ব্যাকগ্রাউন্ড (ফটোগ্রাফি)
ব্যাকগ্রাউন্ড (ফটোগ্রাফি)
thumb|300px|একটি সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড সহ প্রতিকৃতি
ফটোগ্রাফিতে ব্যাকগ্রাউন্ড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড একটি ছবিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে, আবার একটি খারাপ ব্যাকগ্রাউন্ড একটি সুন্দর বিষয়বস্তুকেও নষ্ট করে দিতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ড শুধুমাত্র একটি স্থান নয়, এটি ছবির গল্প বলতে, দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং একটি নির্দিষ্ট অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করে। এই নিবন্ধে, আমরা ব্যাকগ্রাউন্ডের বিভিন্ন দিক, এর প্রকারভেদ, ব্যাকগ্রাউন্ড নির্বাচনের কৌশল এবং ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ব্যাকগ্রাউন্ডের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ব্যাকগ্রাউন্ড হল সেই অংশ যা ছবির প্রধান বিষয়বস্তুর (Subject) পেছনের দিকে থাকে। এটি দৃশ্যের গভীরতা তৈরি করে এবং বিষয়বস্তুকে আলাদা করে তুলতে সাহায্য করে। একটি উপযুক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড বিষয়বস্তুর প্রতি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ছবির মূল বার্তাটিকে আরও শক্তিশালী করে।
- বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলা: ব্যাকগ্রাউন্ড এমন হওয়া উচিত যা বিষয়বস্তুকে আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে, সেটিকে ছাপিয়ে না যায়।
- গভীরতা তৈরি করা: একটি আকর্ষণীয় ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিতে গভীরতা যোগ করে, যা ছবিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলে।
- গল্প বলা: ব্যাকগ্রাউন্ড ছবির প্রেক্ষাপট তৈরি করে এবং একটি গল্প বলতে সাহায্য করে।
- মুড তৈরি করা: ব্যাকগ্রাউন্ডের রং, টেক্সচার এবং অন্যান্য উপাদান ছবির সামগ্রিক মুড বা অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রকারভেদ
বিভিন্ন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কিছু প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রাকৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড: এই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রকৃতি থেকে পাওয়া উপাদান যেমন - গাছপালা, পাহাড়, নদী, সমুদ্র, আকাশ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সাধারণত ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি, প্রকৃতি ফটোগ্রাফি এবং আউটডোর প্রতিকৃতিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
২. কৃত্রিম ব্যাকগ্রাউন্ড: এই ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা হয়। স্টুডিওতে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা হয়, যেমন - কাপড়, কাগজ, দেয়াল, বা অন্যান্য বস্তু। স্টুডিও ফটোগ্রাফি এবং বিজ্ঞাপন ফটোগ্রাফিতে এটি বেশি দেখা যায়।
৩. সরল ব্যাকগ্রাউন্ড: এই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ডে খুব কম উপাদান থাকে এবং এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট রং বা টেক্সচারের হয়। সরল ব্যাকগ্রাউন্ড বিষয়বস্তুর উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। পণ্য ফটোগ্রাফি এবং হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ড প্রতিকৃতিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
৪. জটিল ব্যাকগ্রাউন্ড: এই ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক উপাদান থাকে এবং এটি একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে। জটিল ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হয়, যাতে এটি বিষয়বস্তুকে ছাপিয়ে না যায়। স্ট্রিট ফটোগ্রাফি এবং ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফিতে এটি দেখা যায়।
| প্রকার | বৈশিষ্ট্য | ব্যবহার |
| প্রাকৃতিক | প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপাদান | ল্যান্ডস্কেপ, আউটডোর প্রতিকৃতি |
| কৃত্রিম | তৈরি করা হয় | স্টুডিও ফটোগ্রাফি, বিজ্ঞাপন |
| সরল | কম উপাদান, নির্দিষ্ট রং | পণ্য ফটোগ্রাফি, হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ড প্রতিকৃতি |
| জটিল | অনেক উপাদান, বিশৃঙ্খল | স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফি |
ব্যাকগ্রাউন্ড নির্বাচনের কৌশল
একটি ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড নির্বাচন করার জন্য কিছু কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য: ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে একটি আধুনিক স্থাপত্যের ব্যাকগ্রাউন্ড বেমানান লাগবে।
২. রঙের ব্যবহার: ব্যাকগ্রাউন্ডের রং এমন হওয়া উচিত যা বিষয়বস্তুর রংকে complement করে। বৈপরীত্যপূর্ণ রং ব্যবহার করলে তা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, তবে অতিরিক্ত বৈপরীত্য ছবিকে দৃষ্টিকটু করে তুলতে পারে। রং তত্ত্ব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. টেক্সচারের ব্যবহার: ব্যাকগ্রাউন্ডের টেক্সচার ছবির গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করে। মসৃণ ব্যাকগ্রাউন্ড একটি পরিশীলিত লুক দেয়, যেখানে রুক্ষ টেক্সচার একটি নাটকীয় আবহ তৈরি করে।
৪. ব্যাকগ্রাউন্ডের সরলতা: অনেক ক্ষেত্রে, একটি সরল ব্যাকগ্রাউন্ড বিষয়বস্তুকে আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। জটিল ব্যাকগ্রাউন্ড এড়িয়ে যাওয়া ভালো, যদি না তা ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ না হয়।
৫. আলোর ব্যবহার: ব্যাকগ্রাউন্ডের আলো বিষয়বস্তুর উপর কেমন প্রভাব ফেলছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত আলো বা ছায়া ব্যাকগ্রাউন্ডকে নষ্ট করে দিতে পারে। আলোর প্রকারভেদ সম্পর্কে জ্ঞান এক্ষেত্রে সহায়ক।
৬. দৃষ্টিকোণ: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন দেখাচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সামান্য পরিবর্তন করে ব্যাকগ্রাউন্ডের চেহারা পরিবর্তন করা যেতে পারে।
ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার
ব্যাকগ্রাউন্ডের সঠিক ব্যবহার একটি ছবিকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
১. ডেপথ অফ ফিল্ড (Depth of Field): ডেপথ অফ ফিল্ড কন্ট্রোল করে ব্যাকগ্রাউন্ডকে ব্লার (Blur) করা যায়। কম ডেপথ অফ ফিল্ড ব্যবহার করলে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে যায় এবং বিষয়বস্তু ফোকাসে থাকে। অ্যাপারচার এবং লেন্স এর ব্যবহার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
২. ব্যাকগ্রাউন্ড ডিটেইলস: ব্যাকগ্রাউন্ডে অতিরিক্ত ডিটেইলস থাকলে তা বিষয়বস্তুর মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে। তাই, ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৩. লিডিং লাইনস (Leading Lines): ব্যাকগ্রাউন্ডে লিডিং লাইনস ব্যবহার করে দর্শকের দৃষ্টি বিষয়বস্তুর দিকে আকর্ষণ করা যায়। কম্পোজিশন এর এই নিয়মটি ছবিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
৪. নেগেটিভ স্পেস (Negative Space): ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্যাপ্ত নেগেটিভ স্পেস রাখলে তা বিষয়বস্তুকে আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে এবং ছবিতে একটি ভারসাম্য তৈরি করে।
৫. ব্যাকগ্রাউন্ডের প্যাটার্ন (Pattern): ব্যাকগ্রাউন্ডে পুনরাবৃত্তিমূলক প্যাটার্ন ব্যবহার করলে তা ছবিতে একটি আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল এফেক্ট তৈরি করে।
৬. ব্যাকগ্রাউন্ডের রং এবং টোন: ব্যাকগ্রাউন্ডের রং এবং টোন ছবির মুড এবং অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। ঠান্ডা রং (নীল, সবুজ) শান্ত এবং আরামদায়ক অনুভূতি দেয়, যেখানে গরম রং (লাল, হলুদ) উত্তেজনা এবং উষ্ণতা প্রকাশ করে।
ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তনের কৌশল
ফটোগ্রাফির সময় ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করার কিছু কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
১. স্থান পরিবর্তন: সবচেয়ে সহজ উপায় হলো স্থান পরিবর্তন করা। অন্য একটি স্থানে গিয়ে ছবি তুললে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করা যায়।
২. অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন: ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে ব্যাকগ্রাউন্ডের চেহারা পরিবর্তন করা যায়।
৩. লেন্স পরিবর্তন: বিভিন্ন ফোকাল লেন্থের লেন্স ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্লারনেস (Blurriness) পরিবর্তন করা যায়।
৪. অ্যাপারচার পরিবর্তন: অ্যাপারচার পরিবর্তন করে ডেপথ অফ ফিল্ড কন্ট্রোল করা যায়, যা ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্লারনেসকে প্রভাবিত করে।
৫. ব্যাকড্রপ ব্যবহার: স্টুডিওতে বা ইন্ডোরে ব্যাকড্রপ ব্যবহার করে কৃত্রিম ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা যায়।
৬. পোস্ট-প্রসেসিং: ফটো এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন বা উন্নত করা যায়।
আধুনিক ব্যাকগ্রাউন্ড কৌশল
আধুনিক ফটোগ্রাফিতে ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহারে নতুন কিছু কৌশল যুক্ত হয়েছে:
১. গ্রিন স্ক্রিন (Green Screen): গ্রিন স্ক্রিন ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করা যায়। এটি সাধারণত ভিডিওগ্রাফি এবং স্পেশাল এফেক্টস ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়।
২. ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড: ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা হয়।
৩. লাইট পেইন্টিং (Light Painting): লাইট পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ডে আলোর ব্যবহার করে আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা হয়।
৪. ডাবল এক্সপোজার (Double Exposure): ডাবল এক্সপোজারের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন ছবিকে একটি ছবিতে যুক্ত করে একটি আকর্ষণীয় ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা যায়।
ফটোগ্রাফিক স্টাইল এবং ডিজিটাল ফটোগ্রাফি তে এই কৌশলগুলো বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
ব্যাকগ্রাউন্ড ফটোগ্রাফির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি সুন্দর এবং উপযুক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড একটি ছবিকে আরও আকর্ষণীয়, অর্থবহ এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রকারভেদ, নির্বাচনের কৌশল এবং ব্যবহারের নিয়মগুলো ভালোভাবে জেনে একজন ফটোগ্রাফার তার ছবিতে আরও ভালো ফলাফল পেতে পারেন। নিয়মিত অনুশীলন এবং নতুন কৌশল শেখার মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড ফটোগ্রাফিতে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
আলোর ব্যবহার, কম্পোজিশন, লেন্স, অ্যাপারচার, ডেপথ অফ ফিল্ড, রং তত্ত্ব, ফটো এডিটিং, প্রকৃতি ফটোগ্রাফি, আউটডোর প্রতিকৃতি, স্টুডিও ফটোগ্রাফি, বিজ্ঞাপন, পণ্য ফটোগ্রাফি, হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ড প্রতিকৃতি, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, স্পেশাল এফেক্টস, ফটোগ্রাফিক স্টাইল, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
