রবার্ট স্টার্নবার্গ

রবার্ট স্টার্নবার্গ

রবার্ট জে. স্টার্নবার্গ (জন্ম ১৯৪৬) একজন প্রভাবশালী আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী, যিনি বুদ্ধিমত্তা (Intelligence), সৃজনশীলতা (Creativity), অনুপ্রেরণা (Motivation) এবং নেতৃত্ব (Leadership) নিয়ে তাঁর কাজের জন্য পরিচিত। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের (Yale University) একজন সম্মানীয় অধ্যাপক এবং ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Oklahoma) প্রেসিডেন্ট ছিলেন। স্টার্নবার্গ বুদ্ধিমত্তার ত্রিমাত্রিক তত্ত্বের (Triarchic theory of intelligence) জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত, যা বুদ্ধিমত্তাকে তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত করে: বিশ্লেষণাত্মক বুদ্ধিমত্তা (Analytical intelligence), সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা (Creative intelligence) এবং ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তা (Practical intelligence)।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

রবার্ট স্টার্নবার্গ ১৯৪৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউ ব্রান্সউইকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা ছিলেন ইহুদি। তিনি স্থানীয় পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। স্টার্নবার্গ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (Stanford University) থেকে মনোবিজ্ঞানে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (Harvard University) থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

স্টার্নবার্গ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং সেখানে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেন। ইয়েলের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানীয় অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

স্টার্নবার্গ অসংখ্য বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন, যা মনোবিজ্ঞান এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বুদ্ধিমত্তার ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব

স্টার্নbergs সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো বুদ্ধিমত্তার ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে, বুদ্ধিমত্তা তিনটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত:

• বিশ্লেষণাত্মক বুদ্ধিমত্তা (Analytical intelligence): এটি সমস্যা সমাধানের জন্য সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং যুক্তিবোধ ব্যবহারের ক্ষমতা। ঐতিহ্যবাহী আইকিউ (IQ) পরীক্ষাগুলো সাধারণত এই ধরনের বুদ্ধিমত্তা পরিমাপ করে। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান (Cognitive psychology) এর সাথে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

• সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা (Creative intelligence): এটি নতুন ধারণা তৈরি এবং উদ্ভাবনী উপায়ে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। এই ধরনের বুদ্ধিমত্তা নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং নতুন জিনিস তৈরি করতে সাহায্য করে। সৃজনশীলতা (Creativity) এবং উদ্ভাবন (Innovation) এই বুদ্ধিমত্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক।

• ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তা (Practical intelligence): এটি দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো সমাধান করার এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। একে "স্ট্রিট স্মার্টনেস" (Street smartness) ও বলা হয়। সামাজিক বুদ্ধিমত্তা (Social intelligence) এর একটি অংশ এই ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তা।

স্টার্নবার্গ মনে করেন, এই তিনটি উপাদানের সমন্বয়েই একজন ব্যক্তির প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা গঠিত হয়। তিনি আরও মনে করেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় এই তিনটি উপাদানের বিকাশের ওপর জোর দেওয়া উচিত।

অনুপ্রেরণা এবং সাফল্য

স্টার্নবার্গ অনুপ্রেরণা এবং সাফল্যের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। তিনি মনে করেন, অনুপ্রেরণা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং পরিবেশ এবং পরিস্থিতির ওপরও নির্ভরশীল। তিনি সাফল্যের একটি ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন, যেখানে তিনি বুদ্ধি, সৃজনশীলতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানকে সাফল্যের মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

স্টার্নবার্গ "সফল বুদ্ধিমত্তা" (Successful intelligence) নামক একটি ধারণা প্রস্তাব করেছেন, যা বোঝায় যে কীভাবে মানুষ তাদের বুদ্ধি ব্যবহার করে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

নেতৃত্ব

স্টার্নবার্গ নেতৃত্বের ওপরও গবেষণা করেছেন এবং নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি মনে করেন, একজন সফল নেতার মধ্যে শুধু বুদ্ধি থাকালেই চলবে না, তার মধ্যে সৃজনশীলতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানও থাকতে হবে। তিনি নেতৃত্বের একটি ত্রিমাত্রিক মডেল প্রস্তাব করেছেন, যেখানে তিনি কৌশলগত নেতৃত্ব (Strategic leadership), কার্যকরী নেতৃত্ব (Tactical leadership) এবং অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্ব (Inspirational leadership) -এর ওপর জোর দিয়েছেন।

শিক্ষা দর্শন

স্টার্নবার্গ শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, শিক্ষা শুধুমাত্র মুখস্থ করার ওপর জোর দেওয়া উচিত নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করা উচিত।

তিনি "শিক্ষার জন্য প্রগতিশীল পদ্ধতি" (Progressive approaches to education) সমর্থন করেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে শিখতে এবং তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান অর্জন করতে সুযোগ দেওয়া হয়।

রবার্ট স্টার্নবার্গের উল্লেখযোগ্য কাজ

বছর	কাজ	বিষয়
১৯৮৫	Beyond IQ: A Triarchic Theory of Human Intelligence	বুদ্ধিমত্তার ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব
১৯৯৭	Successful Intelligence	সফল বুদ্ধিমত্তা
২০০১	Voices of Wisdom: A Multicultural Approach to Leadership	নেতৃত্ব
২০০৮	Knowledge is Power: The Life and Work of Sir Francis Bacon	জ্ঞান ও ক্ষমতা
২০১২	How Not to Be Wrong: The Power of Mathematical Thinking	গাণিতিক চিন্তা

সমালোচনা

স্টার্নবার্গের তত্ত্বগুলো ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হলেও কিছু সমালোচনা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তাঁর ত্রিমাত্রিক তত্ত্বটি খুব বেশি সরলীকৃত এবং বুদ্ধিমত্তার জটিলতা সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারে না। আবার কেউ কেউ তাঁর ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তার ধারণাটিকে অস্পষ্ট এবং পরিমাপ করা কঠিন বলে মনে করেন।

তবে, স্টার্নবার্গের কাজ মনোবিজ্ঞান এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা, অনুপ্রেরণা এবং নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণাকে নতুন পথে চালিত করেছে।

ব্যক্তিগত জীবন

রবার্ট স্টার্নবার্গ বিবাহিত এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। তিনি লেখালেখি, বাগান করা এবং সঙ্গীত উপভোগ করেন।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

স্টার্নবার্গ তাঁর কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (American Psychological Association) পুরস্কার
• ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পুরস্কার
• ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি

আরও দেখুন

• হাওয়ার্ড গার্ডনার (Howard Gardner) - বহুবিধ বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বের প্রবক্তা
• ড্যানিয়েল গোলম্যান (Daniel Goleman) - আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (Emotional intelligence) প্রবক্তা
• স্টিভেন পিংকার (Steven Pinker) - কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও ভাষাবিজ্ঞানী
• এলবার্ট ব্যান্ডুরা (Albert Bandura) - সামাজিক শিক্ষা তত্ত্বের প্রবক্তা

তথ্যসূত্র

• Sternberg, R. J. (1985). *Beyond IQ: A triarchic theory of human intelligence*. New York: Cambridge University Press.
• Sternberg, R. J. (1997). *Successful intelligence*. New York: Simon & Schuster.
• Sternberg, R. J. (2001). *Voices of wisdom: A multicultural approach to leadership*. New York: HarperCollins.
• [রবার্ট স্টার্নবার্গের ওয়েবসাইট](https://robertsternberg.com/)

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে প্রাসঙ্গিকতা

যদিও রবার্ট স্টার্নবার্গের কাজ সরাসরি বাইনারি অপশন (Binary option) ট্রেডিংয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে তাঁর বুদ্ধিমত্তার ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব এবং সাফল্যের ধারণাগুলো ট্রেডারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

• বিশ্লেষণাত্মক বুদ্ধিমত্তা: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical analysis) এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental analysis) করার জন্য এই বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন। মার্কেট ট্রেন্ড (Market trend), চার্ট প্যাটার্ন (Chart pattern) এবং অর্থনৈতিক সূচকগুলো (Economic indicators) বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা একজন ট্রেডারের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

• সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা: বাজারের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন। নতুন ট্রেডিং কৌশল (Trading strategy) তৈরি করা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার (Risk management) জন্য উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করা এই বুদ্ধিমত্তার অংশ।

• ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তা: বাস্তব জীবনে ট্রেডিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং বাজারের গতিবিধি বোঝার মাধ্যমে একজন ট্রেডার ব্যবহারিক বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে। এই বুদ্ধিমত্তা ট্রেডারকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, স্টার্নবার্গের অনুপ্রেরণা এবং সাফল্যের তত্ত্বগুলো ট্রেডারদের মানসিক শক্তি (Mental strength) বাড়াতে এবং ট্রেডিংয়ে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ (Stress management) এবং অনুভূতির বিশ্লেষণ (Emotional analysis) এর মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume analysis), প্রাইস অ্যাকশন (Price action) এবং ঝুঁকি-রিটার্ন অনুপাত (Risk-reward ratio) এর মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রেডিং সাইকোলজি (Trading psychology) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ট্রেডারদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যুক্তিবোধের সাথে ট্রেড করতে সাহায্য করে।

অর্থ ব্যবস্থাপনা (Money management) একটি অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতা, যা ট্রেডারদের তাদের মূলধন রক্ষা করতে এবং সম্ভাব্য লাভ বাড়াতে সাহায্য করে।

লিভারেজ (Leverage) এবং মার্জিন (Margin) সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা একজন ট্রেডারের জন্য জরুরি।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে একজন ট্রেডার রবার্ট স্টার্নবার্গের তত্ত্বগুলো কাজে লাগিয়ে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সফল হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ