এলজেডডব্লিউ (LZW)

এল জেড ডব্লিউ (LZW)

এলজেডডব্লিউ, যার পূর্ণরূপ Lempel–Ziv–Welch, একটি ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম। এটি লসলেস ডেটা কম্প্রেশন কৌশলগুলির মধ্যে অন্যতম এবং এটি ১৯৮৪ সালে আব্রাহাম লম্পেল, জ্যাকভ জিভ এবং স্টেফান ওয়েলচ আবিষ্কার করেন। এই অ্যালগরিদমটি মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত রিপিটেটিভ ডেটা খুঁজে বের করে সেগুলোকে ছোট কোড দিয়ে প্রতিস্থাপন করে, যার ফলে ফাইলের আকার হ্রাস পায়।

এলজেডডব্লিউ-এর মূল ধারণা

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদমের মূল ধারণা হলো একটি ডিকশনারি তৈরি করা, যেখানে ইনপুট ডেটার বিভিন্ন স্ট্রিং (String) সংরক্ষণ করা হয়। যখন কোনো স্ট্রিং পূর্বে দেখা গেছে, তখন সেটিকে ডিকশনারির একটি ইন্ডেক্স নম্বর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। যদি কোনো স্ট্রিং নতুন হয়, তবে সেটিকে ডিকশনারিতে যোগ করা হয় এবং একটি নতুন ইন্ডেক্স নম্বর দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটি ডেটার আকার কমাতে সাহায্য করে।

এলজেডডব্লিউ কিভাবে কাজ করে

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদম নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে কাজ করে:

১. ডিকশনারি শুরু করা: প্রথমে, একটি ডিকশনারি তৈরি করা হয় যেখানে প্রাথমিক ক্যারেক্টারগুলো (যেমন ASCII ক্যারেক্টার সেট) সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য একটি অনন্য কোড বরাদ্দ করা হয়।

২. স্ট্রিং ম্যাচিং: ইনপুট ডেটা থেকে শুরু করে, অ্যালগরিদমটি সবচেয়ে দীর্ঘ স্ট্রিং খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যা ডিকশনারিতে বিদ্যমান।

৩. কোড প্রতিস্থাপন: যদি ডিকশনারিতে স্ট্রিংটি পাওয়া যায়, তবে সেটিকে ডিকশনারির সংশ্লিষ্ট কোড নম্বর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

৪. নতুন স্ট্রিং যোগ করা: যদি স্ট্রিংটি ডিকশনারিতে না পাওয়া যায়, তবে এটিকে ডিকশনারিতে যোগ করা হয় এবং একটি নতুন কোড নম্বর বরাদ্দ করা হয়। এরপর, বর্তমান স্ট্রিং এবং নতুন স্ট্রিংটিকে একত্রিত করে ডিকশনারিতে যোগ করা হয়।

৫. পুনরাবৃত্তি: এই প্রক্রিয়াটি ইনপুট ডেটার শেষ পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করা হয়।

উদাহরণ

ধরা যাক, আমাদের ইনপুট ডেটা হলো "ABABABABA"।

১. প্রাথমিক ডিকশনারি:

  - A = 65
  - B = 66

২. ডেটা প্রক্রিয়াকরণ:

  - "A" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 65
  - "AB" - ডিকশনারিতে নেই, যোগ করা হলো, কোড 256
  - "B" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 66
  - "BA" - ডিকশনারিতে নেই, যোগ করা হলো, কোড 257
  - "A" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 65
  - "AB" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 256
  - "ABA" - ডিকশনারিতে নেই, যোগ করা হলো, কোড 258
  - "BA" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 257
  - "A" - ডিকশনারিতে আছে, কোড 65

সুতরাং, আউটপুট হবে: 65, 256, 66, 257, 65, 256, 258, 257, 65

এই উদাহরণে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রিপিটেটিভ স্ট্রিংগুলোকে ছোট কোড দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে ডেটার আকার হ্রাস পেয়েছে।

এলজেডডব্লিউ-এর ব্যবহার

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদম বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

• GIF ইমেজ কম্প্রেশন: জিআইএফ (গ্রাফিক্স ইন্টারচেঞ্জ ফরম্যাট) ইমেজে এলজেডডব্লিউ কম্প্রেশন ব্যবহার করা হয়।
• TIFF ইমেজ কম্প্রেশন: টিআইএফ (ট্যাগড ইমেজ ফাইল ফরম্যাট) ইমেজেও এই অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়।
• PDF ডকুমেন্ট কম্প্রেশন: পিডিএফ (পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরম্যাট) ডকুমেন্টে এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করে ডেটা কমানো যায়।
• UNIX কম্প্রেশন ইউটিলিটি: ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমে কম্প্রেশনের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
• ফ্যাক্স মেশিন: ফ্যাক্স মেশিনে ছবি পাঠানোর জন্য এই অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়।
• ডেটাবেস : ডেটাবেসে ডেটা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

এলজেডডব্লিউ-এর সুবিধা

• সহজ বাস্তবায়ন: এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদম বাস্তবায়ন করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
• দ্রুত কম্প্রেশন এবং ডিকম্প্রেশন: এটি দ্রুত ডেটা কম্প্রেস এবং ডিকম্প্রেস করতে পারে।
• লসলেস কম্প্রেশন: এটি লসলেস কম্প্রেশন কৌশল ব্যবহার করে, তাই ডেটার গুণগত মান অক্ষুণ্ণ থাকে।
• ডিকশনারি-ভিত্তিক: ডিকশনারি ব্যবহারের ফলে রিপিটেটিভ ডেটা সহজে খুঁজে বের করা যায়।

এলজেডডব্লিউ-এর অসুবিধা

• ডিকশনারি সাইজ: ডিকশনারির আকার বৃদ্ধি পেলে অ্যালগরিদমের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
• ছোট ফাইলের জন্য কম কার্যকর: খুব ছোট ফাইলের জন্য এই অ্যালগরিদম তেমন কার্যকর নয়, কারণ ডিকশনারি তৈরি এবং ব্যবস্থাপনার overhead বেশি হতে পারে।
• প্যাটেন্ট সমস্যা: পূর্বে এই অ্যালগরিদমের উপর কিছু প্যাটেন্ট ছিল, যা এর ব্যবহারকে সীমিত করেছিল।

এলজেডডব্লিউ-এর প্রকারভেদ

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদমের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটা ধরনের জন্য অপটিমাইজ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• LZW32: এটি ৩২-বিট ডিকশনারি ব্যবহার করে, যা বৃহত্তর ডেটা সেটকে সমর্থন করে।
• LZSS: এটি Lempel-Ziv-Storer-Szymanski নামেও পরিচিত, যা এলজেডডব্লিউ-এর একটি বিকল্প সংস্করণ।
• Deflate: এটি এলজেডডব্লিউ এবং Huffman কোডিং-এর সমন্বয়ে গঠিত, যা gzip এবং অন্যান্য কম্প্রেশন ফরম্যাটে ব্যবহৃত হয়।

এলজেডডব্লিউ এবং অন্যান্য কম্প্রেশন অ্যালগরিদম

এলজেডডব্লিউ অন্যান্য কম্প্রেশন অ্যালগরিদমের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত, তা আলোচনা করা হলো:

• Run-Length Encoding (RLE): আরএলই একটি সহজ কম্প্রেশন কৌশল, যা রিপিটেটিভ ডেটাকে সংক্ষিপ্ত করে। এলজেডডব্লিউ, আরএলই-এর চেয়ে বেশি জটিল এবং সাধারণত ভালো কম্প্রেশন অনুপাত প্রদান করে।
• Huffman Coding : হাফম্যান কোডিং একটি পরিসংখ্যান-ভিত্তিক কম্প্রেশন কৌশল, যা ডেটার ফ্রিকোয়েন্সির উপর ভিত্তি করে কোড তৈরি করে। এলজেডডব্লিউ ডিকশনারি-ভিত্তিক, যেখানে হাফম্যান কোডিং ফ্রিকোয়েন্সি-ভিত্তিক।
• Bzip2 : বিzip2 একটি উন্নত কম্প্রেশন অ্যালগরিদম, যা এলজেডডব্লিউ-এর চেয়ে ভালো কম্প্রেশন অনুপাত প্রদান করে, তবে এটি ধীরগতির হতে পারে।
• Zlib : Zlib হলো ডেফ্লেট অ্যালগরিদমের একটি বাস্তবায়ন, যা এলজেডডব্লিউ এবং হাফম্যান কোডিং-এর সমন্বয়ে গঠিত।

এলজেডডব্লিউ এর প্রয়োগক্ষেত্র

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদম বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া এবং ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:

• ইমেজ কম্প্রেশন: জিআইএফ এবং টিআইএফএফ-এর মতো ইমেজ ফরম্যাটে এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করা হয়। এটি ইমেজের ফাইলের আকার কমাতে সাহায্য করে, যা ওয়েবসাইটে দ্রুত লোড হতে সাহায্য করে এবং স্টোরেজ স্পেস সাশ্রয় করে।
• ডকুমেন্ট কম্প্রেশন: পিডিএফ ডকুমেন্টে এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করে ফাইলের আকার কমানো হয়, যা সহজে শেয়ার করা যায় এবং কম জায়গা নেয়।
• সফটওয়্যার বিতরণ: সফটওয়্যার ইনস্টলেশন ফাইল এবং আর্কাইভ তৈরিতে এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করা হয়, যা ডাউনলোডের সময় এবং স্টোরেজ স্পেস কমায়।
• নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা পাঠানোর সময় এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করে ডেটার পরিমাণ কমানো হয়, যা দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করে।
• ডেটা ব্যাকআপ: ডেটা ব্যাকআপ এবং আর্কাইভ করার সময় এলজেডডব্লিউ ব্যবহার করে স্টোরেজ স্পেস সাশ্রয় করা যায়।

এলজেডডব্লিউ এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদম এখনও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে আধুনিক কম্প্রেশন অ্যালগরিদমগুলোর সাথে এর প্রতিযোগিতা রয়েছে। ভবিষ্যতে, এলজেডডব্লিউ-এর উন্নতি এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে, বিগ ডেটা এবং ক্লাউড স্টোরেজের ক্ষেত্রে, ডেটা কম্প্রেশনের চাহিদা বাড়ছে, তাই এলজেডডব্লিউ-এর নতুন সংস্করণ তৈরি করা যেতে পারে যা আরও কার্যকর এবং দ্রুত হবে।

উপসংহার

এলজেডডব্লিউ একটি শক্তিশালী এবং বহুল ব্যবহৃত ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম। এর সরলতা, দ্রুততা এবং লসলেস কম্প্রেশনের বৈশিষ্ট্য এটিকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। যদিও আধুনিক কম্প্রেশন অ্যালগরিদমগুলো আরও উন্নত কম্প্রেশন অনুপাত প্রদান করে, এলজেডডব্লিউ এখনও অনেক ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর সমাধান।

এই নিবন্ধটি এলজেডডব্লিউ অ্যালগরিদমের একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রদান করে। আশা করি, এটি পাঠককে এই অ্যালগরিদম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হবে।

বৈশিষ্ট্য	বিবরণ	নাম	এলজেডডব্লিউ (Lempel–Ziv–Welch)	প্রকার	লসলেস ডেটা কম্প্রেশন	আবিষ্কারক	আব্রাহাম লম্পেল, জ্যাকভ জিভ, স্টেফান ওয়েলচ	আবিষ্কারের বছর	১৯৮৪	মূল ধারণা	ডিকশনারি-ভিত্তিক স্ট্রিং প্রতিস্থাপন	সুবিধা	সহজ বাস্তবায়ন, দ্রুত কম্প্রেশন, লসলেস কম্প্রেশন	অসুবিধা	ডিকশনারি সাইজ, ছোট ফাইলের জন্য কম কার্যকর

কম্প্রেশন অ্যালগরিদম ডেটা কম্প্রেশন লসলেস কম্প্রেশন তথ্য প্রযুক্তি কম্পিউটার বিজ্ঞান GIF TIFF PDF UNIX Run-Length Encoding (RLE) Huffman Coding Bzip2 Zlib প্যাটেন্ট ডেটাবেস বিগ ডেটা ক্লাউড স্টোরেজ ফ্যাক্স মেশিন সফটওয়্যার নেটওয়ার্ক ব্যাকআপ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ডেটা স্ট্রাকচার অ্যালগরিদম ডিজাইন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ