বিয়ার পুট স্প্রেড কৌশল
বিয়ার পুট স্প্রেড কৌশল
বিয়ার পুট স্প্রেড একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল যা বিনিয়োগকারীরা তখন ব্যবহার করে যখন তারা প্রত্যাশা করে যে কোনো সম্পদের দাম কমবে, কিন্তু তাদের ঝুঁকি সীমিত রাখতে চান। এটি একটি ভার্চুয়াল অপশন কৌশল, যেখানে একই ধরনের দুটি অপশন ব্যবহার করা হয় - একটি কেনা হয় এবং অন্যটি বিক্রি করা হয়। এই কৌশলটি বিয়ারিশ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি করা হয়েছে, তাই এর নাম বিয়ার পুট স্প্রেড।
বিয়ার পুট স্প্রেড কিভাবে কাজ করে?
বিয়ার পুট স্প্রেড তৈরি করার জন্য, একজন বিনিয়োগকারী একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের দুটি পুট অপশন ব্যবহার করেন। বিনিয়োগকারী একটি উচ্চ স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন বিক্রি করেন এবং একই সাথে একটি নিম্ন স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন কেনেন।
- পুট অপশন কেনা: এটি বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট দামে সম্পদ বিক্রি করার অধিকার দেয়, কিন্তু বাধ্য করে না।
- পুট অপশন বিক্রি করা: এটি বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট দামে সম্পদ কেনার বাধ্যবাধকতা তৈরি করে, যদি অপশন ধারক তার অধিকার প্রয়োগ করে।
এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হল, অপশন বিক্রির মাধ্যমে পাওয়া প্রিমিয়াম, অপশন কেনার খরচকে কিছুটা বা সম্পূর্ণরূপে কভার করা। ফলে, বিনিয়োগকারীর নেট খরচ কম হয় এবং ঝুঁকির পরিমাণ সীমিত থাকে।
| পদক্ষেপ | বিবরণ | |||||||
| ১ | একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে (যেমন, ৫০ টাকা) একটি পুট অপশন বিক্রি করুন। | ২ | একই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে, তার থেকে কম স্ট্রাইক প্রাইসে (যেমন, ৪৫ টাকা) একটি পুট অপশন কিনুন। | ৩ | নেট প্রিমিয়াম খরচ (বিক্রিত অপশনের প্রিমিয়াম - কেনা অপশনের প্রিমিয়াম)। |
বিয়ার পুট স্প্রেডের সুবিধা
- সীমিত ঝুঁকি: এই কৌশলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ঝুঁকির পরিমাণ সীমিত। সর্বোচ্চ ক্ষতি হল, নেট প্রিমিয়াম এবং স্ট্রাইক প্রাইসের পার্থক্য।
- সীমাবদ্ধ লাভ: লাভের সম্ভাবনাও সীমিত, যা স্ট্রাইক প্রাইসের পার্থক্য এবং নেট প্রিমিয়ামের উপর নির্ভরশীল।
- কম মূলধন প্রয়োজন: অন্যান্য অপশন কৌশলের তুলনায়, বিয়ার পুট স্প্রেড তৈরি করতে কম মূলধনের প্রয়োজন হয়।
- নমনীয়তা: বিনিয়োগকারী স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্বাচন করে কৌশলটিকে নিজের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন।
বিয়ার পুট স্প্রেডের অসুবিধা
- সীমিত লাভ: লাভের সম্ভাবনা সীমিত হওয়ায়, বড় ধরনের পতন হলেও বেশি লাভ করা যায় না।
- সময় ক্ষয়: অপশনের মেয়াদ avvicinarsi সাথে সাথে, অপশনের সময় মূল্য হ্রাস পায়, যা বিনিয়োগকারীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- কমিশন: অপশন কেনা-বেচার সময় কমিশন দিতে হয়, যা লাভের পরিমাণ কমাতে পারে।
- জটিলতা: নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কৌশলটি বোঝা কঠিন হতে পারে।
কখন বিয়ার পুট স্প্রেড ব্যবহার করা উচিত?
বিয়ার পুট স্প্রেড নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে:
- যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে কোনো সম্পদের দাম কমবে, কিন্তু খুব বেশি কমবে না।
- যখন বিনিয়োগকারী ঝুঁকি কমাতে চান।
- যখন বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট দামে সম্পদ বিক্রি করতে চান।
- যখন বাজারে অস্থিরতা কম থাকে।
বিয়ার পুট স্প্রেডের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
বিয়ার পুট স্প্রেডের ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: এমন স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন যা আপনার প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: এমন মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্বাচন করুন যা আপনার সময়সীমার সাথে মেলে।
- অবস্থান আকার: আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা অনুযায়ী অবস্থান আকার নির্ধারণ করুন।
- স্টপ-লস অর্ডার: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করুন।
- বাজার পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে আপনার অবস্থান সমন্বয় করুন।
বিয়ার পুট স্প্রেড এবং অন্যান্য কৌশল
বিয়ার পুট স্প্রেড অন্যান্য অপশন ট্রেডিং কৌশল থেকে আলাদা। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশলের সাথে এর পার্থক্য আলোচনা করা হলো:
- বিয়ার কল স্প্রেড: বিয়ার পুট স্প্রেড যেখানে পুট অপশন ব্যবহার করে, বিয়ার কল স্প্রেড সেখানে কল অপশন ব্যবহার করে।
- বুল পুট স্প্রেড: বুল পুট স্প্রেড বিয়ার পুট স্প্রেডের বিপরীত। এখানে বিনিয়োগকারী আশা করেন যে দাম বাড়বে।
- বুল কল স্প্রেড: বুল কল স্প্রেডও বুল পুট স্প্রেডের মতো, তবে এখানে কল অপশন ব্যবহার করা হয়।
- স্ট্র্যাডল: স্ট্র্যাডল একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যেখানে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং বিয়ার পুট স্প্রেড
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বিয়ার পুট স্প্রেড কৌশলটিকে আরও কার্যকর করা যেতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল নির্দেশক নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করা যায়।
- আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স): আরএসআই ব্যবহার করে বোঝা যায় যে কোনো সম্পদ অতিরিক্ত কেনা হয়েছে নাকি অতিরিক্ত বিক্রি করা হয়েছে।
- এমএসিডি (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স): এমএসিডি ব্যবহার করে বাজারের গতি এবং দিকনির্দেশনা বোঝা যায়।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করা যায়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। উচ্চ ভলিউম সহ দামের পতন একটি শক্তিশালী বিয়ারিশ সংকেত।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং বিয়ার পুট স্প্রেড
ভলিউম বিশ্লেষণ বিয়ার পুট স্প্রেড কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি দেখা যায় যে কোনো শেয়ারের দাম কমার সাথে সাথে ভলিউম বাড়ছে, তাহলে এটি একটি শক্তিশালী বিয়ারিশ সংকেত। এর অর্থ হল বিক্রেতারা বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছেন এবং দাম আরও কমতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, বিয়ার পুট স্প্রেড কৌশলটি লাভজনক হতে পারে।
| সূচক | ব্যাখ্যা | |||||||
| ভলিউম বৃদ্ধি | দাম কমার সাথে সাথে ভলিউম বৃদ্ধি পাওয়া গেলে, বিয়ারিশ প্রবণতা শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। | ভলিউম হ্রাস | দাম কমার সাথে সাথে ভলিউম কমতে থাকলে, প্রবণতা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। | অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) | OBV ব্যবহার করে ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যায়। |
বাস্তব উদাহরণ
ধরা যাক, একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বর্তমানে ১০০ টাকা। আপনি মনে করছেন যে দাম কমবে, তাই আপনি বিয়ার পুট স্প্রেড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
- আপনি স্ট্রাইক প্রাইস ১০০ টাকা-তে একটি পুট অপশন বিক্রি করলেন, যার জন্য আপনি প্রিমিয়াম পেলেন ৫ টাকা।
- একই সাথে, আপনি স্ট্রাইক প্রাইস ৯৫ টাকা-তে একটি পুট অপশন কিনলেন, যার জন্য আপনাকে প্রিমিয়াম দিতে হলো ৩ টাকা।
আপনার নেট প্রিমিয়াম খরচ হলো ২ টাকা (৫-৩)।
যদি শেয়ারের দাম মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে ৯০ টাকায় নেমে আসে, তাহলে:
- আপনার বিক্রি করা ১০০ টাকার পুট অপশনটি প্রয়োগ করা হবে, এবং আপনাকে প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১০ টাকা ক্ষতি হবে।
- আপনার কেনা ৯৫ টাকার পুট অপশনটি লাভজনক হবে, এবং আপনি প্রতিটি শেয়ারের জন্য ৫ টাকা লাভ করবেন।
আপনার নেট লাভ হবে (৫-২) = ৩ টাকা।
যদি শেয়ারের দাম ১০০ টাকার উপরে থাকে, তাহলে আপনার উভয় অপশনই মূল্যহীন হয়ে যাবে, এবং আপনার নেট ক্ষতি হবে ২ টাকা (নেট প্রিমিয়াম খরচ)।
উপসংহার
বিয়ার পুট স্প্রেড একটি কার্যকর অপশন ট্রেডিং কৌশল, যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি সীমিত রেখে বাজারের পতন থেকে লাভবান হতে সাহায্য করে। তবে, এই কৌশলটি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলি অনুসরণ করতে হবে। অপশন ট্রেডিং-এর মৌলিক ধারণা, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কে জ্ঞান এই কৌশলটিকে আরও সফল করতে সহায়ক হবে।
অপশন চুক্তি পুট অপশন কল অপশন অপশন প্রাইসিং বিয়ারিশ মার্কেট বুলিশ মার্কেট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন ফিনান্সিয়াল মার্কেট শেয়ার বাজার স্টক ট্রেডিং ইন্ডেক্স অপশন ফিউচার্স ট্রেডিং মার্জিন ট্রেডিং লিভারেজ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর চার্ট প্যাটার্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) সময় বিশ্লেষণ অথবা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
