যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন

ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (Food and Drug Administration বা FDA) হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা যা খাদ্য, ঔষধ, জৈব ঔষধ, খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক এবং তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিতরণ তত্ত্বাবধান করে। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য ও ঔষধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নতুন ঔষধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অনুমোদন দেওয়া এবং বাজারের ক্ষতিকর পণ্যগুলো তুলে নেওয়ার ক্ষমতা এফডিএ-র রয়েছে। এই নিবন্ধে এফডিএ-র ইতিহাস, গঠন, কার্যাবলী, ঔষধ অনুমোদন প্রক্রিয়া, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইতিহাস

এফডিএ-র যাত্রা শুরু হয় ১৮৬০ সালে, যখন আব্রাহাম লিঙ্কন প্রথম খাদ্য ও ঔষধ আইন স্বাক্ষর করেন। এই আইনটি ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ বিক্রি বন্ধ করার প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু এই আইনের দুর্বলতার কারণে ভেজাল খাদ্য ও ঔষধের ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ২০ শতকের শুরুতে, বিশেষ করে ১৯০৬ সালের পিওর ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাক্ট (Pure Food and Drug Act) এবং ১৯৩৫ সালের ফেডারেল ফুড, ড্রাগ, অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাক্ট (Federal Food, Drug, and Cosmetic Act) এফডিএ-কে আধুনিক রূপ দেয় এবং খাদ্য ও ঔষধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফ্রান্সিস গ্রাহাম, যিনি খাদ্য ও ঔষধের ভেজাল নিয়ে লেখালেখি করে জনসচেতনতা তৈরি করেছিলেন, তার অবদান এই আইন প্রণয়নে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সংগঠন ও কাঠামো

এফডিএ স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের (Department of Health and Human Services) অধীনে কাজ করে। এফডিএ-র প্রধান হলেন কম্পশনার (Commissioner), যিনি সংস্থার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সংস্থাটি বিভিন্ন অফিস এবং সেন্টারে বিভক্ত, যা বিভিন্ন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যেমন - ঔষধ, খাদ্য, পশুচিকিৎসা ঔষধ, এবং তামাকজাত দ্রব্য তত্ত্বাবধান করে। এফডিএ-র প্রধান কার্যালয় মেরিল্যান্ডের সিলভার স্প্রিং-এ অবস্থিত।

এফডিএ-র প্রধান বিভাগগুলো হলো:

• ড্রাগস সেন্টার (Center for Drug Evaluation and Research - CDER): এই বিভাগটি মানুষের ব্যবহারের জন্য ঔষধের অনুমোদন এবং তত্ত্বাবধান করে।
• বায়োলজিক্স সেন্টার (Center for Biologics Evaluation and Research - CBER): এটি ভ্যাকসিন, রক্ত এবং টিস্যু পণ্যের মতো জৈব ঔষধের অনুমোদন ও তত্ত্বাবধান করে।
• ডিভাইসেস সেন্টার (Center for Devices and Radiological Health - CDRH): এই বিভাগটি চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রেডিয়োলজিক্যাল স্বাস্থ্য বিষয়ক পণ্যগুলোর অনুমোদন ও তত্ত্বাবধান করে।
• খাদ্য কেন্দ্র (Center for Food Safety and Applied Nutrition - CFSAN): খাদ্য, খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক, এবং কসমেটিক্স সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই বিভাগ।
• ভেটেরিনারি মেডিসিন সেন্টার (Center for Veterinary Medicine - CVM): পশুদের জন্য ঔষধ এবং খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক তত্ত্বাবধান করে।

কার্যকারিতা

এফডিএ-র প্রধান কাজগুলো হলো:

• ঔষধের অনুমোদন: নতুন ঔষধ বাজারে আনার আগে এফডিএ-র কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এই অনুমোদনের জন্য ঔষধের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হয়।
• খাদ্য নিরাপত্তা: খাদ্য উৎপাদন এবং বিতরণের প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এফডিএ-র অন্যতম দায়িত্ব।
• বাজার নজরদারি: বাজারে থাকা ক্ষতিকর পণ্যগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো তুলে নেওয়া বা সংশোধন করার ব্যবস্থা করা।
• বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ: খাদ্য এবং ঔষধের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা বন্ধ করা।
• গবেষণা: খাদ্য ও ঔষধের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা এবং সহায়তা করা।
• আমদানি নিয়ন্ত্রণ: যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত খাদ্য ও ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণ করা।

ঔষধ অনুমোদন প্রক্রিয়া

এফডিএ-তে ঔষধ অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কঠোর এবং সময়সাপেক্ষ। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:

ঔষধ অনুমোদন প্রক্রিয়া

পর্যায়

বিবরণ

সময়কাল

পরীক্ষাগারে এবং পশুদের উপর গবেষণা করে ঔষধের প্রাথমিক কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হয়।|১-২ বছর|

মানুষের উপর তিনটি পর্যায়ে গবেষণা করা হয়:

পর্যায় ১: অল্প সংখ্যক সুস্থ মানুষের উপর ঔষধের নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হয়।

কয়েক মাস

পর্যায় ২: নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর ঔষধের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করা হয়।

কয়েক মাস থেকে ২ বছর

পর্যায় ৩: বৃহত্তর সংখ্যক রোগীর উপর ঔষধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

১-৪ বছর

এফডিএ জমা দেওয়া ডেটা পর্যালোচনা করে ঔষধের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করে।

৬ মাস থেকে ২ বছর

ঔষধ বাজারে আসার পরেও এফডিএ তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে।

চলমান

খাদ্য নিরাপত্তা

এফডিএ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে:

• খাদ্য উৎপাদন প্ল্যান্টের পরিদর্শন: এফডিএ নিয়মিত খাদ্য উৎপাদন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তা মান পর্যবেক্ষণ করে।
• খাদ্য লেবেলিং: খাদ্যের প্যাকেজের উপর পুষ্টির তথ্য এবং অ্যালার্জেন সম্পর্কিত তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
• দূষণ নিয়ন্ত্রণ: খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য দূষণকারী উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা।
• খাদ্য স্মরণ (Food Recall): কোনো খাদ্যপণ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি ধরা পড়লে এফডিএ তা বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

বর্তমান চ্যালেঞ্জ

এফডিএ বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তার মধ্যে কয়েকটি হলো:

• নতুন প্রযুক্তি: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোটেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর মতো নতুন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এফডিএ-র জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই প্রযুক্তিগুলোর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা কঠিন।
• বিশ্বায়ন: বিশ্বায়নের কারণে খাদ্য এবং ঔষধের সরবরাহ ব্যবস্থা জটিল হয়ে গেছে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন করে তুলেছে।
• জালিয়াতি: খাদ্য এবং ঔষধের নকল পণ্য তৈরি এবং বিক্রি একটি বড় সমস্যা।
• রাজনৈতিক চাপ: ঔষধ কোম্পানি এবং অন্যান্য শিল্প সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এফডিএ-র উপর প্রায়শই রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা সংস্থার নিরপেক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
• বাজেট সংকট: পর্যাপ্ত বাজেট এবং জনবলের অভাবে এফডিএ-র কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে।

এফডিএ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

যদিও এফডিএ সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে জড়িত নয়, তবে ঔষধ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং শেয়ার বাজারের মূল্যের উপর এফডিএ-র সিদ্ধান্তগুলো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। কোনো ঔষধ বা খাদ্যপণ্যের অনুমোদন পেলে কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, আবার কোনো পণ্য বাজার থেকে তুলে নিতে বললে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। তাই, বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য এফডিএ-র কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্তগুলো অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো যা বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এফডিএ-র সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করতে পারে:

• নিউজ ট্রেডিং: এফডিএ-র ঔষধ অনুমোদন বা বাজার প্রত্যাহারের ঘোষণার উপর ভিত্তি করে দ্রুত ট্রেড করা।
• ফার্মাসিউটিক্যাল স্টক বিশ্লেষণ: ঔষধ কোম্পানিগুলোর স্টক এবং এফডিএ-র সিদ্ধান্তের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ট্রেড করা।
• ভলিউম বিশ্লেষণ: এফডিএ-র ঘোষণার পর স্টক মার্কেটে ভলিউম পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখা এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা।
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: চার্ট এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে স্টকের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা।

উপসংহার

যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি অত্যাবশ্যকীয় সংস্থা। খাদ্য, ঔষধ এবং অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এফডিএ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এফডিএ ভবিষ্যতে আরও কার্যকরভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য এফডিএ-র কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্তগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা লাভজনক হতে পারে।

খাদ্য নিরাপত্তা, ঔষধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য নীতি, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল, এফডিএ অনুমোদন প্রক্রিয়া, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, খাদ্য লেবেলিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোটেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শেয়ার বাজার, পুষ্টি তথ্য, অ্যালার্জেন, বাজার নজরদারি, খাদ্য স্মরণ, রাজনৈতিক চাপ, বাজেট সংকট

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ