টার্গেটের প্রকারভেদ

টার্গেট প্রকারভেদ : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিস্তারিত আলোচনা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক প্রক্রিয়া, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পাবে নাকি হ্রাস পাবে সে সম্পর্কে পূর্বাভাস করে থাকেন। এই ট্রেডিংয়ের সাফল্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের টার্গেট বা লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। এই নিবন্ধে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর বিভিন্ন প্রকার টার্গেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ভূমিকা

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে, টার্গেট হলো সেই নির্দিষ্ট মূল্য বা শর্ত যা একটি ট্রেডকে লাভজনক করে তোলে। এই টার্গেটগুলি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, এবং প্রত্যেক প্রকারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। একজন ট্রেডারের জন্য তার ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকির প্রোফাইলের সাথে সঙ্গতি রেখে সঠিক টার্গেট নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টার্গেটের প্রকারভেদ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সাধারণত নিম্নলিখিত প্রকারের টার্গেটগুলি দেখা যায়:

১. স্ট্যান্ডার্ড টার্গেট (Standard Target):

এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত টার্গেট প্রকার। এখানে, ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের মূল্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে বা নিচে যাবে কিনা তা অনুমান করে। যদি ট্রেডারের পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে তিনি একটি পূর্বনির্ধারিত পরিমাণ লাভ পান; অন্যথায়, তিনি তার বিনিয়োগের পরিমাণ হারান। এই ধরনের টার্গেট সাধারণত কম ঝুঁকির সাথে যুক্ত থাকে, তবে লাভের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

২. বাউণ্ডারি টার্গেট (Boundary Target):

এই টার্গেট প্রকারটিতে, ট্রেডারকে দুটি স্তরের মধ্যে একটি মূল্য পরিসীমা নির্ধারণ করতে হয়। যদি ট্রেড চলাকালীন সম্পদের মূল্য এই পরিসীমার মধ্যে থাকে, তবে ট্রেডার লাভবান হন। যদি মূল্য পরিসীমার বাইরে চলে যায়, তবে ট্রেডার তার বিনিয়োগ হারান। বাউণ্ডারি টার্গেটগুলি সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড টার্গেটের চেয়ে বেশি লাভের সুযোগ প্রদান করে, তবে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি। মূল্য পরিসীমা কিভাবে কাজ করে, তা জানতে এই লিঙ্কে যান।

৩. টাচ/নো-টাচ টার্গেট (Touch/No-Touch Target):

টাচ টার্গেট-এ, ট্রেডার অনুমান করেন যে সম্পদের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্তর স্পর্শ করবে কিনা। যদি মূল্য স্তরটি স্পর্শ করে, তবে ট্রেডার লাভ পান। অন্যদিকে, নো-টাচ টার্গেট-এ, ট্রেডার অনুমান করেন যে মূল্য সেই স্তরটি স্পর্শ করবে না। এই ধরনের টার্গেটগুলি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল বাজারে ভালো কাজ করে এবং দ্রুত লাভের সুযোগ প্রদান করে। মূল্য বিশ্লেষণ এবং এই টার্গেট এর সম্পর্ক জানতে এখানে দেখুন।

৪. রেঞ্জ টার্গেট (Range Target):

রেঞ্জ টার্গেট অনেকটা বাউণ্ডারি টার্গেটের মতো, তবে এখানে ট্রেডারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে থাকার সময়কালও গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্পদের মূল্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিসীমার মধ্যে থাকে, তবে ট্রেডার লাভ পান। এই টার্গেট প্রকারটি সময় এবং মূল্যের উভয় দিকেই মনোযোগ দেয়। সময় বিশ্লেষণ এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

৫. এশিয়ান অপশন (Asian Option):

এশিয়ান অপশন একটি বিশেষ ধরনের বাইনারি অপশন, যেখানে লাভের পরিমাণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় মূল্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এই অপশনটি সাধারণত কম অস্থির বাজারে উপযুক্ত, যেখানে মূল্যের বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গড় মূল্য কিভাবে গণনা করা হয় এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

৬. ডিজিটাল অপশন (Digital Option):

ডিজিটাল অপশন, যা "অল-অর-নাথিং" অপশন নামেও পরিচিত, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পদের মূল্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে বা নিচে থাকলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। যদি পূর্বাভাস ভুল হয়, তবে বিনিয়োগকারী কিছুই পান না। এই অপশনগুলি সাধারণত উচ্চ ঝুঁকির সাথে জড়িত। ঝুঁকি এবং রিটার্ন এর মধ্যে সম্পর্ক জানতে এখানে ক্লিক করুন।

৭. প্রো ল্যাডার অপশন (Pro Ladder Option):

প্রো ল্যাডার অপশন ট্রেডারদের বিভিন্ন মূল্য স্তরের একটি "ল্যাডার" নির্বাচন করতে দেয়। প্রতিটি স্তরের সাথে একটি নির্দিষ্ট পেআউট (payout) সম্পর্কিত থাকে। ট্রেডার যত উপরে উঠবে, পেআউট তত বেশি হবে, তবে ঝুঁকিও বাড়বে। এই অপশনটি অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত, যারা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন। টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে কিভাবে এই অপশন ট্রেড করতে হয়, তা জানতে এখানে দেখুন।

৮. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন টার্গেট (Candlestick Pattern Target):

এই টার্গেট পদ্ধতিতে, ট্রেডাররা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (যেমন: বুলিশ এনগালফিং, বিয়ারিশ এনগালফিং, ডজি ইত্যাদি) ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করেন। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলি বাজারের সেন্টিমেন্ট এবং সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

৯. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স টার্গেট (Support and Resistance Target):

সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি হলো সেই মূল্য স্তরগুলি যেখানে সাধারণত মূল্য বাধা পায় বা সমর্থন পায়। ট্রেডাররা এই স্তরগুলি ব্যবহার করে টার্গেট নির্ধারণ করতে পারেন। যদি মূল্য একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করে, তবে এটি আরও বাড়তে পারে, এবং একটি সাপোর্ট লেভেল থেকে বাউন্স ব্যাক করতে পারে। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল কিভাবে চিহ্নিত করতে হয়, তা জানতে এখানে দেখুন।

১০. মুভিং এভারেজ টার্গেট (Moving Average Target):

মুভিং এভারেজ হলো একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় মূল্য প্রদর্শন করে। ট্রেডাররা মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে টার্গেট নির্ধারণ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি মূল্য একটি মুভিং এভারেজের উপরে যায়, তবে এটি একটি বুলিশ সংকেত হতে পারে। মুভিং এভারেজ এর ব্যবহার এবং তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

১১. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট টার্গেট (Fibonacci Retracement Target):

ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট হলো একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল টুল যা সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। ট্রেডাররা ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি ব্যবহার করে টার্গেট নির্ধারণ করতে পারেন। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কিভাবে কাজ করে এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

১২. ভলিউম-ভিত্তিক টার্গেট (Volume-Based Target):

এই টার্গেট পদ্ধতিতে, ট্রেডাররা ভলিউম ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করেন। যদি ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতার ইঙ্গিত হতে পারে। ভলিউম বিশ্লেষণ এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

১৩. নিউজ-ভিত্তিক টার্গেট (News-Based Target):

গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে এই টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। কোনো ইতিবাচক খবর প্রকাশিত হলে, ট্রেডাররা মূল্য বৃদ্ধির প্রত্যাশা করতে পারেন, এবং নেতিবাচক খবরে মূল্য হ্রাসের প্রত্যাশা করতে পারেন। অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

১৪. সেন্টিমেন্ট-ভিত্তিক টার্গেট (Sentiment-Based Target):

এই টার্গেট পদ্ধতিতে, বাজারের সামগ্রিক সেন্টিমেন্ট বা মেজাজ বিশ্লেষণ করা হয়। যদি বাজারের সেন্টিমেন্ট বুলিশ হয়, তবে ট্রেডাররা মূল্য বৃদ্ধির প্রত্যাশা করতে পারেন। বাজারের সেন্টিমেন্ট কিভাবে পরিমাপ করা হয় এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

১৫. টাইম-ভিত্তিক টার্গেট (Time-Based Target):

এই টার্গেট পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্য একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছানো বা অতিক্রম করার সম্ভাবনা বিবেচনা করা হয়। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং ট্রেডিং-এ এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

১৬. রিভার্সাল টার্গেট (Reversal Target):

এই টার্গেটটি বাজারের বর্তমান ট্রেন্ডের বিপরীত দিকে ট্রেড করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ট্রেডাররা এমন পরিস্থিতিতে টার্গেট নির্ধারণ করেন যেখানে তারা আশা করেন যে বাজারের দিক পরিবর্তন হবে। রিভার্সাল প্যাটার্ন কিভাবে চিনতে হয়, তা জানতে এখানে দেখুন।

১৭. ব্রেকআউট টার্গেট (Breakout Target):

যখন কোনো সম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স বা সাপোর্ট লেভেল ভেঙে দেয়, তখন তাকে ব্রেকআউট বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, ট্রেডাররা ব্রেকআউটের পরে মূল্য আরও বাড়বে বা কমবে এই প্রত্যাশায় টার্গেট নির্ধারণ করেন। ব্রেকআউট কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

১৮. পুলব্যাক টার্গেট (Pullback Target):

পুলব্যাক হলো একটি ছোটমেয়াদী মূল্য সংশোধন যা একটি বৃহত্তর ট্রেন্ডের বিপরীতে ঘটে। ট্রেডাররা পুলব্যাক টার্গেট নির্ধারণ করেন যখন তারা আশা করেন যে মূল্য সংশোধন হওয়ার পরে আবার আগের ট্রেন্ডে ফিরে আসবে। পুলব্যাক এবং রিট্রেসমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য জানতে এখানে দেখুন।

১৯. গ্যাপ টার্গেট (Gap Target):

গ্যাপ হলো দুটি পরপর ক্যান্ডেলের মধ্যে বড় মূল্য পার্থক্য। ট্রেডাররা গ্যাপ ফিল হওয়ার প্রত্যাশায় বা গ্যাপের উপরে বা নিচে নতুন সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার প্রত্যাশায় টার্গেট নির্ধারণ করতে পারেন। গ্যাপ বিশ্লেষণ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

২০. কমপ্লেক্স টার্গেট (Complex Target):

এই ধরনের টার্গেট একাধিক নির্দেশকের সমন্বয়ে গঠিত হয়, যেমন - ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল, মুভিং এভারেজ এবং ভলিউম ডেটা। এই টার্গেটগুলি সাধারণত আরও নির্ভরযোগ্য হয়, তবে এদের জন্য গভীর বিশ্লেষণ এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। কমপ্লেক্স ট্রেডিং কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

উপসংহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সফল হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার টার্গেট সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। প্রত্যেক ট্রেডারের উচিত তার নিজস্ব ট্রেডিং কৌশল, ঝুঁকির সহনশীলতা এবং বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক টার্গেট নির্বাচন করা। নিয়মিত অনুশীলন, সঠিক বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ