কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন
ভূমিকা
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন (সিএমসি) গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বারা গঠিত এবং পরিচালিত হয়। সিএমসি চীনের সামরিক নীতি নির্ধারণ, কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সামরিক বাহিনীর উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য দায়ী। এই কমিশন শুধুমাত্র চীনের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বই দেয় না, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের যাত্রা ১৯২৭ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার সাথে শুরু হয়। তখন এটিকে ‘গণ মুক্তি বাহিনীর বিপ্লবী সামরিক কমিটি’ নামে ডাকা হতো। ১৯৪৮ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন রাখা হয়। চীনের গৃহযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠায় এই সংস্থাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে সিএমসি চীনের সামরিক শক্তিকে ঢেলে সাজিয়েছিল এবং কোরীয় যুদ্ধ ও অন্যান্য সীমান্ত সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
গঠন ও নেতৃত্ব
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন কমিশনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যান সিএমসি-র দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং কমিশনের নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যানগণ চেয়ারম্যানকে সহায়তা করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সিএমসি-র সদস্যগণ সাধারণত সিপিসি-র উচ্চপদস্থ নেতা এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) শীর্ষ জেনারেলরা হন। কমিশনের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে সামরিক নীতি নির্ধারণ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
| বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত | | |||
| শি জিনপিং | | জিয়াং ইয়ান | | লি জংলু | | বিভিন্ন জেনারেল ও সিপিসি নেতা | |
কার্যাবলী ও দায়িত্ব
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ:
- সামরিক নীতি নির্ধারণ: চীনের সামরিক কৌশল এবং নীতি নির্ধারণ করা সিএমসি-র অন্যতম প্রধান কাজ। এটি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে সামরিক নীতি প্রণয়ন করে।
- সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব: পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), চীনের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী, সিএমসি-র অধীনে পরিচালিত হয়। সিএমসি পিএলএ-র প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি তত্ত্বাবধান করে।
- কৌশলগত পরিকল্পনা: সিএমসি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনায় সামরিক আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- সামরিক বাজেট নিয়ন্ত্রণ: চীনের সামরিক বাজেট সিএমসি দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং এটি বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: সিএমসি অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতা এবং যৌথ মহড়া আয়োজন করে। এর মাধ্যমে চীনের সামরিক সম্পর্ক উন্নত হয় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
- অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা: দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিএমসি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সামরিক সহায়তা প্রদান করে।
পিপলস লিবারেশন আর্মির সাথে সম্পর্ক
পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। সিএমসি পিএলএ-র সর্বাধিনায়ক এবং পিএলএ-র সকল কার্যক্রম সিএমসি-র নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। পিএলএ-র বিভিন্ন শাখা, যেমন - স্থল বাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং কৌশলগত সহায়তা বাহিনী, সিএমসি-র অধীনে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। সিএমসি পিএলএ-র আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিতভাবে নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
পিপলস লিবারেশন আর্মি চীনের সামরিক শক্তির অন্যতম স্তম্ভ।
আধুনিকীকরণ এবং সামরিক সংস্কার
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শি জিনপিং-এর নেতৃত্বে সিএমসি চীনের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো পিএলএ-কে একটি আধুনিক, দক্ষ এবং বিশ্বমানের সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করা। সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
- সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন: পিএলএ-র সাংগঠনিক কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে, যেখানে কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করা হয়েছে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: নতুন নতুন সামরিক প্রযুক্তি, যেমন - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার warfare এবং মহাকাশ প্রযুক্তি, পিএলএ-তে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
- যৌথ প্রশিক্ষণ: অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনীর সাথে যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে পিএলএ-র দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
- সামরিক সংস্কৃতি পরিবর্তন: পিএলএ-র মধ্যে একটি শক্তিশালী সামরিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা সৈন্যদের মধ্যে দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলাবোধ জাগিয়ে তুলবে।
কৌশলগত চিন্তাধারা
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের কৌশলগত চিন্তাধারা চীনের সামরিক নীতি এবং কার্যকলাপের ভিত্তি স্থাপন করে। এই চিন্তাধারার মূল উপাদানগুলো হলো:
- সক্রিয় প্রতিরক্ষা (Active Defense): চীন সক্রিয় প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে, যার অর্থ হলো কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং প্রয়োজনে পাল্টা আক্রমণ করা।
- ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: চীন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দেয় এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে।
- সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধ: চীন সাম্রাজ্যবাদ এবং আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করে এবং একটি বহু-মেরু বিশ্ব গঠনের পক্ষে কাজ করে।
- সামরিক আধুনিকীকরণ: চীন তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন চীনের সামরিক শক্তি এবং কৌশলগত নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সিএমসি-র নীতিগুলো চীনের পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।
সমালোচনা
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সামরিক গোপনীয়তা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। সমালোচকদের মতে, সিএমসি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করে এবং এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য হুমকি স্বরূপ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন ২০৩৫ সালের মধ্যে পিএলএ-কে একটি সম্পূর্ণরূপে আধুনিক সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সিএমসি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং সামরিক সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়াও, চীন মহাকাশ এবং সাইবার স্পেসে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
আরও দেখুন
- পিপলস লিবারেশন আর্মি
- চীনের কমিউনিস্ট পার্টি
- শি জিনপিং
- সামরিক কৌশল
- ভূ-রাজনীতি
- দক্ষিণ চীন সাগর
- সামরিক আধুনিকীকরণ
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
- সাইবার নিরাপত্তা
- মহাকাশ প্রযুক্তি
- বৈদেশিক সম্পর্ক
- আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা
- চীনের প্রতিরক্ষা নীতি
- সক্রিয় প্রতিরক্ষা
- ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
- সাম্রাজ্যবাদ
- বহু-মেরু বিশ্ব
- মানব অধিকার
- সামরিক গোপনীয়তা
- আঞ্চলিক উত্তেজনা
তথ্যসূত্র
- [1](https://www.fmprc.gov.cn/mfa_eng/)
- [2](https://www.globalsecurity.org/military/world/china/cmc.htm)
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
(বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত করার জন্য এই অংশ যোগ করা হলো)
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের কার্যকলাপ এবং চীনের সামরিক নীতি বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হতে পারে। বিশেষ করে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে এই তথ্যগুলো সম্পদ মূল্যায়নে সহায়ক হতে পারে।
- ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি মূল্যায়ন: সিএমসি-র কার্যকলাপের ওপর নজর রেখে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি মূল্যায়ন করা যায়। কোনো অঞ্চলের সামরিক উত্তেজনা বাড়লে, সেই অঞ্চলের সম্পদ (যেমন - প্রতিরক্ষা শিল্প) এর দাম বাড়তে পারে।
- প্রতিরক্ষা শিল্পের স্টক: সিএমসি-র আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রতিরক্ষা শিল্পের স্টকগুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- মুদ্রা বাজারের প্রভাব: সামরিক উত্তেজনা বা কোনো বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ মুদ্রা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- commodities বাজারের প্রভাব : যুদ্ধ বা সংঘাতের পরিস্থিতিতে commodities-এর দাম বাড়তে পারে।
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (যেমন - ট্রেন্ড লাইন, সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল) ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। ভলিউম অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যেকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যায়।
এই বিষয়গুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ চার্ট প্যাটার্ন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি প্রতিরক্ষা শিল্প মুদ্রা বাজার Commodities বাজার বাইনারি অপশন কৌশল ট্রেডিং সাইকোলজি মানি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ বৈশ্বিক অর্থনীতি আর্থিক বাজার বিনিয়োগ ঝুঁকি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
