কন্ডর

কন্ডর অপশন ট্রেডিং কৌশল

কন্ডর একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল যা সীমিত ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের সম্ভাবনা প্রদান করে। এটি একই সাথে চারটি অপশন চুক্তি ব্যবহার করে গঠিত, যা একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়। কন্ডর কৌশল সাধারণত অভিজ্ঞ ট্রেডারদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় যারা বাজারের স্থিতিশীলতা আশা করেন এবং একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে দামের ওঠানামা থেকে লাভ করতে চান।

কন্ডরের প্রকারভেদ

কন্ডর কৌশল মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

১. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলে তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়। ২. আয়রন কন্ডর (Iron Condor): এই কৌশলে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়।

এই নিবন্ধে আমরা আয়রন কন্ডর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আয়রন কন্ডর কি?

আয়রন কন্ডর হলো একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যেখানে একইসাথে কল এবং পুট অপশন কেনা এবং বিক্রি করা হয়। এটি চারটি অপশন চুক্তির সমন্বয়ে গঠিত:

• একটি উচ্চ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করা হয়।
• একটি নিম্ন স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন বিক্রি করা হয়।
• উচ্চ স্ট্রাইক প্রাইসের থেকে সামান্য বেশি স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কেনা হয়।
• নিম্ন স্ট্রাইক প্রাইসের থেকে সামান্য কম স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন কেনা হয়।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কেনা অপশনগুলো বিক্রি করা অপশনগুলোর চেয়ে বেশি প্রিমিয়াম প্রদান করে।

কখন আয়রন কন্ডর ব্যবহার করা উচিত?

আয়রন কন্ডর কৌশলটি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উপযুক্ত:

• যখন বাজারের স্থিতিশীলতা আশা করা হয়।
• যখন দামের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
• যখন ট্রেডার সীমিত ঝুঁকি নিতে চান।
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করে যদি মার্কেট সাইডওয়েজ মুভমেন্টে থাকার পূর্বাভাস পাওয়া যায়।

আয়রন কন্ডর তৈরির নিয়মাবলী

একটি আয়রন কন্ডর তৈরি করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত:

১. স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: এমন স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করতে হবে যা বর্তমান বাজার মূল্যের কাছাকাছি থাকে। সাধারণত, অ্যাট-দ্য-মানি (At-the-Money) বা কাছাকাছি স্ট্রাইক প্রাইস ব্যবহার করা হয়। ২. মেয়াদকাল (Expiration Date): অপশনগুলোর মেয়াদকাল একই হতে হবে। ৩. ঝুঁকির মূল্যায়ন: প্রতিটি অপশনের ঝুঁকির মাত্রা ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ৪. কমিশন খরচ: ব্রোকারের কমিশন খরচ হিসাব করে লাভজনকতা যাচাই করতে হবে।

উদাহরণ

ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ৫০ টাকা। একজন ট্রেডার নিম্নলিখিত অপশনগুলো ব্যবহার করে একটি আয়রন কন্ডর তৈরি করতে চান:

• ৫৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন বিক্রি করলেন, যার জন্য প্রিমিয়াম পাওয়া গেল ২ টাকা।
• ৪৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন বিক্রি করলেন, যার জন্য প্রিমিয়াম পাওয়া গেল ২ টাকা।
• ৫৬ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কিনলেন, যার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হল ১ টাকা।
• ৪৪ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন কিনলেন, যার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হল ১ টাকা।

এখানে, মোট প্রিমিয়াম আয় হল (২ + ২) - (১ + ১) = ২ টাকা। এটি এই ট্রেডের সর্বোচ্চ লাভের সম্ভাবনা।

আয়রন কন্ডরের লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ

আয়রন কন্ডরের লাভ এবং ক্ষতি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে:

• যদি স্টকের দাম মেয়াদপূর্তির তারিখে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে থাকে, তবে ট্রেডার সর্বোচ্চ লাভ করবেন (এখানে ২ টাকা)।
• যদি স্টকের দাম ৪৫ টাকার নিচে নেমে যায়, তবে পুট অপশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ হবে (৪০ - ৪৫) = ৫ টাকা (প্রিমিয়াম বাদে)।
• যদি স্টকের দাম ৫৫ টাকার উপরে উঠে যায়, তবে কল অপশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ হবে (৫৫ - ৬০) = ৫ টাকা (প্রিমিয়াম বাদে)।

আয়রন কন্ডরের লাভ-ক্ষতি পরিস্থিতি

পরিস্থিতি	লাভ/ক্ষতি
মেয়াদপূর্তির তারিখে দাম ৪৫-৫৫ টাকার মধ্যে	সর্বোচ্চ লাভ (নেট প্রিমিয়াম)
মেয়াদপূর্তির তারিখে দাম ৪৫ টাকার নিচে	সীমিত ক্ষতি (স্ট্রাইক প্রাইস পার্থক্য - নেট প্রিমিয়াম)
মেয়াদপূর্তির তারিখে দাম ৫৫ টাকার উপরে	সীমিত ক্ষতি (স্ট্রাইক প্রাইস পার্থক্য - নেট প্রিমিয়াম)

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

আয়রন কন্ডর একটি সীমিত ঝুঁকির কৌশল হলেও, কিছু ঝুঁকি রয়েছে যা ট্রেডারদের বিবেচনা করতে হবে:

• আর্লি অ্যাসাইনমেন্ট (Early Assignment): অপশন বিক্রি করার সময় আর্লি অ্যাসাইনমেন্টের ঝুঁকি থাকে।
• বাজারের অপ্রত্যাশিত মুভমেন্ট: বাজারের অপ্রত্যাশিত মুভমেন্টের কারণে ক্ষতি হতে পারে।
• কমিশন খরচ: ব্রোকারের কমিশন খরচ লাভের পরিমাণ কমাতে পারে।
• ভলিউম বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় মার্কেটে বড় ধরনের মুভমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এই কৌশল এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

কন্ডরের সুবিধা

• সীমিত ঝুঁকি: এই কৌশলের প্রধান সুবিধা হল সীমিত ঝুঁকি। ট্রেডারের সম্ভাব্য ক্ষতি আগে থেকেই জানা যায়।
• উচ্চ সাফল্যের সম্ভাবনা: বাজারের স্থিতিশীলতা থাকলে এই কৌশলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।
• প্রিমিয়াম আয়: অপশন বিক্রি করে প্রিমিয়াম আয় করা যায়।

কন্ডরের অসুবিধা

• সীমিত লাভ: এই কৌশলের লাভের সম্ভাবনা সীমিত।
• জটিলতা: কন্ডর কৌশলটি নতুন ট্রেডারদের জন্য জটিল হতে পারে।
• চারটি অপশন চুক্তি প্রয়োজন: এই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য চারটি অপশন চুক্তির প্রয়োজন হয়, যা বেশি মূলধন দাবি করে।

কন্ডর এবং অন্যান্য অপশন কৌশল

কন্ডর কৌশল অন্যান্য অপশন কৌশলের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

• স্ট্র্যাডল (Straddle): স্ট্র্যাডল হলো একটি কৌশল যেখানে একই স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। কন্ডর স্ট্র্যাডলের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। স্ট্র্যাডল
• স্ট্রাঙ্গল (Strangle): স্ট্রাঙ্গল হলো একটি কৌশল যেখানে বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। কন্ডর স্ট্রাঙ্গলের তুলনায় আরও কম ঝুঁকিপূর্ণ। স্ট্রাঙ্গল
• কভারড কল (Covered Call): কভারড কল হলো একটি কৌশল যেখানে স্টক মালিকানা রেখে কল অপশন বিক্রি করা হয়। কন্ডর কভারড কলের তুলনায় বেশি জটিল। কভারড কল
• প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put): প্রোটেক্টিভ পুট হলো একটি কৌশল যেখানে স্টক মালিকানা রক্ষার জন্য পুট অপশন কেনা হয়। কন্ডর প্রোটেক্টিভ পুটের তুলনায় নিরপেক্ষ। প্রোটেক্টিভ পুট

কন্ডর ট্রেডিংয়ের জন্য টিপস

• বাজারের অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলি কঠোরভাবে অনুসরণ করুন।
• ছোট আকারের ট্রেড দিয়ে শুরু করুন।
• ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন এবং তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
• মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• বিভিন্ন অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিবেচনা করুন।
• নিয়মিত টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করুন।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে স্টকের অন্তর্নিহিত মূল্য সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন শিখে মার্কেটের সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারেন।
• মুভিং এভারেজ এবং আরএসআই এর মতো টুল ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
• বলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে ভোলাটিলিটি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট এর মাধ্যমে সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেল খুঁজে বের করতে পারেন।
• চার্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে মার্কেটের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
• অপশন চেইন বিশ্লেষণ করে মার্কেটের সম্ভাব্য দামের পরিসীমা সম্পর্কে জানতে পারেন।
• ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি (Implied Volatility) সম্পর্কে জ্ঞান রাখা কন্ডর ট্রেডিংয়ের জন্য খুব দরকারি।

উপসংহার

কন্ডর একটি শক্তিশালী অপশন ট্রেডিং কৌশল যা সীমিত ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের সম্ভাবনা প্রদান করে। তবে, এটি একটি জটিল কৌশল এবং নতুন ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এই কৌশলটি ব্যবহার করার আগে, বাজারের অবস্থা, ঝুঁকির মাত্রা এবং নিজের ট্রেডিং দক্ষতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ