অহিংসা

অহিংসা একটি দর্শন ও জীবনযাপন পদ্ধতি। এটি কেবল যুদ্ধের বিরোধিতা করে না, বরং চিন্তা, কথা ও কাজের মাধ্যমে সকল প্রকার হিংসাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলে। অহিংসা একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এই নিবন্ধে অহিংসার ধারণা, ইতিহাস, প্রকারভেদ, তাৎপর্য এবং আধুনিক বিশ্বে এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

অহিংসার সংজ্ঞা

অহিংসা শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত - ‘অ’ (negative prefix) এবং ‘হিংসা’ (violence)। সুতরাং, অহিংসা মানে হলো কোনো প্রকারের হিংসাত্মক আচরণ না করা। এটি কেবল শারীরিক হিংসা নয়, মানসিক, মৌখিক এবং আবেগিক হিংসাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। অহিংসা একটি সক্রিয় ধারণা, যা ভালোবাসা, সহানুভূতি, এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে গঠিত। মহাত্মা গান্ধী অহিংসাকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

অহিংসার ইতিহাস

অহিংসার ধারণা নতুন নয়। এর উৎস প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ও ধর্মগুলিতে প্রোথিত।

জৈনধর্ম: জৈনধর্মে অহিংসা পরম ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। জৈন বিশ্বাস অনুযায়ী, সকল জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং কোনো প্রাণীকে কষ্ট না দেওয়া মূল নীতি।
বৌদ্ধধর্ম: বৌদ্ধধর্মেও অহিংসার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধদের পঞ্চশীল-এর প্রথমটি হলো প্রাণিহত্যা থেকে বিরত থাকা।
হিন্দুধর্ম: হিন্দুধর্মে অহিংসা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি, যা অহিংসা পরম ধর্ম হিসাবে পালিত হয়।
খ্রিস্ট ধর্ম: খ্রিস্টধর্মেও অহিংসার কথা বলা হয়েছে। যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা ও জীবন অহিংসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ইসলাম ধর্ম: ইসলামে ন্যায়বিচার ও শান্তির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা অহিংসার ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

তবে, বিংশ শতাব্দীতে মহাত্মা গান্ধী অহিংসাকে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেন।

অহিংসার প্রকারভেদ

অহিংসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

শারীরিক অহিংসা: কোনো জীবের প্রতি শারীরিক আঘাত না করা।
মানসিক অহিংসা: অন্যের মনে আঘাত করে এমন কথা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
মৌখিক অহিংসা: কঠোর বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার না করা, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা।
আবেগিক অহিংসা: নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যের আবেগের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া।
গঠনমূলক অহিংসা: ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে হিংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা, যেমন - আলোচনা, সংলাপ, এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।

অহিংসার তাৎপর্য

অহিংসার তাৎপর্য ব্যাপক ও বহুমাত্রিক। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:

ব্যক্তিগত শান্তি: অহিংস জীবনযাপন ব্যক্তি জীবনে শান্তি ও সন্তুষ্টি নিয়ে আসে।
সামাজিক সংহতি: অহিংসা সমাজে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি করে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন: অহিংস আন্দোলন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
বিশ্ব শান্তি: অহিংসা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানবাধিকার রক্ষা: অহিংসা মানবাধিকার রক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

অহিংসার প্রয়োগ

অহিংসা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

গান্ধী জি-এর অসহযোগ আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা হয়েছিল।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র-এর নাগরিক অধিকার আন্দোলন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের জন্য মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র অহিংস প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা-এর বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন: দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক: অহিংসিতা পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
কর্মক্ষেত্র: কর্মক্ষেত্রে অহিংস আচরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল পরিবেশ তৈরি করা যায়।

অহিংসা ও বাইনারি অপশন ট্রেডিং

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক প্রক্রিয়া। এখানে অহিংসার ধারণা সরাসরিভাবে প্রযোজ্য না হলেও, কিছু নীতি অনুসরণ করে ঝুঁকি কমানো এবং স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব।

১. আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। লোভ বা ভয়ের বশে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। অহিংসার মতো, এখানেও নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

২. ঝুঁকি মূল্যায়ন: কোনো ট্রেড করার আগে ঝুঁকির মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ করা অহিংসার নীতির পরিপন্থী, কারণ এটি নিজের আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

৩. সঠিক বিশ্লেষণ: সফল ট্রেডিংয়ের জন্য মার্কেট এবং সম্পদের সঠিক বিশ্লেষণ করা দরকার। তাড়াহুড়ো করে বা ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা উচিত নয়।

৪. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী লাভের দিকে না ঝুঁকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ, এবং ভলিউম বিশ্লেষণ - এই তিনটি বিষয় বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।
মুভিং এভারেজ : মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের ট্রেন্ড নির্ধারণ করা যায়।
আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স) : আরএসআই ব্যবহার করে বোঝা যায় কোনো স্টক বা সম্পদ অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রি হয়েছে কিনা।
MACD (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স) : MACD বাজারের গতি এবং দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে।
ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট : ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া চিহ্নিত করে।
বোলিঙ্গার ব্যান্ড : বলিঙ্গার ব্যান্ড বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) : VWAP একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্যের হিসাব দেয়, যা ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) : OBV ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।
অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন : এই লাইনটি বাজারের ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যেকার কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে, একজন ট্রেডার অহিংসভাবে (অর্থাৎ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করে) ট্রেডিং করতে পারে।

অহিংসার পথে বাধা

অহিংসার পথে অনেক বাধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান বাধা উল্লেখ করা হলো:

প্রতিক্রিয়াশীলতা: কোনো আঘাত বা ক্ষতির সম্মুখীন হলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়া হিংসাত্মক হতে পারে।
অবিচার: সমাজে অবিচার ও বৈষম্য বিদ্যমান থাকলে মানুষ হতাশ হয়ে হিংসার পথ বেছে নিতে পারে।
ক্ষমতার অপব্যবহার: ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে দুর্বলরা অত্যাচারের শিকার হয় এবং প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়।
মানসিক চাপ: মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে মানুষ হিংসাত্মক আচরণ করতে পারে।
সামাজিক পরিবেশ: হিংসাত্মক সামাজিক পরিবেশ মানুষকে প্রভাবিত করে এবং হিংসার প্রতি উৎসাহিত করে।

অহিংসার ভবিষ্যৎ

অহিংসার ধারণা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। আধুনিক বিশ্বে অহিংসা একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। তবে, অহিংসার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে মানুষের সচেতনতা ও ইচ্ছার উপর। অহিংসার শিক্ষা ও চর্চা বৃদ্ধি করে একটি শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

উপসংহার

অহিংসা একটি সর্বজনীন দর্শন, যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। এটি কেবল একটি নৈতিক আদর্শ নয়, বরং একটি কার্যকরী জীবনযাপন পদ্ধতি। অহিংসার পথ অনুসরণ করে আমরা একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি। অহিংসাবাদ চর্চার মাধ্যমে সহানুভূতি, ক্ষমা এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব।

অহিংসার মূল নীতি
নীতি	ব্যাখ্যা
অহিংসা	কোনো প্রকার হিংসাত্মক আচরণ না করা	সহানুভূতি	অন্যের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করা	শ্রদ্ধা	সকল জীবের প্রতি সম্মান দেখানো	ক্ষমা	অন্যের ভুল ক্ষমা করে দেওয়া	সত্যবাদিতা	সবসময় সত্য কথা বলা	অহিংস প্রতিরোধ	শান্তিপূর্ণ উপায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা

তথ্যসূত্র আরও দেখুন বহিঃসংযোগ

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ