আরএসআই (সূচক)

আর এস আই (সূচক)

রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (আরএসআই) একটি বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল সূচক যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারের দামের আপেক্ষিক শক্তি পরিমাপ করে। এটি মোমেন্টাম অসসিলেটর হিসাবেও পরিচিত। এটি মূলত ওভারবট (overbought) এবং ওভারসোল্ড (oversold) পরিস্থিতি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। এই সূচকটি বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।

আরএসআই এর ইতিহাস

ওয়েলস ওয়াইল্ডার ১৯৭৮ সালে এই সূচকটি তৈরি করেন। তিনি এই সূচকটি তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল, এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করা যা বিনিয়োগকারীদের লাভজনক ট্রেডিং সংকেত দিতে পারে এবং একই সাথে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আরএসআই কিভাবে কাজ করে

আরএসআই ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে ওঠানামা করে। সাধারণত, ৭০-এর উপরে আরএসআই মানকে ওভারবট এবং ৩০-এর নিচে মানকে ওভারসোল্ড হিসেবে ধরা হয়।

ওভারবট (Overbought):* যখন আরএসআই ৭০-এর উপরে যায়, তখন এটিকে ওভারবট পরিস্থিতি বলা হয়। এর মানে হল যে শেয়ারটির দাম খুব দ্রুত বেড়েছে এবং এটিCorrections বা দাম সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত শেয়ার বিক্রি করে দেয়।

ওভারসোল্ড (Oversold):* যখন আরএসআই ৩০-এর নিচে নেমে যায়, তখন এটিকে ওভারসোল্ড পরিস্থিতি বলা হয়। এর মানে হল যে শেয়ারটির দাম খুব দ্রুত কমেছে এবং এটি রিবাউন্ড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত শেয়ার কেনা শুরু করে।

আরএসআই গণনা করার সূত্র

আরএসআই গণনা করার জন্য নিম্নলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা হয়:

RSI = 100 - [100 / (1 + (Average Gain / Average Loss))]

এখানে,

Average Gain = নির্দিষ্ট সময়কালে গড় লাভ।
Average Loss = নির্দিষ্ট সময়কালে গড় ক্ষতি।

সাধারণত, ১৪ দিনের সময়কাল ব্যবহার করা হয়।

গড় লাভ \| গড় ক্ষতি \| আরএসআই	১০ \| ৫ \| ৮৬.৩৬	১৫ \| ৭ \| ৮১.৮২	২০ \| ১০ \| ৭৬.৯২	২৫ \| ১২ \| ৭০.০০	৩০ \| ১৫ \| ৬৪.২৮	৩৫ \| ১৮ \| ৫৯.০৯	৪০ \| ২০ \| ৫৪.৫১	৪৫ \| ২২ \| ৫০.০০	৫০ \| ২৫ \| ৪৬.১৫	৫৫ \| ২৮ \| ৪২.৮৬	৬০ \| ৩০ \| ৪০.০০	৬৫ \| ৩২ \| ৩৯.১৩	৭০ \| ৩৫ \| ৩৩.৩৩	৭৫ \| ৪০ \| ৩২.৬১

আরএসআই ব্যবহারের নিয়মাবলী

আরএসআই বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

ওভারবট এবং ওভারসোল্ড লেভেল:* এটি আরএসআই-এর সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার। যখন আরএসআই ৭০-এর উপরে যায়, তখন এটি একটি বিক্রয় সংকেত তৈরি করে, এবং যখন এটি ৩০-এর নিচে নেমে যায়, তখন এটি একটি ক্রয় সংকেত তৈরি করে।

ডাইভারজেন্স (Divergence):* ডাইভারজেন্স হল একটি শক্তিশালী সংকেত যা সম্ভাব্য প্রবণতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যখন দাম নতুন উচ্চতা তৈরি করে, কিন্তু আরএসআই তা করতে ব্যর্থ হয়, তখন এটিকে বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স বলা হয়। এর বিপরীতভাবে, যখন দাম নতুন নিম্নে নেমে যায়, কিন্তু আরএসআই তা করতে ব্যর্থ হয়, তখন এটিকে বুলিশ ডাইভারজেন্স বলা হয়। ডাইভারজেন্স ট্রেডিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

ফেইলিয়র সুইং (Failure Swing):* ফেইলিয়র সুইং হল আরএসআই-এর একটি বিশেষ সংকেত যা প্রবণতা পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে পারে।

সেন্টারলাইন ক্রসওভার (Centerline Crossover):* যখন আরএসআই ৫০-এর উপরে উঠে যায়, তখন এটি একটি বুলিশ সংকেত হিসাবে বিবেচিত হয়, এবং যখন এটি ৫০-এর নিচে নেমে যায়, তখন এটি একটি বিয়ারিশ সংকেত হিসাবে বিবেচিত হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ আরএসআই

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ আরএসআই একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি ব্যবহার করে ট্রেডাররা সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলি চিহ্নিত করতে পারে।

কল অপশন (Call Option):* যখন আরএসআই ৩০-এর নিচে নেমে যায় এবং অন্যান্য নিশ্চিতকরণ সংকেত পাওয়া যায়, তখন একটি কল অপশন কেনা যেতে পারে।

পুট অপশন (Put Option):* যখন আরএসআই ৭০-এর উপরে উঠে যায় এবং অন্যান্য নিশ্চিতকরণ সংকেত পাওয়া যায়, তখন একটি পুট অপশন কেনা যেতে পারে।

আরএসআই এর সীমাবদ্ধতা

আরএসআই একটি শক্তিশালী সূচক হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

ফলস সিগন্যাল (False Signal):* আরএসআই মাঝে মাঝে ফলস সিগন্যাল দিতে পারে, বিশেষ করে সাইডওয়েজ মার্কেটে।
ডাইভারজেন্সের ব্যর্থতা:* ডাইভারজেন্স সবসময় সঠিক হয় না।
সময়কাল সংবেদনশীলতা:* আরএসআই-এর সময়কাল পরিবর্তন করলে সংকেত ভিন্ন হতে পারে।

অন্যান্য সূচকের সাথে আরএসআই-এর সমন্বয়

আরএসআই-কে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের নির্ভুলতা বাড়ে। কিছু জনপ্রিয় সমন্বয় নিচে উল্লেখ করা হলো:

মুভিং এভারেজ (Moving Average):* মুভিং এভারেজের সাথে আরএসআই ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের নিশ্চিতকরণ করা যেতে পারে।
MACD:* MACD (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স) এর সাথে আরএসআই ব্যবহার করে শক্তিশালী ট্রেডিং সংকেত পাওয়া যায়।
বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands):* বলিঙ্গার ব্যান্ডের সাথে আরএসআই ব্যবহার করে ভোলাটিলিটি (Volatility) এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট (Breakout) চিহ্নিত করা যায়।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরএসআই সংকেতের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা যায়।

আরএসআই এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

আরএসআই ব্যবহার করে ট্রেডিং করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে ध्यान রাখা উচিত। স্টপ-লস অর্ডার (Stop-loss order) ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়। এছাড়াও, পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio diversification) করে ঝুঁকি কমানো যায়।

উপসংহার

আরএসআই একটি মূল্যবান ট্রেডিং টুল যা বিনিয়োগকারীদের বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং লাভজনক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আরএসআই শুধুমাত্র একটি সূচক, এবং এটি অন্যান্য সূচক এবং বিশ্লেষণের সাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করা উচিত।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ