ভিডিও গেমের ধারা

ভূমিকা

ভিডিও গেমের ধারা বলতে বোঝায় গেমপ্লে এবং অভিজ্ঞতার ধরনের উপর ভিত্তি করে ভিডিও গেমগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা। এই শ্রেণীবিভাগ গেম ডেভেলপারদের জন্য গেম ডিজাইন করতে, গেম সমালোচকদের জন্য আলোচনা করতে এবং গেমারদের জন্য নিজেদের পছন্দের গেম খুঁজে নিতে সহায়ক। সময়ের সাথে সাথে ভিডিও গেমের ধারাগুলো বিকশিত হয়েছে, নতুন ধারার উদ্ভব হয়েছে এবং পুরাতন ধারাগুলোর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এই নিবন্ধে, প্রধান কয়েকটি ভিডিও গেমের ধারা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

অ্যাকশন গেম (Action Games)

অ্যাকশন গেমগুলি সাধারণত শারীরিক চ্যালেঞ্জ, হাতে-কলমে যুদ্ধ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতার উপর জোর দেয়। এই ধারার গেমগুলোতে খেলোয়াড়কে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে হয়, শত্রু মোকাবেলা করতে হয় এবং লক্ষ্য অর্জন করতে হয়।

শ্যুটার গেম (Shooter Games): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুদের পরাজিত করে। যেমন - কল অফ ডিউটি, অ্যাস্‌াসিন’স ক্রিড।
ফাইটিং গেম (Fighting Games): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়ে। যেমন - স্ট্রিট ফাইটার, টেকেন।
অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম (Action-Adventure Games): এই গেমগুলোতে অ্যাকশন এবং অ্যাডভেঞ্চারের উপাদান মিশ্রিত থাকে। যেমন - দ্য লিজেন্ড অফ জেল্ডা, আনচার্টেড।
প্ল্যাটফর্মার গেম (Platformer Games): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়কে লাফানো এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করার মাধ্যমে বাধা পার করতে হয়। যেমন - সুপার মারিও, রেম্যান।
বিট 'এম আপ (Beat 'em up): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা সাধারণত বহু সংখ্যক শত্রুকে হাতাহাতি লড়ির মাধ্যমে পরাজিত করে। যেমন - ডাবল ড্রাগন, স্ট্রিটস অফ র‍্যাজ।

অ্যাডভেঞ্চার গেম (Adventure Games)

অ্যাডভেঞ্চার গেমগুলি গল্প, চরিত্র এবং অনুসন্ধানের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়কে ধাঁধা সমাধান করতে হয়, সংলাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় এবং গল্পের অগ্রগতি ঘটাতে হয়।

গ্রাফিক্যাল অ্যাডভেঞ্চার গেম (Graphical Adventure Games): এই গেমগুলোতে ভিজ্যুয়াল এবং ইন্টারেক্টিভ উপাদানের মাধ্যমে গল্প বলা হয়। যেমন - মিস্ট, দ্য লংস্ট নাইট।
টেক্সট অ্যাডভেঞ্চার গেম (Text Adventure Games): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় টেক্সট কমান্ডের মাধ্যমে গেমের সাথে যোগাযোগ করে। যেমন - জর্ক, অ্যাডভেঞ্চার।
ভিজ্যুয়াল নভেল (Visual Novels): এই গেমগুলোতে মূলত টেক্সট এবং স্থির চিত্রের মাধ্যমে গল্প উপস্থাপন করা হয়। যেমন - ডেট এ লাইফ, স্টাইনস;গেট।
পয়েন্ট-এন্ড-ক্লিক অ্যাডভেঞ্চার (Point-and-Click Adventure): এই গেমগুলোতে মাউস ব্যবহার করে বিভিন্ন বস্তুর উপর ক্লিক করে ধাঁধা সমাধান করা হয়। যেমন - মনকি আইল্যান্ড, ব্রোকেন sword।

রোল-প্লেয়িং গেম (Role-Playing Games - RPGs)

আরপিজিগুলোতে খেলোয়াড় একটি চরিত্রের ভূমিকা গ্রহণ করে এবং সেই চরিত্রের মাধ্যমে গেমের জগতে নিজেদের তৈরি করে। এই গেমগুলোতে চরিত্রের বিকাশ, গল্প এবং কৌশলগত যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ক্লাসিক আরপিজি (Classic RPGs): এই গেমগুলো সাধারণত টার্ন-ভিত্তিক যুদ্ধের উপর জোর দেয় এবং জটিল চরিত্র নির্মাণ ব্যবস্থা থাকে। যেমন - ফাইনাল ফ্যান্টাসি, ড্রাগন কোয়েস্ট।
অ্যাকশন আরপিজি (Action RPGs): এই গেমগুলোতে রিয়েল-টাইম যুদ্ধ এবং অ্যাকশন উপাদান থাকে। যেমন - ডায়াবলো, প্যাথ অফ এক্সাইল।
মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন রোল-প্লেয়িং গেম (Massively Multiplayer Online Role-Playing Games - MMORPGs): এই গেমগুলোতে হাজার হাজার খেলোয়াড় একই সাথে একটি বিশাল ভার্চুয়াল জগতে অংশগ্রহণ করে। যেমন - ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফট, ফাইনাল ফ্যান্টাসি XIV।
ট্যাকটিক্যাল আরপিজি (Tactical RPGs): এই গেমগুলোতে কৌশলগত যুদ্ধ এবং গ্রিড-ভিত্তিক মুভমেন্টের উপর জোর দেওয়া হয়। যেমন - ফায়ার এমблеম, ডিসিসিয়া।

স্ট্র্যাটেজি গেম (Strategy Games)

স্ট্র্যাটেজি গেমগুলোতে খেলোয়াড়কে পরিকল্পনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে গেম জিততে হয়।

রিয়েল-টাইম স্ট্র্যাটেজি (Real-Time Strategy - RTS): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা একই সময়ে তাদের ইউনিট এবং কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন - স্টারক্রাফট, এজ অফ এম্পায়ার্স।
টার্ন-ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি (Turn-Based Strategy): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা পালাক্রমে তাদের চাল চালায়। যেমন - সিভিলাইজেশন, এক্সকম।
গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি (Grand Strategy): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা একটি দেশ বা সাম্রাজ্য পরিচালনা করে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে। যেমন - ক্রুসেডার কিংস, ইউরোপা ইউনিভার্সালিস।
টাওয়ার ডিফেন্স (Tower Defense): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড়রা টাওয়ার তৈরি করে শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেদের বেস রক্ষা করে। যেমন - প্ল্যান্টস ভার্সেস জম্বি, ব্লুস্টোন।

সিমুলেশন গেম (Simulation Games)

সিমুলেশন গেমগুলো বাস্তব জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি বা কার্যক্রমকে অনুকরণ করে।

লাইফ সিমুলেশন (Life Simulation): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় একটি ভার্চুয়াল জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করে। যেমন - দ্য সিমস, অ্যানিমেল ক্রসিং।
ভেহিকেল সিমুলেশন (Vehicle Simulation): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় বিভিন্ন যানবাহন চালায়। যেমন - মাইক্রোসফট ফ্লাইট সিমুলেটর, গ্রান টুরিসমো।
কন্সট্রাকশন এবং ম্যানেজমেন্ট সিমুলেশন (Construction and Management Simulation): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় কাঠামো তৈরি করে এবং সম্পদ পরিচালনা করে। যেমন - সিমসিটি, প্ল্যানেট কোস্টার।
স্পেস সিমুলেশন (Space Simulation): এই গেমগুলোতে খেলোয়াড় মহাকাশে ভ্রমণ করে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেমন - এলাইট, স্টার সিটিজেন।

স্পোর্টস গেম (Sports Games)

স্পোর্টস গেমগুলো বাস্তব জীবনের খেলাধুলাকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

ফুটবল গেম (Football Games): যেমন - ফিফা, ই ফুটবল।
বাস্কেটবল গেম (Basketball Games): যেমন - এনবিএ ২কে, মাইLeague।
রেসিং গেম (Racing Games): যেমন - ফর্মুলা ওয়ান, নিড ফর স্পিড।
টেনিস গেম (Tennis Games): যেমন - টপ স্পিন, ওয়ার্ল্ড ট্যুর টেনিস।

পাজল গেম (Puzzle Games)

পাজল গেমগুলোতে খেলোয়াড়কে বুদ্ধি ব্যবহার করে ধাঁধা সমাধান করতে হয়।

লজিক পাজল (Logic Puzzles): যেমন - সুডোকু, পিক্রস।
ম্যাচ-থ্রি গেম (Match-Three Games): যেমন - ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা, বেjeweled।
ফিজিক্স-ভিত্তিক পাজল (Physics-Based Puzzles): যেমন - অ্যাংরি বার্ডস, কাটল দ্য স্ট্রোপ।
রুম এস্কেপ (Room Escape): যেমন - দ্য রুম, এস্কেপ সিমুলেটর।

অন্যান্য ধারা

উপরের ধারাগুলো ছাড়াও আরও অনেক ধরনের ভিডিও গেম বিদ্যমান। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

হরর গেম (Horror Games): রেসিডেন্ট evil, সাইলেন্ট হিল।
মিউজিক এবং রিদম গেম (Music and Rhythm Games): গিটார் হিরো, ড্যান্স ড্যান্স রেভোলিউশন।
পার্টি গেম (Party Games): মারিও পার্টি, জ্যাকবক্স পার্টি প্যাক।
ইনডি গেম (Indie Games): আন্ডারটেল, স্টারডিউ ভ্যালি।