প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা (Proto-Indo-European language) হল সেই প্রস্তাবিত ভাষা যা থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার-এর সমস্ত সদস্য ভাষা উৎপন্ন হয়েছে। এই ভাষাটি কোনো লিখিত রূপের অস্তিত্ব নেই, বরং ভাষাতত্ত্ববিদরা ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের তুলনামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে এর পুনর্গঠন করেছেন। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা কত সালে প্রচলিত ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪,৫০০ থেকে ২,৫০০ সালের মধ্যে এটি প্রচলিত ছিল।
উৎপত্তি ও বিস্তার
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উৎপত্তিস্থল নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো কুকুরগান hypothesis (Kurgans hypothesis), যা মনে করে ইউরেশীয় স্তেপের কুকুরগান সংস্কৃতি থেকে এই ভাষার বিস্তার শুরু হয়েছিল। এই তত্ত্ব অনুসারে, যাযাবর পশুপালক এই অঞ্চলের মানুষেরা ধীরে ধীরে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের ভাষা সেখানকার স্থানীয় ভাষাগুলোর উপর প্রভাব ফেলে।
অন্যান্য তত্ত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে আনারাতোলিয়ান hypothesis (Anatolian hypothesis), যা মনে করে তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চল থেকে এই ভাষার বিস্তার শুরু হয়েছিল। এছাড়াও, আর্মেনিয়ান hypothesis ও বালকান hypothesis-এর মতো তত্ত্বও রয়েছে।
পুনর্গঠন পদ্ধতি
যেহেতু প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার কোনো লিখিত রূপ নেই, তাই ভাষাতত্ত্ববিদরা এর পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে প্রধান পদ্ধতিগুলো হলো:
- তুলনামূলক পদ্ধতি (Comparative Method): এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মধ্যে মিল খুঁজে বের করা হয় এবং সেই মিলের ভিত্তিতে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ ভাষার রূপ অনুমান করা হয়।
- অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন (Internal Reconstruction): এই পদ্ধতিতে কোনো একটি ভাষার অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে সেই ভাষার পূর্ববর্তী রূপ সম্পর্কে ধারণা করা হয়।
- লেক্সিকostatistical পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ভাষার শব্দভাণ্ডারের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে সময়ের সাথে সাথে ভাষার বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা করা হয়।
এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে ভাষাতত্ত্ববিদরা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ধ্বনি, শব্দভাণ্ডার এবং ব্যাকরণ সম্পর্কে কিছু ধারণা অর্জন করেছেন।
ধ্বনিবিদ্যা (Phonology)
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ধ্বনিবিদ্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন, তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে এই ভাষায় স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ উভয়ই ছিল।
- স্বরবর্ণ: প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় সম্ভবত *e, *o, *a, *i, *u এই পাঁচটি মৌলিক স্বরবর্ণ ছিল। এছাড়াও, দীর্ঘ এবং হ্রস্ব স্বরবর্ণের পার্থক্য ছিল।
- ব্যঞ্জনবর্ণ: এই ভাষায় *p, *t, *k, *b, *d, *g, *m, *n, *s, *h, *l, *r, *w, *y-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল।
শব্দভাণ্ডার (Vocabulary)
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার শব্দভাণ্ডার পুনর্গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার শব্দের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার মাধ্যমে। কিছু সাধারণ শব্দ, যেমন -
- *pater (পিতা) - যা লাতিন-এ pater, সংস্কৃত-এ pitṛ, গ্রিক-এ patēr হিসেবে পাওয়া যায়।
- *mater (মাতা) - যা লাতিন-এ mater, সংস্কৃত-এ mātṛ, গ্রিক-এ mētēr হিসেবে পাওয়া যায়।
- *swesor (ভাই) - যা লাতিন-এ soror, সংস্কৃত-এ svasṛ হিসেবে পাওয়া যায়।
- *agros (ক্ষেত্র) - যা লাতিন-এ ager, গ্রিক-এ agros হিসেবে পাওয়া যায়।
এই শব্দগুলো থেকে বোঝা যায় যে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীরা কৃষি ও পশুপালন সম্পর্কে জানত এবং তাদের সমাজে পরিবার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ব্যাকরণ (Grammar)
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ব্যাকরণ ছিল জটিল এবং সমৃদ্ধ। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- নমনীয় ভাষা (Inflectional Language): এই ভাষায় শব্দের রূপ পরিবর্তন করে ব্যাকরণগত সম্পর্ক প্রকাশ করা হতো।
- লিঙ্গ (Gender): বিশেষ্য পদগুলোর লিঙ্গ ছিল - পুরুষবাচক, স্ত্রীবাচক ও ক্লীবলিঙ্গ।
- বচন (Number): একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন ছিল।
- কারক (Case): আটটি কারক ছিল - nominative, accusative, genitive, dative, ablative, vocative, locative, instrumental।
- ক্রিয়াপদ (Verb): ক্রিয়াপদের কাল, পুরুষ ও বচন অনুযায়ী রূপ পরিবর্তন হতো।
| অর্থ | উদাহরণ | | কর্তৃকারক | কর্তা | *h₁ner | | কর্মকারক | কর্ম | *h₁ner-m | | সম্বন্ধ পদ | সম্পর্ক | *h₁ner-os | | সম্প্রদান কারক | প্রদান | *h₁ner-i | | অপাদান কারক | অপসারণ | *h₁ner-bʰos | | সম্বোধন কারক | সম্বোধন | *h₁ner | | স্থান কারক | স্থান | *h₁ner-sti | | করণ কারক | উপায় | *h₁ner-bʰi | |
ভাষা পরিবার
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে বিভিন্ন ভাষা পরিবার উৎপন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:
- ইন্দো-ইরানীয় (Indo-Iranian): এই পরিবারে সংস্কৃত, ফার্সি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি ইত্যাদি ভাষা অন্তর্ভুক্ত।
- রোমান্স (Romance): এই পরিবারে ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফরাসি, পর্তুগিজ ইত্যাদি ভাষা অন্তর্ভুক্ত।
- জার্মানিক (Germanic): এই পরিবারে ইংরেজি, জার্মান, ডাচ, সুইডিশ ইত্যাদি ভাষা অন্তর্ভুক্ত।
- স্লাভিক (Slavic): এই পরিবারে রাশিয়ান, পোলিশ, চেক, সার্বিয়ান ইত্যাদি ভাষা অন্তর্ভুক্ত।
- কেল্টিক (Celtic): এই পরিবারে আইরিশ, ওয়েলশ, স্কটিশ) ইত্যাদি ভাষা অন্তর্ভুক্ত।
- গ্রিক (Greek): প্রাচীন গ্রিক এবং আধুনিক গ্রিক এই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
- আর্মেনীয় (Armenian): আর্মেনীয় ভাষা এই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
- আলবেনীয় (Albanian): আলবেনীয় ভাষা এই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
- বাল্টো-স্লাভিক (Balto-Slavic): লিথুয়ানীয়, লাটভিয়ান এবং স্লাভিক ভাষাগুলি এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ভাষা এবং এর থেকে উদ্ভূত ভাষাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে জ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন এবং প্রযুক্তি বিস্তার লাভ করেছে।
বর্তমান গবেষণা
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা নিয়ে গবেষণা আজও চলছে। ভাষাতত্ত্ববিদরা নতুন নতুন পদ্ধতি এবং প্রমাণ ব্যবহার করে এই ভাষার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। গ্লোটোক্রোনোলজি এবং কম্পিউটেশনাল ভাষাতত্ত্ব-এর মতো আধুনিক পদ্ধতিগুলো এই গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই বিষয়ে আরও জানতে নিম্নলিখিত লিঙ্কগুলি সহায়ক হতে পারে:
- ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্ব
- তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব
- ভাষাবিজ্ঞান
- ইন্দো-ইউরোপীয় সংস্কৃতি
- ভাষা পরিবর্তন
- শব্দ ব্যুৎপত্তি
- ভাষার শ্রেণিবিন্যাস
- ভাষাতত্ত্বের ইতিহাস
- প্রোটো-ভাষা
- ভাষার বিস্তার
- কুকুরগান সংস্কৃতি
- আনারাতোলিয়ান সভ্যতা
- লেক্সিকন
- ব্যাকরণিক রূপ
- স্বরসঙ্গতি
- ব্যঞ্জনসঙ্গতি
- ভাষা সংস্পর্শ
- ভাষা পরিবার
- ভাষার বিলুপ্তি
- পুনর্গঠিত শব্দ
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক (অপ্রাসঙ্গিক)
প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সাথে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। এটি ফিনান্সিয়াল মার্কেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, মানি ম্যানেজমেন্ট, ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি, অপশন চেইন, কল অপশন, পুট অপশন, বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম, ঝুঁকি এবং রিটার্ন, মার্কেট সেন্টিমেন্ট, ভলাটিলিটি, টাইম ড decay, ট্রেডিং সাইকোলজি এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এর মতো বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত। এই দুটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
