Touch/No-Touch option strategies
টাচ/নো-টাচ অপশন কৌশল
ভূমিকা বাইনারি অপশন ট্রেডিং জগতে, টাচ/নো-টাচ অপশন একটি জনপ্রিয় এবং অপেক্ষাকৃত জটিল ট্রেডিং কৌশল। এই অপশনগুলো মূল্য একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাবে (টাচ) অথবা পৌঁছাবে না (নো-টাচ) এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই নিবন্ধে, আমরা টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিং কৌশলগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যা নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় ট্রেডারদের জন্য সহায়ক হবে।
টাচ/নো-টাচ অপশন কী? টাচ/নো-টাচ অপশন হলো এক ধরনের বাইনারি অপশন যেখানে ট্রেডারদের পূর্বাভাস দিতে হয় যে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্তরে স্পর্শ করবে (টাচ) নাকি স্পর্শ করবে না (নো-টাচ)।
- টাচ অপশন: যদি ট্রেডার মনে করেন যে অ্যাসেটের মূল্য মেয়াদপূর্তির আগে নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাবে, তবে তিনি একটি 'টাচ' অপশন কিনবেন।
- নো-টাচ অপশন: যদি ট্রেডার মনে করেন যে অ্যাসেটের মূল্য মেয়াদপূর্তির আগে নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাবে না, তবে তিনি একটি 'নো-টাচ' অপশন কিনবেন।
এই অপশনগুলোর পayout কাঠামো সাধারণ হাই/লো অপশন থেকে ভিন্ন। টাচ অপশনগুলোতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় যদি মূল্য লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করে, কিন্তু নো-টাচ অপশনগুলোতে পayout-এর পরিমাণ বেশি হতে পারে কারণ এখানে সাফল্যের সম্ভাবনা কম থাকে।
টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা
- উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: বিশেষ করে নো-টাচ অপশনে, সাফল্যের সম্ভাবনা কম হলেও পayout-এর পরিমাণ বেশি হওয়ায় লাভের সুযোগ থাকে।
- নমনীয়তা: ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকি এবং প্রত্যাশিত লাভের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্ট্রাইক মূল্য নির্বাচন করতে পারে।
- বাজারের ভিন্নতা: এই অপশনগুলো বিভিন্ন বাজারের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঝুঁকি এবং অসুবিধা
- জটিলতা: টাচ/নো-টাচ অপশনগুলো সাধারণ বাইনারি অপশনের চেয়ে জটিল এবং বুঝতে কঠিন হতে পারে।
- সময় সংবেদনশীলতা: এই অপশনগুলোর মেয়াদ সাধারণত কম হয়, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
- উচ্চ ঝুঁকি: ভুল পূর্বাভাসের কারণে দ্রুত লোকসানের সম্ভাবনা থাকে।
টাচ অপশন কৌশল টাচ অপশন কৌশল সাধারণত সেইসব ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত, যারা মনে করেন বাজারে বড় ধরনের মূল্য পরিবর্তন হতে পারে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় টাচ অপশন কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. ব্রেকআউট কৌশল এই কৌশলটি সাধারণত রেজিস্ট্যান্স এবং সাপোর্ট লেভেল ভাঙার সময় ব্যবহার করা হয়। যদি মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করে, তবে টাচ অপশন কেনা যেতে পারে।
২. রিভার্সাল কৌশল এই কৌশলটি তখন ব্যবহার করা হয়, যখন ট্রেডাররা মনে করেন যে মূল্য একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছে দিক পরিবর্তন করবে।
৩. নিউজ ট্রেডিং কৌশল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ প্রকাশের সময় এই কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। সংবাদের উপর ভিত্তি করে দ্রুত মূল্য পরিবর্তনের সুযোগে টাচ অপশন ট্রেড করা যায়।
নো-টাচ অপশন কৌশল নো-টাচ অপশন কৌশল তাদের জন্য যারা মনে করেন যে বাজারের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে পৌঁছাবে না।
১. রেঞ্জ ট্রেডিং কৌশল যখন বাজার একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তখন নো-টাচ অপশন কেনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, ট্রেডাররা আশা করেন যে মূল্য রেঞ্জের বাইরে যাবে না।
২. সাইডওয়েজ মার্কেট কৌশল সাইডওয়েজ মার্কেটে, যেখানে কোনো স্পষ্ট ট্রেন্ড নেই, সেখানে নো-টাচ অপশন কার্যকর হতে পারে।
৩. ভোলাটিলিটি ফেইড কৌশল যদি বাজারে হঠাৎ করে ভোলাটিলিটি বেড়ে যায়, তবে ট্রেডাররা নো-টাচ অপশন ব্যবহার করে ভোলাটিলিটি কমে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং টাচ/নো-টাচ অপশন টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Averages): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের ট্রেন্ড বোঝা যায় এবং সম্ভাব্য সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা যায়।
- আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স ব্যবহার করে ওভারবট এবং ওভারসোল্ড পরিস্থিতি নির্ণয় করা যায়, যা টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- MACD: MACD ব্যবহার করে বাজারের মোমেন্টাম এবং ট্রেন্ডের দিক বোঝা যায়।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করে ভোলাটিলিটি এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিত করা যায়।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করা যায়।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং টাচ/নো-টাচ অপশন ভলিউম বিশ্লেষণ টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
- ভলিউম স্পাইক: যদি কোনো নির্দিষ্ট স্তরে ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি ব্রেকআউটের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে।
- ভলিউম কনফার্মেশন: একটি ব্রেকআউটের সময় ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, এটি ব্রেকআউটের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে।
- ডাইভারজেন্স: মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে ডাইভারজেন্স দেখা গেলে, এটি ট্রেন্ড রিভার্সালের সংকেত দিতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিংয়ের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার টিপস দেওয়া হলো:
- স্টপ-লস ব্যবহার করুন: সম্ভাব্য লোকসান সীমিত করতে স্টপ-লস ব্যবহার করা উচিত।
- পজিশন সাইজিং: আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।
- ডাইভারসিফিকেশন: আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন অ্যাসেটে ছড়িয়ে দিন।
- emotions নিয়ন্ত্রণ করুন: আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেড করা উচিত নয়।
- ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন এবং তারপর আসল অর্থ বিনিয়োগ করুন।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- বাজারের গবেষণা: ট্রেড করার আগে বাজারের অবস্থা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।
- সময়সীমা নির্বাচন: আপনার ট্রেডিং কৌশলের সাথে সঙ্গতি রেখে সময়সীমা নির্বাচন করুন।
- ব্রোকার নির্বাচন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকার নির্বাচন করুন।
- নিয়মিত পর্যালোচনা: আপনার ট্রেডিং কৌশল এবং ফলাফল নিয়মিত পর্যালোচনা করুন।
উপসংহার টাচ/নো-টাচ অপশন ট্রেডিং একটি জটিল কিন্তু লাভজনক কৌশল হতে পারে, যদি সঠিকভাবে বোঝা যায় এবং ঝুঁকি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। এই নিবন্ধে আলোচিত কৌশল এবং টিপসগুলো ব্যবহার করে, ট্রেডাররা তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। মনে রাখবেন, সফল ট্রেডিংয়ের জন্য অনুশীলন, ধৈর্য এবং সঠিক জ্ঞান অপরিহার্য।
আরও জানতে:
- বাইনারি অপশন বেইসিক
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- ফরেক্স ট্রেডিং
- শেয়ার বাজার
- অর্থনৈতিক সূচক
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ঝুঁকি বিশ্লেষণ
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- ব্রোকার নির্বাচন
- ডেমো অ্যাকাউন্ট
- বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম
- অপশন ট্রেডিং
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- ভলিউম ট্রেডিং
- ব্রেকআউট ট্রেডিং
- রেঞ্জ বাউন্ড ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
