প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার, যা ক্লোজড-সোর্স সফটওয়্যার নামেও পরিচিত, এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। এই সফটওয়্যারের সোর্স কোড সাধারণত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় না। এর ব্যবহারকারীগণ শুধুমাত্র সফটওয়্যারটি ব্যবহারের অনুমতি পায়, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তন বা বিতরণ করার অধিকার পায় না। প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং সফটওয়্যার প্রকৌশল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য

মালিকানা: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের সোর্স কোড এবং নকশার অধিকার সম্পূর্ণরূপে সফটওয়্যারটির সৃষ্টিকর্তা বা কোম্পানির কাছে থাকে।
ব্যবহারের লাইসেন্স: ব্যবহারকারীরা একটি লাইসেন্সের মাধ্যমে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করার অনুমতি পায়, যেখানে ব্যবহারের শর্তাবলী উল্লেখ করা থাকে। এই লাইসেন্স ব্যবহারকারীকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার, পরিবর্তন বা বিতরণের অধিকার সীমিত করে।
সোর্স কোড গোপনীয়তা: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের সোর্স কোড সাধারণত গোপন রাখা হয়। এটি সফটওয়্যারটির নিরাপত্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষা করে।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য: এই ধরনের সফটওয়্যার সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং এর মাধ্যমে আয় লাভের চেষ্টা করা হয়।
সমর্থন এবং আপডেট: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার সরবরাহকারীরা সাধারণত তাদের গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তিগত সমর্থন এবং নিয়মিত আপডেট প্রদান করে।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

অপারেটিং সিস্টেম: যেমন - মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ম্যাকওএস।
অফিস স্যুট: যেমন - মাইক্রোসফট অফিস, অ্যাডোবি অ্যাক্রোবেট।
ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: যেমন - ওরাকল, এসকিউএল সার্ভার।
গ্রাফিক্স সফটওয়্যার: যেমন - অ্যাডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর।
ভিডিও গেমস: অধিকাংশ জনপ্রিয় ভিডিও গেম প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার: বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন, যেমন - ওয়েব ব্রাউজার, মিডিয়া প্লেয়ার।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের সুবিধা

গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতা: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের পণ্যের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
ব্যবহারকারী-বান্ধব: এই সফটওয়্যারগুলো সাধারণত ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়, যা তাদের ব্যবহার করা সহজ করে তোলে।
প্রযুক্তিগত সমর্থন: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার সরবরাহকারীরা সাধারণত তাদের গ্রাহকদের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিগত সমর্থন প্রদান করে।
নিয়মিত আপডেট: এই সফটওয়্যারগুলো নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয়, যা নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সমাধান করে এবং নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষা: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার তাদের সৃষ্টিকর্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষা করে।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের অসুবিধা

উচ্চ মূল্য: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার সাধারণত ফ্রিওয়্যার বা ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এর চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়।
সীমাবদ্ধতা: ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যারটির সোর্স কোড অ্যাক্সেস করতে পারে না বলে, তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এটি পরিবর্তন করতে পারে না।
vendor lock-in: একবার কোনো প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু করলে, অন্য কোনো সফটওয়্যারে পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি: যদিও প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে, তবুও এই সফটওয়্যারে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকে।
গোপনীয়তা উদ্বেগ: কিছু প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করতে পারে, যা গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার বনাম ওপেন সোর্স সফটওয়্যার

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এর মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো হলো:

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার বনাম ওপেন সোর্স সফটওয়্যার
প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার \| ওপেন সোর্স সফটওয়্যার	ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে \| জনসাধারণের কাছে	গোপন \| উন্মুক্ত	সাধারণত ব্যয়বহুল \| সাধারণত বিনামূল্যে	সীমিত \| সম্পূর্ণ	সীমিত \| অবাধ	সরবরাহকারীর মাধ্যমে \| সম্প্রদায় এবং সরবরাহকারী উভয়ের মাধ্যমে	মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, অ্যাডোবি ফটোশপ \| লিনাক্স, মোজিলা ফায়ারফক্স

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ব্রোকার তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, যা ক্লায়েন্টদের ট্রেড করার জন্য ব্যবহার করতে হয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলো প্রায়শই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা ট্রেডারদের ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং লাভজনক ট্রেড খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম: ব্রোকারদের নিজস্ব ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে সাধারণত উন্নত চার্টিং সরঞ্জাম, রিয়েল-টাইম ডেটা এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিংয়ের সুবিধা থাকে।
অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং: কিছু প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং সমর্থন করে, যা ট্রেডারদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড করতে দেয়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: এই সফটওয়্যারগুলো ট্রেডারদের তাদের ঝুঁকি পরিচালনা করতে এবং স্টপ-লস অর্ডার সেট করতে সহায়তা করে।
ডেটা বিশ্লেষণ: প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার প্রায়শই উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা ট্রেডারদের বাজারের প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করে।
কাস্টমাইজেশন: কিছু প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারফেস কাস্টমাইজ করার অনুমতি দেয়।

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের নিরাপত্তা

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো:

নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট: সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার জন্য নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট করা উচিত।
এনক্রিপশন: সংবেদনশীল ডেটা এনক্রিপ্ট করা উচিত, যাতে এটি অননুমোদিত ব্যক্তিরা অ্যাক্সেস করতে না পারে।
ফায়ারওয়াল: নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখার জন্য ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা উচিত।
অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার: ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।
ব্যবহারকারী প্রমাণীকরণ: শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যার অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
ডেটা ব্যাকআপ: নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ নেওয়া উচিত, যাতে কোনো ডেটা হারিয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা যায়।

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং ব্লকচেইন এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে তুলবে। ভবিষ্যতে, আমরা আরও উন্নত এবং কাস্টমাইজড প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার দেখতে পাব, যা ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হবে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, সমর্থন এবং প্রতিরোধ, ট্রেন্ড লাইন, মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি, ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট, বোলিঙ্গার ব্যান্ড, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, মানি ম্যানেজমেন্ট, ট্রেডিং সাইকোলজি, বাইনারি অপশন কৌশল এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান একজন বাইনারি অপশন ট্রেডারের জন্য অত্যাবশ্যক।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ