মিডি

মিডি (MIDI) বা মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ডিজিটাল ইন্টারফেস হলো একটি শিল্প-মানসম্মত প্রোটোকল এবং সিস্টেম যা ইলেকট্রনিক বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার এবং অন্যান্য সরঞ্জামগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এটি কোনো অডিও সংকেত নয়, বরং বাদ্যযন্ত্রের নোট, ভলিউম, এবং অন্যান্য প্যারামিটারগুলির ডেটা আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। মিডি মূলত ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারকদের মধ্যে একটি সমন্বিত যোগাযোগের পদ্ধতি তৈরির জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল।

মিডি-র ইতিহাস

১৯৮১ সালে, বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো অ্যানালগ কন্ট্রোল সিগন্যালের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে। প্রতিটি প্রস্তুতকারকের নিজস্ব সিনথেসাইজার এবং সরঞ্জামগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা কঠিন ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, ডেভ স্মিথ (Sequential Circuits), চিক বার্ন (Roland), টম ওবারহেইম (Oberheim) এবং অন্যান্যরা একসাথে কাজ করে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে মিডি নামে পরিচিত হয়। ১৯৮৩ সালে, মিডি স্পেসিফিকেশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।

মিডি কিভাবে কাজ করে

মিডি একটি সিরিয়াল কমিউনিকেশন প্রোটোকল ব্যবহার করে ডেটা আদান প্রদান করে। এই ডেটা সাধারণত একটি ৫-পিন DIN সংযোগের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। মিডি ডেটা মূলত তিনটি প্রধান ধরনের মেসেজ নিয়ে গঠিত:

চ্যানেল মেসেজ: এই মেসেজগুলো নির্দিষ্ট ইন্সট্রুমেন্ট চ্যানেলগুলিতে পাঠানো হয় এবং নোট অন/অফ, ভলিউম, প্যানিং, এবং অন্যান্য কন্ট্রোল ডেটা বহন করে।
সিস্টেম মেসেজ: এই মেসেজগুলো গ্লোবাল কন্ট্রোল ফাংশন যেমন - সিঙ্ক, রিসেট, এবং ডিভাইস সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিস্টেম এক্সক্লুসিভ মেসেজ: এই মেসেজগুলো প্রস্তুতকারকের নিজস্ব ডেটা আদান প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা নির্দিষ্ট ডিভাইসের সেটিংস এবং প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণ করে।

মিডি মেসেজের প্রকারভেদ
মেসেজের প্রকার	বিবরণ	উদাহরণ
চ্যানেল মেসেজ	ইন্সট্রুমেন্ট কন্ট্রোল ডেটা	নোট অন, নোট অফ, কন্ট্রোল চেঞ্জ
সিস্টেম মেসেজ	গ্লোবাল কন্ট্রোল ফাংশন	সিঙ্ক, রিসেট, ডিভাইস আইডি
সিস্টেম এক্সক্লুসিভ মেসেজ	প্রস্তুতকারকের নিজস্ব ডেটা	সিনথেসাইজার সেটিংস, এফেক্ট প্যারামিটার

মিডি-র উপাদান

একটি মিডি সিস্টেমে সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলি থাকে:

মিডি কন্ট্রোলার: এটি ডেটা তৈরি করে এবং অন্যান্য ডিভাইসে প্রেরণ করে। এর মধ্যে সিনথেসাইজার, কীবোর্ড, ড্রাম মেশিন, এবং কম্পিউটার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সিনথেসাইজার
মিডি ডিভাইস: এটি মিডি ডেটা গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। এর মধ্যে সাউন্ড মডিউল, ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন (DAW), এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
মিডি ইন্টারফেস: এটি কম্পিউটার এবং মিডি ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি একটি অডিও ইন্টারফেস বা ডেডিকেটেড মিডি ইন্টারফেস হতে পারে।

মিডি-র ব্যবহার

মিডি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

সঙ্গীত প্রযোজনা: মিডি গান তৈরি এবং সম্পাদনার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের শব্দ তৈরি, সম্পাদনা এবং সাজানো যায়। মিউজিক প্রোডাকশন
লাইভ পারফরম্যান্স: মিডি লাইভ কনসার্টে বাদ্যযন্ত্র এবং কম্পিউটারকে সিঙ্ক্রোনাইজ করতে ব্যবহৃত হয়। লাইভ পারফরম্যান্স
সঙ্গীত শিক্ষা: মিডি সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং সঙ্গীত তত্ত্ব শিখতে সাহায্য করে। সঙ্গীত শিক্ষা
সাউন্ড ডিজাইন: মিডি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, এবং ভিডিও গেমের জন্য সাউন্ড ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হয়। সাউন্ড ডিজাইন
স্বয়ংক্রিয় সঙ্গীত তৈরি: মিডি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঙ্গীত তৈরি করতে পারে। অ্যালগরিদমিক কম্পোজিশন

মিডি এবং অন্যান্য অডিও ফরম্যাট

মিডি অডিও ডেটা সংরক্ষণ করে না, বরং বাদ্যযন্ত্রের পারফরম্যান্সের ডেটা সংরক্ষণ করে। এর ফলে মিডি ফাইলগুলি অডিও ফাইলের তুলনায় অনেক ছোট হয়। তবে, মিডি ফাইল চালানোর জন্য একটি সাউন্ড মডিউল বা সফটওয়্যার সিনথেসাইজার প্রয়োজন, যা মিডি ডেটাকে অডিওতে রূপান্তরিত করতে পারে।

অন্যান্য অডিও ফরম্যাটের সাথে মিডি-র তুলনা:

ওয়েভ (WAV): এটি একটি আনকম্প্রেসড অডিও ফরম্যাট, যা উচ্চ মানের শব্দ সরবরাহ করে, কিন্তু ফাইলের আকার বড় হয়। ওয়েভ অডিও
এমপিথ্রি (MP3): এটি একটি কম্প্রেসড অডিও ফরম্যাট, যা ছোট ফাইলের আকার সরবরাহ করে, কিন্তু শব্দের গুণমান কিছুটা হ্রাস পায়। এমপিথ্রি
এএসি (AAC): এটিও একটি কম্প্রেসড অডিও ফরম্যাট, যা এমপিথ্রি-র চেয়ে ভালো শব্দের গুণমান সরবরাহ করে। এএসি অডিও

অডিও ফরম্যাটের তুলনা
ফরম্যাট	ফাইলের আকার	শব্দের গুণমান	ব্যবহার
মিডি	ছোট	সিনথেসাইজারের উপর নির্ভরশীল	সঙ্গীত প্রযোজনা, লাইভ পারফরম্যান্স
ওয়েভ	বড়	উচ্চ	পেশাদার অডিও রেকর্ডিং
এমপিথ্রি	ছোট	মাঝারি	পোর্টেবল মিউজিক প্লেয়ার
এএসি	মাঝারি	ভালো	অনলাইন স্ট্রিমিং

মিডি-র ভবিষ্যৎ

মিডি প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশ ঘটছে। আধুনিক মিডি প্রোটোকলগুলি আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করে, যেমন - উচ্চ রেজোলিউশন, মাল্টি-চ্যানেল অডিও সমর্থন, এবং আরও ভালো রিয়েল-টাইম পারফরম্যান্স। মিডি-র ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল, কারণ এটি সঙ্গীত এবং সাউন্ড ডিজাইনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

মিডি স্ট্যান্ডার্ড এবং প্রোটোকল

মিডি স্ট্যান্ডার্ডগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডার্ড হলো:

মিডি ১.০: এটি মিডি-র মূল স্ট্যান্ডার্ড, যা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
জেনারেল মিডি (GM): এটি একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড সাউন্ড সেট, যা বিভিন্ন মিডি ডিভাইসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করে। জেনারেল মিডি
এক্সটেন্ডেড মিডি (XG): এটি ইয়ামাহার তৈরি করা একটি উন্নত মিডি স্ট্যান্ডার্ড, যা আরও বেশি সংখ্যক সাউন্ড এবং বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করে। এক্সটেন্ডেড মিডি
মিডি ২.০: এটি একটি নতুন মিডি স্ট্যান্ডার্ড, যা আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য, যেমন - উচ্চ রেজোলিউশন এবং মাল্টি-চ্যানেল অডিও সমর্থন করে।

মিডি প্রোগ্রামিং

মিডি ডেটা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন - পাইথন, সি++, এবং ম্যাক্স/এমএসপি ব্যবহার করে মিডি ডেটা তৈরি, সম্পাদনা এবং বিশ্লেষণ করা যায়। মিডি প্রোগ্রামিং সঙ্গীত এবং সাউন্ড ডিজাইনের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করে।

মিডি সম্পর্কিত কৌশল এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

ভেলোসিটি (Velocity): নোটের তীব্রতা নির্দেশ করে।
কন্ট্রোল চেঞ্জ (Control Change): ভলিউম, প্যান, ইত্যাদি প্যারামিটার পরিবর্তন করে।
পিচ বেন্ড (Pitch Bend): নোটের পিচ সামান্য পরিবর্তন করে।
মোডুলেশন (Modulation): শব্দের গুণমান পরিবর্তন করে।
আফটারটাচ (Aftertouch): নোট বাজানোর পরে চাপ প্রয়োগ করে শব্দের পরিবর্তন ঘটানো হয়।

ভলিউম বিশ্লেষণ

মিডি ডেটার ভলিউম বিশ্লেষণ করে সঙ্গীতের গতিশীলতা এবং অভিব্যক্তি বোঝা যায়। ভলিউম ডেটা ব্যবহার করে অটোমেশন কার্ভ তৈরি করা যায়, যা সঙ্গীতের মিশ্রণ এবং মাস্টারিংয়ের সময় কাজে লাগে।

মিডি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি

OSC (Open Sound Control): এটি মিডি-র একটি আধুনিক বিকল্প, যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অডিও এবং কন্ট্রোল ডেটা আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। ওপেন সাউন্ড কন্ট্রোল
DMX: এটি লাইটিং কন্ট্রোল প্রোটোকল, যা মিডি-র সাথে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে লাইভ পারফরম্যান্সের জন্য। ডিএমএক্স
Ableton Live: একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন (DAW), যা মিডি সমর্থন করে। Ableton Live
Logic Pro X: অ্যাপলের তৈরি একটি পেশাদার DAW, যা মিডি সমর্থন করে। Logic Pro X
Pro Tools: ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড DAW, যা মিডি সমর্থন করে। Pro Tools
Max/MSP: ভিজ্যুয়াল প্রোগ্রামিং ভাষা, যা মিডি ডেটা ম্যানিপুলেট করতে ব্যবহৃত হয়। Max/MSP
Reaktor: নেটিভ ইন্সট্রুমেন্টস-এর তৈরি একটি মডুলার সিনথেসাইজার প্ল্যাটফর্ম, যা মিডি সমর্থন করে। Reaktor
VCV Rack: একটি ওপেন-সোর্স ভার্চুয়াল মডুলার সিনথেসাইজার, যা মিডি সমর্থন করে। VCV Rack
MIDI Keyboard: মিডি কন্ট্রোল করার জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি ইনপুট ডিভাইস। মিডি কীবোর্ড
USB MIDI Interface: কম্পিউটার এবং মিডি ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউএসবি মিডি ইন্টারফেস
MIDI Effects Processor: মিডি ডেটা ম্যানিপুলেট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মিডি এফেক্টস প্রসেসর
MIDI Sequencer: মিডি ডেটা রেকর্ড এবং সম্পাদনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মিডি সিকোয়েন্সার

মিডি সঙ্গীত এবং প্রযুক্তি জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ