History of Bluetooth: Difference between revisions

Revision as of 00:17, 23 April 2025

ব্লুটুথ-এর ইতিহাস

সূচনা

ব্লুটুথ একটি তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি যা স্বল্প দূরত্বে ডেটা আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত ডিভাইসগুলোর মধ্যে তারের সংযোগের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এই প্রযুক্তিটি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে সুইডেন-এর এরিকসন কোম্পানি দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ব্লুটুথ প্রযুক্তি ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন-এর জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে।

নামকরণের ইতিহাস

ব্লুটুথ নামের পেছনের গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। দশম শতাব্দীর ভাইকিং রাজা হারাল্ড ব্লুটুথ-এর নাম থেকে এই প্রযুক্তির নামকরণ করা হয়েছে। রাজা হারাল্ড ব্লুটুথ বিভিন্ন গোত্রকে একত্রিত করে ডেনমার্ক ও নরওয়েতে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। ঠিক তেমনি, ব্লুটুথ প্রযুক্তি বিভিন্ন ডিভাইসকে একত্রিত করে ডেটা আদান প্রদানে সাহায্য করে। এরিকসনের প্রকৌশলী জিম কার্ডাচিও এই নামকরণের ধারণা দেন। তিনি ভাইকিং এবং পুরাতন নর্স সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।

ব্লুটুথের প্রাথমিক পর্যায়

ব্লুটুথের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। এরিকসন কোম্পানি তারবিহীন হেডসেট তৈরির জন্য একটি নতুন প্রযুক্তি খুঁজছিল। সেই সময়, সেলুলার ফোন-এর সাথে হেডসেট সংযোগের জন্য তারের ব্যবহার ছিল খুবই সাধারণ। তারবিহীন সংযোগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এরিকসন একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন জিম কার্ডাচিও এবং অন্যান্য কয়েকজন প্রকৌশলী।

প্রাথমিকভাবে, এই প্রযুক্তিটিকে "শর্ট-লিঙ্ক রেডিও" বলা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ভাইকিং রাজা হারাল্ড ব্লুটুথের উপাখ্যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এর নামকরণ করা হয় ব্লুটুথ। ১৯৯৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (ITU) ব্লুটুথকে একটি ওয়্যারলেস স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ব্লুটুথের সংস্করণসমূহ

ব্লুটুথ প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এর বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি সংস্করণ আগের তুলনায় উন্নত বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা নিয়ে এসেছে। নিচে ব্লুটুথের প্রধান সংস্করণগুলো আলোচনা করা হলো:

ব্লুটুথের সংস্করণসমূহ
সংস্করণ	প্রকাশের বছর	প্রধান বৈশিষ্ট্য	ডেটা স্থানান্তরের হার
ব্লুটুথ ১.০	১৯৯৯	প্রথম সংস্করণ, সীমিত কার্যকারিতা	প্রায় ৭২০ kbps
ব্লুটুথ ১.১	২০০০	ত্রুটি সংশোধন এবং উন্নত নিরাপত্তা	প্রায় ৭২০ kbps
ব্লুটুথ ১.২	২০০১	দ্রুত ডেটা স্থানান্তরের জন্য অ্যাডাপ্টিভ ফ্রিকোয়েন্সি হপিং (AFH)	প্রায় ১ Mbps
ব্লুটুথ ২.০ + EDR	২০০৪	এনহ্যান্সড ডেটা রেট (EDR) এর মাধ্যমে দ্রুত ডেটা স্থানান্তর	প্রায় ৩ Mbps
ব্লুটুথ ২.১ + EDR	২০০৭	কম শক্তি খরচ এবং উন্নত সংযোগ স্থাপন	প্রায় ৩ Mbps
ব্লুটুথ ৩.০ + HS	২০১১	হাই স্পিড (HS) এর মাধ্যমে আরও দ্রুত ডেটা স্থানান্তর	প্রায় ২৪ Mbps
ব্লুটুথ ৪.০	২০১২	লো এনার্জি (LE) মোড যুক্ত করা, যা ব্যাটারি সাশ্রয় করে	১ Mbps
ব্লুটুথ ৪.১	২০১৪	উন্নত সংযোগ স্থাপন এবং IP connectivity	১ Mbps
ব্লুটুথ ৪.২	২০১৬	দ্রুত ডেটা স্থানান্তর এবং উন্নত নিরাপত্তা	১ Mbps
ব্লুটুথ ৫.০	২০১৭	দীর্ঘ দূরত্ব এবং দ্রুত ডেটা স্থানান্তরের জন্য উন্নত ক্ষমতা	২ Mbps
ব্লুটুথ ৫.১	২০১৯	দিকনির্দেশনা (Direction Finding) বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা	২ Mbps
ব্লুটুথ ৫.২	২০২১	LE অডিও সমর্থন এবং উন্নত কোডেক	২ Mbps
ব্লুটুথ ৫.৩	২০২৩	উন্নত সংযোগ নির্ভরযোগ্যতা এবং শক্তি দক্ষতা	২ Mbps

ব্লুটুথের ব্যবহার

ব্লুটুথ প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে ব্যাপক। এর কিছু প্রধান ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো:

ওয়্যারলেস হেডফোন ও স্পিকার: ব্লুটুথ হেডফোন এবং স্পিকার তারবিহীন হওয়ায় ব্যবহার করা সহজ এবং বহনযোগ্য। অডিও স্ট্রিমিং-এর জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়।
হ্যান্ডস-ফ্রি কার কিট: গাড়ির ভেতরে মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে নিরাপদে কথা বলার জন্য ব্লুটুথ হ্যান্ডস-ফ্রি কার কিট ব্যবহার করা হয়।
স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস ট্র্যাকার: স্মার্টওয়াচ এবং ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো স্মার্টফোনের সাথে ডেটা সিঙ্ক্রোনাইজ করার জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করে।
কম্পিউটার ও পেরিফেরাল ডিভাইস: কম্পিউটারের সাথে কীবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার ইত্যাদি সংযোগের জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
গেম কন্ট্রোলার: ভিডিও গেম খেলার সময় ব্লুটুথ গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়।
মেডিকেল ডিভাইস: হৃদস্পন্দন পরিমাপক যন্ত্র, গ্লুকোমিটারের মতো স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামগুলোতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
স্মার্ট হোম ডিভাইস: স্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট, স্মার্ট লক ইত্যাদি স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো ব্লুটুথের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ডেটা স্থানান্তর: দুটি ডিভাইসের মধ্যে ফাইল, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ডেটা আদান প্রদানে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।

ব্লুটুথের প্রযুক্তিগত দিক

ব্লুটুথ প্রযুক্তি ফ্রিকোয়েন্সি-হপিং স্প্রেড স্পেকট্রাম (FHSS) ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে এটি 2.4 GHz রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে এবং ডেটা স্থানান্তরের সময় বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে, যা ইন্টারফারেন্স কমাতে সাহায্য করে।

ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো সাধারণত দুটি প্রধান মোডে কাজ করে:

পিকোনெட் (Piconet): একটি পিকোনெட்-এ একটি মাস্টার ডিভাইস এবং সাতটি পর্যন্ত স্লেভ ডিভাইস থাকতে পারে। মাস্টার ডিভাইসটি ডেটা আদান প্রদানে নিয়ন্ত্রণ করে।
স্ক্যাটারনেট (Scatternet): একাধিক পিকোনெட் একসাথে যুক্ত হয়ে একটি স্ক্যাটারনেট তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইস একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

ব্লুটুথের নিরাপত্তা

ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তবে আধুনিক সংস্করণগুলোতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হলো:

এনক্রিপশন (Encryption): ডেটা আদান প্রদানের সময় এনক্রিপশন ব্যবহার করে ডেটা সুরক্ষিত রাখা হয়।
অথেন্টিকেশন (Authentication): ডিভাইসগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য অথেন্টিকেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (Access Control): অনুমোদিত ডিভাইসগুলো ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইসকে সংযোগ স্থাপন করতে বাধা দেওয়া হয়।
সিকিউর সিম্পল পেয়ারিং (Secure Simple Pairing): এই পদ্ধতিতে একটি পাসকি বা সংখ্যাসূচক কোড ব্যবহার করে ডিভাইসগুলোর মধ্যে নিরাপদ সংযোগ স্থাপন করা হয়।

ভবিষ্যতের ব্লুটুথ

ব্লুটুথ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। ব্লুটুথ স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (SIG) लगातार নতুন সংস্করণ এবং বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার মাধ্যমে প্রযুক্তিটিকে আরও উন্নত করছে। ভবিষ্যতের ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে আরও দ্রুত ডেটা স্থানান্তর, দীর্ঘ দূরত্বে সংযোগ, উন্নত নিরাপত্তা এবং IoT (ইন্টারনেট অফ থিংস) ডিভাইসের সাথে আরও ভালো সংযোগের সুবিধা থাকবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) -এর সাথে সমন্বিত করে ব্লুটুথকে আরও কার্যকরী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্লুটুথ এবং অন্যান্য ওয়্যারলেস প্রযুক্তি

ব্লুটুথ ছাড়াও বাজারে আরও অনেক ওয়্যারলেস প্রযুক্তি রয়েছে, যেমন Wi-Fi, NFC, এবং Zigbee। প্রতিটি প্রযুক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার ক্ষেত্র রয়েছে। নিচে এই প্রযুক্তিগুলোর সাথে ব্লুটুথের একটি সংক্ষিপ্ত তুলনা দেওয়া হলো:

ওয়্যারলেস প্রযুক্তির তুলনা
প্রযুক্তি	পাল্লা	ডেটা স্থানান্তরের হার	ব্যবহার ক্ষেত্র
ব্লুটুথ	১০-১০০ মিটার	১-৩ Mbps	হেডফোন, স্পিকার, স্মার্টওয়াচ, ফাইল স্থানান্তর
Wi-Fi	৩০-১০০ মিটার	১১-৬০০ Mbps	ইন্টারনেট সংযোগ, নেটওয়ার্কিং
NFC	০-৪ সেমি	১০৬-৪২৪ kbps	মোবাইল পেমেন্ট, ডেটা আদান প্রদান
Zigbee	১০-১০০ মিটার	২০-২৫০ kbps	স্মার্ট হোম অটোমেশন, সেন্সর নেটওয়ার্ক

উপসংহার

ব্লুটুথ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর সহজ ব্যবহারযোগ্যতা, কম খরচ এবং বহুমুখী কার্যকারিতার কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সময়ের সাথে সাথে ব্লুটুথ প্রযুক্তির আরও উন্নতি হবে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করা যায়। ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্লুটুথ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

@@ Line 1: / Line 1: @@
 ব্লুটুথ-এর ইতিহাস
-ভূমিকা
+== সূচনা ==
-ব্লুটুথ হলো একটি তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি যা স্বল্প দূরত্বে ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ডিভাইসগুলোর মধ্যে সহজ সংযোগ স্থাপন করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুবিধাজনক করে তুলেছে। এই নিবন্ধে, ব্লুটুথের উদ্ভাবন, বিকাশ এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
+ব্লুটুথ একটি তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি যা স্বল্প দূরত্বে ডেটা আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত ডিভাইসগুলোর মধ্যে তারের সংযোগের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এই প্রযুক্তিটি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে [[সুইডেন]]-এর [[এরিকসন]] কোম্পানি দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ব্লুটুথ প্রযুক্তি [[ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন]]-এর জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে।
-সূচনা এবং প্রেক্ষাপট
+== নামকরণের ইতিহাস ==
-১৯৯৪ সালে এরিকসন (Ericsson) কোম্পানির প্রকৌশলী জিম তারাবেক (Jaap Haartsen) ব্লুটুথ প্রযুক্তির ধারণা তৈরি করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে তারবিহীন সংযোগ স্থাপন করা। সেই সময়, বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরের জন্য সিরিয়াল পোর্ট এবং ইনফ্রারেড (Infrared) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতো, যা ছিল জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। জিম তারাবেক এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা ব্যবহার করা সহজ হবে এবং দ্রুত ডেটা স্থানান্তর করতে পারবে।
+ব্লুটুথ নামের পেছনের গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। দশম শতাব্দীর [[ভাইকিং]] রাজা [[হারাল্ড ব্লুটুথ]]-এর নাম থেকে এই প্রযুক্তির নামকরণ করা হয়েছে। রাজা হারাল্ড ব্লুটুথ বিভিন্ন গোত্রকে একত্রিত করে ডেনমার্ক ও নরওয়েতে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। ঠিক তেমনি, ব্লুটুথ প্রযুক্তি বিভিন্ন ডিভাইসকে একত্রিত করে ডেটা আদান প্রদানে সাহায্য করে। এরিকসনের প্রকৌশলী জিম কার্ডাচিও এই নামকরণের ধারণা দেন। তিনি ভাইকিং এবং পুরাতন নর্স সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
-নামকরণ
+== ব্লুটুথের প্রাথমিক পর্যায় ==
-ব্লুটুথ নামকরণের পেছনের গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। দশম শতাব্দীর ভাইকিং রাজা দ্বিতীয় হ্যারাল্ড ব্লুটুথ (Harald Bluetooth) ছিলেন ডেনমার্ক ও নরওয়ের রাজা। তিনি বিভিন্ন গোত্রকে একত্রিত করে ডেনমার্ককে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। রাজা হ্যারাল্ডের মতো, এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ডিভাইসকে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখে—তাই এর নাম ব্লুটুথ রাখা হয়। এই নামটি জিম তারাবেকের একজন সহকর্মী প্রস্তাব করেছিলেন, যিনি ভাইকিং ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন।
+ব্লুটুথের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। এরিকসন কোম্পানি তারবিহীন হেডসেট তৈরির জন্য একটি নতুন প্রযুক্তি খুঁজছিল। সেই সময়, [[সেলুলার ফোন]]-এর সাথে হেডসেট সংযোগের জন্য তারের ব্যবহার ছিল খুবই সাধারণ। তারবিহীন সংযোগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এরিকসন একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন জিম কার্ডাচিও এবং অন্যান্য কয়েকজন প্রকৌশলী।
-প্রথম সংস্করণ এবং স্ট্যান্ডার্ড
+প্রাথমিকভাবে, এই প্রযুক্তিটিকে "শর্ট-লিঙ্ক রেডিও" বলা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ভাইকিং রাজা হারাল্ড ব্লুটুথের উপাখ্যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এর নামকরণ করা হয় ব্লুটুথ। ১৯৯৯ সালে [[ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন]] (ITU) ব্লুটুথকে একটি [[ওয়্যারলেস স্ট্যান্ডার্ড]] হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
-১৯৯৯ সালে ব্লুটুথের প্রথম সংস্করণ, ব্লুটুথ ১.০ প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণে ডেটা স্থানান্তরের গতি ছিল কম এবং এতে কিছু ত্রুটি ছিল। পরবর্তীতে, ব্লুটুথ ১.১ এবং ১.২ সংস্করণগুলো ত্রুটি সংশোধন করে উন্নত করা হয়। ব্লুটুথ ২.০ সংস্করণটি ২০০১ সালে প্রকাশিত হয়, যা ডেটা স্থানান্তরের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে এবং এনার্জি সাশ্রয়ী মোড যুক্ত করে। এই সংস্করণটি [[ওয়্যারলেস হেডফোন]] এবং [[স্পিকার]]-এর মতো ডিভাইসের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ছিল।
-ব্লুটুথ প্রযুক্তির স্ট্যান্ডার্ডগুলো ব্লুটুথ স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (SIG) দ্বারা তৈরি এবং পরিচালিত হয়। এই গ্রুপে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন এরিকসন, নকিয়া, ইন্টেল এবং মাইক্রোসফট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্লুটুথ SIG নতুন সংস্করণ এবং বৈশিষ্ট্যগুলো তৈরি করে এবং তা বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে।
+== ব্লুটুথের সংস্করণসমূহ ==
+ব্লুটুথ প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এর বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি সংস্করণ আগের তুলনায় উন্নত বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা নিয়ে এসেছে। নিচে ব্লুটুথের প্রধান সংস্করণগুলো আলোচনা করা হলো:
-বিভিন্ন সংস্করণ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য
 {| class="wikitable"
-|+ ব্লুটুথের বিভিন্ন সংস্করণ এবং বৈশিষ্ট্য
+|+ ব্লুটুথের সংস্করণসমূহ
 |-
-| সংস্করণ || প্রকাশকাল || সর্বোচ্চ গতি || বৈশিষ্ট্য ||
+| সংস্করণ || প্রকাশের বছর || প্রধান বৈশিষ্ট্য || ডেটা স্থানান্তরের হার
-| ব্লুটুথ ১.০ || ১৯৯৯ || ৭০ kbps || প্রথম সংস্করণ, ত্রুটিপূর্ণ ||
+|-
-| ব্লুটুথ ১.১ || ২০০০ || ৭০ kbps || ত্রুটি সংশোধন ||
+| ব্লুটুথ ১.০ || ১৯৯৯ || প্রথম সংস্করণ, সীমিত কার্যকারিতা || প্রায় ৭২০ kbps
-| ব্লুটুথ ১.২ || ২০০১ || ৭০ kbps || অ্যাডাপ্টিভ ফ্রিকোয়েন্সি হপিং ||
+|-
-| ব্লুটুথ ২.০ + EDR || ২০০১ || ৩ Mbps || উন্নত ডেটা হার, এনার্জি সাশ্রয়ী মোড ||
+| ব্লুটুথ ১.১ || ২০০০ || ত্রুটি সংশোধন এবং উন্নত নিরাপত্তা || প্রায় ৭২০ kbps
-| ব্লুটুথ ২.১ + EDR || ২০০৭ || ৩ Mbps || পেজ মোড, উন্নত নিরাপত্তা ||
+|-
-| ব্লুটুথ ৩.০ + HS || ২০১০ || ২৪ Mbps || উচ্চ গতি, ওয়্যারলেস ইউএসবি ||
+| ব্লুটুথ ১.২ || ২০০১ || দ্রুত ডেটা স্থানান্তরের জন্য অ্যাডাপ্টিভ ফ্রিকোয়েন্সি হপিং (AFH) || প্রায় ১ Mbps
-| ব্লুটুথ ৪.০ || ২০১২ || ১ Mbps || লো এনার্জি ব্লুটুথ (BLE), স্মার্ট ডিভাইসগুলির জন্য উপযোগী ||
+|-
-| ব্লুটুথ ৪.১ || ২০১৪ || ১ Mbps || উন্নত BLE, স্বয়ংক্রিয় সংযোগ ||
+| ব্লুটুথ ২.০ + EDR || ২০০৪ || এনহ্যান্সড ডেটা রেট (EDR) এর মাধ্যমে দ্রুত ডেটা স্থানান্তর || প্রায় ৩ Mbps
-| ব্লুটুথ ৪.২ || ২০১৬ || ১ Mbps || দ্রুত সংযোগ, উন্নত নিরাপত্তা ||
+|-
-| ব্লুটুথ ৫.০ || ২০১৭ || ২ Mbps || দীর্ঘ পরিসর, দ্রুত গতি, উন্নত সম্প্রচার ক্ষমতা ||
+| ব্লুটুথ ২.১ + EDR || ২০০৭ || কম শক্তি খরচ এবং উন্নত সংযোগ স্থাপন || প্রায় ৩ Mbps
-| ব্লুটুথ ৫.১ || ২০১৯ || ২ Mbps || দিকনির্দেশনা নির্ণয় (Direction Finding) ||
+|-
-| ব্লুটুথ ৫.২ || ২০২১ || ২ Mbps || LE অডিও, মাল্টি-স্ট্রিম অডিও ||
+| ব্লুটুথ ৩.০ + HS || ২০১১ || হাই স্পিড (HS) এর মাধ্যমে আরও দ্রুত ডেটা স্থানান্তর || প্রায় ২৪ Mbps
-| ব্লুটুথ ৫.৩ || ২০২৩ || ২ Mbps || উন্নত সংযোগ নির্ভরযোগ্যতা, শক্তি দক্ষতা ||
+|-
+| ব্লুটুথ ৪.০ || ২০১২ || লো এনার্জি (LE) মোড যুক্ত করা, যা ব্যাটারি সাশ্রয় করে || ১ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৪.১ || ২০১৪ || উন্নত সংযোগ স্থাপন এবং IP connectivity || ১ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৪.২ || ২০১৬ || দ্রুত ডেটা স্থানান্তর এবং উন্নত নিরাপত্তা || ১ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৫.০ || ২০১৭ || দীর্ঘ দূরত্ব এবং দ্রুত ডেটা স্থানান্তরের জন্য উন্নত ক্ষমতা || ২ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৫.১ || ২০১৯ || দিকনির্দেশনা (Direction Finding) বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা || ২ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৫.২ || ২০২১ || LE অডিও সমর্থন এবং উন্নত কোডেক || ২ Mbps
+|-
+| ব্লুটুথ ৫.৩ || ২০২৩ || উন্নত সংযোগ নির্ভরযোগ্যতা এবং শক্তি দক্ষতা || ২ Mbps
 |}
-ব্লুটুথ প্রযুক্তির প্রয়োগ
+== ব্লুটুথের ব্যবহার ==
-ব্লুটুথের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রয়োগক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
+ব্লুটুথ প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে ব্যাপক। এর কিছু প্রধান ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো:
-* স্মার্টফোন এবং অ্যাক্সেসরিজ: ব্লুটুথ হেডফোন, স্পিকার, স্মার্টওয়াচ এবং অন্যান্য পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলোর সাথে স্মার্টফোন সংযোগের জন্য ব্লুটুথ অপরিহার্য। [[স্মার্টফোন প্রযুক্তি]]-র উন্নতির সাথে সাথে ব্লুটুথের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
+*   '''ওয়্যারলেস হেডফোন ও স্পিকার:''' ব্লুটুথ হেডফোন এবং স্পিকার তারবিহীন হওয়ায় ব্যবহার করা সহজ এবং বহনযোগ্য। [[অডিও স্ট্রিমিং]]-এর জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়।
-* অটোমোটিভ শিল্প: ব্লুটুথ প্রযুক্তি গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, হ্যান্ডস-ফ্রি কলিং এবং অডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। আধুনিক গাড়িগুলোতে ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়।
+*   '''হ্যান্ডস-ফ্রি কার কিট:''' গাড়ির ভেতরে মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে নিরাপদে কথা বলার জন্য ব্লুটুথ হ্যান্ডস-ফ্রি কার কিট ব্যবহার করা হয়।
-* স্বাস্থ্যসেবা: ব্লুটুথ-ভিত্তিক মেডিকেল ডিভাইস, যেমন—হার্ট রেট মনিটর, ব্লাড গ্লুকোজ মিটার এবং ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো রোগীর স্বাস্থ্য নিরীক্ষণে সহায়তা করে। এই ডিভাইসগুলো স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ডেটা প্রেরণ করে।
+*   '''স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস ট্র্যাকার:''' স্মার্টওয়াচ এবং ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো স্মার্টফোনের সাথে ডেটা সিঙ্ক্রোনাইজ করার জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করে।
-* হোম অটোমেশন: ব্লুটুথ স্মার্ট হোম ডিভাইস, যেমন—স্মার্ট লাইট বাল্ব, থার্মোস্ট্যাট এবং সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোন থেকে ব্লুটুথের মাধ্যমে এই ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
+*   '''কম্পিউটার ও পেরিফেরাল ডিভাইস:''' [[কম্পিউটার]]ের সাথে [[কীবোর্ড]], [[মাউস]], [[প্রিন্টার]] ইত্যাদি সংযোগের জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
-* কম্পিউটার এবং পেরিফেরালস: ব্লুটুথ কীবোর্ড, মাউস এবং প্রিন্টার কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা উন্নত করে। তারবিহীন সংযোগের সুবিধা ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করা সহজ করে তোলে।
+*   '''গেম কন্ট্রোলার:''' ভিডিও গেম খেলার সময় ব্লুটুথ গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়।
-* গেমিং: ব্লুটুথ গেমিং কন্ট্রোলার এবং হেডসেট গেমারদের জন্য উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করে। [[ভিডিও গেম]] খেলার সময় ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো ব্যবহারকারীদের আরও বেশি নিমগ্ন করে তোলে।
+*   '''মেডিকেল ডিভাইস:''' হৃদস্পন্দন পরিমাপক যন্ত্র, গ্লুকোমিটারের মতো স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামগুলোতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
+*   '''স্মার্ট হোম ডিভাইস:''' স্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট, স্মার্ট লক ইত্যাদি স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো ব্লুটুথের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
+*   '''ডেটা স্থানান্তর:''' দুটি ডিভাইসের মধ্যে ফাইল, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ডেটা আদান প্রদানে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
-ব্লুটুথের প্রকারভেদ
+== ব্লুটুথের প্রযুক্তিগত দিক ==
-ব্লুটুথ প্রধানত দুই ধরনের: ক্লাসিক ব্লুটুথ এবং ব্লুটুথ লো এনার্জি (BLE)।
+ব্লুটুথ প্রযুক্তি [[ফ্রিকোয়েন্সি-হপিং স্প্রেড স্পেকট্রাম]] (FHSS) ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে এটি 2.4 GHz [[রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি]] ব্যান্ডে কাজ করে এবং ডেটা স্থানান্তরের সময় বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে, যা [[ইন্টারফারেন্স]] কমাতে সাহায্য করে।
-* ক্লাসিক ব্লুটুথ: এটি উচ্চ ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন—অডিও স্ট্রিমিং এবং ফাইল স্থানান্তর। এই ধরনের ব্লুটুথ বেশি শক্তি ব্যবহার করে।
+ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো সাধারণত দুটি প্রধান মোডে কাজ করে:
-* ব্লুটুথ লো এনার্জি (BLE): এটি কম শক্তি ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ট্র্যাকার এবং অন্যান্য পরিধানযোগ্য ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত। BLE ডিভাইসগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটারি লাইফ বজায় রাখতে পারে।
-ব্লুটুথ এবং অন্যান্য তারবিহীন প্রযুক্তি
+*   '''পিকোনெட் (Piconet):''' একটি পিকোনெட்-এ একটি মাস্টার ডিভাইস এবং সাতটি পর্যন্ত স্লেভ ডিভাইস থাকতে পারে। মাস্টার ডিভাইসটি ডেটা আদান প্রদানে নিয়ন্ত্রণ করে।
-ব্লুটুথ ছাড়াও আরও অনেক তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি রয়েছে, যেমন—ওয়াই-ফাই (Wi-Fi), এনএফসি (NFC) এবং জিগবি (Zigbee)। প্রতিটি প্রযুক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োগক্ষেত্র রয়েছে।
+*   '''স্ক্যাটারনেট (Scatternet):''' একাধিক পিকোনெட் একসাথে যুক্ত হয়ে একটি স্ক্যাটারনেট তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইস একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
-* ওয়াই-ফাই: এটি উচ্চ গতিতে ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়, সাধারণত ইন্টারনেট সংযোগের জন্য। ওয়াই-ফাইয়ের পরিসর ব্লুটুথের চেয়ে বেশি, তবে এটি বেশি শক্তি ব্যবহার করে। [[ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক]] সাধারণত বাড়ি এবং অফিসে ব্যবহৃত হয়।
+== ব্লুটুথের নিরাপত্তা ==
-* এনএফসি: এটি খুব স্বল্প দূরত্বে ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন—মোবাইল পেমেন্ট এবং অ্যাক্সেস কন্ট্রোল। এনএফসি ব্লুটুথের চেয়ে কম শক্তি ব্যবহার করে, তবে এর পরিসর খুবই সীমিত।
+ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তবে আধুনিক সংস্করণগুলোতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হলো:
-* জিগবি: এটি কম ডেটা হার এবং কম শক্তি ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা সাধারণত হোম অটোমেশন এবং শিল্প অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়। জিগবি ব্লুটুথের চেয়ে দীর্ঘ পরিসর প্রদান করে, তবে এর ডেটা স্থানান্তরের গতি কম।
-ব্লুটুথের নিরাপত্তা
+*   '''এনক্রিপশন (Encryption):''' ডেটা আদান প্রদানের সময় এনক্রিপশন ব্যবহার করে ডেটা সুরক্ষিত রাখা হয়।
-ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রোটোকল ব্যবহার করে ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং অননুমোদিত অ্যাক্সেস থেকে রক্ষা করে। ব্লুটুথ SIG নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সংশোধন করে এবং নতুন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে।
+*   '''অথেন্টিকেশন (Authentication):''' ডিভাইসগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য অথেন্টিকেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
+*   '''অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (Access Control):''' অনুমোদিত ডিভাইসগুলো ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইসকে সংযোগ স্থাপন করতে বাধা দেওয়া হয়।
+*   '''সিকিউর সিম্পল পেয়ারিং (Secure Simple Pairing):''' এই পদ্ধতিতে একটি পাসকি বা সংখ্যাসূচক কোড ব্যবহার করে ডিভাইসগুলোর মধ্যে নিরাপদ সংযোগ স্থাপন করা হয়।
-* পেয়ারিং: ব্লুটুথ ডিভাইসগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়াকে পেয়ারিং বলা হয়। পেয়ারিংয়ের সময়, ডিভাইসগুলো একটি গোপন কোড বা পিন ব্যবহার করে নিজেদের সনাক্ত করে।
+== ভবিষ্যতের ব্লুটুথ ==
-* এনক্রিপশন: ব্লুটুথ ডেটা এনক্রিপ্ট করে প্রেরিত হয়, যাতে অননুমোদিত ব্যক্তিরা ডেটা পড়তে না পারে।
+ব্লুটুথ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। ব্লুটুথ স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (SIG) लगातार নতুন সংস্করণ এবং বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার মাধ্যমে প্রযুক্তিটিকে আরও উন্নত করছে। ভবিষ্যতের ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে আরও দ্রুত ডেটা স্থানান্তর, দীর্ঘ দূরত্বে সংযোগ, উন্নত নিরাপত্তা এবং [[IoT]] (ইন্টারনেট অফ থিংস) ডিভাইসের সাথে আরও ভালো সংযোগের সুবিধা থাকবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও, [[কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা]] (AI) এবং [[মেশিন লার্নিং]] (ML) -এর সাথে সমন্বিত করে ব্লুটুথকে আরও কার্যকরী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
-* প্রমাণীকরণ: ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো একে অপরের পরিচয় প্রমাণ করে, যাতে শুধুমাত্র অনুমোদিত ডিভাইসগুলো সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
-ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
+== ব্লুটুথ এবং অন্যান্য ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ==
-ব্লুটুথ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ব্লুটুথ ৫.০ এবং তার পরবর্তী সংস্করণগুলো আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য এবং কর্মক্ষমতা প্রদান করে।
+ব্লুটুথ ছাড়াও বাজারে আরও অনেক ওয়্যারলেস প্রযুক্তি রয়েছে, যেমন [[Wi-Fi]], [[NFC]], এবং [[Zigbee]]। প্রতিটি প্রযুক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার ক্ষেত্র রয়েছে। নিচে এই প্রযুক্তিগুলোর সাথে ব্লুটুথের একটি সংক্ষিপ্ত তুলনা দেওয়া হলো:
-* উন্নত অডিও: ব্লুটুথ ৫.২ LE অডিও সমর্থন করে, যা উন্নত অডিও গুণমান এবং কম শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করে।
+{| class="wikitable"
-* দিকনির্দেশনা নির্ণয়: ব্লুটুথ ৫.১ দিকনির্দেশনা নির্ণয়ের ক্ষমতা যুক্ত করে, যা ইনডোর নেভিগেশন এবং লোকেশন-ভিত্তিক পরিষেবাগুলোর জন্য উপযোগী।
+|+ ওয়্যারলেস প্রযুক্তির তুলনা
-* মাল্টি-স্ট্রিম অডিও: ব্লুটুথ ৫.২ মাল্টি-স্ট্রিম অডিও সমর্থন করে, যা একই সাথে একাধিক ডিভাইসে অডিও প্রেরণ করতে পারে।
+|-
-* এনার্জি হার্ভেস্টিং: ভবিষ্যতে, ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে চলতে সক্ষম হতে পারে, যা ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করবে।
+| প্রযুক্তি || পাল্লা || ডেটা স্থানান্তরের হার || ব্যবহার ক্ষেত্র
+|-
+| ব্লুটুথ || ১০-১০০ মিটার || ১-৩ Mbps || হেডফোন, স্পিকার, স্মার্টওয়াচ, ফাইল স্থানান্তর
+|-
+| Wi-Fi || ৩০-১০০ মিটার || ১১-৬০০ Mbps || ইন্টারনেট সংযোগ, নেটওয়ার্কিং
+|-
+| NFC || ০-৪ সেমি || ১০৬-৪২৪ kbps || মোবাইল পেমেন্ট, ডেটা আদান প্রদান
+|-
+| Zigbee || ১০-১০০ মিটার || ২০-২৫০ kbps || স্মার্ট হোম অটোমেশন, সেন্সর নেটওয়ার্ক
+|}
-উপসংহার
+== উপসংহার ==
-ব্লুটুথ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও উন্নত করেছে। এর উদ্ভাবন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত, ব্লুটুথ ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে এবং নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে। স্মার্টফোন, অটোমোটিভ শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা এবং হোম অটোমেশনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্লুটুথের ব্যবহার বাড়ছে। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে ব্লুটুথ আরও উন্নত হবে এবং আমাদের জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
+ব্লুটুথ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর সহজ ব্যবহারযোগ্যতা, কম খরচ এবং বহুমুখী কার্যকারিতার কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সময়ের সাথে সাথে ব্লুটুথ প্রযুক্তির আরও উন্নতি হবে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করা যায়। [[ওয়্যারলেস যোগাযোগ]] ব্যবস্থায় ব্লুটুথ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
-আরও জানতে:
+[[কমিউনিকেশন সিস্টেম]] | [[ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক]] | [[ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং]] | [[রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন]] | [[ইন্টারনেট অফ থিংস]] | [[ডেটা কমিউনিকেশন]] | [[নেটওয়ার্ক প্রোটোকল]] | [[ওয়্যারলেস সেন্সর নেটওয়ার্ক]] | [[পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট]] | [[সিকিউরিটি প্রোটোকল]] | [[ব্লুটুথ লো এনার্জি]] | [[অডিও কোডেক]] | [[ফ্রিকোয়েন্সি হপিং]] | [[স্প্রেড স্পেকট্রাম]] | [[ওয়্যারলেস ডিভাইস]] | [[মোবাইল কম্পিউটিং]] | [[স্মার্টফোন প্রযুক্তি]] | [[ওয়্যারলেস স্ট্যান্ডার্ড]] | [[টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ]] | [[ভলিউম বিশ্লেষণ]] | [[ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ]]
-* [[ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন]]
-* [[ডেটা ট্রান্সমিশন]]
-* [[ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)]]
-* [[মোবাইল কম্পিউটিং]]
-* [[বেসিক ইলেকট্রনিক্স]]
-* [[ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং]]
-* [[কম্পিউটার নেটওয়ার্ক]]
-* [[সাইবার নিরাপত্তা]]
-* [[ওয়্যারলেস সেন্সর নেটওয়ার্ক]]
-* [[এম্বেডেড সিস্টেম]]
-* [[প্রোগ্রামিং ভাষা]] (যেমন: সি, জাভা)
-* [[মাইক্রোকন্ট্রোলার]]
-* [[সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং]]
-* [[হার্ডওয়্যার ডিজাইন]]
-* [[টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস]]
-* [[ভলিউম বিশ্লেষণ]]
-* [[ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা]]
-* [[পোর্টফোলিও তৈরি]]
-* [[ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি]]
 [[Category:ব্লুটুথ-এর ইতিহাস]]
+[[Category:ব্লুটুথ প্রযুক্তি]]
 == এখনই ট্রেডিং শুরু করুন ==