টেলিভিশন রেটিং

টেলিভিশন রেটিং

ভূমিকা

টেলিভিশন রেটিং হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের দর্শক সংখ্যার পরিমাপ। এই রেটিং নির্ধারণ করা হয় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে, এবং এটি গণমাধ্যম শিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞাপনদাতারা এই রেটিং দেখে বিজ্ঞাপনের সময় কেনেন, এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রোগ্রামিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করে। টেলিভিশন রেটিং শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি বাজারের চাহিদা, দর্শকের পছন্দ এবং সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

টেলিভিশন রেটিংয়ের ইতিহাস

টেলিভিশন রেটিংয়ের ধারণাটি ১৯৩০-এর দশকে শুরু হয়েছিল, যখন রেডিও শ্রোতাদের সংখ্যা পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথম দিকের পদ্ধতিগুলো ছিল মূলত টেলিফোন সার্ভে এবং গ্রাহক তালিকা ব্যবহার করে। ১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে, রেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। Nielsen Media Research এবং Kantar Media এর মতো কোম্পানিগুলো এই ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

প্রাথমিকভাবে, রেটিংয়ের জন্য ছোট আকারের নমুনা ব্যবহার করা হতো, যা প্রায়শই ভুল প্রমাণিত হতো। সময়ের সাথে সাথে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রেটিং পদ্ধতিগুলো আরও নির্ভুল হয়েছে। বর্তমানে, পিপল মিটার এবং সেট-টপ বক্স ডেটা ব্যবহার করে রেটিং নির্ণয় করা হয়।

রেটিং পরিমাপের পদ্ধতি

টেলিভিশন রেটিং পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

• পিপল মিটার (People Meter): এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা টেলিভিশন দেখতে থাকা পরিবারের সদস্যদের সনাক্ত করে এবং তারা কী দেখছে তা রেকর্ড করে। এই ডিভাইসগুলো সাধারণত কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে পরিবারগুলোর সাথে সংযুক্ত থাকে।

• সেট-টপ বক্স ডেটা (Set-Top Box Data): সেট-টপ বক্সগুলো দর্শকদের দেখার অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এই ডেটা বিশ্লেষণ করে টেলিভিশন রেটিং নির্ধারণ করা হয়।

• রিটার্ন পাথ ডেটা (Return Path Data): এই পদ্ধতিতে, দর্শকদের কাছ থেকে সরাসরি ডেটা সংগ্রহ করা হয়, যেমন তারা কোন প্রোগ্রাম দেখছে এবং কতক্ষণ দেখছে।

• অডিও ম্যাচিং (Audio Matching): এই পদ্ধতিতে প্রোগ্রামের অডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে দর্শকদের মধ্যে প্রোগ্রামটির পরিচিতি শনাক্ত করা হয়।

• স্মার্ট টিভি ডেটা (Smart TV Data): স্মার্ট টিভিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে দর্শকদের দেখার অভ্যাস সম্পর্কে ডেটা সংগ্রহ করে, যা রেটিং নির্ধারণে সহায়ক।

পদ্ধতি	নির্ভুলতা	খরচ	সুবিধা
পিপল মিটার	উচ্চ	বেশি	বিস্তারিত ডেটা
সেট-টপ বক্স ডেটা	মধ্যম	কম	বৃহৎ নমুনা
রিটার্ন পাথ ডেটা	উচ্চ	মধ্যম	সরাসরি ডেটা সংগ্রহ
অডিও ম্যাচিং	কম	কম	সহজ বাস্তবায়ন
স্মার্ট টিভি ডেটা	মধ্যম	কম	স্বয়ংক্রিয় ডেটা সংগ্রহ

রেটিংয়ের প্রকারভেদ

টেলিভিশন রেটিং বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:

• মোট দর্শক সংখ্যা (Total Viewership): এটি একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মোট দর্শক সংখ্যা নির্দেশ করে।

• household রেটিং (Household Rating): এটি টেলিভিশনের মালিকানা আছে এমন কত শতাংশ পরিবার একটি প্রোগ্রাম দেখছে, তা নির্দেশ করে।

• শেয়ার (Share): এটি টেলিভিশনের মালিকানা আছে এমন পরিবারের মধ্যে কত শতাংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি প্রোগ্রাম দেখছে, তা নির্দেশ করে।

• ডেমোগ্রাফিক রেটিং (Demographic Rating): এটি নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ, আয় এবং শিক্ষার মতো জনসংখ্যার ভিত্তিতে রেটিং প্রদান করে। Demographics বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের লক্ষ্যযুক্ত দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

• overnight রেটিং (Overnight Rating): এটি পূর্ববর্তী রাতের প্রোগ্রামগুলোর প্রাথমিক রেটিং, যা দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

রেটিংয়ের গুরুত্ব

টেলিভিশন রেটিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

• বিজ্ঞাপন (Advertising): বিজ্ঞাপনদাতারা রেটিং দেখে বিজ্ঞাপনের সময় কেনেন। উচ্চ রেটিং মানে বেশি দর্শক, যা বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বেশি লাভজনক। বিজ্ঞাপন কৌশল নির্ধারণে এটি সহায়ক।

• প্রোগ্রামিং (Programming): টেলিভিশন চ্যানেলগুলো রেটিংয়ের ভিত্তিতে প্রোগ্রামিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। জনপ্রিয় প্রোগ্রামগুলো চালানো হয় এবং কম জনপ্রিয় প্রোগ্রামগুলো বাতিল করা হয়।

• বিনিয়োগ (Investment): বিনিয়োগকারীরা টেলিভিশন চ্যানেলের আর্থিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে রেটিং ব্যবহার করেন।

• গণমাধ্যম গবেষণা (Media Research): রেটিং ডেটা গণমাধ্যম শিল্পের প্রবণতা এবং দর্শকদের পছন্দ বুঝতে সহায়ক।

• রাজনৈতিক প্রচারণা (Political Campaign): রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বার্তা প্রচারের জন্য উপযুক্ত সময় এবং চ্যানেল নির্বাচন করতে রেটিং ব্যবহার করে।

রেটিংয়ের সীমাবদ্ধতা

টেলিভিশন রেটিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• নমুনা আকার (Sample Size): রেটিং সাধারণত একটি ছোট আকারের নমুনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যা সামগ্রিক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব নাও করতে পারে।

• প্রযুক্তিগত ত্রুটি (Technical Errors): পিপল মিটার বা সেট-টপ বক্সের ডেটাতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকতে পারে, যা রেটিংকে প্রভাবিত করতে পারে।

• দর্শকের পরিবর্তন (Changing Viewership): দর্শকদের দেখার অভ্যাসে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, যেমন OTT প্ল্যাটফর্ম (Over-The-Top platforms) এবং ভিডিও অন ডিমান্ড (Video on Demand) -এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেটিংয়ের নির্ভুলতা কমে যেতে পারে।

• ফ্রড (Fraud): কিছু ক্ষেত্রে, রেটিং ম্যানিপুলেট করার অভিযোগ ওঠে, যা রেটিংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আধুনিক রেটিং ব্যবস্থা

বর্তমানে, টেলিভিশন রেটিং ব্যবস্থা আরও আধুনিক এবং নির্ভুল করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• বিগ ডেটা (Big Data): বড় ডেটা বিশ্লেষণ করে দর্শকদের দেখার অভ্যাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রেটিংয়ের পূর্বাভাস দেওয়া এবং ত্রুটিগুলো সংশোধন করা হচ্ছে।

• সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ (Social Media Analytics): সোশ্যাল মিডিয়ার ডেটা ব্যবহার করে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া এবং পছন্দের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

• ক্রস-প্ল্যাটফর্ম পরিমাপ (Cross-Platform Measurement): টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল এবং অন্যান্য ডিভাইসে দর্শকদের দেখার অভ্যাসকে একত্রিত করে রেটিং নির্ধারণ করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

টেলিভিশন রেটিংয়ের ভবিষ্যৎ বেশ পরিবর্তনশীল। দর্শকদের দেখার অভ্যাসের পরিবর্তন এবং নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে সাথে রেটিং ব্যবস্থায় আরও পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। কিছু সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রবণতা হলো:

• ব্যক্তিগতকৃত রেটিং (Personalized Ratings): প্রতিটি দর্শকের ব্যক্তিগত পছন্দ এবং দেখার অভ্যাসের উপর ভিত্তি করে রেটিং প্রদান করা হতে পারে।

• রিয়েল-টাইম রেটিং (Real-Time Ratings): প্রোগ্রাম চলাকালীন রিয়েল-টাইমে রেটিং ডেটা পাওয়া যেতে পারে, যা চ্যানেলগুলোকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

• ব্লকচেইন প্রযুক্তি (Blockchain Technology): ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেটিং ডেটার নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

• এআই-চালিত বিশ্লেষণ (AI-Powered Analytics): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আরও উন্নত বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাস প্রদান করা হতে পারে।

উপসংহার

টেলিভিশন রেটিং গণমাধ্যম শিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও এটি বিজ্ঞাপনদাতা, টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রেটিং ব্যবস্থা আরও নির্ভুল এবং কার্যকরী হবে বলে আশা করা যায়। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এই শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক।

আরও জানতে

• Nielsen Media Research: রেটিং পরিমাপের জন্য একটি নেতৃস্থানীয় সংস্থা।
• Kantar Media: গণমাধ্যম গবেষণা এবং পরামর্শ প্রদানকারী একটি সংস্থা।
• Television viewership: টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
• Demographics: জনসংখ্যা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা।
• Advertising strategy: বিজ্ঞাপন কৌশল এবং পরিকল্পনা।
• OTT platform: ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্ম এবং তাদের প্রভাব।
• Video on Demand: ভিডিও অন ডিমান্ড পরিষেবা এবং তাদের জনপ্রিয়তা।
• Big Data: বৃহৎ ডেটা এবং এর বিশ্লেষণ।
• Artificial Intelligence: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং এর প্রয়োগ।
• Social Media Analytics: সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ এবং দর্শকদের প্রতিক্রিয়া।
• Cross-Platform Measurement: ক্রস-প্ল্যাটফর্ম পরিমাপ পদ্ধতি।
• Blockchain Technology: ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহার।
• Targeted Advertising: লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপন এবং এর সুবিধা।
• Media Planning: গণমাধ্যম পরিকল্পনা এবং বাজেট বরাদ্দ।
• Audience Measurement: দর্শক পরিমাপ কৌশল এবং পদ্ধতি।
• Program Evaluation: প্রোগ্রাম মূল্যায়ন এবং কার্যকারিতা বিশ্লেষণ।
• Content Strategy: সামগ্রী কৌশল এবং দর্শকদের আকর্ষণ।
• Digital Marketing: ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন।
• Market Research: বাজার গবেষণা এবং গ্রাহক বিশ্লেষণ।
• Data Analytics: ডেটা বিশ্লেষণ এবং অন্তর্দৃষ্টি তৈরি।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ