অন্তর্ভুক্তি
অন্তর্ভুক্তি
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি (In-the-Money বা ITM) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই নিবন্ধে, আমরা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের অন্তর্ভুক্তি কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এবং একজন ট্রেডার হিসেবে আপনার ট্রেডিং কৌশলকে উন্নত করতে কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
অন্তর্ভুক্তি কী?
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে, অন্তর্ভুক্তি বলতে বোঝায় যখন একটি অপশনের স্ট্রাইক মূল্য সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম থাকে (কল অপশনের ক্ষেত্রে) অথবা বেশি থাকে (পুট অপশনের ক্ষেত্রে)। সহজ ভাষায়, যদি আপনার অপশনটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় লাভজনক অবস্থানে থাকে, তবে সেটি "ইন-দ্য-মানি" হিসেবে বিবেচিত হবে।
- কল অপশন: যদি স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম হয়।
- পুট অপশন: যদি স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি কল অপশন কেনেন যার স্ট্রাইক মূল্য ১০০ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় শেয়ারটির বাজার মূল্য ১০৫ টাকা হয়, তবে আপনার অপশনটি অন্তর্ভুক্তিতে থাকবে। একইভাবে, যদি আপনি একটি পুট অপশন কেনেন যার স্ট্রাইক মূল্য ১০০ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় শেয়ারটির বাজার মূল্য ৯৫ টাকা হয়, তবে আপনার অপশনটিও অন্তর্ভুক্তিতে থাকবে।
অন্তর্ভুক্তি কীভাবে কাজ করে?
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, অন্তর্ভুক্তি অপশনের লাভের পরিমাণ নির্ধারণ করে। যখন একটি অপশন অন্তর্ভুক্তিতে থাকে, তখন ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পান। এই লাভের পরিমাণ সাধারণত অপশনের ক্রয় মূল্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে:
- স্ট্রাইক মূল্য: অপশনের স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য থেকে কতটা দূরে।
- মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়: অপশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় বাকি আছে।
- সম্পদের অস্থিরতা: সম্পদের দামের ওঠানামার হার।
অন্তর্ভুক্তি এবং আউট-অফ-দ্য-মানি (OTM)
অন্তর্ভুক্তির বিপরীত হলো আউট-অফ-দ্য-মানি (Out-of-the-Money বা OTM)। যখন একটি অপশনের স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি থাকে (কল অপশনের ক্ষেত্রে) অথবা কম থাকে (পুট অপশনের ক্ষেত্রে), তখন সেটি আউট-অফ-দ্য-মানি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ক্ষেত্রে, অপশনটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় কোনো লাভ প্রদান করে না।
- কল অপশন: যদি স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়।
- পুট অপশন: যদি স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম হয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অন্তর্ভুক্তি ব্যবহারের কৌশল
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অন্তর্ভুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল আলোচনা করা হলো:
1. স্ট্র্যাডল (Straddle) কৌশল: এই কৌশলে, একই স্ট্রাইক মূল্য এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন একসাথে কেনা হয়। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয় যখন ট্রেডাররা মনে করেন যে সম্পদের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে ওঠানামা করবে, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত নন। স্ট্র্যাডল কৌশল অস্থির বাজারে লাভের সুযোগ তৈরি করে।
2. স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle) কৌশল: এই কৌশলে, বিভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন একসাথে কেনা হয়। এই কৌশলটি স্ট্র্যাডলের মতোই, তবে এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম লাভজনক। স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
3. ভার্টিকাল স্প্রেড (Vertical Spread) কৌশল: এই কৌশলে, একই ধরনের দুটি অপশন কেনা এবং বিক্রি করা হয়, কিন্তু তাদের স্ট্রাইক মূল্যে ভিন্নতা থাকে। এই কৌশলটি ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। ভার্টিকাল স্প্রেড বাজারের পূর্বাভাস অনুযায়ী ট্রেড করতে সাহায্য করে।
4. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread) কৌশল: এই কৌশলে, তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটি একটি জটিল কৌশল, যা বাজারের স্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাটারফ্লাই স্প্রেড স্থিতিশীল বাজারে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ কৌশল।
অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে অন্তর্ভুক্তি নির্ণয় করা সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর রয়েছে যা ট্রেডারদের সাহায্য করতে পারে:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে দামের প্রবণতা বোঝা যায় এবং অন্তর্ভুক্তি নির্ণয় করা যায়।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): RSI ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির চাপ বোঝা যায়, যা অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ে সাহায্য করে। RSI বাজারের গতিবিধি বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ।
- ম্যাকডি (MACD): MACD ব্যবহার করে দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বোঝা যায় এবং ট্রেডিংয়ের সংকেত পাওয়া যায়। MACD ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করে দামের অস্থিরতা মাপা যায় এবং সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি চিহ্নিত করা যায়। বলিঙ্গার ব্যান্ড অস্থিরতা পরিমাপের জন্য একটি জনপ্রিয় টুল।
- ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এই টুলটি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করতে সহায়ক।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং অন্তর্ভুক্তি
ভলিউম বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি এবং ট্রেডারদের আগ্রহ বোঝা যায়।
- ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন কোনো নির্দিষ্ট দামে হঠাৎ করে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী সংকেত হতে পারে।
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): OBV ব্যবহার করে কেনা এবং বিক্রির চাপ বোঝা যায়, যা অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ে সাহায্য করে। OBV বাজারের অন্তর্নিহিত শক্তি বুঝতে সাহায্য করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): VWAP ব্যবহার করে গড় মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক বোঝা যায়। VWAP গড় মূল্য নির্ধারণে সহায়ক।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ট্রেড করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের আকারের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।
- ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): আপনার বিনিয়োগ বিভিন্ন সম্পদে ছড়িয়ে দিন, যাতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি না হয়। ডাইভারসিফিকেশন ঝুঁকি কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
- মানসিক শৃঙ্খলা (Emotional Discipline): আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেড করা থেকে বিরত থাকুন এবং একটি সুচিন্তিত ট্রেডিং পরিকল্পনা অনুসরণ করুন।
উপসংহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অন্তর্ভুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা ট্রেডারদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে, আমরা অন্তর্ভুক্তি কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করে ট্রেডিং কৌশল উন্নত করা যায় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন। মনে রাখবেন, বাইনারি অপশন ট্রেডিং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই ট্রেড করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা তৈরি করা জরুরি।
অর্থনৈতিক সূচক | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা | বাইনারি অপশন কৌশল | টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর | ভলিউম ট্রেডিং | ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ | অপশন ট্রেডিং | ফিনান্সিয়াল মার্কেট | ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম | ঝুঁকি সতর্কতা | বাজার বিশ্লেষণ | পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা | বিনিয়োগের ধারণা | ট্রেডিং সাইকোলজি | ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন | সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স | ট্রেন্ড লাইন | চার্ট প্যাটার্ন | মার্জিন ট্রেডিং | লেভারেজ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
