ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর বলতে সেইসব সংস্থাকে বোঝায় যারা অন্যদের পক্ষে অর্থ বিনিয়োগ করে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে পেনশন ফান্ড, বীমা কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, হেজ ফান্ড, endowments, এবং সোভেরেইন ওয়েলথ ফান্ড। তারা ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের তুলনায় অনেক বড় আকারের বিনিয়োগ করে এবং প্রায়শই বাজারের গতিবিধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর রয়েছে, যাদের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং কৌশল ভিন্ন। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিয়ে আলোচনা করা হলো:

• পেনশন ফান্ড: এই ফান্ডগুলি সাধারণত কর্মচারী এবং অবসরপ্রাপ্তদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হল ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা। পেনশন পরিকল্পনা এবং অবসরকালীন সঞ্চয় এর সাথে এর সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।

• বীমা কোম্পানি: বীমা কোম্পানিগুলি পলিসি হোল্ডারদের দাবি পূরণের জন্য প্রিমিয়াম থেকে সংগৃহীত অর্থ বিনিয়োগ করে। তাদের বিনিয়োগ সাধারণত নিরাপদ এবং স্থিতিশীল প্রকৃতির হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বীমা দাবি প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

• মিউচুয়াল ফান্ড: মিউচুয়াল ফান্ডগুলি অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি যেমন স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য অ্যাসেটে বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি বৈচিত্র্যকরণ-এর সুযোগ তৈরি করে।

• হেজ ফান্ড: হেজ ফান্ডগুলি সাধারণত উচ্চ-ঝুঁকির বিনিয়োগ করে এবং বেশি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। তারা জটিল বিনিয়োগ কৌশল এবং ডেরিভেটিভস ব্যবহার করে। ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা তাদের প্রধান কাজ।

• Endowments: এগুলো সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল বা দাতব্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ফান্ডগুলির মূলধন দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত থাকে এবং আয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো হয়। দাতব্য বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

• সোভেরেইন ওয়েলথ ফান্ড: এই ফান্ডগুলি কোনো দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ বা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থেকে অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সাথে এটি জড়িত।

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ কৌশল

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ কৌশল অনুসরণ করে। তাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

• ভ্যালু ইনভেস্টিং: এই কৌশল অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা বাজারের চেয়ে কম মূল্যে আন্ডারভ্যালুড স্টক খুঁজে বের করে বিনিয়োগ করে। ওয়ারেন বাফেট এই কৌশলের একজন বিখ্যাত প্রবক্তা।

• গ্রোথ ইনভেস্টিং: এই ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীরা সেইসব কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগ করে যাদের দ্রুত উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং মৌলিক বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

• ইনডেক্সিং: এই কৌশলটি কোনো নির্দিষ্ট বাজার সূচক (যেমন S&P 500) অনুসরণ করে এবং সেই সূচকের অন্তর্ভুক্ত স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করে। প্যাসিভ বিনিয়োগ এর এটি একটি উদাহরণ।

• কোয়ান্ট্রিটेटिव ইনভেস্টিং: এখানে কম্পিউটার মডেল এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং এবং ডেটা বিশ্লেষণ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

• অ্যাক্টিভ ট্রেডিং: এই পদ্ধতিতে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে স্বল্পমেয়াদে লাভ করার চেষ্টা করে। ডে ট্রেডিং এবং সুইং ট্রেডিং এর উদাহরণ।

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ কৌশলের তুলনা

কৌশল	বৈশিষ্ট্য	ঝুঁকি	প্রত্যাশিত রিটার্ন
ভ্যালু ইনভেস্টিং	আন্ডারভ্যালুড স্টকে বিনিয়োগ	মাঝারি	দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ
গ্রোথ ইনভেস্টিং	দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানিতে বিনিয়োগ	উচ্চ	উচ্চ
ইনডেক্সিং	বাজার সূচক অনুসরণ	কম	বাজারের সমান
কোয়ান্ট্রিটेटिव ইনভেস্টিং	অ্যালগরিদম ব্যবহার	মাঝারি থেকে উচ্চ	বাজারের চেয়ে বেশি
অ্যাক্টিভ ট্রেডিং	বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ	খুব উচ্চ	স্বল্পমেয়াদে উচ্চ

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের প্রভাব

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা বাজারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। তাদের বড় আকারের লেনদেন বাজারের দাম এবং তারল্য পরিবর্তন করতে পারে।

• বাজারের স্থিতিশীলতা: ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেয়, যা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।

• মূল্য নির্ধারণ: তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলি সম্পদের মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

• কর্পোরেট গভর্ন্যান্স: ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা প্রায়শই কোম্পানির কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং ব্যবস্থাপনার উপর নজর রাখে।

• বাজারের দক্ষতা: তারা বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাজারের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগে ঝুঁকি

ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি বিদ্যমান। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য জরুরি।

• বাজার ঝুঁকি: বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিনিয়োগের মূল্য কমে যেতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

• সুদের হারের ঝুঁকি: সুদের হার বাড়লে বন্ডের মূল্য কমে যেতে পারে। বন্ড মার্কেট এবং সুদের হারের পূর্বাভাস সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার।

• credit ঝুঁকি: ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে বিনিয়োগের ক্ষতি হতে পারে। ক্রেডিট রেটিং এবং ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

• তারল্য ঝুঁকি: কোনো সম্পদ দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে ক্ষতি হতে পারে। তারল্য সংকট এবং অ্যাসেট বিক্রি করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

• মুদ্রা ঝুঁকি: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তন হলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এবং মুদ্রা ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

বাইনারি অপশন এবং ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর

বাইনারি অপশন হলো একটি আর্থিক চুক্তি যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা সাধারণত বাইনারি অপশন ব্যবহার করে তাদের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনতে।

• হেজিং: বাইনারি অপশন ব্যবহার করে ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা তাদের অন্যান্য বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

• স্পেকুলেশন: তারা স্বল্পমেয়াদে লাভের জন্য বাইনারি অপশনে স্পেকুলেট করতে পারে।

• আর্বিট্রেজ: বিভিন্ন বাজারে একই সম্পদের মূল্যের পার্থক্য থেকে লাভ করার জন্য বাইনারি অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মৌলিক ধারণা

ধারণা	ব্যাখ্যা
কল অপশন	সম্পদটির মূল্য বাড়বে এমন অনুমান
পুট অপশন	সম্পদটির মূল্য কমবে এমন অনুমান
পেমআউট	সফল ট্রেডের ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ
মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়	ট্রেডটি শেষ হওয়ার সময়
ব্রোকার	বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সরবরাহকারী

নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান

ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের কার্যক্রম বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই নিয়ন্ত্রণগুলি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং বাজারের স্বচ্ছতা বজায় রাখে।

• সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থাটি সিকিউরিটিজ মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে।

• ফিনান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ): যুক্তরাজ্যের এই সংস্থাটি আর্থিক পরিষেবাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।

• বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি): বাংলাদেশের এই সংস্থাটি শেয়ার বাজার এবং সিকিউরিটিজ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।

ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং আর্থিক বাজার-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের বিনিয়োগ কৌশল এবং কার্যকলাপ বাজারের গতিবিধিকে প্রভাবিত করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মাধ্যমে তারা তাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলকে আরও উন্নত করতে পারে।

আরও জানতে:

• ফিনান্সিয়াল মার্কেট
• পোর্টফোলিও তত্ত্ব
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল
• বিনিয়োগের প্রকারভেদ
• শেয়ার বাজার বিশ্লেষণ
• টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
• ভলিউম প্রাইস অ্যানালাইসিস
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
• মুভিং এভারেজ
• রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স
• MACD
• ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
• বুলিশ এবং বিয়ারিশ ট্রেন্ড
• সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স লেভেল
• ট্রেডিং সাইকোলজি
• মানি ম্যানেজমেন্ট
• কর্পোরেট ফিনান্স
• আন্তর্জাতিক ফিনান্স
• আর্থিক মডেলিং
• বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ