Point and Figure Chart

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট

পয়েন্ট এবং ফিগার (Point and Figure) চার্ট একটি বিশেষ ধরনের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ সরঞ্জাম, যা বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি অন্যান্য চার্টের মতো সময়-ভিত্তিক নয়, বরং মূল্যের পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই চার্টগুলি মূলত বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই চার্টগুলি ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের ইতিহাস

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের উদ্ভাবক হলেন লিওনार्ड এইচ. থর্ন, যিনি ১৯৩০-এর দশকে এটি তৈরি করেন। থর্ন বিশ্বাস করতেন যে বাজারের মূল্যের গতিবিধি শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলির মাধ্যমেই ঘটে, এবং এই পরিবর্তনগুলি চিহ্নিত করার জন্য একটি বিশেষ চার্ট প্রয়োজন।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট কিভাবে কাজ করে

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টগুলি উল্লম্ব রেখা এবং 'X' ও 'O' চিহ্নের মাধ্যমে গঠিত হয়। এখানে প্রতিটি কলাম একটি নির্দিষ্ট মূল্যের পরিসীমা উপস্থাপন করে এবং 'X' ঊর্ধ্বমুখী এবং 'O' নিম্নমুখী মুভমেন্ট নির্দেশ করে।

• উল্লম্ব রেখা: প্রতিটি উল্লম্ব রেখা একটি নির্দিষ্ট মূল্যের স্তর নির্দেশ করে।
• 'X' কলাম: যখন দাম একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, তখন একটি 'X' কলাম তৈরি হয়।
• 'O' কলাম: যখন দাম একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হ্রাস পায়, তখন একটি 'O' কলাম তৈরি হয়।

এই চার্টে, সময়কে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যতক্ষণ না দাম একটি নির্দিষ্ট 'বক্স সাইজ' (Box Size) অতিক্রম করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন কলাম তৈরি হয় না।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের উপাদান

উপাদান	বিবরণ
উল্লম্ব রেখা	মূল্যের স্তর নির্দেশ করে
'X' কলাম	ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট নির্দেশ করে
'O' কলাম	নিম্নমুখী মুভমেন্ট নির্দেশ করে
বক্স সাইজ	দামের পরিবর্তনের ন্যূনতম পরিমাণ
রিভার্সাল	দিক পরিবর্তনের সংকেত

বক্স সাইজ (Box Size) নির্ধারণ

বক্স সাইজ নির্ধারণ করা পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সেই ন্যূনতম মূল্যের পরিবর্তন, যা একটি নতুন কলাম তৈরি করতে প্রয়োজন। বক্স সাইজ নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:

• বাজারের অস্থিরতা: অস্থির বাজারে বড় বক্স সাইজ ব্যবহার করা উচিত, যাতে কম সংকেত তৈরি হয়।
• ট্রেডিংয়ের সময়কাল: স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য ছোট বক্স সাইজ এবং দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য বড় বক্স সাইজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• ব্যক্তিগত পছন্দ: ট্রেডার তার নিজস্ব ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং ট্রেডিং কৌশলের ওপর ভিত্তি করে বক্স সাইজ নির্বাচন করতে পারে।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট প্যাটার্ন

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টে বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন দেখা যায়, যা ভবিষ্যতের মূল্যের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যাটার্ন নিচে উল্লেখ করা হলো:

• বুলিশ প্যাটার্ন:

   * ডাবল টপ/ডাবল বটম: এই প্যাটার্নগুলি বিপরীতমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে।
   * ট্রায়াঙ্গেল: এটি সাধারণত ব্রেকআউটের আগে গঠিত হয় এবং শক্তিশালী মুভমেন্টের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
   * আপসাইড ব্রেকআউট: যখন দাম একটি প্রতিরোধ স্তর অতিক্রম করে উপরে যায়, তখন এটি বুলিশ সংকেত দেয়।

• বিয়ারিশ প্যাটার্ন:

   * ডাবল টপ/ডাবল বটম: এই প্যাটার্নগুলি বিপরীতমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে।
   * ডাউনসাইড ব্রেকআউট: যখন দাম একটি সমর্থন স্তর অতিক্রম করে নিচে নামে, তখন এটি বিয়ারিশ সংকেত দেয়।
   * রিভার্সাল প্যাটার্ন: এই প্যাটার্নগুলি বর্তমান প্রবণতার সমাপ্তি এবং নতুন প্রবণতার শুরু নির্দেশ করে।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট ব্যবহারের সুবিধা

• বাজারের স্পষ্ট চিত্র: এই চার্ট বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তরগুলি সহজে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
• কম বিভ্রান্তি: সময়-ভিত্তিক না হওয়ায়, এটি অপ্রয়োজনীয় তথ্য থেকে মুক্ত থাকে।
• সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিতকরণ: এটি সম্ভাব্য ব্রেকআউট এবং রিভার্সাল পয়েন্টগুলি চিহ্নিত করতে সহায়ক।
• বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য উপযোগী: দ্রুত এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট ব্যবহারের অসুবিধা

• জটিলতা: নতুন ট্রেডারদের জন্য এই চার্ট বোঝা কঠিন হতে পারে।
• সংকেতের বিলম্ব: দামের পরিবর্তনগুলি দেরিতে প্রতিফলিত হতে পারে।
• ভুল সংকেত: বাজারের অস্থিরতার কারণে ভুল সংকেত তৈরি হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের প্রয়োগ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টগুলি নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে:

• কল অপশন: যখন চার্টে বুলিশ প্যাটার্ন দেখা যায়, তখন কল অপশন কেনা যেতে পারে।
• পুট অপশন: যখন চার্টে বিয়ারিশ প্যাটার্ন দেখা যায়, তখন পুট অপশন কেনা যেতে পারে।
• ব্রেকআউট ট্রেডিং: যখন দাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্তর অতিক্রম করে, তখন ব্রেকআউট ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
• রিভার্সাল ট্রেডিং: যখন চার্টে রিভার্সাল প্যাটার্ন দেখা যায়, তখন রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টে একটি বুলিশ ডাবল বটম প্যাটার্ন তৈরি হয়, তবে এটি একটি শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের পূর্বাভাস দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে, একজন ট্রেডার কল অপশন কিনে লাভবান হতে পারে।

অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে সমন্বয়

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টকে আরও কার্যকর করার জন্য, এটিকে অন্যান্য টেকনিক্যাল নির্দেশক যেমন মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index), এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) এবং ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট-এর সাথে সমন্বয় করা উচিত।

• মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে প্রবণতা নিশ্চিত করা যায়।
• আরএসআই: আরএসআই ব্যবহার করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থা চিহ্নিত করা যায়।
• এমএসিডি: এমএসিডি ব্যবহার করে মুভমেন্টের শক্তি এবং দিক বোঝা যায়।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধ স্তর চিহ্নিত করা যায়।

ভলিউম বিশ্লেষণও এই চার্টের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্টের আধুনিক ব্যবহার

বর্তমানে, অনেক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স এবং শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্মে এই চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। আধুনিক ট্রেডাররা এই চার্ট ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ এবং ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট ব্যবহার করার সময়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কোনো ট্রেড করার আগে স্টপ-লস (Stop-Loss) এবং টেক-প্রফিট (Take-Profit) স্তর নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও, নিজের ঝুঁকির ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেডের আকার নির্বাচন করা উচিত।

উপসংহার

পয়েন্ট এবং ফিগার চার্ট একটি শক্তিশালী টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ সরঞ্জাম, যা বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই চার্ট ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো ট্রেডিং কৌশলই সম্পূর্ণরূপে নির্ভুল নয়, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর সর্বদা মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন | চার্ট প্যাটার্ন | টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস | ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস | ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা | বাইনারি অপশন | ফিনান্সিয়াল মার্কেট | শেয়ার বাজার | ফরেক্স ট্রেডিং | মুভিং এভারেজ | আরএসআই | এমএসিডি | ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট | ভলিউম | সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স | ট্রেডিং সাইকোলজি | মার্কেট সেন্টিমেন্ট | বুলিশ ট্রেন্ড | বেয়ারিশ ট্রেন্ড

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ