারফ্লাই কৌশলের সাথে অন্যান্য জনপ্রিয় অপশন ট্রেডিং কৌশলগুলির একটি সংক্ষিপ্ত তুলনা দেখায়।

বাটারফ্লাই কৌশল ব্যবহারের উদাহরণ

ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ১০০ টাকা। আপনি একটি লং বাটারফ্লাই কৌশল ব্যবহার করতে চান। আপনি ৯৫ টাকার কল অপশন ২০ টাকা প্রিমিয়ামে কিনলেন, ১০০ টাকার দুটি কল অপশন ১৫ টাকা প্রিমিয়ামে বিক্রি করলেন এবং ১০৫ টাকার কল অপশন ২০ টাকা প্রিমিয়ামে কিনলেন।

এখানে, আপনার নেট প্রিমিয়াম খরচ হলো: (২০ + ২০) - (১৫ x ২) = ১০ টাকা।

যদি মেয়াদপূর্তির তারিখে স্টকের মূল্য ১০০ টাকার কাছাকাছি থাকে, তবে আপনার লাভ হবে: (১০৫ - ৯৫) - ১০ = ১০ টাকা।

বাটারফ্লাই কৌশল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি (Implied Volatility): বাটারফ্লাই কৌশলটি ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটির উপর সংবেদনশীল।
• ডেল্টা (Delta): ডেল্টা হলো অপশনের মূল্যের পরিবর্তনের হার। বাটারফ্লাই কৌশলের ডেল্টা সাধারণত নিরপেক্ষ থাকে।
• গামা (Gamma): গামা হলো ডেল্টার পরিবর্তনের হার। বাটারফ্লাই কৌশলের গামা কেন্দ্রীয় স্ট্রাইক প্রাইসের কাছাকাছি বেশি থাকে।
• থিটা (Theta): থিটা হলো অপশনের সময় ক্ষয়ের হার। বাটারফ্লাই কৌশলের থিটা সাধারণত ঋণাত্মক থাকে।
• ভেগা (Vega): ভেগা হলো ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটির পরিবর্তনের হার। বাটারফ্লাই কৌশলের ভেগা সাধারণত ঋণাত্মক থাকে।

এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারলে বাটারফ্লাই কৌশল আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

উপসংহার

বাটারফ্লাই কৌশল একটি কার্যকর অপশন ট্রেডিং কৌশল, যা কম ঝুঁকিতে সীমিত লাভ করার সুযোগ প্রদান করে। তবে, এই কৌশলটি ব্যবহারের আগে মার্কেট বিশ্লেষণ, স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ ध्यान দেওয়া উচিত। নতুন ট্রেডারদের জন্য এই কৌশলটি শেখা এবং অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অপশন ট্রেডিং এর অন্যান্য কৌশল সম্পর্কে জানতে, আপনি কভার্ড কল, স্ট্র্যাডেল, এবং স্ট্র্যাঙ্গল নিয়ে আমাদের অন্যান্য নিবন্ধগুলি পড়তে পারেন। এছাড়াও, টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কে জ্ঞান আপনাকে আরও ভালো ট্রেডার হতে সাহায্য করবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ