প্যারিটি অপশন
প্যারিটি অপশন : একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
প্যারিটি অপশন হলো অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিশেষ কৌশল। এই কৌশলটি একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের কল অপশন (Call Option) এবং পুট অপশন (Put Option)-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। প্যারিটি অপশন বোঝার জন্য অপশন এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা জরুরি। এই নিবন্ধে, প্যারিটি অপশনের মূল ধারণা, এর প্রয়োগ, এবং ট্রেডিং কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্যারিটি অপশনের মূল ধারণা
প্যারিটি অপশন মূলত ‘পুট-কল প্যারিটি’ (Put-Call Parity) নামক একটি ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই ধারণাটি বলে যে, একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের কল অপশন ও পুট অপশনের দামের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক থাকবে। যদি এই সম্পর্ক বজায় না থাকে, তবেarbitrage সুযোগ তৈরি হতে পারে। arbitrage হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই লাভ করতে পারে।
পুটের কল প্যারিটি সূত্রটি হলো:
C + PV(X) = P + S
এখানে,
- C = কল অপশনের বর্তমান মূল্য
- P = পুট অপশনের বর্তমান মূল্য
- S = অন্তর্নিহিত সম্পদের (underlying asset) বর্তমান মূল্য
- X = স্ট্রাইক প্রাইস
- PV(X) = স্ট্রাইক প্রাইসের বর্তমান মূল্য (Present Value)
এই সূত্রটি অনুযায়ী, কল অপশনের মূল্য এবং স্ট্রাইক প্রাইসের বর্তমান মূল্য-এর যোগফল পুট অপশনের মূল্য এবং অন্তর্নিহিত সম্পদের বর্তমান মূল্যের সমান হবে।
প্যারিটি অপশনের প্রকারভেদ
প্যারিটি অপশন প্রধানত দুই প্রকার:
১. ইউরোপীয় প্যারিটি অপশন: এই ধরনের অপশন শুধুমাত্র মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে প্রয়োগ করা যায়। এই অপশনগুলির ক্ষেত্রে পুট-কল প্যারিটি সম্পর্ক কঠোরভাবে প্রযোজ্য।
২. আমেরিকান প্যারিটি অপশন: এই ধরনের অপশন মেয়াদ উত্তীর্ণের আগে যেকোনো সময় প্রয়োগ করা যায়। আমেরিকান অপশনের ক্ষেত্রে পুট-কল প্যারিটি সম্পর্ক কিছুটা শিথিল হতে পারে, কারণ early exercise-এর সুযোগ থাকে।
প্যারিটি অপশনের প্রয়োগ
প্যারিটি অপশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- arbitrage সুযোগ সনাক্তকরণ: প্যারিটি অপশনের মূল কাজ হলো বাজারে arbitrage সুযোগ খুঁজে বের করা। যদি পুট-কল প্যারিটি সম্পর্ক বজায় না থাকে, তবে arbitrage-এর মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব।
- অপশন প্রাইসিং: প্যারিটি অপশন অপশনের সঠিক মূল্য নির্ধারণে সাহায্য করে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: এই কৌশল ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে ঝুঁকি কমাতে পারে।
- কৌশলগত ট্রেডিং: প্যারিটি অপশন ব্যবহার করে বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল তৈরি করা যায়, যা বিনিয়োগকারীদের লাভজনক ট্রেড করতে সাহায্য করে।
ট্রেডিং কৌশল
প্যারিটি অপশন ব্যবহার করে কিছু জনপ্রিয় ট্রেডিং কৌশল নিচে আলোচনা করা হলো:
১. কনভার্সন (Conversion): এই কৌশলটিতে একটি পুট অপশন কেনা হয় এবং একই স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন বিক্রি করা হয়। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয়, যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে অন্তর্নিহিত সম্পদের মূল্য বাড়বে।
২. রিভার্সন (Reversion): এই কৌশলটিতে একটি কল অপশন কেনা হয় এবং একই স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন বিক্রি করা হয়। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয়, যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে অন্তর্নিহিত সম্পদের মূল্য কমবে।
৩. স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলটিতে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনা হয়। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয়, যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে অন্তর্নিহিত সম্পদের মূল্য বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু কোন দিকে হবে তা নিশ্চিত নন। স্ট্র্যাডল অপশন সম্পর্কে আরও জানতে পারেন।
৪. স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle): এই কৌশলটিতে একই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের দুটি অপশন কেনা হয় – একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন। তবে এই ক্ষেত্রে কল অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস পুট অপশনের চেয়ে বেশি থাকে। এই কৌশলটি স্ট্র্যাডলের মতোই, কিন্তু কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্র্যাঙ্গল অপশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
৫. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলটিতে তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটি একটি জটিল কৌশল, যা অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত।
৬. কন্ডর স্প্রেড (Condor Spread): এটিও বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতো একটি জটিল কৌশল, যেখানে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়।
প্যারিটি অপশন এবং অন্যান্য ট্রেডিং কৌশল
প্যারিটি অপশন অন্যান্য ট্রেডিং কৌশলের সাথে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- প্যারিটি অপশন এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে অন্তর্নিহিত সম্পদের ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যা প্যারিটি অপশন ট্রেডিং-এর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- প্যারিটি অপশন এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস: ভলিউম অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়, যা প্যারিটি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- প্যারিটি অপশন এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস: ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে অন্তর্নিহিত সম্পদের মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা যায়, যা প্যারিটি অপশন ট্রেডিং-এর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- প্যারিটি অপশন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: প্যারিটি অপশন ব্যবহার করে পোর্টফোলিওতে ঝুঁকি কমানো যায়।
ঝুঁকি এবং সতর্কতা
প্যারিটি অপশন ট্রেডিং-এর কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সচেতন থাকা উচিত:
- বাজারের ঝুঁকি: বাজারের অপ্রত্যাশিত মুভমেন্টের কারণে অপশনের মূল্য কমতে পারে।
- তারল্য ঝুঁকি: কিছু অপশনের বাজারে তারল্য কম থাকতে পারে, যার ফলে দ্রুত কেনাবেচা করা কঠিন হতে পারে।
- সময় ঝুঁকি: অপশনের মেয়াদ উত্তীর্ণের সাথে সাথে এর মূল্য কমতে থাকে।
- জটিলতা: প্যারিটি অপশন একটি জটিল কৌশল, যা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে না পারলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
সতর্কতা:
- প্যারিটি অপশন ট্রেডিং করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন এবং কৌশলটি বুঝুন।
- অল্প পরিমাণ অর্থ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়ান।
- স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করুন।
- অভিজ্ঞ ট্রেডারদের পরামর্শ নিন।
- নিয়মিতভাবে বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন।
উদাহরণ
ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ১০০ টাকা এবং স্ট্রাইক প্রাইস ১০০ টাকা। কল অপশনের মূল্য ৫ টাকা এবং পুট অপশনের মূল্য ৩ টাকা। স্ট্রাইক প্রাইসের বর্তমান মূল্য (PV(X)) ২ টাকা।
প্যারিটি সূত্র অনুযায়ী:
C + PV(X) = P + S 5 + 2 = 3 + 100 7 = 103
এখানে, প্যারিটি সম্পর্ক বজায় নেই। এই ক্ষেত্রে, arbitrage সুযোগ তৈরি হতে পারে।
উপসংহার
প্যারিটি অপশন একটি শক্তিশালী ট্রেডিং কৌশল, যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ प्रदान করে। তবে, এই কৌশলটি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, প্যারিটি অপশন ট্রেডিং করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক জ্ঞান এবং কৌশল ব্যবহার করে প্যারিটি অপশন ট্রেডিং-এর মাধ্যমে লাভবান হওয়া সম্ভব।
আরও জানতে:
- অপশন চুক্তি
- কল অপশন
- পুট অপশন
- ফ্লেক্সিবল অপশন
- বাইনারি অপশন
- এক্সোটিক অপশন
- অপশন গ্রিকস
- ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল
- মানি ইন দ্য মান
- মানি অ্যাট দ্য মান
- মানি আউট অফ দ্য মান
- ডেল্টা হেজিং
- গামা স্কুইজ
- ভেগা
- থিটা
- রো
- অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
