বিহেভিয়ার-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (BDD)
বিহেভিয়ার-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (বিডিডি)
বিহেভিয়ার-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট বা বিডিডি হল একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া। এটি এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এবং টেস্ট-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (টিডিডি)-এর একটি সম্প্রসারিত রূপ। বিডিডি মূলত সফটওয়্যারের আচরণ নির্দিষ্ট করার উপর জোর দেয়। এর মাধ্যমে ডেভেলপার, টেস্টার এবং বিজনেস অ্যানালিস্ট—সবার মধ্যে একটি সাধারণ বোঝাপড়া তৈরি হয় যে সফটওয়্যারটি কী করবে।
বিডিডি-র মূল ধারণা
বিডিডি-র মূল ধারণা হল "ব্যবহারকারী দৃষ্টিকোণ থেকে সফটওয়্যারের আচরণ বর্ণনা করা"। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট ব্যবহার করা হয়, যা "গিভেন-WHEN-THEN" (Given-When-Then) ফরম্যাট নামে পরিচিত।
- Given (গিভেন): এই অংশে সিস্টেমের প্রাথমিক অবস্থা বর্ণনা করা হয়। অর্থাৎ, সফটওয়্যারটি শুরু করার আগে কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে।
- When (WHEN): এই অংশে ব্যবহারকারী কী কাজ করছে বা কী ইনপুট দিচ্ছে তা বর্ণনা করা হয়।
- Then (THEN): এই অংশে প্রত্যাশিত ফলাফল বা আউটপুট বর্ণনা করা হয়। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীর কাজ করার পরে সিস্টেমের আচরণ কেমন হবে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি লগইন সিস্টেমের জন্য একটি বিডিডি দৃশ্যকল্প (Scenario) হতে পারে:
Given ব্যবহারকারী একটি বৈধ ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সহ লগইন পেজে আছেন When তিনি "লগইন" বোতামে ক্লিক করেন Then তাকে ড্যাশবোর্ডে পুনঃনির্দেশিত করা হবে
এই ফরম্যাটটি ব্যবহার করে, যে কেউ (এমনকি একজন নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তিও) সফটওয়্যারের আচরণ বুঝতে পারবে।
বিডিডি-র সুবিধা
বিডিডি ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
- যোগাযোগ উন্নত করে: বিডিডি ডেভেলপার, টেস্টার এবং বিজনেস অ্যানালিস্টদের মধ্যে একটি সাধারণ ভাষা তৈরি করে, যা ভুল বোঝাবুঝি কমায়।
- স্পষ্ট প্রয়োজনীয়তা: "গিভেন-WHEN-THEN" ফরম্যাট ব্যবহার করে প্রয়োজনীয়তাগুলি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা ডেভেলপমেন্টের সময় বিভ্রান্তি দূর করে।
- টেস্ট কভারেজ বৃদ্ধি করে: বিডিডি দৃশ্যকল্পগুলি স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা টেস্ট কভারেজ বাড়াতে সাহায্য করে। সফটওয়্যার টেস্টিং এর গুরুত্ব এখানে অনস্বীকার্য।
- সফটওয়্যারের গুণগত মান বৃদ্ধি করে: বিডিডি নিশ্চিত করে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।
- দ্রুত প্রতিক্রিয়া: দ্রুত এবং কার্যকর রিগ্রেশন টেস্টিং এর মাধ্যমে ত্রুটিগুলো দ্রুত সনাক্ত করা যায়।
বিডিডি কিভাবে কাজ করে?
বিডিডি সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে কাজ করে:
1. বিহেভিয়ার নির্ধারণ: প্রথমে, বিজনেস অ্যানালিস্ট বা প্রোডাক্ট ওনার সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয় আচরণগুলো চিহ্নিত করেন। 2. দৃশ্যকল্প লেখা: এরপর, এই আচরণগুলো "গিভেন-WHEN-THEN" ফরম্যাটে লেখা হয়। এই দৃশ্যকল্পগুলো সাধারণত প্লেইন টেক্সট এ লেখা হয়, যাতে সবাই বুঝতে পারে। 3. স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা তৈরি: ডেভেলপাররা এই দৃশ্যকল্পগুলো ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা তৈরি করেন। এর জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা এবং ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: জাভা, পাইথন, রুবি ইত্যাদি। 4. পরীক্ষা চালানো: স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষাগুলো চালানো হয় এবং দেখা হয় যে সফটওয়্যারটি প্রত্যাশিত আচরণ করছে কিনা। 5. পুনরাবৃত্তি: যদি কোনো পরীক্ষা ব্যর্থ হয়, তাহলে ডেভেলপাররা কোড সংশোধন করেন এবং পরীক্ষাগুলো পুনরায় চালান। এই প্রক্রিয়াটি ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ না সমস্ত পরীক্ষা সফল হয়।
বিডিডি-র সরঞ্জাম (Tools)
বিডিডি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম রয়েছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় সরঞ্জাম উল্লেখ করা হলো:
- Cucumber: এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় বিডিডি সরঞ্জামগুলির মধ্যে একটি। এটি জাভা, রুবি, পাইথন এবং অন্যান্য ভাষায় ব্যবহার করা যায়।
- SpecFlow: এটি .NET প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি বিডিডি সরঞ্জাম।
- Behat: এটি PHP-এর জন্য একটি বিডিডি সরঞ্জাম।
- JBehave: এটি জাভার জন্য একটি বিডিডি ফ্রেমওয়ার্ক।
এই সরঞ্জামগুলো দৃশ্যকল্প লেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সিনট্যাক্স প্রদান করে এবং স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা তৈরি করতে সাহায্য করে।
বিডিডি এবং অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য
| বৈশিষ্ট্য | টেস্ট-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (TDD) | বিহেভিয়ার-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (BDD) | |---|---|---| | ফোকাস | কোডের কার্যকারিতা যাচাই করা | সফটওয়্যারের আচরণ বর্ণনা করা | | ভাষা | প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা | সাধারণ ভাষায় (যেমন ইংরেজি) লেখা | | উদ্দেশ্য | কোড লেখা আগে পরীক্ষা লেখা | সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা বোঝা এবং শেয়ার করা | | ব্যবহারকারী | ডেভেলপার | ডেভেলপার, টেস্টার, বিজনেস অ্যানালিস্ট |
বিডিডি, টিডিডি-র একটি উন্নত সংস্করণ। টিডিডি মূলত ডেভেলপারদের জন্য, যেখানে বিডিডি সকলের জন্য উন্মুক্ত।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে বিডিডি-র সম্পর্ক
যদিও বিডিডি মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের একটি প্রক্রিয়া, তবে এর ধারণাগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, একজন ট্রেডারকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের দাম বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করতে হয়। এখানে বিডিডি-র "গিভেন-WHEN-THEN" ফরম্যাট ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের নিয়ম তৈরি করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ:
Given বাজারের বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল When একটি নির্দিষ্ট সংকেত পাওয়া যায় (যেমন মুভিং এভারেজ ক্রসওভার) Then একটি কল অপশন কেনা হবে
এইভাবে, বিডিডি ট্রেডারদের একটি সুনির্দিষ্ট এবং পরীক্ষিত ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস এর ফলাফলগুলোকে বিডিডি সিনারিওর সাথে যুক্ত করে আরও কার্যকরী ট্রেডিং সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে।
বিডিডি-র প্রয়োগক্ষেত্র
বিডিডি বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন: ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারকারীর ইন্টারফেস এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বিডিডি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন: মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা যাচাই করার জন্য বিডিডি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এপিআই (API) টেস্টিং: এপিআই-এর কার্যকারিতা এবং নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করার জন্য বিডিডি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ডাটাবেস টেস্টিং: ডাটাবেসের ডেটাIntegrity এবং সঠিকতা যাচাই করার জন্য বিডিডি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- বিজনেস প্রসেস অটোমেশন: ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয় করার জন্য বিডিডি ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিডিডি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
বিডিডি বাস্তবায়নের সময় কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করা হলো:
- সঠিক দৃশ্যকল্প লেখা: কার্যকরী এবং সুস্পষ্ট দৃশ্যকল্প লেখা কঠিন হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন গভীর ব্যবসায়িক জ্ঞান এবং সফটওয়্যার সম্পর্কে ভালো ধারণা।
- স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা তৈরি: স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা তৈরি করার জন্য প্রোগ্রামিং দক্ষতা এবং উপযুক্ত সরঞ্জাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
- পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা: বিডিডি একটি সহযোগী প্রক্রিয়া, তাই দলের সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
- ফ্রেমওয়ার্ক নির্বাচন: সঠিক বিডিডি ফ্রেমওয়ার্ক নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফ্রেমওয়ার্ক নির্বাচনের সময় প্রকল্পের প্রয়োজন এবং দলের দক্ষতার কথা বিবেচনা করতে হবে।
বিডিডি-র ভবিষ্যৎ
বিডিডি বর্তমানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML)-এর উন্নতির সাথে সাথে বিডিডি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলবে। ডেভঅপস এবং অ্যাজাইল মেথডোলজি-এর সাথে বিডিডি-র সংমিশ্রণ ভবিষ্যতে আরও বেশি দেখা যাবে।
উপসংহার
বিহেভিয়ার-ড্রিভেন ডেভেলপমেন্ট (বিডিডি) একটি শক্তিশালী সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া, যা ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে সফটওয়্যারের আচরণ নির্দিষ্ট করে। এটি যোগাযোগ উন্নত করে, প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে, টেস্ট কভারেজ বৃদ্ধি করে এবং সফটওয়্যারের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও এটি বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এর সুবিধাগুলো এটিকে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার করে তুলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও এর ধারণা প্রয়োগ করে কার্যকরী কৌশল তৈরি করা সম্ভব।
সফটওয়্যার প্রকৌশল অ্যাজাইল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টেস্ট অটোমেশন ইউনিট টেস্টিং ইন্টিগ্রেশন টেস্টিং সিস্টেম টেস্টিং অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্টিং রিগ্রেশন টেস্টিং কন্টিনিউয়াস ইন্টিগ্রেশন কন্টিনিউয়াস ডেলিভারি ডেভঅপস গিটহাব জিৎহাব অ্যাকশনস ডকার কুবেরনেটিস মাইক্রোসার্ভিসেস এপিআই ডিজাইন ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট ক্লাউড কম্পিউটিং অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS) মাইক্রোসফট Azure
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
