ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement)
ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার
ভূমিকা ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট হল একটি বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল। এটি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই লেভেলগুলো সাধারণত পূর্বের মূল্যের মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য, এই রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর মূল ধারণা, এটি কিভাবে কাজ করে, এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ফিিবোনাচ্চি সংখ্যা এবং অনুপাত লিওনার্দো ফিিবোনাচ্চি ছিলেন একজন ইতালীয় গণিতবিদ। ১২০২ সালে তিনি একটি সংখ্যা ধারা প্রকাশ করেন, যা ফিিবোনাচ্চি সংখ্যা নামে পরিচিত। এই ধারাটি হলো: ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭...। এই ধারার বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি সংখ্যা তার আগের দুটি সংখ্যার যোগফলের সমান।
এই সংখ্যাগুলো থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত তৈরি হয়, যা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ৬১.৮% এবং ৩8.২%। এই অনুপাতগুলো 'গোল্ডেন রেশিও' (Golden Ratio) নামেও পরিচিত। এছাড়াও, ২৩.৬%, ৫০%, এবং ৭৫% এর মতো অনুপাতও ব্যবহার করা হয়।
ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কিভাবে কাজ করে? ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উচ্চতম এবং সর্বনিম্ন মূল্যের মধ্যে আঁকা কিছু অনুভূমিক রেখা। এই রেখাগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসেবে কাজ করে। যখন কোনো অ্যাসেটের মূল্য একটি নির্দিষ্ট দিকে মুভ করে, তারপর বিপরীত দিকে ফিরে আসে, তখন এই রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো তৈরি করার জন্য, প্রথমে চার্টে একটি উল্লেখযোগ্য সুইং হাই (Swing High) এবং সুইং লো (Swing Low) চিহ্নিত করতে হয়। তারপর, এই দুটি পয়েন্টের মধ্যে ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট টুল ব্যবহার করে অনুভূমিক রেখাগুলো আঁকা হয়। সাধারণত ব্যবহৃত রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো হলো:
- ২৩.৬%
- ৩৮.২%
- ৫০%
- ৬১.৮%
- ৭৮.৬%
এই লেভেলগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া নির্দেশ করে, যেখানে মূল্য বিপরীতমুখী হতে পারে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর ব্যবহার বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
১. কল অপশন ট্রেডিং যখন কোনো অ্যাসেটের মূল্য আপট্রেন্ডে থাকে এবং ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলে ফিরে আসে, তখন এটি একটি কল অপশন কেনার সুযোগ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মূল্য ৬১.৮% রিট্রেসমেন্ট লেভেলে নেমে আসে এবং সেখানে সাপোর্ট পায়, তাহলে একটি কল অপশন কেনা যেতে পারে।
২. পুট অপশন ট্রেডিং যদি কোনো অ্যাসেটের মূল্য ডাউনট্রেন্ডে থাকে এবং ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলে ফিরে আসে, তখন এটি একটি পুট অপশন কেনার সুযোগ তৈরি করে। যদি মূল্য ৬১.৮% রিট্রেসমেন্ট লেভেলে উঠে আসে এবং সেখানে রেজিস্ট্যান্স পায়, তাহলে একটি পুট অপশন কেনা যেতে পারে।
৩. ব্রেকআউট ট্রেডিং ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ব্রেকআউট ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি মূল্য কোনো রিট্রেসমেন্ট লেভেল ভেদ করে উপরে উঠে যায়, তাহলে এটি একটি বুলিশ সংকেত দেয়। বিপরীতভাবে, যদি মূল্য কোনো রিট্রেসমেন্ট লেভেল ভেদ করে নিচে নেমে যায়, তাহলে এটি একটি বিয়ারিশ সংকেত দেয়।
৪. রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো স্টপ-লস অর্ডার সেট করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি কল অপশন কেনেন, তাহলে আপনার স্টপ-লস অর্ডারটি ৬১.৮% রিট্রেসমেন্ট লেভেলের নিচে সেট করতে পারেন।
ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর সাথে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সমন্বয় ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর কার্যকারিতা আরও বাড়ানোর জন্য, এটি অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসেবে কাজ করে। ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে মুভিং এভারেজের সমন্বয় আরও শক্তিশালী সংকেত দিতে পারে। মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI): আরএসআই একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর। এটি ওভারবট এবং ওভারসোল্ড কন্ডিশনগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে আরএসআই-এর সমন্বয় ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো নিশ্চিত করতে পারে। আরএসআই
- এমএসিডি (MACD): এমএসিডি হলো দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি। এটি ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে এমএসিডি-এর সমন্বয় আরও নির্ভুল ট্রেডিং সংকেত দিতে পারে। এমএসিডি
- ভলিউম (Volume): ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায় যে কোনো ট্রেন্ড কতটা শক্তিশালী। ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোতে ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, সেই লেভেলগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ভলিউম বিশ্লেষণ
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ডগুলি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে। ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলির সাথে এই ব্যান্ডগুলির সমন্বয় সম্ভাব্য ব্রেকআউট এবং রিভার্সাল সনাক্ত করতে সহায়ক। বলিঙ্গার ব্যান্ড
উদাহরণ ধরুন, একটি স্টকের মূল্য ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। এরপর এটি সংশোধন হয়ে ১০০.৮০ টাকায় নেমে এসেছে। এখন, আমরা ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট টুল ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে পারি:
- ২৩.৬% রিট্রেসমেন্ট: ১০৭.৬৪ টাকা
- ৩৮.২% রিট্রেসমেন্ট: ১০৫.৯৬ টাকা
- ৫০% রিট্রেসমেন্ট: ১০৫ টাকা
- ৬১.৮% রিট্রেসমেন্ট: ১০২.৯২ টাকা
যদি মূল্য ১০২.৯২ টাকার সাপোর্ট লেভেলে ফিরে আসে, তাহলে এটি একটি কল অপশন কেনার সুযোগ হতে পারে। স্টপ-লস অর্ডারটি ১০১.৮০ টাকায় সেট করা যেতে পারে।
কিছু সাধারণ ভুল এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায় ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করার সময় কিছু সাধারণ ভুল হতে পারে। এই ভুলগুলো থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
- সঠিক সুইং হাই এবং সুইং লো নির্বাচন: ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সঠিকভাবে আঁকার জন্য সঠিক সুইং হাই এবং সুইং লো নির্বাচন করা জরুরি। ভুল পয়েন্ট নির্বাচন করলে ভুল সংকেত পাওয়া যেতে পারে।
- অন্যান্য ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয়: শুধুমাত্র ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর উপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করে ট্রেড করা উচিত।
- ভলিউম নিশ্চিতকরণ: ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোতে ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, সেই লেভেলগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই, ভলিউম নিশ্চিতকরণ জরুরি।
- রিস্ক ম্যানেজমেন্ট: ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমাতে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।
উপসংহার ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট একটি শক্তিশালী টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এটি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই লেভেলগুলো ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে। তবে, শুধুমাত্র এই টুলের উপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করে ট্রেড করা উচিত। এছাড়াও, সঠিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অনুসরণ করা জরুরি।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- চার্ট প্যাটার্ন
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি
- বাইনারি অপশন বেসিক
- অপশন ট্রেডিং
- ফরেক্স ট্রেডিং
- শেয়ার বাজার
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থনৈতিক সূচক
- ভ্যালু ইনভেস্টিং
- গ্রোথ ইনভেস্টিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
- স্কাল্পিং
- মার্জিন ট্রেডিং
- ডাইভারজেন্স
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
