জ্ঞানীয় বিজ্ঞান

ভূমিকা

জ্ঞানীয় বিজ্ঞান (Cognitive science) হলো আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র যেখানে মন এবং বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। এটি মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, দর্শন এবং নৃবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ধারণা ও পদ্ধতি ব্যবহার করে। জ্ঞানীয় বিজ্ঞানীরা মানুষের চিন্তা, শেখা, সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করেন। এই বিজ্ঞান মানুষের মন কিভাবে কাজ করে, কিভাবে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এবং কিভাবে জ্ঞান তৈরি করে তা ব্যাখ্যা করতে চায়।

জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের ইতিহাস

জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের যাত্রা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। এর উৎপত্তির পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যালান টুরিং-এর কাজ, বিশেষ করে টুরিং মেশিন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence) নিয়ে তার গবেষণা, জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে। ১৯৫৬ সালে ডার্টmouth সম্মেলনে "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়, যা এই ক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে ধরা হয়।

১৯৬০-এর দশকে নোয়াম চমস্কি-র ভাষাতত্ত্বের কাজ জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করে। চমস্কি দেখান যে ভাষা শুধু আচরণগত অভ্যাসের ফল নয়, বরং মানুষের মস্তিষ্কে অন্তর্নিহিত কিছু নিয়ম রয়েছে যা ভাষা শেখা ও ব্যবহারকে সম্ভব করে তোলে। একই সময়ে, উলরিক নেইসার-এর কাজ উপলব্ধি এবং স্মৃতি নিয়ে নতুন ধারণা দেয়।

পরবর্তী দশকগুলোতে, হার্বার্ট সাইমন এবং অ্যালান নিউওয়েল-এর মতো বিজ্ঞানীরা মানুষের সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া মডেলিং করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন। এই কাজগুলো "তথ্য প্রক্রিয়াকরণ" (Information processing) পদ্ধতির জন্ম দেয়, যা জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের একটি প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি।