মিশন: ইম্পসিবল

মিশন: ইম্পসিবল - একটি বিস্তারিত আলোচনা

মিশন: ইম্পসিবল (Mission: Impossible) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় আমেরিকান অ্যাকশন স্পাই চলচ্চিত্র সিরিজ। এটি ১৯৯৬ সালে প্রথম মুক্তি পায় এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি সিক্যুয়েল তৈরি করা হয়েছে। এই সিরিজের প্রতিটি চলচ্চিত্রই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এই নিবন্ধে, মিশন: ইম্পসিবল চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট, কাহিনী, চরিত্রায়ণ, নির্মাণশৈলী এবং প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রেক্ষাপট ও ধারণা

মিশন: ইম্পসিবল সিরিজের ভিত্তি হলো একটি গোপন সরকারি সংস্থা আইএমএফ (Impossible Missions Force)। এই সংস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং গোপনীয় মিশনগুলি পরিচালনা করে থাকে। সিরিজের প্রধান চরিত্র ইথান হান্ট, একজন দক্ষ এবং সাহসী গুপ্তচর, যিনি আইএমএফ-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রতিটি চলচ্চিত্রে, ইথান হান্ট এবং তার দলকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কঠিন সব মিশনে পাঠানো হয়, যেখানে তাদের বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা এবং সাহসের পরীক্ষা দিতে হয়।

কাহিনীর বিবর্তন

মিশন: ইম্পসিবল (১৯৯৬)*

প্রথম চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ব্রায়ান ডি পালমা। কাহিনী শুরু হয় ভিয়েনা, অস্ট্রিয়াতে একটি ব্যর্থ মিশনে, যেখানে ইথান হান্টের দল একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। দলের কয়েকজন সদস্য নিহত হন এবং ইথান হান্টকে সন্দেহ করা হয়। এরপর ইথান হান্টকে নিজের নির্দোষতা প্রমাণ করতে এবং আসল বিশ্বাসঘাতককে খুঁজে বের করতে হয়। এই চলচ্চিত্রে টম ক্রুজ প্রথমবার ইথান হান্টের চরিত্রে অভিনয় করেন।

মিশন: ইম্পসিবল ২ (২০০১)*

দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন জন উ। কাহিনীর শুরু হয় সিডনি, অস্ট্রেলিয়াতে। এখানে ইথান হান্টকে একটি মারাত্মক ভাইরাস চুরি করার মিশনে পাঠানো হয়, যা বিশ্বব্যাপী মহামারী সৃষ্টি করতে পারে। এই চলচ্চিত্রে, ইথান হান্টকে ডাবল এজেন্টদের মোকাবিলা করতে হয় এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে হয়।

মিশন: ইম্পসিবল ৩ (২০০৬)*

তৃতীয় চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন জে. জে. অ্যাব্রামস। কাহিনীটি ইথান হান্টকে একজন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি মারাত্মক অস্ত্র উদ্ধার করার মিশনে নিয়ে যায়। এই মিশনে, ইথান হান্টকে তার ব্যক্তিগত জীবনের অন্ধকার দিকগুলির মোকাবিলা করতে হয় এবং একজন প্রিয়জনকে রক্ষা করতে হয়।

মিশন: ইম্পসিবল - গোস্ট প্রোটোকল (২০১১)*

চতুর্থ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ব্র্যাড বার্ড। এই চলচ্চিত্রে, আইএমএফ-এর সদর দফতর ক্রেমলিন দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়, এবং ইথান হান্ট ও তার দলকে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হয়। এখানে তারা কোডনেম "ব্র্যান্ডন" এর রহস্য উন্মোচন করে।

মিশন: ইম্পসিবল - রোগ নেশন (২০১৫)*

পঞ্চম চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি। এখানে, ইথান হান্টকে একটি গোপন সন্ত্রাসী সংগঠনের মোকাবিলা করতে হয়, যারা বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। এই চলচ্চিত্রে, ইথান হান্টকে সিন্ডিকেট নামক একটি ছায়া সংস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হয়।

মিশন: ইম্পসিবল - ফলআউট (২০১৮)*

ষষ্ঠ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি। এই চলচ্চিত্রে, ইথান হান্টকে তিনটি পারমাণবিক বোমা উদ্ধারের মিশনে পাঠানো হয়, যা সন্ত্রাসবাদীরা ব্যবহার করে বিশ্বকে ধ্বংস করতে চায়। এখানে তাকে হেনরি কেইন এর মত কঠিন প্রতিপক্ষের सामना করতে হয়।

মিশন: ইম্পসিবল - ডেড রেকন‍িং পার্ট ওয়ান (২০২৩)*

সপ্তম চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি। এই চলচ্চিত্রে, ইথান হান্টকে একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) "এন্টিটি"-কে নিয়ন্ত্রণ করার মিশনে পাঠানো হয়, যা মানবজাতির জন্য হুমকি স্বরূপ।

চরিত্রায়ণ

ইথান হান্ট (টম ক্রুজ)*

মিশন: ইম্পসিবল সিরিজের প্রধান চরিত্র। একজন অত্যন্ত দক্ষ, বুদ্ধিমান এবং সাহসী গুপ্তচর। টম ক্রুজ এই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটি চলচ্চিত্রে নিজের শারীরিক সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন।

লুথার স্টিকেল (ভিং রামস)*

ইথান হান্টের প্রধান সহযোগী এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। লুথার স্টিকেল দলের জন্য অত্যাধুনিক গ্যাজেট তৈরি করেন এবং মিশনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেন।

বেনজি ডান (সাইমন পেগ)*

আইএমএফ-এর প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং কমিক রিলিফ প্রদানকারী চরিত্র। বেনজি ডান তার হাস্যরস এবং দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন।

ইলসা ফাউস্ট (রেবেকা ফার্গুসন)*

একজন রহস্যময়ী গুপ্তচর, যিনি ইথান হান্টের সাথে বিভিন্ন মিশনে সহযোগিতা করেন। ইলসা ফাউস্টের চরিত্রটি জটিল এবং আকর্ষণীয়।

লেন হান্ট (মিশেল মোনaghan)*

ইথান হান্টের প্রাক্তন স্ত্রী এবং সহযোগী। লেন হান্ট বিভিন্ন মিশনে ইথান হান্টকে সহায়তা করেছেন।

নির্মাণশৈলী

মিশন: ইম্পসিবল চলচ্চিত্রগুলি তাদের নির্মাণশৈলীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রতিটি চলচ্চিত্রে অত্যাধুনিক ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, স্টান্ট এবং অ্যাকশন সিকোয়েন্স ব্যবহার করা হয়েছে।

অ্যাকশন সিকোয়েন্স*

এই সিরিজের অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং শ্বাসরুদ্ধকর। টম ক্রুজ নিজে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্ট করেছেন, যা চলচ্চিত্রগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যেমন - দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার পার্শ্ববর্তী দেওয়ালে চড়ে দৃশ্যটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস*

মিশন: ইম্পসিবল চলচ্চিত্রগুলিতে অত্যাধুনিক ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ব্যবহার করা হয়েছে, যা দর্শকদের একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

সুর (Sound)*

চলচ্চিত্রগুলির সুর দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রভাব

মিশন: ইম্পসিবল সিরিজটি অ্যাকশন স্পাই চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চলচ্চিত্রগুলি দর্শকদের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অ্যাকশন থ্রিলার জনরার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে।

চলচ্চিত্র	পরিচালক	মুক্তি বছর	বক্স অফিস আয়
মিশন: ইম্পসিবল	ব্রায়ান ডি পালমা	১৯৯৬	$১৮১.৭ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল ২	জন উ	২০০১	$২৫৭.১ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল ৩	জে. জে. অ্যাব্রামস	২০০৬	$৩৯৭.৮ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল - গোস্ট প্রোটোকল	ব্র্যাড বার্ড	২০১১	$৬৯৪.৭ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল - রোগ নেশন	ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি	২০১৫	$৭২৫.৪ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল - ফলআউট	ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি	২০১৮	$৭৯১.৭ মিলিয়ন
মিশন: ইম্পসিবল - ডেড রেকন‍িং পার্ট ওয়ান	ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারি	২০২৩	$৫৬৭.৫ মিলিয়ন (এবং এখনো চলছে)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ