ব্যবস্থাপনা দ্বারা উদ্দেশ্য (MBO)

ব্যবস্থাপনা দ্বারা উদ্দেশ্য

ভূমিকা: ব্যবস্থাপনা দ্বারা উদ্দেশ্য (Management by Objectives বা MBO) একটি কৌশলগত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এটি ব্যবস্থাপক এবং কর্মীদের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। পিটার ড্রকার ১৯৬০-এর দশকে এই ধারণাটির প্রবর্তন করেন। MBO শুধুমাত্র একটি পদ্ধতি নয়, এটি একটি সামগ্রিক দর্শন যা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্তরের কর্মীদের যুক্ত করে লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহিত করে। এই নিবন্ধে, ব্যবস্থাপনা দ্বারা উদ্দেশ্য (MBO)-এর মূল ধারণা, প্রক্রিয়া, সুবিধা, অসুবিধা এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

MBO-এর মূল ধারণা: MBO-এর মূল ধারণা হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যগুলোকে কর্মীদের ব্যক্তিগত লক্ষ্যের সাথে সমন্বিত করা। এর মাধ্যমে কর্মীরা বুঝতে পারে তাদের কাজ কীভাবে প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত। MBO-এর ভিত্তি হলো SMART লক্ষ্য নির্ধারণ করা। SMART হলো Specific (নির্দিষ্ট), Measurable (পরিমাপযোগ্য), Achievable (অর্জনযোগ্য), Relevant (প্রাসঙ্গিক) এবং Time-bound (সময়-সীমাবদ্ধ)। এই বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্যগুলোকে সুস্পষ্ট এবং বাস্তবসম্মত করে তোলে।

MBO-এর প্রক্রিয়া: MBO প্রক্রিয়াটি সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. লক্ষ্য নির্ধারণ: প্রথম ধাপে, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। এরপর, এই লক্ষ্যগুলোকে বিভিন্ন বিভাগ এবং কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। লক্ষ্য নির্ধারণের সময় কর্মীদের মতামত এবং সক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত। লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২. কর্ম পরিকল্পনা তৈরি: লক্ষ্য নির্ধারণের পর, প্রতিটি কর্মীর জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনায় উল্লেখ থাকে কীভাবে কর্মী তার লক্ষ্য অর্জন করবে, কী কী সম্পদ তার প্রয়োজন হবে এবং সময়সীমা কী হবে। কর্ম পরিকল্পনা তৈরির সময় সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৩. বাস্তবায়ন: এই ধাপে, কর্মীরা তাদের কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে। ব্যবস্থাপকের কাজ হলো কর্মীদের সহায়তা করা, তাদের কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া। কার্যকর যোগাযোগ এখানে অত্যন্ত জরুরি।

৪. মূল্যায়ন ও প্রতিক্রিয়া: পর্যায়ক্রমে কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর্ম পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যেতে পারে। কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

৫. পুরস্কার ও স্বীকৃতি: লক্ষ্য অর্জনে সফল কর্মীদের পুরস্কৃত করা এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটি কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। কর্মীদের প্রণোদনা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

MBO-এর সুবিধা: MBO-এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মী উভয়ের জন্যই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে:

• লক্ষ্যের স্পষ্টতা: MBO লক্ষ্যগুলোকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা কর্মীদের বুঝতে সাহায্য করে তাদের কী অর্জন করতে হবে।
• কর্মীদের অংশগ্রহণ: MBO কর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে, যা তাদের কাজের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ করে তোলে।
• উন্নত যোগাযোগ: MBO ব্যবস্থাপক এবং কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করে, যা ভুল বোঝাবুঝি কমাতে সাহায্য করে।
• কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: MBO কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে উৎসাহিত করে, যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
• আত্ম-উন্নয়ন: MBO কর্মীদের নিজেদের দক্ষতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, যা তাদের আত্ম-উন্নয়নে সাহায্য করে।
• সম্পদ ব্যবহার: এটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
• ঝুঁকি হ্রাস: সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমানো যায়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারেন।

MBO-এর অসুবিধা: MBO-এর কিছু অসুবিধা রয়েছে, যা বাস্তবায়নের সময় বিবেচনা করা উচিত:

• সময়সাপেক্ষ: MBO প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ, কর্ম পরিকল্পনা তৈরি এবং মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন।
• কাগজপত্রের কাজ: MBO-এর জন্য প্রচুর কাগজপত্রের কাজ করতে হয়, যা প্রশাসনিক বোঝা বাড়াতে পারে।
• কঠোরতা: MBO-এর কাঠামো অনেক সময় কঠোর হতে পারে, যা কর্মীদের সৃজনশীলতাকে সীমিত করতে পারে।
• লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল: ভুল বা অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করলে MBO ব্যর্থ হতে পারে।
• পরিবর্তনশীল পরিবেশ: দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক পরিবেশে MBO-এর লক্ষ্যগুলো দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে জরুরি।
• ফোকাস হারানো: শুধুমাত্র লক্ষ্য অর্জনের ওপর বেশি জোর দিলে কর্মীদের মধ্যে সহযোগী মনোভাব কমে যেতে পারে।

MBO বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: MBO সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:

১. শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সমর্থন: MBO বাস্তবায়নের জন্য শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সমর্থন এবং অঙ্গীকার অপরিহার্য।

২. কর্মীদের অংশগ্রহণ: লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কর্ম পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়ায় কর্মীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করানো উচিত।

৩. নিয়মিত মূল্যায়ন: কর্মীদের কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন করা এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।

৪. প্রশিক্ষণ: MBO প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যবস্থাপক এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।

৫. নমনীয়তা: MBO-এর কাঠামোতে নমনীয়তা রাখা উচিত, যাতে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়।

৬. সুস্পষ্ট যোগাযোগ: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং কর্মীদের প্রত্যাশা সম্পর্কে সুস্পষ্ট যোগাযোগ থাকতে হবে।

MBO এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কৌশল: MBO অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কৌশল থেকে কিছুটা ভিন্ন। নিচে কয়েকটি কৌশলের সাথে MBO-এর তুলনা করা হলো:

• ব্যবস্থাপনা দ্বারা ব্যতিক্রম (Management by Exception): MBO-এর সাথে MBE-এর পার্থক্য হলো, MBO-তে সকল কর্মীর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যেখানে MBE-তে শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা হয়। ব্যবস্থাপনা দ্বারা ব্যতিক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
• মোট গুণমান ব্যবস্থাপনা (Total Quality Management বা TQM): TQM-এর লক্ষ্য হলো গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করা, যেখানে MBO-এর লক্ষ্য হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা। TQM এবং MBO একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। মোট গুণমান ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারেন।
• লিন ব্যবস্থাপনা (Lean Management): লিন ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো অপচয় কমানো এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা, যেখানে MBO লক্ষ্য নির্ধারণ এবং অর্জনের ওপর জোর দেয়। লিন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
• সিক্স সিগমা (Six Sigma): এটি একটি ডেটা-চালিত পদ্ধতি যা ত্রুটি হ্রাস এবং গুণমান উন্নত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। MBO-এর সাথে মিলিতভাবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সিক্স সিগমা সম্পর্কে জানতে পারেন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে MBO-এর সম্পর্ক: যদিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিষয় এবং MBO একটি ব্যবস্থাপনা কৌশল, তবুও এখানে কিছু সম্পর্ক বিদ্যমান। একজন বাইনারি অপশন ট্রেডার MBO-এর নীতি অনুসরণ করে তার ট্রেডিংয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পারে। এরপর, নিয়মিতভাবে তার ট্রেডিংয়ের ফলাফল মূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা সংশোধন করতে পারে।

• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): MBO-এর মতো, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিহার্য।
• লক্ষ্য নির্ধারণ (Goal Setting): ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে SMART লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
• মূল্যায়ন (Evaluation): ট্রেডিংয়ের ফলাফল নিয়মিত মূল্যায়ন করা উচিত।
• কৌশলগত পরিকল্পনা (Strategic Planning): MBO-এর কর্মপরিকল্পনার মতো, ট্রেডিংয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করা উচিত। কৌশলগত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
• ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ভলিউম বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে পারেন।
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের গুরুত্ব অনেক। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): আর্থিক বাজারের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে পারেন।
• চাদwick কৌশল (Chadwick Strategy): এটি একটি জনপ্রিয় বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল।
• পিনি বার কৌশল (Pin Bar Strategy): এটিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ব্যবহৃত হয়।
• বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর।
• মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটিও একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর।
• আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।
• এফআইবিওনাক্কি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটিও টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
• ডাবল টপ এবং ডাবল বটম (Double Top and Double Bottom): এই প্যাটার্নগুলো ট্রেডিংয়ের সংকেত দেয়।
• হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders): এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাটার্ন।

উপসংহার: ব্যবস্থাপনা দ্বারা উদ্দেশ্য (MBO) একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কৌশল, যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন এবং কর্মীদের কর্মক্ষমতা উন্নয়নে সহায়ক। MBO বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা, কর্মীদের অংশগ্রহণ এবং নিয়মিত মূল্যায়ন অপরিহার্য। এই কৌশলটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ