দক্ষিণ আমেরিকা

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

দক্ষিণ আমেরিকা পৃথিবীর দশম বৃহত্তম মহাদেশ, যা প্রায় ১৭.৮ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার আয়তন জুড়ে বিস্তৃত। এটি আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশ। এই মহাদেশের উত্তরে উত্তর আমেরিকা, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা অবস্থিত। দক্ষিণ আমেরিকা বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য যেমন - আন্দিজ পর্বতমালা, আমাজন অরণ্য, পাম্পাস তৃণভূমি এবং আতা camera জলপ্রপাত এর জন্য বিখ্যাত।

ভৌগোলিক গঠন

দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-প্রাকৃতিক গঠন অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

**আন্দিজ পর্বতমালা:** এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালাগুলির মধ্যে অন্যতম, যা ভেনেজুয়েলা থেকে শুরু হয়ে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পর্বতমালা ভূ-গঠন এবং জলবায়ুর উপর বিশাল প্রভাব ফেলে।
**আমাজন অরণ্য:** পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টি অরণ্য, যা ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া সহ আরও কয়েকটি দেশে বিস্তৃত। এটি জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল আধার।
**পাম্পাস তৃণভূমি:** আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ ব্রাজিলের বিশাল তৃণভূমি অঞ্চল, যা কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত।
**গুয়ানা মালভূমি:** উত্তর-পূর্ব দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল।
**প্যারাগুয়ে অববাহিকা:** প্যারাগুয়ে নদীর অববাহিকা, যা এই অঞ্চলের জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জলবায়ু

দক্ষিণ আমেরিকার জলবায়ু অক্ষাংশ, উচ্চতা এবং সমুদ্র স্রোতের প্রভাবে বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন। এখানে কয়েকটি প্রধান জলবায়ু অঞ্চল বিদ্যমান:

**ক্রান্তীয়:** আমাজন অববাহিকা এবং উত্তর উপকূলীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু দেখা যায়।
**উপক্রান্তীয়:** আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে এবং পাম্পাস তৃণভূমিতে উপক্রান্তীয় জলবায়ু বিদ্যমান।
**মরু ও আধা-মরু:** আটাকামা মরুভূমি বিশ্বের শুষ্কতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে মরু জলবায়ু দেখা যায়।
**সমভাবাপন্ন:** দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে।
**পাহাড়ি:** আন্দিজ পর্বতমালায় উচ্চতার সাথে সাথে পাহাড়ি জলবায়ু পরিবর্তিত হয়।

দেশসমূহ

দক্ষিণ আমেরিকা ১২টি স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো:

দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ
দেশ	রাজধানী	ভাষা
আর্জেন্টিনা	বুয়েনোস Aires	স্প্যানিশ
বলিভিয়া	সুক্রে (সাংবিধানিক), লা পাজ (প্রশাসনিক)	স্প্যানিশ, কেচুয়া, আয়मारा
ব্রাজিল	ব্রাসিলিয়া	পর্তুগিজ
চিলি	সান্তিয়াগো	স্প্যানিশ
কলম্বিয়া	বোগোটা	স্প্যানিশ
ইকুয়েডর	কুইটো	স্প্যানিশ
গায়ানা	জর্জটাউন	ইংরেজি
প্যারাগুয়ে	আসুনসিওন	স্প্যানিশ, গুয়ারানি
পেরু	লিমা	স্প্যানিশ, কেচুয়া
সুরিনাম	প্যারামারিবি	ডাচ
উরুগুয়ে	মন্টেভিডিও	স্প্যানিশ
ভেনেজুয়েলা	কারাকাস	স্প্যানিশ

এছাড়াও, ফরাসি গায়ানা (ফ্রান্স এর একটিOverseas territory) এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্যের বিপজ্জনক অধীন) দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত।

অর্থনীতি

দক্ষিণ আমেরিকার অর্থনীতি মূলত কৃষি, খনিজ সম্পদ এবং শিল্প এর উপর নির্ভরশীল।

**কৃষি:** ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং পেরু প্রধান কৃষি উৎপাদনকারী দেশ। কফি, সয়াবিন, চিনি, কলা এবং চাল এখানকার প্রধান ফসল।
**খনিজ সম্পদ:** চিলি তামা, ব্রাজিল লোহা, পেরু রূপা এবং ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদনে বিখ্যাত।
**শিল্প:** ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার শিল্প খাত তুলনামূলকভাবে উন্নত। এখানে automotive, পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প উল্লেখযোগ্য।
**পর্যটন:** পর্যটন দক্ষিণ আমেরিকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রিও ডি জেনিরো, কুস্কো, মাচু পিচু এবং ইগুয়াজু জলপ্রপাত বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য।

সংস্কৃতি

দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি ইউরোপীয়, আফ্রিকান এবং স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির মিশ্রণে গঠিত।

**ভাষা:** স্প্যানিশ এখানকার প্রধান ভাষা, তবে ব্রাজিলীয় পর্তুগিজও বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন আদিবাসী ভাষা এখনও প্রচলিত আছে।
**ধর্ম:** খ্রিস্ট ধর্ম (প্রধানত ক্যাথলিক) এখানকার প্রধান ধর্ম। তবে, আদিবাসী ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসও প্রচলিত।
**সংগীত ও নৃত্য:** সা Samba, ট্যাঙ্গো, কুয়েকা, এবং মারাকাতু এখানকার জনপ্রিয় সংগীত ও নৃত্য শৈলী।
**খাদ্য:** এ Arepas, ফেজোয়াডা, সেভিচে, এবং এ Empanadas এখানকার জনপ্রিয় খাবার।
**উৎসব:** কার্নিভাল, ইনটি রাymi, এবং ডায়া দে los muertos দক্ষিণ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত।

**প্রাক-কলম্বিয়ান যুগ:** ইনকা, মায়া, আজটেক এবং অন্যান্য আদিবাসী সভ্যতা এখানে বিকাশ লাভ করে।
**স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ উপনিবেশ:** ১৫শ শতাব্দীতে স্পেন এবং পর্তুগাল দক্ষিণ আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
**স্বাধীনতা সংগ্রাম:** ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে।
**আধুনিক যুগ:** বিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আমেরিকা রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করেছে। বর্তমানে, এই অঞ্চলের দেশগুলো গণতান্ত্রিক সরকার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।