Strangle Strategy
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল : একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
স্ট্র্যাঙ্গল একটি জনপ্রিয় অপশন ট্রেডিং কৌশল যা বিনিয়োগকারীরা বাজারের অস্থিরতা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যবহার করে। এটি একই সাথে একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনা জড়িত, যেখানে উভয় অপশনেরই স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান সম্পদ মূল্য থেকে ভিন্ন থাকে। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয় যখন বিনিয়োগকারীরা আশা করে যে সম্পদের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বা কমবে, কিন্তু কখন হবে তা নিশ্চিত নয়।
স্ট্র্যাঙ্গল কিভাবে কাজ করে?
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশলটি দুটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করে গঠিত:
- একটি কল অপশন, যার স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি।
- একটি পুট অপশন, যার স্ট্রাইক মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম।
উভয় অপশনই একই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের হতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের জন্য, বিনিয়োগকারীকে উভয় অপশনের জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়।
স্ট্র্যাঙ্গলের মূল ধারণা হলো, যদি সম্পদের মূল্য যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, তবে কল অপশনটি লাভজনক হবে। অন্যদিকে, যদি সম্পদের মূল্য যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়, তবে পুট অপশনটি লাভজনক হবে। ব্রেকইভেন পয়েন্টগুলি কল এবং পুট অপশনের স্ট্রাইক মূল্যের উপর নির্ভর করে।
উদাহরণ
ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ১০০ টাকা। একজন বিনিয়োগকারী ১০৫ টাকার স্ট্রাইক মূল্যের একটি কল অপশন এবং ৯৫ টাকার স্ট্রাইক মূল্যের একটি পুট অপশন কিনলেন, যার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এক মাস পরে। উভয় অপশনের প্রিমিয়াম যথাক্রমে ২ টাকা এবং ১.৫ টাকা।
এখানে, স্ট্র্যাঙ্গল তৈরি করার মোট খরচ হলো ৩.৫ টাকা।
যদি এক মাস পর স্টকের মূল্য ১১০ টাকা হয়, তবে কল অপশনটি ৫ টাকা লাভে বিক্রি করা যাবে (১১০ - ১০৫ = ৫)। পুট অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। সুতরাং, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে ৫ - ৩.৫ = ১.৫ টাকা।
অন্যদিকে, যদি এক মাস পর স্টকের মূল্য ৯০ টাকা হয়, তবে পুট অপশনটি ৫ টাকা লাভে বিক্রি করা যাবে (৯৫ - ৯০ = ৫)। কল অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। সুতরাং, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে ৫ - ৩.৫ = ১.৫ টাকা।
যদি স্টকের মূল্য ১০০ টাকার কাছাকাছি থাকে, তবে উভয় অপশনই মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং বিনিয়োগকারী প্রিমিয়ামের ৩.৫ টাকা হারাবেন।
স্ট্র্যাঙ্গলের প্রকারভেদ
স্ট্র্যাঙ্গল প্রধানত দুই প্রকার:
১. শর্ট স্ট্র্যাঙ্গল (Short Strangle): এই ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারী একই সাথে একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন বিক্রি করেন। এটি একটি বেয়ারিশ কৌশল, যা বাজার স্থিতিশীল থাকলে লাভজনক হতে পারে।
২. লং স্ট্র্যাঙ্গল (Long Strangle): এই ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারী একই সাথে একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনেন। এটি একটি বুলিশ কৌশল, যা বাজার অস্থির থাকলে লাভজনক হতে পারে।
স্ট্র্যাঙ্গলের সুবিধা
- উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: যদি বাজারের গতিবিধি প্রত্যাশার মতো হয়, তবে এই কৌশল থেকে উচ্চ লাভ করা সম্ভব।
- নমনীয়তা: এই কৌশলটি বাজারের যেকোনো দিকে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
- ঝুঁকি সীমিত: ক্ষতির পরিমাণ প্রিমিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
স্ট্র্যাঙ্গলের অসুবিধা
- প্রিমিয়াম খরচ: দুটি অপশন কেনার কারণে প্রিমিয়াম খরচ বেশি হতে পারে।
- সময় ক্ষয়: অপশনের সময় মূল্য দ্রুত হ্রাস পেতে পারে, বিশেষ করে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের কাছাকাছি।
- সঠিক পূর্বাভাসের প্রয়োজন: বাজারের গতিবিধি সঠিকভাবে অনুমান করতে না পারলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
কখন স্ট্র্যাঙ্গল ব্যবহার করা উচিত?
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশলটি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উপযুক্ত:
- যখন আপনি আশা করেন যে বাজারের অস্থিরতা বাড়বে, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত নন।
- যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিসরের বাইরে বাজারের মুভমেন্ট আশা করেন।
- যখন আপনি প্রিমিয়াম আয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল ব্যবহারের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:
- স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন: সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।
- পজিশন সাইজিং: আপনার মোট ট্রেডিং মূলধনের একটি ছোট অংশ দিয়ে ট্রেড করুন।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: আপনার পজিশনগুলি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে সামঞ্জস্য করুন।
- বাজার বিশ্লেষণ: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করুন।
অন্যান্য সম্পর্কিত কৌশল
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশলের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু অপশন কৌশল রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন:
- স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলে, একই স্ট্রাইক মূল্যের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
- বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলে, তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করা হয়।
- কন্ডর স্প্রেড (Condor Spread): এই কৌশলে, চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করা হয়।
- ভার্টিকাল স্প্রেড (Vertical Spread): এই কৌশলে, একই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের দুটি অপশন কেনা বা বিক্রি করা হয়, কিন্তু তাদের স্ট্রাইক মূল্য ভিন্ন হয়।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং স্ট্র্যাঙ্গল
ভলিউম বিশ্লেষণ স্ট্র্যাঙ্গল কৌশলকে আরও কার্যকর করতে সহায়ক হতে পারে। উচ্চ ভলিউম সাধারণত বাজারের গতিবিধিকে সমর্থন করে, তাই ভলিউম বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা উচিত। এছাড়াও, ওপেন ইন্টারেস্ট বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং স্ট্র্যাঙ্গল
স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল ব্যবহারের সময় কিছু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা যেতে পারে:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করতে সহায়ক।
- আরএসআই (RSI): ওভারবট এবং ওভারসোল্ড অবস্থা সনাক্ত করতে সহায়ক।
- এমএসিডি (MACD): বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করতে সহায়ক।
উপসংহার
স্ট্র্যাঙ্গল একটি শক্তিশালী অপশন ট্রেডিং কৌশল, যা বাজারের অস্থিরতা থেকে লাভবান হতে সাহায্য করে। তবে, এটি একটি জটিল কৌশল এবং সঠিকভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের এই কৌশলটি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং তাদের ঝুঁকি সহনশীলতা বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও, অপশন প্রাইসিং এবং গ্রিকস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন।
আরও জানতে:
- অপশন ট্রেডিংয়ের মৌলিক ধারণা
- কল অপশন
- পুট অপশন
- বাজারের অস্থিরতা
- প্রিমিয়াম
- বুলিশ
- বেয়ারিশ
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ওপেন ইন্টারেস্ট
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই
- এমএসিডি
- বলিঙ্গার ব্যান্ড
- অপশন প্রাইসিং
- গ্রিকস
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- স্টপ-লস অর্ডার
- পজিশন সাইজিং
- স্ট্র্যাডল
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
