ডারউইন

চার্লস রবার্ট ডারউইন ছিলেন একজন ব্রিটিশ প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ, ভূবিজ্ঞানী, এবং জীববিজ্ঞানী। তিনি ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের শ্রুসবারিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল সেখানেই মারা যান। ডারউইনকে সর্বকালের প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তার বিবর্তন তত্ত্ব-এর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য ব্যাখ্যা করে।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

ডারউইনের বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মা ছিলেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তির কন্যা। ডারউইন প্রথমে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। তবে, তার আগ্রহ ছিল মূলত প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং ভূতত্ত্ব-এর প্রতি। কেমব্রিজে থাকাকালীন তিনি জন স্টিফেনস Henslow-এর অধীনে উদ্ভিদবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং ভূতত্ত্ববিদ অ্যাডাম সেজউইক-এর সাথে ওয়েলসে ভূতাত্ত্বিক জরিপে অংশ নেন।

বিগল যাত্রা

ডারউইনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল এইচএমএস বিগল নামক একটি জাহাজে করে ১৮৩২ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পাঁচ বছর ধরে সমুদ্রযাত্রা। এই যাত্রায় তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল ঘুরে দেখেন। এই ভ্রমণকালে ডারউইন উদ্ভিদ, প্রাণী এবং জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন এবং এদের ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করেন। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ফিন্চ পাখিগুলোর মধ্যে বিভিন্নতা বিশেষভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা পরবর্তীকালে তার বিবর্তন তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।

বিবর্তন তত্ত্বের উদ্ভব

বিগল যাত্রা থেকে ফেরার পর ডারউইন তার সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে প্রজাতিগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় এবং নতুন প্রজাতি তৈরি হয়। ১৮৩৮ সালে তিনি থমাস ম্যালথাস-এর জনসংখ্যা তত্ত্ব থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে বলা হয়েছে যে জনসংখ্যা তার খাদ্য সরবরাহের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। ডারউইন মনে করেন, এই একই নীতি প্রকৃতিতে প্রযোজ্য, যেখানে জীবেরা বেঁচে থাকার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে।

ডারউইন প্রস্তাব করেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে উপযুক্ত জীবেরা টিকে থাকে এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে ধীরে ধীরে প্রজাতির পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হয়। তিনি এই ধারণাগুলো নিয়ে একটি বই লিখতে শুরু করেন, কিন্তু জিওলজিক্যাল সোসাইটি-র কাছে তার প্রাথমিক ধারণা প্রকাশের পর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় প্রকাশে দ্বিধা বোধ করেন।

উৎপত্তির মাধ্যমে নির্বাচন

১৮৫৯ সালে ডারউইন তার বিখ্যাত বই "On the Origin of Species" (প্রজাতির উদ্ভব) প্রকাশ করেন। এই বইয়ে তিনি তার বিবর্তন তত্ত্বের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। বইটিতে তিনি দেখান যে কীভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রজাতির পরিবর্তন ঘটায় এবং নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। ডারউইন যুক্তি দেন যে সকল জীব একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে এবং সময়ের সাথে সাথে তারা বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিকশিত হয়েছে।

"On the Origin of Species" বইটি প্রকাশের পর আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বিজ্ঞান জগতে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে ডারউইনের তত্ত্বের বিরোধিতা করেন, কারণ এটি সৃষ্টিবাদ-এর ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। তবে, বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে ডারউইনের তত্ত্বের প্রমাণ খুঁজে পান এবং এটি জীববিজ্ঞানের একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ডারউইনের অন্যান্য কাজ

ডারউইন শুধু বিবর্তন তত্ত্বের জন্যই বিখ্যাত নন, তিনি অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি উদ্ভিদের বৃদ্ধি, কীটপতঙ্গ, কৃষি, এবং মানুষের উৎপত্তির উপরও গবেষণা করেছেন।

"The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex" (১৮৭১) বইটিতে তিনি মানুষের বিবর্তন এবং যৌন নির্বাচনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
"The Expression of the Emotions in Man and Animals" (১৮৭২) বইটিতে তিনি মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে আবেগের প্রকাশ নিয়ে গবেষণা করেন।
"The Formation of Vegetable Mould Through the Action of Worms" (১৮৮১) বইটিতে তিনি কেঁচোর মাটি তৈরির প্রক্রিয়ার উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ডারউইনের প্রভাব

ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব জীববিজ্ঞানের পাশাপাশি অন্যান্য বিজ্ঞান এবং মানবিক বিষয়েও গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি জেনেটিক্স, পরিবেশবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, এবং নৃতত্ত্ব-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। ডারউইনের তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞান, দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের ওপরও প্রভাব ফেলেছে।

ডারউইনবাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা:

জিনগত প্রকরণ: একটি প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা।
অভিযোজন: পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।
প্রাকৃতিক নির্বাচন: সবচেয়ে উপযুক্ত জীবের বেঁচে থাকার এবং প্রজনন করার ক্ষমতা।
স্পেসিయేসন: নতুন প্রজাতির সৃষ্টি।
সাধারণ বংশধর: সকল জীবের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ।

সমালোচনা এবং বিতর্ক

ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রধান সমালোচনাগুলো হলো:

সৃষ্টিবাদ-এর বিরোধিতা: ডারউইনের তত্ত্ব ধর্মীয় সৃষ্টিবাদের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।
অসম্পূর্ণ জীবাশ্ম রেকর্ড: বিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে জীবাশ্ম রেকর্ড যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করেন।
জটিল অঙ্গ: জটিল অঙ্গগুলো কীভাবে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মানব বিবর্তন: মানুষের বিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে।

তবে, আধুনিক বিজ্ঞান ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের স্বপক্ষে অসংখ্য প্রমাণ সরবরাহ করেছে। ডিএনএ এবং জেনেটিক্স-এর অগ্রগতি বিবর্তন তত্ত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে ডারউইনের তত্ত্বের সাদৃশ্য

বাইনারি অপশন ট্রেডিং অনেকটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মতোই। এখানে, একজন ট্রেডার বিভিন্ন অপশন (প্রজাতি) থেকে একটি বেছে নেয় এবং ভবিষ্যদ্বাণী করে যে দাম বাড়বে নাকি কমবে (বেঁচে থাকবে নাকি মারা যাবে)।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ডারউইনের তত্ত্বের মতো, ট্রেডারদের টিকে থাকার জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হয়।
অভিযোজন: বাজারের পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়।
বৈচিত্র্য: বিভিন্ন ধরনের অপশন থেকে সেরাটি বেছে নিতে হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন: যে ট্রেডাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তারা লাভবান হয় (বেঁচে থাকে), অন্যরা নয়।

ডারউইন এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সাদৃশ্য
!- বাইনারি অপশন ট্রেডিং \|	জিনগত প্রকরণ \| rowspan="1" \| বিভিন্ন অপশন \|	অভিযোজন \| rowspan="1" \| বাজারের সাথে মানিয়ে নেওয়া \|	প্রাকৃতিক নির্বাচন \| rowspan="1" \| লাভজনক ট্রেড নির্বাচন \|	টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম \| rowspan="1" \| ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা \|	নতুন প্রজাতি সৃষ্টি \| rowspan="1" \| নতুন ট্রেডিং কৌশল তৈরি \|

উপসংহার

চার্লস ডারউইন ছিলেন একজন যুগান্তকারী বিজ্ঞানী, যিনি জীববিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তার বিবর্তন তত্ত্ব শুধু বিজ্ঞান নয়, আমাদের জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেও প্রভাবিত করেছে। ডারউইনের কাজ আজও বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করছে এবং নতুন গবেষণার পথ দেখাচ্ছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও তার তত্ত্বের মৌলিক ধারণাগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।

বিবর্তন প্রাকৃতিক নির্বাচন চার্লস ডারউইন বিগল (জাহাজ) গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ফিন্চ পাখি On the Origin of Species জেনেটিক্স ডিএনএ জীবাশ্ম ভূতত্ত্ব জন স্টিফেনস Henslow অ্যাডাম সেজউইক থমাস ম্যালথাস সৃষ্টিবাদ বৈচিত্র্য (জীববিজ্ঞান) অভিযোজন স্পেসিయేসন মানব বিবর্তন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই (Relative Strength Index)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ