Bank of England

ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড

ভূমিকা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড (Bank of England) হল যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ১৭৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির মধ্যে অন্যতম। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান কাজ হল মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ব্যাংক নোট ইস্যু করা। এটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গঠন, কার্যাবলী, ইতিহাস এবং অর্থনীতির উপর এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইতিহাস ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৬৯৪ সালে, উইলিয়াম পেন এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের হাত ধরে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের যুদ্ধের জন্য তহবিল সরবরাহ করা। সে সময় ব্যাংকটি সরকারের ঋণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। ধীরে ধীরে এটি নোট ইস্যু করা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলির জন্য ব্যাঙ্কারের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।

• প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক পর্যায় (১৬৯৪-১৮০০): ব্যাংকটি মূলত সরকারের ঋণদাতা হিসেবে কাজ করত। এই সময়ে, ব্যাংক নোটগুলি সোনার বিনিময়ে দেওয়া হতো, যা এর বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
• গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড যুগ (১৮০০-১৯১৪): এই সময়ে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের অধীনে কাজ করে, যেখানে ব্যাংক নোটের মূল্য সোনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ছিল।
• দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর্যায় (১৯১৪-১৯৪৫): প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড স্থগিত করা হয় এবং যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে ব্যাংক নোট ছাপানো হয়।
• জাতীয়করণ ও আধুনিকীকরণ (১৯৪৬-বর্তমান): ১৯৪৬ সালে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড জাতীয়করণ করা হয় এবং এটি সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকে ব্যাংকটি মুদ্রানীতি নির্ধারণ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ১৯৯৭ সালে ব্যাংককে অপারেশনাল স্বাধীনতা দেওয়া হয়, যার ফলে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুদ্রানীতি নির্ধারণ করতে পারে।

গঠন ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড একটি জটিল কাঠামো নিয়ে গঠিত। এর প্রধান অংশগুলো হলো:

• মুদ্রানীতি কমিটি (Monetary Policy Committee - MPC): এই কমিটি মুদ্রানীতি নির্ধারণের জন্য দায়ী। এটি নয় জন সদস্য নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং অন্যান্য অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত।
• আর্থিক নীতি কমিটি (Financial Policy Committee - FPC): আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই কমিটি কাজ করে।
• প্রবিধান কমিটি (Prudential Regulation Committee - PRC): ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির তত্ত্বাবধানের জন্য এই কমিটি গঠিত।
• গভर्नर (Governor): ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন গভর্নর। তিনি ব্যাংকের সামগ্রিক নীতি ও কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন। বর্তমানে অ্যান্ড্রু বেইলি এই পদে আছেন।

গঠন	দায়িত্ব	মুদ্রানীতি কমিটি (MPC)	মুদ্রানীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন	আর্থিক নীতি কমিটি (FPC)	আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণ ও ঝুঁকি হ্রাস	প্রবিধান কমিটি (PRC)	আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রবিধান ও তত্ত্বাবধান	গভর্নর	ব্যাংকের সামগ্রিক পরিচালনা ও প্রতিনিধিত্ব

কার্যাবলী ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ:

• মুদ্রানীতি নির্ধারণ: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মুদ্রানীতি নির্ধারণ করা। এর মাধ্যমে তারা সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ২% নির্ধারণ করা হয়েছে।
• আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা: ব্যাংকটি আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কাজ করে। এটি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়।
• নোট ইস্যু: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের জন্য ব্যাংক নোট ইস্যু করে।
• ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান: এটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং সরকারের জন্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে।
• রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিচালনা করে।
• অর্থনৈতিক গবেষণা: ব্যাংকটি অর্থনীতি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রদান করে।

মুদ্রানীতি ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার করে। এর মধ্যে প্রধান হলো:

• সুদের হার (Interest Rates): ব্যাংক রেট বা বেস রেট পরিবর্তন করে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড অর্থনীতিতে ঋণের পরিমাণ এবং খরচ নিয়ন্ত্রণ করে। সুদের হার বাড়ানো হলে ঋণ নেওয়া ব্যয়বহুল হয়, যা চাহিদা কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
• পরিমাণগত easing (Quantitative Easing - QE): যখন সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি থাকে, তখন ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদ কিনে অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বাড়াতে পারে।
• ফরওয়ার্ড গাইডেন্স (Forward Guidance): ব্যাংক ভবিষ্যতের মুদ্রানীতি সম্পর্কে সংকেত দিতে পারে, যাতে ব্যক্তি ও ব্যবসা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আর্থিক স্থিতিশীলতা আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়:

• স্ট্রেস টেস্টিং (Stress Testing): ব্যাংকগুলি বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারবে কিনা, তা যাচাই করার জন্য স্ট্রেস টেস্টিং করা হয়।
• প্রবিধান ও তত্ত্বাবধান (Regulation and Supervision): ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য কঠোর প্রবিধান তৈরি করা এবং তাদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা হয়।
• ম্যাক্রোপ্রুডেনশিয়াল নীতি (Macroprudential Policy): পুরো আর্থিক ব্যবস্থার ঝুঁকি কমানোর জন্য ম্যাক্রোপ্রুডেনশিয়াল নীতি গ্রহণ করা হয়।

অর্থনীতির উপর প্রভাব ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নীতিগুলি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলে। মুদ্রানীতি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার মাধ্যমে ব্যাংক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে।

• মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। যদি মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে, তবে ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা কমিয়ে আনে।
• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড কম সুদের হার এবং পরিমাণগত easing-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।
• কর্মসংস্থান: স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে।
• বিনিময় হার (Exchange Rate): ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নীতিগুলি পাউন্ড স্টার্লিং-এর বিনিময় হারকে প্রভাবিত করতে পারে।

ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক উপকরণ। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের মুদ্রানীতি এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাসগুলি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

• সুদের হারের প্রভাব: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সুদের হারের পরিবর্তনগুলি বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এবং অন্যান্য আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।
• মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব: মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাসগুলি বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে বা কমলে বিভিন্ন সম্পদের মূল্যের উপর প্রভাব পড়ে, যা ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করে।
• অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাব: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রকাশিত অর্থনৈতিক তথ্য, যেমন জিডিপি, বেকারত্বের হার এবং উৎপাদন মূল্য সূচক (Producer Price Index), বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নীতিগুলি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকি কমাতে পারে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলি ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি কমানো যায়।
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং চার্ট প্যাটার্ন ব্যবহার করে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো চিহ্নিত করা যায়।
• ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায়, যা সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
• অপশন ট্রেডিং কৌশল: বিভিন্ন অপশন ট্রেডিং কৌশল যেমন স্ট্র্যাডল, স্ট্র্যাঙ্গল, বাটারফ্লাই ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

সমালোচনা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের কিছু নীতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। কিছু সমালোচক মনে করেন যে পরিমাণগত easing ধনী ব্যক্তিদের আরও ধনী করেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি। আবার অনেকে মনে করেন যে ব্যাংকটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না।

ভবিষ্যৎ ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন ব্রেক্সিট-এর প্রভাব, কোভিড-১৯ মহামারী এবং বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা। ব্যাংকটি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য নতুন নীতি গ্রহণ করছে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ডিজিটাল মুদ্রা এবং ফিনটেক (FinTech) প্রযুক্তির বিকাশে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

আরও জানতে

• কেন্দ্রীয় ব্যাংক
• মুদ্রানীতি
• আর্থিক স্থিতিশীলতা
• বৈদেশিক মুদ্রার বাজার
• জিডিপি
• বেকারত্বের হার
• উৎপাদন মূল্য সূচক
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
• ভলিউম বিশ্লেষণ
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
• অপশন ট্রেডিং কৌশল
• ব্রেক্সিট
• কোভিড-১৯
• ফিনটেক
• সুদের হার সোয়াপ
• বন্ড মার্কেট
• মুদ্রাস্ফীতি হুক
• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
• রাজকোষ

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ